গল্প: তুমি আমার কাছে তুমি যা বলবা তাই (পর্ব-৮)
ঘুম থেকে ওঠার পর সেদিন বেলা ১১টার দিকে আমরা লামা ফিরে যাবার উদ্দেশ্যে নৌকায় সওয়ার হই। যে ক'জন এসেছিলাম, সে ক'জনই ফিরে যাচ্ছি। সঙ্গে কেউ নতুন যোগ হয় নি, বিয়োগও হয় নি সঙ্গের কেউ।
আগের রাতে ভরপুর পাহাড়ি মদ পেটে পরার কারণে, সেদিনের নৌকাভ্রমণটা অন্যরকম হয়ে ধরা দিয়েছিল। আসার সময় প্রথমে বৈঠা বাইতে হয়েছে। পরে স্রোতের অনুকূলে নৌকা নিজেই চলেছিল। এবার প্রথমে স্রোতের অনুকূলে নৌকা চলা শুরু হলো। বুঝলাম বৈঠা বাওয়া হবে পরে। সবই জোয়ার-ভাটার খেলা। সমুদ্র উপকূলের কাছাকাছি অবস্থিত নদীগুলোর প্রতিদিনের ঘটনা এটা জানতাম। সমুদ্র থেকে অতোটা দুরে পাহাড়ের ভেতরেও যে নদীর পানিতে জোয়ার-ভাটার টান এত ভালভাবে অনুভব করা যায়, জানতাম না। অথচ বান্দরবানের ওই মাতামুহুরী নদীটির সঙ্গে আমার দশককালের সম্পর্ক। দিনের আলোয়, রাতের আঁধারে, প্রখর গরমে, প্রবল শীতে- এমন কোন সময় নেই যখন নদীটিতে নামা হয় নি। তবে সেদিন সবই যেন একটু নতুন করে ধরা দিচ্ছিল।
বৈঠা বাওয়ার দরকার পড়ছিল না বলে মং পোয়া শুধু হাল ধরে বসেছিল নৌকার। আমি আরেকদিকে গলুইয়ের ওপরে শুয়ে আকাশ আর দু'পাশের পাহাড়ের সারি দেখছিলাম। চারিদিকে নীল আর সবুজ। নীলের ভেতর অবশ্য মাঝে মাঝেই শাদা পেঁজা তুলোর মতো মেঘ, নানান রকমের আকৃতি বানিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোন্ আইসক্রীমের কোন্ ছাড়া শুধু উপরের আইসক্রীমটার মতো আকৃতির অনেকগুলো মেঘকে উড়ে যেতে দেখলাম একটার পর একটা। সবগুলো ধবধবে শাদা রংয়ের। দেখে বোঝা যাচ্ছিল ঝরে পড়ার মেঘ নয় সেগুলো।
আর সবুজ রংটা জুড়ে ছিল দৃষ্টিসীমার যতোটুকুতে আকাশ ছিল না, ততটুকু জুড়ে। কলাপাতার উজ্জ্বল সবুজ, তামাক পাতার কালচে সবুজ, অর্জুনের ডাল জুড়ে থাকা ঘন সবুজ, মাটি কামড়ে থাকা ঘাসের জমিন সবুজ, পানিতে মাথা তুলে রাখা ধানের শীষ সবুজ- কত রকমের সবুজ যে চোখ ধরা পড়লো! পাহাড়জুড়ে কলা আর তামাকের চাষের আধিক্যও বিশেষ চোখে পড়ার মতো। কিছু কিছু কলা গাছের নিচে ভোজনরত গরু দেখা গেল। গরুগুলো কলাপাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে। বানর আর হরিণেরও দেখা মিললো অনেকগুলো। হরিণেরা অনেকটা দূরে দূরে থাকে ঠিকই কিন্তু প্রচুর আছে ওই এলাকায়। আর বানরেরা দূরে না থাকলেও, একেবারে তো লোকালয়ে মানুষজনের সঙ্গে থাকে না। তাই তাদের সবসময় দেখা যায় না। তবে মাঝে মাঝে চোখে পড়ে। আমি একবার বানরের পালকে গাছের ডাল জুড়ে লাফালাফি করতে দেখলাম আর একবার দূরের এক গাছের ফাঁক দিয়ে টানা টানা চোখে তাকিয়ে থাকা কোন মায়া হরিণ দেখলাম। মিসিসিপিটা ছইয়ের ভেতর শুয়ে ছিল। দু'একবার ডাকলাম ওকে। তেমন কোন সাড়া মিললো না।
