ইউজার লগইন

মনির হোসাইন'এর ব্লগ

দ্বৈরথঃ'ওঙ্কার-বাঙলা' আহমদ ছফা ও শহীদুল ইসলাম খোকন

''বাংলাদেশের কোন উপন্যাস ক্ল্যাসিকের মর্যাদা পাবে বলে আপনি মনে করেন ? আহমদ ছফা’র ‘ওঙ্কার’'

বন্ধ্যাকাল ও আমি

প্রতিদিন ডিউটি থেকে আসি রাজ্যের যতো বিষাদ-ক্লান্তি নিয়া । প্রতিদিনই ভাবি দেবো কালই চাকরি ছেড়ে ! সেই কাক-সকালে বেরোই আর ফিরি মোরগ-সন্ধ্যায় । শালা গুল্লি মারি কলেজ মাস্টারির ...দিলাম কালই রিজাইন ! না হয় না , চাইলেই পারি না । আসা-যাওয়ায় টানা চার ঘন্টা ডিউটি আর ক্লাশ করার পর আর শরীরে কুলোয় না । এই টানাপোড়নের মাঝে যে টুকু হৃদয়ে পুলক জাগায়ে যায় তা হলো মেঘালয় পাহাড় ! প্রতিদিন এই মেঘালয়-ই কী আমাকে এই দীর্ঘভ্রমণে নিয়ে যায় ? হয়তো !

প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ , কথা দিলাম আমিও আছি আপনার সাথে

৫ মার্চ ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ আমার মায়ের গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ে । ২১ মার্চ থেকে আমার অনার্স পরীক্ষা , কী করি , কোথায় যাই , কিভাবে চিকিৎসা করাই , টাকা কীভাবে সংগ্রহ করি সেই চিন্তায় আমি অস্থির । প্রথমে সিলেটে কয়েকজন রেডিওলজিস্টকে দেখালাম । তারা এখুনি চিকিৎসা শুরু করার জন্য পরামর্শ দিল । কিন্তু একটা কথা কিছুতেই বুঝতেই পারছিলাম না , মায়ের ক্যান্সার কী পর্যায়ে আছে ? এই কথা ডাঃ ত্রিদিবকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন - অবস্থা বেশ সুবিধার না , আপনাদের এখুনি ক্যামোথেরাপি , রেডিওথেরাপি শুরু করা দরকার ! আর যদি টাকা , পয়সা বিশেষ থাকে তো আপ্নেরা উনারে সিঙ্গাপুর নিয়ে যান ! বুঝলাম অবস্থা আসলেই খারাপ । তাড়াতাড়ি করে ঢাকায় এপোলো হসপিটালে নিয়ে গেলাম কিন্তু ওখানে গিয়ে তো পুরাই তো , ঐ হসপিটালে একজনও ক্যান্সার স্পেশালিষ্ট নাই !

ইরানি সিনেমা-বিপ্লবঃ 'দ্য চিলড্রেন অব হ্যাভেন' ও মাজিদ মাজিদি ।

ইরানি বিপ্লব পরবর্তী যে সংস্কার কার্যক্রম চলে তার একটা বড় প্রভাব পড়ে থাকবে ইরানি শিল্প-সাহিত্যে । প্রাগৈতিহাসিক কিংবা নিকট অতীতে সাহিত্য-সংস্কৃতির যে পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা সমজদার ইরানীয়রা তা তাঁদের দুর্জনেরাও (ইঙ্গ-মার্কিন ! এম্নিতেই ত্যানারা পুরাই আউলা জাউলা মাথা খারাপ ঝাতি, শাশক-শোষকেরা জাতি নয়! এরা সব সময়য়ই দুড়া কাউয়া ছিল , পরে একসময় এক হইয়া পাতি কাউয়ার লগে প্রতারণা কৈরা শেক্সপিয়ররে ধইরা কুকিল হইয়া গ্যাছে কিংবা আছে, যাউজ্ঞা আইজ এই থাকুক , এই আলোচনা অন্যত্র করমুনে) অস্বীকার করে না । বোধকরি এর একটা বড় প্রভাব পড়ে গেছে ইরানীয় সিনেমায় ।

মুক্তিযুদ্ধের অজানা-অলিখিত ইতিহাসঃ বাসুদেবস্মরণ বনাম বাউধরন !

