দিনলিপিতে দু'হাজার বাইশ - ৯
ছেলেবেলা থেকে আমার দিনলিপি লেখার অভ্যাস। কিন্তু ছেলেবেলায় একটা বড় সমস্যা ছিল "প্রাইভেসি" নামের। যাই লিখতাম নিজের ডায়েরিতে, বাসায় প্রকাশ হয়ে পড়তো। গোপন কথাবার্তা গোপন থাকতো না মোটেও। অথচ ছেলেবেলার বন্ধু নীলু মামার ছিল সব গোপন কথায় ভরা ডায়েরি। সংখ্যায় অনেক। উনার বাসায় ডায়েরি পড়ার মতো উৎসাহী কেউ ছিল না।
এসেন শহরে মানুষের সংখ্যা অনেক। ছয় লাখের কাছাকাছি। অনাবাদীদের এই দেশে ছয় লাখ একটা শহরের জনসংখ্যা আসলে একটু বেশিই। তাইতো এই শহরটা জনসংখ্যার দিক থেকে জার্মানির নবম বৃহত্তম শহর। নিজের অঙ্গরাজ্যে এর অবস্থান চতুর্থ। উইকিপিডিয়া মাইরি! যারা পরিসংখ্যানের শিক্ষার্থী, তাদের জন্য দৈনিক একটি করে উইকিপিডিয়া আর্টিকেল পড়া বাধ্যতামূলক করে দেয়া যেতে পারে। তাহলে আর আলাদা করে পরিসংখ্যানের রিপোর্ট তৈরি করা শেখা লাগে না।
আসলে কৌতুক করছি। অবশ্যই রিপোর্ট তৈরি করা আলাদা করে শিখতে হবে কিংবা যে ধরনের উপায়ের মাধ্যমে তারা শেখেন, সেটির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য বলেই তা শিক্ষা-পদ্ধতির ভেতর রয়েছে।
তবে কিছু কিছু বিষয় আসলেই কি অনস্বীকার্য নয়? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় একটা কথা প্রায়ই শুনতাম। বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তাচেতনার চর্চার সঙ্গে জড়িতরাই বেশি বলতেন কথাটা। বড় বড় ব্র্যান্ডের দোকানের পোশাক বা যেকোন পণ্যের মূল্য সম্পর্কে সেই সর্বজন প্রচলিত কথাটার কথা বলছি। ওইসব দোকানে নাকি এমনি এমনিই পোশাকের বেশি দাম? তাদের কোম্পানি চালানোর খরচ বেশি বলে নাকি তারা তাদের পণ্যের দাম বেশি রাখে? আসলেই কি সেটা হওয়া সম্ভব?
এই তত্ত্বের বয়সই বা কতো? যে সময় এ তত্ত্বের উৎপত্তি, সে সময়ের অর্থনৈতিক ল্যান্ডস্কেপটা কেমন ছিল? সে সময় এ তত্ত্বের বাস্তবতা এবং এখনকার সময়ের এ তত্ত্বের বাস্তবতা কি এক?
বিশ্বে যে ব্র্যান্ড যে সময় ব্যবসা করেছে বা করে চলেছে, সেই ব্র্যান্ড তো সেই সময় মার্কেট লিডার ছিল বলেই রাজত্ব করেছে, নাকি? নাকি আমাদের কেরানিগঞ্জে আসলেই নাইকি'র চেয়ে ভাল মানের জুতা উৎপন্ন হয়? আর বিশ্বব্যাপী বোকা মানবগোষ্ঠী প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নিজেদের সেই প্রবাদের স্বর্গে বাস করছে? নাইকি'র নামটা প্রথম মনে আসলো বলে বললাম, কিন্তু এখানে নাইকির জায়গায় অ্যাডিডাস, গুচি, লুই ভিঁতো, কার্তিয়ে, অ্যাস্টন মার্টিন, বুগাটি, শ্যানেল, মাইক্রোসফট, গুগল, বশ, সিমেন্স, এলজি, স্যামসাং, অ্যাপল, মার্সিডিজ, পিয়েরে কার্ডিন- যেকোন কিছুই বসিয়ে নেয়া যায়। প্রশ্নটার তাতে কিচ্ছু আসে যায় না।
কেননা ওটা হাইপোথিসিস। আমার অনুমান হচ্ছে, দেশ, কাল, অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা, রাজনৈতিক দুরাবস্থা, শিক্ষায় অনগ্রসরতা, প্রযুক্তির অপ্রতুলতাসহ সামাজিক উন্নতির যতো সূচক রয়েছে সকল সূচক নির্বিশেষে বেলাশেষে পণ্যের মান বিবেচনায় বিচার করা হলে দেখা যাবে, কেরানিগঞ্জে নাইকি'র চেয়ে ভাল মানের জুতা উৎপন্ন হয় না।
সময়-সুযোগ হইলে কোন একদিন এই হাইপোথিসিসটাকে একটা কোয়ান্টেটেটিভ কন্টেন্ট (মার্কেট) অ্যানালাইসিস পন্থায় পরীক্ষা করে দেখার ইচ্ছা আমার আছে। দেখা যাক কি হয়!
---
মন্তব্য করুন