পাহাড়ের শুদ্ধ বাতাস আমার ফুসফুসকে চাঙা করে তুলছিল ধীরে ধীরে। ওদিকে সূর্যের তাপও সহ্যসীমা ছুঁয়ে বসে আছে অনেকক্ষণ ধরে। মিসিসিপির হয়তো খানিকটা হ্যাংওভার হয়ে থাকতে পারে। উঠে গিয়ে সঙ্গে থাকা লেবুর পানির বোতলটা ওর দিকে এগিয়ে দিলাম। খাবে না বললো। ওর নাকি মাথা ধরেছে খুব। আমার সঙ্গে মাথা ধরার ওষুধ থাকে সবসময়ই। দেবো কিনা জানতে চাইলাম। বললো, না। ওষুধ খেতে ভাল লাগে না। এমনিতেই সেরে যাবে।
কথা মেনে ওকে ওর নিজের মতো থাকতে দিয়ে আবার আমার আগের জায়গায় ফিরে এলাম। সকালে নাস্তা করেই বের হয়েছি, তারপরও ক্ষুধা অনুভূত হচ্ছিল একটু একটু। হ্লা মং-রা সবাই অন্যপাশের গলুইয়ে বসে ছিল। মানে হ্লা মং, মং পোয়া আর মং হ্লা সিং। ওদের উদ্দেশ্যে বললাম, ক্ষুধা ক্ষুধা লাগে।
ওরা আমার দিকে একটা পাহাড়ি পেয়ারা ছুড়ে দিল। ছেলেবেলায় অল্প-স্বল্প খেলাধুলা করেছিলাম বিধায় পাকা পেয়ারাটা আমার হাতছাড়া হলো না। কোনমতে ধরে ফেললাম। মিসিসিপি ছইয়ের ভেতর থেকেও সবই দেখছিল। দেখলাম মুখে বেদনামিশ্রিত হাসি মেয়েটির। মাথাব্যাথা ভালই কাবু করে রেখেছে বুঝতে পারলাম।
এবার জোর করেই একটা ইবুপ্রুফেনের অর্ধেক ভেঙ্গে লেবু পানি দিয়ে খাইয়ে দিলাম মেয়েটিকে। বললাম, একটু চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকো। ভাল লাগবে আস্তে আস্তে। মিসিসিপি সাধারণত লক্ষী মেয়েদের মতো সব কথা সবসময় শোনে না। এই কথাটা কি মনে করে যেন, এক বারেই মেনে নিল। চোখ বন্ধ করে পাশ ফিরে শুলো।
আমি এবার হ্লা মং-দের সঙ্গে গিয়ে বসলাম। গরমে সবাই গেঞ্জি-শার্ট ইত্যাদি খুলে ফেলেছি। এর মধ্যে একটা নর্দান লাইটস ধরানো হলো। সূর্যের তাপ আর টেট্রা-হাইড্রো ক্যানাবিনল একসঙ্গে যখন কাজ শুরু হলো, তখন সবাই নানা বিষয় নিয়ে বিপুল উদ্দীপনায় আড্ডা শুরু করে দিলাম। ঘন্টাখানেক চললো সে আড্ডা। ততক্ষণে আমরা মানিকপুর যাওয়ার পথে যেখানে রান্না ও খাওয়ার বিরতি নিয়েছিলাম, সেখানে পৌঁছে গিয়েছি। নৌকা ভেড়ানোর সময় খেয়াল করলাম, মিসিসিপি গভীর ঘুমে। ওকে ডাকাডাকি না করে আমরা সন্তপর্ণে নৌকা থেকে নেমে গেলাম। নেমে রান্নার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম।
আগের বারের কাটা চুলাগুলো উদ্ধার করা হলো। এবারে বনমোরগের সালুন রান্না হবে। মোরগটা হ্লা মং-দের বাড়ি থেকেই কেটে-কুটে আনা হয়েছে। পাহাড়ে মাংস ম্যারিনেট করে রান্নার চল নেই, নাহলে হয়তো সেটাও করে নিয়ে আসা হতো। আমরা মোবাইলে গান চালিয়ে, ব্লুটুথ স্পীকারে সংযুক্ত করে একপাশে রেখে রান্নায় মনোযোগ দিলাম।
