ঈদের আনন্দ, আনন্দের ঈদ
দেখতে দেখতে আরেকটা ঈদ চলে এসেছে। ঈদ মানেই বিশাল আনন্দ।বিশাল উৎসব। অথচ আমার কাছে কোনো উৎসবই মনে হচ্ছে না। কারণ ঈদ মানেই আমার কাছে বাড়ি যাওয়ার আনন্দ। বিশেষ করে কোরবানের ঈদ।
টিকেট যুদ্ধে পাশ করার পর গাড়ির জন্য অপেক্ষা, অপেক্ষা, অপেক্ষা...।দীর্ঘ যানজট, ধূলাবালি,প্রখর রোদ,মানুষের ভিড়,সব কিছু ভুলে যেতাম প্রিয়জনদের দেখলে।পথের ক্লান্তি মুছে যেতে একটুও সময় লাগতো না।কী যে খুশি লাগত!! খুশির সেই অনুভব মুখে বলে কিংবা লিখে বোঝানোর সাধ্য আমার নাই।যেদিন বাড়ি যেতাম তার আগের রাত থেকেই শুরু হয়ে যেত আমদের ঈদের আনন্দ। বাড়ি যাওয়া উপলক্ষ্যে ব্যাগ গোছানোর আনন্দ, আর খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে এই উত্তেজনায় দেখা যেত বেশির ভাগ সময়ই রাতটা নির্ঘুমই কেটে গেছে।
বাড়িতে গিয়ে কখনো দেখতাম আমাদের কোরাবানের গরু কেনা হয়ে গেছে। ঘরের সামনে বড়ই গাছের সঙ্গে বাঁধা।আবার কখনো আমরা যাওয়ার পর কেনা হতো। বাড়ির ছেলেরা সবাই কি আয়োজন করে কোরাবানের গরু কিনতে যেত। আর আমরা মেয়েরা অপেক্ষায় থাকতাম কেমন গরু কিনে আনে তা দেখার জন্য।
একবার ভীষন বায়না ধরলাম আমি গরুর হাটে যাব।শুনে সবাই তো টাসকি খাওয়ার যোগাড়। কত বয়স হবে তখন আমার-৬/৭ কিংবা ৭/৮।ঠিক মনে নেই।সবাই বলছিল প্রথমত গরুর হাটে মেয়েরা যায় না। দ্বিতীয়ত আমি ছোট মানুষ,গরু শিং দিয়ে গুঁতা মারবে। আমি এমনিতে গরু যথেষ্ট ভয় পাই। কিন্তু সেবার কোনো ভয় ডরকেই তোয়াক্কা করছিলাম না। আমার এমন অনড় অবস্থা দেখে আব্বা বুঝে উঠতে পারছিলেন না কি করবেন।পরে জ্যাঠা বললেন,আচ্ছা চল নিয়ে যাই ওকে।একটু চোখে চোখে রাখতে হবে আরকি। ব্যাস আমার খুশি আর দেখে কে।
ভাইয়াদের (কাজিন) মধ্যে বরকত ভাই, আতিক ভাই, সালাম ভাই, তাহের ভাইসহ আর কে কে ছিল ঠিক মনে পড়ছে না। তবে আরো অনেকেই ছিল।এরমধ্যে কারো একজনের দায়িত্ব ছিল আমাকে পাহারা দিয়ে রাখা যেন গরুর পায়ের নিচে না আবার পড়ে যাই বা শিং এর গুঁতা খাই।আমি তো খুশি মনে আব্বার হাত না ধরে জ্যাঠার হাত ধরে গরুর হাটে যাচ্ছিলাম কিন্তু বেশ কিছু পথ হাঁটার পরে ওরা আমাকে একটা দোকানের পেছন দিকে বড় একটা ঘরে রেখে বলল,তুই এখানে থাক। আমি তো চোখ কপালে তুলে বললাম,এখানে থাকব কেন? এটা কি গরুর হাট নাকি? আব্বা বললেন,পেছনে জানালায় তাকিয়ে দেখ,গরুর হাট দেখা যাচ্ছে।আমি পেছনে জানালায় তাকিয়ে দেখি পানপাড়া হাইস্কুলের বিশাল মাঠে অনেকগুলো গরু। আমি বললাম,আমি হাটে যাব। খুব সম্ভবত বরকত ভাইয়া বললেন,তুই কিছুক্ষণ এখান থেকে দেখ।