ইউজার লগইন

ভালবাসার চিরকুট

ওয়েল শো মি দ্য ওয়ে টু দ্য নেক্সট হুইস্কি বার
ওহ্ ডোন্ট আস্ক হোয়াই
ওহ্ ডোন্ট আস্ক হোয়াই,
ফর ইফ উই ডোন্ট ফাইন্ড দ্য নেক্সট হুইস্কি বার
আই টেল ইউ উই মাস্ট ডাই
আই টেল ইউ উই মাস্ট ডাই
আই টেল ইউ
আই টেল ইউ
আই টেল ইউ উই মাস্ট ডাই...

পরিচিত পছন্দের গানের কলিটি শুনতে পেয়ে একটু সচকিত হলাম। উদ্যানের ভেতর একটি মেয়ে গানটি গুনগুনিয়ে অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। আমি উবায়েদ ভাইয়ের দোকানে দাঁড়িয়ে একটি শলাকায় অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করছিলাম। বাতাসের কারণে তাতে বারবার বিঘ্ন ঘটছিলো। তখন মনে মনে একটা ডোরস্-এর লিরিক আমিও ভাঁজছিলাম। কাম’ন বেইবী লাইট মাই ফায়ার...। আর ঠিক সেই সময়ে আমার পেছন দিয়ে খুব ধীরে ধীরে, অনেকটা যেন স্লো মোশনে, একজন ডোরস্-এর একটা গানই শুনিয়ে দিয়ে গেলো!

জিম মরিসন। আহা! হুট করে ভালো লেগে ভালবেসে কাউকে, তাড়াহুড়ো করে লেখা গান। নামটার সঙ্গে অঞ্জনের ওই লাইনটা কেমন যেন মিশে গেছে। একটা মনে পড়লে আরেকটাও মনে পড়ে যায়। তোমাকে নিয়ে কোনো গান লেখা হয় নি চেষ্টা করেছি বহুবার, রয়ে গেছে সব কথা অলিখিত তার কাছে আমার পুরোনো গিটার...।

সুমন আর অঞ্জনের মধ্যে আমার অঞ্জনকে অনেক আপন মনে হয়। যেন একদম আমাদের সাকুরার টেবিলের নিয়মিত সভ্য। প্রতিটি গলে যাওয়া সন্ধ্যায় আমরা একসাথে বসে আড্ডা দিই। দরকারী-অদরকারী-রকমারি, সেক্সিস্ট, রেসিস্ট এবং আরও নানারকম আলোচনায় সময় কাটাই- যেন কতকালের চেনা। যেন একই মহল্লার ছেলে আমরা, পাশের বাড়িতে আমার সাথে একসাথেই বড় হয়েছে অঞ্জন। একই রকে বসে খিস্তি করেছি বহুদিন। তা নাহলে কেন ওর প্রেমিকা হারানোর সেই করুণ তারিখটিতে সমান অনলে পুড়ি আমিও?

এমন যোগাযোগ সাধারণত সবার সাথে ঘটে না। অন্তত আমার ক্ষেত্রে। তবে সঞ্জীবদা ব্যতিক্রম। প্রতিটি সোনালী রঙয়ের শেষরাতে আকণ্ঠ ডুবে যাওয়ার আগে আমি চেষ্টা করি একবারের জন্য হলেও সঞ্জীবদা’র সাথে দেখা করতে। চল বুবাইজান মাটিকাটা কিংবা একটি চোখে কাজল আর অন্য চোখ শাদা- ওঁর যেকোন গানে একবার ঢুকে যাওয়া মানে হলো, গভীর সমুদ্রের তলদেশ থেকে চাঁদের টানে ধীরে ধীরে উপরে উঠে আসা।

আমি মাঝে মাঝে উপরে উঠতে উঠতে প্রায় মেঘের কাছে পৌঁছে যাই। খোঁজার চেষ্টা করি মেঘের ওপর আসলেই কোন পাখির বাসা আছে কিনা। ওখানে আমার অনেকবার টুথ ফেইরীর সাথে দেখা হয়েছে। ওর সাথে সবসময় চার-পাঁচটা বেবী টুথ থাকে। ওরা শিশুদের পড়ে যাওয়া দাঁত সংরক্ষণ করে। সেইসব দাঁতের সাথে জড়িয়ে থাকে তাদের শৈশবের সব হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি।

টুথ ফেইরীর সাথে গল্প করে মজা আছে। ও দারুণ সব গল্প জানে। তবে মেঘের ওপর কোথাও কোনো পাখির বাসা আছে কিনা জানে না। সেই সোনার পালঙ্কের ঘরটা কোথায়, যেখানে তার কথা লিখে রাখা যায় জানে না। সে আমার ওই ধরনের প্রশ্নগুলোর নাম দিয়েছে ‘অদ্ভুত’। আমি তাকে অসংখ্য অদ্ভুত প্রশ্ন ধরিয়ে দিতে পারি চাইলে কিন্তু দেয়া হয় না। ওকে বলি একটা গান গেয়ে শোনাতে। ও শোনায়,