সেদিন আমাদের মেন্যু ছিল খুব সাধারণ। ভাত আর ঝাল ঝাল করে কষানো বনমোরগের মাংস। সেদিনের মাংসটা হ্লা মং একটু বেশি ঝাল দিয়ে রেঁধেছিল। হ্যাংওভার কাটানোর জন্য নাকি আদর্শ। মিসিসিপির ঘুম ভাঙ্গে আমাদের রান্না শেষ হওয়ার পর। জানতে চাইলাম, মাথাব্যাথার কি অবস্থা? মেয়েটি বললো, সেরে গেছে পুরোপুরি। জানতে চাইলাম, ক্ষুধা লেগেছে কিনা? বললো, হ্যাঁ, খুব ক্ষুধা লেগেছে। বুঝলাম, ইবুপ্রুফেনে কাজ হয়েছে। সাধারণত যখন ইবু-তে কাজ হয়, তখন এমন একটা ঘুম দিয়ে মাথাব্যাথাটা ছাড়ে এবং তারপর প্রচণ্ড ক্ষুধা লাগে।
ওকে উঠে আসার সময় দিয়ে আমরা সবাই ভাত বাড়তে বসে গেলাম। কলাপাতা কেটে আনা হয়েছিল আগেই। গোল হয়ে বসে খেয়ে নিলাম সবাই দ্রুতই। মং হ্লা সিং আর মং পোয়া নিজেদের মধ্যে কে কত কাঁচা পেয়াজ আর মরিচ খেতে পারে তাই নিয়ে প্রতিযোগিতা করলো। খাওয়া-দাওয়া শেষ আবারও সব পরিস্কার করে, চুলগুলো বুজিয়ে আমরা হ্লা মং-দের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সবাই মিলে বৈঠা চালিয়ে সন্ধ্যা নামার আগেই ফিরে এলাম লামায়। আসার পথে আমাদের ঝাঁকি জালে বেশ কিছু চিংড়ি, বেলে, টাকি ইত্যাদি মাছ পড়লো। মধুপাগলাও ছিল ছোট ছোট সাইজের। সবমিলিয়ে কেজি দু'য়েক পাঁচমিশালী ছোট মাছ।
সেদিন সন্ধ্যায় হ্লা মং-দের বাসায় সেই মাছগুলোর ঝাল চচ্চড়ি দিয়ে পানাহারের আসর বসেছিল। পাহাড়ি মাছ, মদ আর শুটকি ভর্তাসহ সবাই একসঙ্গে আড্ডা দিতে বসেছিলাম। পরের দিন আমরা চলে যাবো। সে উপলক্ষ্যে পাড়ার প্রায় সবাই চলে এসেছিল।
মারমাদের এই এক গুণ! পাড়ায় কারো বাড়িতে অতিথি এলে, সে যেন সকলের অতিথি হয়ে যায়। তারপর সে অতিথিকে কেন্দ্র করেই চলতে থাকে পুরো পাড়ার কর্মকাণ্ড কয়েকটা দিন। সেবারও তাই হয়েছিল।
পাড়ার প্রায় সবাই আমাকে চিনতো। মিসিসিপি-কে তাদের সেবারই প্রথম দেখা। অনেকে ভেবেছিল সে বুঝি আমার স্ত্রী। শুধুই বন্ধু শুনে প্রবীণদের বেশ অবাক হতে দেখা গেল। কেন আমরা তখনও বিয়ে করি নি জানতে চেয়ে দু'একজন অল্প-স্বল্প অপ্রস্তুতও করার চেষ্টা করলেন। হাসি-ঠাট্টা সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেল।
সবাই চলে গেলে পরে আমরা রাতের খাওয়া সেরে শুয়ে পড়লাম। পরদিন বেশ সকাল সকাল রওনা দিতে হবে আমাদের। একটা ভাল ঘুম দরকার। কিন্তু সারাটা রাত এক ফোঁটা ঘুম এলো না চোখে। প্রবীণদের বিয়ে সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো ঘুরেফিরে মনে আসছিল। আর বার বার মনে পড়ছিল মিসিসিপি'র সেই কথাটা। "আমাকে তো ঘোরাঘুরি শেষে আবার এখানেই ফিরে আসতে হবে।"