একটু পর ভিড় কমলে তোকে আমরা নিয়ে যাব।আমি তো ভীষণ মন খারাপ করে ঐ দোকানের পেছনের জানালা দিয়ে গরু দেখছিলাম। হঠাৎ দেখি আমাদের পাশের বাড়ির এক ভাইয়া আরো লোকজনসহ গরুর হাটে যাচ্ছে।তারা ঐ দোকানে বসে চা খাওয়ার সময় ঐ ভাইয়া আমাকে দেখে অবাক হয়ে বলল,তুই এখানে কি করছিস? বললাম গরুর হাটে এসেছি।এরপর কিছুক্ষণ চিন্তা করে ঐ ভাইয়া আমাকে গরুর হাটে নিয়ে গেল।
এত গুলো গরু একসাথে দেখে আমি তো ভয় ই পেয়ে গেলাম।এদিক থেকে গরুর শিং,ওদিক থেকে গরুর শিং এর গুঁতার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে বাঁচাতে একটা সময় ভয়ে আমি কেঁদেই দিলাম।
ঐ ভাইয়া এবার নিজেদের গরু কেনা বাদ দিয়ে আমার আব্বা আর জ্যাঠাকে খূঁজতে লাগল।তাদেরকে খূঁজে পাওয়ার পর তারা আমাকে দেখে তো চিৎকার দিয়ে উঠল।ঐ ভাইয়াকে বলল,আমাকে কেন নিয়ে এল।যদি গরু গুঁতা দিত।ভাইয়া বলল,ও একা একা খুব মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে ছিল,তাই নিয়ে আসলাম। ততক্ষণে অবশ্য আমাদের গরু কেনা হয়ে গেছে।গরুর হাট থেকে গরু কিনে বের করে আনাটাও বেশ কষ্টের কাজ।আমি আব্বার হাত শক্ত করে ধরে ছিলাম।বারবার মনে হচ্ছিল এই বুঝি গরু গুঁতা দিবে।মনে মনে ভাবলাম কেন যে গরুর হাটে আসতে গেলাম!
আব্বার হাত ধরে নিরাপদে গরুর হাট থেকে বেরিয়ে এমন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আর মনে মনে বললাম আর জীবনে কোনোদিন গরুর হাটে যাব না।
গরুর হাটে আর না গেলেও বাড়িতে ঈদের আনন্দ কিন্তু একটুও কম লাগত না আমার।কেমন অদ্ভুত একটা প্রশান্তি কাজ করত। সব কিছু ভাল লাগত।পল্লী বিদ্যুতের দূরাবস্থার কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা থাকতাম অন্ধকারে।তারপরও আনন্দের সীমা ছিল না।
কি জানি একেই বোধ হয় বলে শিকড়ের টান।
মিস করছি ভীষন।মিস করছি সবাইকে। মিস করছি আমার শৈশব, কৈশর এর উৎসব মুখর ঈদগুলোকে। মিস করছি আমার গ্রাম, গ্রামের সোঁদা মাটির ঘ্রাণ,ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর অদ্ভুত মায়াকে।
জীবন হয়তো এমন ই।
ঈদ মুবারাক। বাড়ি যাওনি এবার?
ঈদ মোবারক তানবীরা'পু। আমাদের বাড়িতে যাচ্ছি না ৫ বছর হয়ে গেছে। সময় যে কিভাবে কেটে যাচ্ছে বুঝতেই পারিনা। এবার শ্বশুর বাড়িতেও যাওয়া হয়নি। আপনি কেমন আছেন? ঈদ কেমন কেটেছে?
ঈদ কাটলো এবার বোরিং!
ঈদ শেষ হয়েছে সেই কবে! পুরনো লেখাটাই পড়লাম।
বাসি হলে কি হবে! খাঁটি জিনিসের টেষ্টই আলাদা
মন্তব্য করুন