আজ আমার বুবুর জন্মদিন
সেদিনও মাঘের হাড় কাঁপানো শীতটা বেশ জেঁকেই বসেছিল। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি বাসায় আম্মা নেই, আব্বা নেই, শেফু আন্টি নেই। নানু বসে বসে কাঁদছিল।বাসা ভর্তি ছিল মেহমান।নানা, নানু, শেফু আন্টি,শেফু আন্টির ছেলে মিশু, মেয়ে শান্তা, জুয়েল মামা, রিয়েল মামা আর আমরা তো আছি।
সকাল বেলা থেকে আমাদের অপেক্ষা শুরু। একে একে আশেপাশের সব আন্টিরা এসে জিজ্ঞেস করছিল আমার আম্মা কেমন আছে, হাসপাতাল থেকে কোনো খবর আসছে কিনা। অনেকের আবার নানান ধরনের আশংকা। রোজার মাস ছিল। নানু কাঁদছিল আর আমাকে বলছিল আম্মার জন্য যেন দোয়া করি। সন্তানের দোয়া নাকি আল্লাহ বেশি কবুল করে।নানুর কথা শুনে আমি জায়নামায বিছিয়ে কুরআন শরীফ পড়া শুরু করি।চোখের পানিতে সব ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল।তবুও পড়ে যাচ্ছিলাম।
দুপুর গড়িয়ে বিকাল। নানা বাসায় এসে নানুকে কি বলল কে জানে নানু আর কিছুতেই বাসায় থাকবে না। হাসপাতালে যাবে , আম্মাকে দেখবে। এর মধ্যে কি কি যেন রান্নাও করে নিলেন।যেন আমরা খেয়ে নিতে পারি। ইফতারের পর পরই নানু আমার উপর বাসার সবার দায়িত্ব দিয়ে হাসপাতালে চলে গেলেন। নানু চলে যাওয়ার পর কেমন অজানা আশংকায় আমার চোখ ফেটে কান্না চলে আসল।খালি মনে হচ্ছিল আম্মা ভালো হবে তো!আম্মাকে ছাড়া আমরা কিভাবে থাকব?
অন্য দিন খাওয়া দাওয়া নিয়ে বাসায় কত হৈ চৈ। এটা খাবে না, ওটা খাবে না, সেদিন বাসার বাচ্চাগুলোও এত সমঝদার হয়ে গেল যে কেউ কিছু নিয়ে জ্বালাচ্ছিল না। যা দিচ্ছিলাম তাই খাচ্ছিল। অপেক্ষা করতে করতে রাত প্রায় দশটা বেজে গেল।
অপেক্ষার প্রহর যেন আর শেষ হচ্ছিল না।
রাত প্রায় ১১ টার দিকে আব্বা আর শেফু আন্টি বাসায় ফিরেছে। শেফু আন্টি ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, তোর একটা ভাই হইছে রে ঝর্ণা। রাজপুত্রের মতো সুন্দর। আমি কোনো রাজপুত্রের চেহারা কল্পনা করতে পারছিলাম না। একটা ছোট বাবু এসেছে আমাদের ঘরে, আম্মা সুস্থ আছে এ কারণেই আমি খুশি। আব্বা বললেন বিল্ডিং এর সবার বাসায় গিয়ে বলে আয় তোর একটা ভাই হয়েছে। আমি সবার বাসায় বাসায় গিয়ে বলে আসলাম, আমার একটা ভাই হয়েছে। সব আন্টি আমার গাল টিপে আদর করে বললেন ঝর্ণার পা তো এখন আর মাটিতে পড়বে না ,তিন ভাইয়ের এক বোন। যেন সাত ভাই চম্পার জায়গায় তিন ভাইয়ের চম্পা বোন।
খুব ভোরে আব্বার সাথে মেমন মাতৃসদন হাসপাতালে গিয়ে বিছানায় আম্মা শুয়ে আছে। আর আম্মার পাশে একটা নীল রঙের কম্বল পেচিয়ে ঘুমাচ্ছে আমার রাজপুত্রের মতো সুন্দর ভাই। নানু আমাকে দেখে ঘুমে থাকা অবস্থায়ই আমার রাজপুত্র ভাইকে আমার কোলে দিয়ে বলল,তোর আদর আরো বাড়ল রে আপুমনি!!
ছোট্ট রাজপুত্র ভাইটাকে কোলে নিয়ে সে কি অদ্ভুত অনুভূতি আমার!! কি ছোট্ট পুতুলের মতো নরম, তুলতুলে একটা পুটলি আমার কোলে। ওমা কিছুক্ষণ পরেই দেখি চোখ খুলে পিট পিট করে দেখছে সব কিছু।
আমি, আমার বড় ভাই সুমন, মেজো ভাই রিমন আমরা যেন একটা জীবন্ত খেলনা পেয়েছি। আব্বা ছোট ভাইটার নাম রেখেছে জীবন। আমরা ডাকি বাবু। বাবুকে কোলে নেয়ার জন্য আমাদের সে কি কাড়াকাড়ি! আমরা আমাদের স্কুলের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে প্রায় দিন বাবুর জন্য কোনো না কোনো খেলনা নিয়ে আসতাম।বাবু যখন আধো আধো কথা বলত সে কি খুশির বন্যা বয়ে যেত আমাদের ঘরে।বাবু যেন বিশাল আনন্দের ভান্ডার নিয়ে এসেছিল আমাদের ঘরে। আমাদের জীবনে।
বাবু এখন যথেষ্ট বড় হয়েছে। বাবুর একটা বাবু ভাগ্নি (জাইফা)আছে। ওকে এখনো সবাই বাবু ডাকে।এমনকি জাইফাও ওকে বাবু ডাকে।মাঝে মাঝে আবার ইউনিক রাখার জন্য বেবী বলে। জাইফাকে যদি বলি ওকে ছোট মামা ডাকো, জাইফা চিন্তিত হয়ে বলে, তাহলে বেবী কে বলবে? আমার আম্মার , আব্বার, আমার, সুমনের, রিমনের, শামীমের এবং জাইফার যে কোনো প্রয়োজনে বাবু থাকে সদা প্রস্তুত।আব্বার মতো কি সুন্দর বলতে শিখেছে, ভাবছ কেন আপু, আমি আছি না?? ওর কথা শুনে আমি না হেসে পারি না।আমার রাজপুত্রের মতো ছোট ভাইটা আমার চেয়ে বেশি না মাত্র ১৪ বছরের ছোট।
আজ আমাদের সেই রাজপুত্রের মতো সুন্দর ছোট ভাইটার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন বুবু(আমি আবার আমার ভাইটাকে আদর করে বুবু ডাকি। ইদানীং আমার কন্যাও তাকে বুবু ডাকে)।
আমার বড় দুভাই বাবুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্রতিবছরই ঘরোয়াভাবে কোনো না কোনো চমকের আয়োজন রাখে। এ বছর কি চমক আছে তা আমি এখনো জানি না।
আপনার ভাইকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। লেখাটা খুবই চমৎকার হয়েছে। আপনার আসলে প্রতিদিন একটা করে লেখা দেয়া উচিত। নাহলে আপনার প্রতিভার প্রতি অবিচার করা হবে
কিছু বলার ভাষা নেই।
অশেষ কৃতজ্ঞতা মীর ভাই।
জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
মন্তব্য করুন