ভাবছিলাম সুনামগঞ্জ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসার পথে আমার মাথায় নিজেকে নিয়ে যে ভাবনাটা চলছিলো সেটার কথাও- এতগুলো বছর যে কখনো পারিবারিক কারণ ছাড়া আর কোন ছুটি নেয় নি, সে শুধু মিসিসিপির সঙ্গে দেখা করার জন্যই দেশে চলে এসেছে!
আসলে অনেকদিন আগে আমি একদম অন্যরকম একটা মানুষ ছিলাম। আমার বয়স তখন ২০-২২ হবে। সে সময় আমি একবার নিজেকে আরেকজনের জন্য বিলিয়ে দিতে পারার ভেতর এক অন্যরকম সুখের দেখা পেয়েছিলাম। অনেকদিন পর্যন্ত সেটাই ছিল আমার হ্যাপি হরমোন। নিজেকে যতো বেশি অপ্রয়োজনে, ধ্বংসাত্মকভাবে অন্যের জন্য বিলিয়ে দিতে পারি, তত আমার ভাল লাগতো। বিষয়টাকে তখন মহান একটি অভ্যাস বলে ভাবতাম। মনে করতাম, ভালবাসা মানেই ভালবাসার সঙ্গীর জন্য নিজের সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে রিক্ত হয়ে যাওয়া। তারপর ভালাবাসার মানুষটা আমার সবকিছু মেনে নেবে। নিতে বাধ্য। আমি দিয়েছি না ভালবাসা? তাহলে সে কেন দেবে না? আমি যদি পারি ওর জন্য নিজের সব সাধ-আহ্লাদ ভাসিয়ে দিতে, তাহলে সে কেন পারবে না?
অথচ এটা কখনো ভাবতাম না যে, ভালবাসার সঙ্গীটিও একজন মানুষ। তার নিজের জীবনটাও তো ঠিক আমার মতো করেই শুরু হয়েছিল। ছোট্ট একটা শিশু ছিল। ধীরে ধীরে সবার আদর-ভালবাসায় বড় হয়েছে। নিজের মতো করে জীবন যাপন করতে শিখেছে। তার নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ, চিন্তা-ভাবনা, বিশ্বাস, ধারণা সবকিছু গড়ে উঠেছে। তাকে ভালবেসে দেউলিয়া হয়ে যেতে পারার ভেতর আমার হ্যাপী হরমোন নি:সরণের গোপন সূত্র লুকানো থাকতে পারে, কিন্তু তারমানে এই না যে তার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঠিক একই রকম হবে। হয়তো তার হ্যাপী হরমোন অন্য কিছুতে নি:সৃত হয়। হয়তো আমার হাহাকার আর দেউলিয়াত্ব দেখে তার কিছুই হয় না- কেননা সেটা তার ভালাবাসার সংজ্ঞায় পড়ে না।
এইসব বুঝতে অনেকগুলো বছর সময় লেগেছে আমার। ভালাবাসার সঙ্গী যে সবার আগে নিজেই আস্ত একটা রক্তমাংসের মানুষ, ভিন্ন পরিবারে, ভিন্ন পরিবেশে, ভিন্ন অভ্যাসে বেড়ে ওঠা ভিন্ন একজন- সেটা নির্দ্বিধায় মেনে নেয়া শিখতে পেরিয়ে গেছে সে বছরগুলো। তাই আজকাল আবেগগুলো সবার আগে বিবেকের ফিল্টারের দিকে ধাবিত হয়। সেখান থেকে সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়ে বের হয়ে আসতে পারলেই কেবল তাদের নিয়ে কাজ করা হয়।