চিকিতিতা টেল মী হোয়াটস রং
ইউ’র এনচেইনড্ বাই ইউর ঔন সরো
ইন ইউর আইস দেয়ার ইজ নো হোপ ফর টুমরো…

শুনতে শুনতেই একসময় টুথ ফেইরীর কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময় হয়ে যায়। আমার কথাগুলো কখনই ওকে জানানো হয় না। বিগত আটাশ বছরে জানাতে পারি নি। অথচ আমি যখন মেঘের রাজ্য থেকে ফিরে আসছিলাম, ও তখনও সেই গানটাই গেয়ে যাচ্ছিল,

চিকিতিতা টেল মী দ্য ট্রুথ
আ’ম আ শৌল্ডার ইউ ক্যান ক্যারি অন
ইউর বেস্ট ফ্রেন্ড, আ’ম দ্য ওয়ান ইউ মাস্ট রিলাই অন…

ততক্ষণে সিগারেটটা সফলভাবে জ্বালিয়ে ফেলেছি আমি। হঠাৎ করে আমার প্রিয়-অপ্রিয়, দেশি-বিদেশি গানগুলোর ঝাঁপি খুলে দিয়ে যাওয়া মেয়েটিকে দ্রুত পা চালিয়ে ধরে ফেলার একটা তাগিদ ভেতর থেকে অনুভব করতে শুরু করেছি। আমার হাতে খুব বেশি সময় ছিল না। তাই যা করার তাড়াতাড়ি করতে হচ্ছিলো। একসময় মেয়েটিকে ধরে ফেললাম এবং পকেট থেকে একটা জ্যাক-ড্যানিয়েলসের ফ্লাস্ক বের করে এগিয়ে দিলাম। বললাম, এই সুবর্ণ সন্ধ্যায় মারা যেতে কে চায়?

মেয়েটি আমার ফ্লাস্কের দিকে এক নজর দৃষ্টিক্ষেপন করে জানালো, আমি অপরিচিতদের সাথে ড্রিঙ্ক করি না। এইসব ক্ষেত্রে যেটা করতে হয় সেটাই করলাম। বললাম, ওয়েল আমি জ্যাক ফ্রস্ট। আপনি? মেয়েটি জানালো তার নাম নিপ। বললাম- ওয়েল নিপ, উই আর নো স্ট্রেঞ্জার এনি মোর; নেবে নাকি এক সিপ?
-নিলে কি হবে?
-নিলে সবাই রক্ষা পাবে। আজ এই মহাসময়ে, ব্রহ্মাণ্ড হতে চিরতরে বিলুপ্ত হওয়ার হাত থেকে।

তারপর মেয়েটি আমার হাত থেকে ফ্লাস্ক নিয়ে বড়-সড় একটা চুমুক দিলো। হয়তো মানবজাতিকে রক্ষা করার তাগিদেই। আর আমি, একটা ধন্যবাদের হাসি দিয়ে বললাম- ইউ জাস্ট সেইভড্ দ্য ওয়ার্ল্ড ইয়ং লেডি। লাইক আ গার্ডিয়ান।

মেয়েটি শিশুদের মতো খিলখিলিযে হেসে উঠলো। জিম মরিসনকে সে আমার মতোই অন্ধভাবে বিশ্বাস করে বলে মনে হলো। আলাপচারিতা যখন "কোন বিটনিকের ব্যাপারে আমাদের কার ফ্যাসিনেশন কেমন" পর্যায়ে, তখন হঠাৎ-ই আমার সময় ফুরিয়ে গেল। যে কারণে সেদিন হুট করেই অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলাম। তাই দেখে মেয়েটি ঠিক যতোটা অবাক, ততোটাই অভিভূত হয়েছিলো। আর সেদিন গভীর রাতে বাড়ির পথে হাঁটতে হাঁটতে আনমনে গেয়েছিলো,

তুমি আসবে বলে তাই
আমি স্বপ্ন দেখে যাই
আর একটা করে দিন চলে যায়...

---

পোস্টটি ২ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

মীর's picture

নিজের সম্পর্কে

স্বাগতম। আমার নাম মীর রাকীব-উন-নবী। জীবিকার তাগিদে পরবাসী। মাঝে মাঝে টুকটাক গল্প-কবিতা-আত্মজীবনী ইত্যাদি লিখি। সেসব প্রধানত এই ব্লগেই প্রকাশ করে থাকি। এই ব্লগে আমার সব লেখার কপিরাইট আমার নিজেরই। অনুগ্রহ করে সূ্ত্র উল্লেখ না করে লেখাগুলো কেউ ব্যবহার করবেন না। যেকোন যোগাযোগের জন্য ই-মেইল করুন: bd.mir13@gmail.com.
ধন্যবাদ। হ্যাপি রিডিং!