মোঘল , বর্গি , ইংরেজ ক্রমান্বয়ে এল , এ গায়ে কিংবা আর পাঁচ-দশ গাঁয়ে যে আর্থ-রাজনৈতিক পরিবর্তন সেভাবেই বোধকরি পরিবর্তন হয়েছিল কিংবা হয়ে থাকবে। চারিদিকে নলুয়ার হাওর বেষ্টিত । চারিদিকে জল আর জল । যেদিকে চোখ যায় অথৈ জল । বছরের প্রায় আট মাস জলবেষ্টিত থাকে এই গ্রামসহ আশেপাশের সহোদর গ্রামগুলি । ঠিক উত্তর-পূর্ব দিকে থানা/উপজেলা সদর , আর উত্তর-পশ্চিম জেলা শহর । সোজা দক্ষিণে মাইল দুয়েক হাঁটলেই কুশিয়ারা নদী । আর্থ-রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনে তাই এই গ্রাম কিংবা আশেপাশের গ্রামগুলোর যে ভূমিকা কিংবা চিন্তা-ভাবনা নাই তা এতোটা সরল করে বলা যায় না । কারণ

হেমন্তে নাও , বর্ষায় পাও

সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড

উন্মাত্তাল '৭১ কলকাতার বনগাঁয়ে পূর্ববঙ্গের হাজার হাজার শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে । স্বদেশ-স্বজনহীন মানবেতর জীবন-যাপন । শরণার্থী ক্যাম্পে তখন ক্ষুধা আর মৃত্যুর সাথে মানুষের সে কী কাণ্ড ! স্বদেশ জ্বলছে , পালিয়ে এসেও এই ক্যাম্পে লড়তে হচ্ছে ক্ষুধার সাথে , মরণের থেকে । একতিল পরিমাণ জায়গাও ফাঁকা নাই ক্যাম্পগুলোতে । কোথাও ত্রান-খাবারের সংবাদ পেলেই সবাই যে যার মতো দৌড়ে খাবার সংগ্রহের লড়াই করে ছিনিয়ে নিচ্ছে । মরা লাশ , কলেরা-ডায়রিয়ায় মরণযন্ত্রণা ভোগা লোকদের সামনে তখন শুধু বাঁচার আকুতি । যে মরণ-ভয় সীমান্তের এপারে টেনে আনল সেই মরণ-ই কীনা অদূরে অবেলায় খলখলিয়ে হাসছে । চারিদিকে বন্যার পানি । মেঘ-বৃষ্টি অবিরাম হচ্ছে । এ যেন মহাপ্রলয়ের তাণ্ডবনৃত্য ।

চিত্রার পারে লাল পিঁপড়ার হস্তী দর্শন !

''বাবার দেশের মাটি ,
দাবদাবায়া হাঁটি !''

এই আত্মপ্রসাদ নিয়ে এখনো বাবার দেশেই আছেন উকিল শশীকান্ত সেনগুপ্ত । কিন্তু ততোদিনে বাংলা হয়েছে দ্বি-খণ্ডিত । ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ হল । কেউই জানলো না ,বুঝলো না কি থেকে কী হয়ে গেল ! দুই নেতা বৈঠক করে দেশটাকে ভাগাভাগি করে নিলেন । একটা হল পাকিস্তানের অংশ আরেকটা ভারতের । এই পূর্ব-পাকিস্তানের অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশের চিত্রা পারের নড়াইলের বাসিন্দা শশীকান্ত সেনগুপ্ত । ১৯৪৭ এর দেশভাগের ফলে শশীকান্তের গ্রামের অধিকাংশ হিন্দুরা ভয়ে আতঙ্কে দেশ ছেড়ে পালাতে লাগলো । শশীকান্ত অনড় । তাঁর এককথা

... এই চিত্রা নদী ছেড়ে স্বর্গেও সুখ নাই !

citra

স্বাধীনতার কবি শামসুর রাহমান স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি ।

শামসুর রাহমান

"স্বাধীনতা তুমি
রবি ঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান ।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুলের ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দুলানো
মহান পুরুষ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা ।"

আদমের মুক্তি ! ময়নার অন্তর্যাত্রাঃ রানওয়ের তারেক মাসুদ ।

 তারেক মাসুদ
কতো সাধের ছাওয়াল আমার রাস্তায় পইরা মরে ... 'মুক্তির গান' । নাই । সব শ্যাষ ! তারেক মাসুদ জীয়ে নাই ! আছে তার মুক্তির গান মাটির ময়না অন্তর্যাত্রা রানওয়ে . . .

আদম সুরত(১৯৮৫) । বরেণ্য শিল্পী এসএম সুলতানের উপর করা তারেক মাসুদের তথ্যচিত্র । ক্যানভাসের সুলতান বন্দী হলেন সেলুলয়েডের ফিতায় । নড়াইলের আদম সুলতানের কীর্তিকে জানান দিতে ভালবেসে শ্রদ্ধা জানাতে মাসুদ সিনেবন্দী করলেন তাঁকে । নাম দিলেন

আদম সুরতে পোস্টার
'আদম সুরত' । তারেক আপনি জানতেন ... জেনেই আপনি এই নামকরণ করেছেন । এই পোড়াদেশে আদমের চেহারা কী হয় তা আপনার জীবন দিয়েই প্রমাণ করে গেলেন ।