তবে মিসিসিপি'র সঙ্গে আমার সেই পর্বটা পেরিয়ে গেছে। সেবার সুনামগঞ্জ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফেরার পথেই বুঝতে পেরেছি, আমি আবারও প্রেমে পড়েছি। বুড়ো বয়সেও খুব একটা না বুঝে-শুনেই মন দিয়ে ফেলেছি সমবয়সী আরেকজনকে।
না বুঝে-শুনে কথাটা উল্লেখ করার কারণ কিন্তু আমাদের বাস্তব অবস্থা নয়। আমরা দু'জনই স্বাধীন মানুষ। একে অপরের প্রেমে পড়ায় তেমন কোন বাধা নেই। কিন্তু দু'জনের জীবন পথ দুই রকম। দুইটি দেশে দু'জনের পথচলা। যদিও সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড দেখা গেছে, দুরত্ব খুব বেশি বাধার সৃষ্টি করতে পারে নি। আমি একদিন ওর সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রায় হুট করেই সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চলে এসেছি। এমন হুটহাট বড় কোন কাজ করে ফেলা আমার স্বভাবের সঙ্গে একেবারেই যায় না। প্রেমান্ধ হয়েছি বলেই করতে পেরেছি।
তবে অন্ধ হলেও আমি চাই না ভালবাসার নামে কারও ওপর আমার জীবনদর্শন, চর্চা, রীতি-নীতি, বিশ্বাস ইত্যাদি বোঝা বানিয়ে চাপিয়ে দিতে। আবার এটাও ঠিক যে, এখন হয়তো মনে মনে ভাবছি সেভাবে। কিন্তু দু'টি মানুষ এক হয়ে যাওয়ার পরই আসলে বোঝা যায়, কতোটা মানা সম্ভব সেটা।
সেই নির্ঘুম রাতে হ্লা মং-দের বাড়িতে আমি সারারাত মিসিসিপিকে নিজের মনে কথা জানানো ঠিক হবে কিনা ভাবলাম। হয়তো সে কথাটা শুনে খুশি হবে। লজ্জা পেয়ে মুখ লুকিয়ে ফেলবে। কিংবা আমায় জড়িয়ে ধরে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে দিতে পারে। তারপর কপট রাগ দেখাবে এতদিন কথাটা বলি নি কেন সে কারণে। তখন আমি অবাক হয়ে বলবো, আরে আমি তো জানলামই মাত্র। আগে কি করে বলবো!
আবার হতে পারে যে কথাটা শুনে সে সত্যিকারের কষ্ট পাবে। আমি বন্ধুত্বের মর্যাদা নষ্ট করলাম বলে ধরে নেবে। আমাদের বন্ধুত্বটা আর আগের মতো থাকবে না। যেকোন কিছুই হতে পারে!
সব ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলাম, যদিও কথাটা জানার অধিকার মিসিসিপির আছে কিন্তু ওকে আমি বলবো না। ওর বন্ধুত্বটা আমার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান। কোনকিছুর বিনিময়েই সেটাকে আমি হারাতে চাই না। এখন যেমন আছে, তেমন যদি থাকে, আমি যদি ওকে আমার মনের কথা না বলি, তাহলে কিছুই হবে না। বন্ধুত্বটা এভাবে থাকবে। আর যদি আমার মনের কথা বলি, তাহলে ফিফটি-ফিফটি চান্স! নাহ্ কোন চান্স নেয়া যাবে না। মিসিসিপি থাকুক এ জীবনের সাথে, যেভাবে আছে।
---
মন্তব্য করুন