বিবর্ণ ক্রান্তিকালের চিত্রভাষ্য 'কাঁটাতার ' ও 'দ্যা প্যাশন অফ দ্যা খ্রাইস্ট'

নব্বই পরবরতী কিংবা তারও পরে সিনেমায় কেমন জানি একটা স্থিরতা স্থিরতা ভাব এসে সিনেমাকে আচ্ছন্ন করে দিলো । বিশেষ করে বাংলা সিনেমায় কেমন জানি একটা নতুন পাকে মোড় নিলো । দেশীয় ঘটনাপ্রবাহ ছেড়ে বাংলা সিনেমা আন্তর্জাতিকতার গলিগুজি দিয়ে প্রবেশেধীকার চাইলো আন্তর্জাতিকতার । এমনি এক সিনেমা thumb_2011-04-15-17-05-34-080429900-3_0.jpg' কাঁটাতার ' পরিচালক বাপ্পাদিত্য বন্দ্যেপাধ্যায় । ' এপারের হাওয়া এপারেও যায় , এপারের মেঘ অপারেও ভেসে বেড়ায় , এপারের আকাশ অপারেও এক , এপারের টাকা অপারে চলে তেমনি অপারেরটাও শুধু এই কাঁটাতারটাই বারবার মনে করিয়ে দেয় এই ভূখণ্ড আলাদা !

হেমন্তের সন্ধ্যায় আগুন ও আমার স্কুলে প্রত্যাবর্তন !

আমার যখন বছর চার, তখন আমার বাবা জীবিকার তাগিদে প্রবাসে চলে যান । বড় আপু,আমি আর আমাদের সবার ছোটো আনু । মা সংসারের নানান ঝামেলায় সারাদিন ব্যস্ত । বড় আপু তখন ক্লাস টু'তে পড়ে । কিন্তু স্কুলে যেতে যতো অনীহা । তখন আমিও আপুর সাথে বই খাতাবিহীন স্কুলে যেতাম । আমি তখনো স্কুলে ভর্তি হইনি । দেখতাম আপু স্কুলের কাছাকাছি আসলেই কেমন জানি ভয়ে গুটিয়ে যেতো । এটা ক্যানো করতো আমি বুঝতাম না।

আমার বর্ণমালা, আমার পাঠশালা ।

তখন আমাদের কতো বয়স, আমরা জানিনা । কতোইবা হবে...চার কী পাঁচ । কী দিন ছিলো আমাদের । নাওয়া নেই, খাওয়া নেই সারাদিন খেলাধুলা আর হৈ হুল্লোড় । অজপাড়াগাঁয়ের সেই সোনালি দিনগুলি আজ আর নেই । বছর পাঁচেক আগেও এই ভাঁটির গ্রামে কোনো বৈদ্যুতিক আলো ছিলোনা । কিন্তু আজ ঘরে ঘরে সৌরবিদ্যুৎ । এমন কী এই বৈদ্যুতিক ক্রাইসিসের মধ্যেও এই ভাঁটির গ্রামে বিদ্যুৎ আসার সব বন্দোবস্থ প্রায় হয়ে গেছে । বিদুতের খুঁটিও ঘরের দ্বারে দ্বারে ফেলে রাখা হয়েছে । হঠাৎ করে গ্রামটা যেনো এক অজানা শিহরণে শিহরিত হয়ে উঠলো । চোখের সামনে পুরো গ্রামটা কেমন জানি বদলে গেলো ।

'মেঘে ঢাকা তারা' : নীতা,নারী ও দেশভাগ ।

মধ্যবিত্তের মান কোন চরায় গিয়ে ঠেকে ! পূর্ববঙ্গের বাস্তুহারা এক স্কুলমাস্টারের খেদোক্তি এটা । ততোদিনে সব শ্যাষ । দেশ ভাগ হয়েছে । পূর্ববঙ্গের স্কুলমাস্টারের বিশাল পরিবারের ঠাই হয়েছে কলকাতার এক গিঞ্জি বস্তিতে । চক্রবর্তী মশায় অনেক কষ্টেসৃষ্টে একটা স্কুলে চাকুরীও জুটিয়ে নিয়েছেন । কিন্তু সংসারের চাকা যে সেই চরকার তেলে চলেনা , টিউশনি দিয়েও ছ'জনের সংসারের রাশ টানা যাচ্ছেনা । সোমত্ত দুই মেয়ে,ধাড়ি দুই দুইটা ছেলে আর কর্তা গিন্নি এই নিয়েই বাঁশের বেড়া আর হোগলা পাতার ছাউনি দিয়ে আটকানো ছোটো ছোটো তিনখানা ঘর নিয়ে চক্রবর্তী মশায়ের সংসার । বড় ছেলে কোনোরকমে টেনেঠুনে পাশটাশ করে বেকার । তবে তার অসম্ভব ভাল গানের গলা ; প্রতিদিন নিয়ম করে রেওয়াজও করে ।