দারিদ্র পীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচী শুরু হচ্ছে :)
কিছুক্ষণ আগে দৈনিক যায় যায় দিনে একটা খবর দেখে মনটা ব্যাপক খুশিতে ভরে উঠলো। সরকার দেশের দারিদ্র্যপীড়িত এলাকার ৮৬টি উপজেলায় ১হাজার ১৪২কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। আজ একনেক সভায় অনুমোদন পেলে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
ভালো লাগার একটা বড় কারণ হলো ব্যক্তিগতভাবে আমার সংস্থা এবং আমারও এতে অবদান আছে। আমরাই প্রথম এই দাবিটি তুলি এবং দাবি পূরণে পরিকল্পিত অ্যাডভোকেসি চালিয়ে যাই কয়েক বছর ধরে। ২০০৩ সালে কমনওয়েল্থ এডুকেশন ফান্ড (সিইএফ) এর সহযোগিতায় একশনএইড ও দেশের ৬টি অঞ্চলে স্থানীয় ৬টি সংগঠন (এনআরডিএস, ওয়েভ ফাইন্ডেশন, উত্তরণ, জাবারাং, এফআইভিডিপি, কোস্ট) আমরা একটি গবেষণা ও অ্যাডভোকেসী কার্যক্রম শুরু করি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো প্রাথমিক শিক্ষার মান কমে যাওয়ার কারণগুলো চিহ্নিত করা এবং স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অ্যাডভোকেসী করা মান উন্নয়নে। ৬টি সংস্থা আলাদা আলাদাভাবে গবেষণা পরিচালনা করি। আমরা মূলত ভৌগলিকভাবে পিছিয়া পড়া অঞ্চলগুলোই বেছে নিই। নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষার মান কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটা কারণ হিসেবে আসে ক্ষুধা ও দারিদ্র। শিশুরা এমনও বলে যে, "হেডে বোক লাইগলে আঁর স্কুল বালা লাগে না"। আসলেই তাই। দুপুরের পর পরই প্রাথমিক বিদ্যায়লগুলো প্রায় ফাঁকা হতে থাকে। কারণ অধিকাংশ শিশুই তেমন কিছু না খেয়েই স্কুলে আসতো। আমাদের গবেষণাটি আমরা "নোয়াখালীর প্রাথমিক শিক্ষা: স্বপ্ন ও বাস্তবতা" প্রকাশ করি। এবং প্রধান প্রধান অ্যাডভোকেসি ইস্যু হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবার দেয়ার ইস্যুটি নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম চালাই। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক জনমতও তৈরি হয়। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ইস্যুটি তুলতে আমরা সক্ষম হই।
ড. হোসেইন জিল্লুর রহমান এবং তাঁর সংগঠন পিপিআরসি আমাদের নেটওয়ার্কে সহযোগী সংগঠন হিসেবে ছিলেন। এবং দুপুরের খাবার বিষয়টি সহ অন্যান্য ইস্যুতেও অ্যাডভোকেসি কার্যক্রমে সহায়ক ভূমিকায় ছিলেন। সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (পিআরএসপি) প্রণয়নে ড. হোসেইন জিল্লুর রহমান অন্যত ম একজন সদস্য ছিলেন। তাঁকে আমরা এর গুরুত্ব বোঝাতে সক্ষম হই। এবং পিআরএসপিতে বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবার দেবার প্রস্তাব করা হয়। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ছিলো দুপুরের খাবারের দাবি বিষয়ক অ্যাডভোকেসি ইস্যুতে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দলিলে অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় আমাদের অ্যাডভোকেসির প্রচারে দারুণ কাজে দেয়। পরবর্তীতে তত্বাবধায়ক সরকার সময়ে উপদেষ্টা হন ড. হোসেইন জিল্লুর রহমান। এই ইস্যুটিও তাই সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়।
যেহেতু এর সাথে অনেক খরচের বিষয় জড়িত, তাই সরকার বাস্তবায়নে অনেক গড়িমসি করছিলো বলা যায়। আজকের একনেকে বৈঠকে পাস হলে এটা একটা যুগান্তকারী ঘটনা হবে নি:সন্দেহে। দেশের দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় কর্মসূচীটি বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার মান বাড়ার পাশাপাশি শিশুদের পুষ্টির চাহিদাও কিছুটা পুরণ হবে। কর্মসূচির সাফল্য কামনা করছি। এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট দূর্ণীতিমুক্ত থেকে শিশুদের জন্য কাজ করবেন এই দাবি রাখছি।
খুবই ভালো সংবাদ। ধন্যবাদ এর সাথে জড়িত সবাইকে। যদিও লুটপাটের পর বাচ্চাদের পেটে কতটুকে যাবে আল্লা জানে। তারপরো ওরা যে কিছু পাবে তাতেই ভালো লাগছে।
সেটাই। খাবারের টেন্ডার পেতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ আবার তান্ডব শুরু করে কিনা, আল্লাই জানে!
খালি আল্লাহ জানবে কেন? আমরাও তো জানি...অতীত অভিজ্ঞতা আছে না!
সবকিছুর পরেও যদি বাচ্চাগুলোর কিছুটা উপকার হয়, তাহলে সেটা খুশির খবর। মুকুল ভাইরে অভিনন্দন।
এটা তো দারুণ সুখবর!!!!!!
এরকম উদ্যোগকে কাজে রূপান্তর করতে পারলে সাধুবাদের ভাষা নেই।
এতোদূর কাজ এগিয়ে আনার জন্যে অভিনন্দন... :) কিন্তু রায়হানভাইয়ের কথার সাথে একমত, শতেকহাত ঘুরে কতটুকুন আসবে বাচ্চাদের হাতে, আর কতদিনই বা টিকে থাকবে দেয়াটা ... এটাই দেখার বিষয়...
ডব্লিউএফপি আর ইউএসআইডির একটা প্রকল্প তো আছে এরকম। তবে পাইলট প্রকল্প সম্ভবত। পুরো দেশে হলে দারুণ ব্যাপার হবে।
ঠিক বলছেন মাসুম ভাই। আমাদের দাবি ছিলো সারা দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবার। নিদেনপক্ষে দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে দ্রুততম সময়ে শুরু করা। আশা করি সারাদেশেই পর্যায়ক্রমে শুরু হবে। পিআরএসপিতে কিন্তু সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্যই প্রস্তাব করা হয়েছে। এর জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৫০০০ কোটি টাকা।
এছাড়া আমাদের প্রস্তাব ছিলো স্থানীয় ভিত্তিতে খাবার তৈরি করা। যদিও এই প্রস্তাবে সেটা নেই। ডব্লিউএফপি'র বিস্কুট প্রোগ্রামটাকেই বাস্তবায়ন করা হবে মনে হচ্ছে!
মুকুলকে অভিনন্দন। আশাকরি কিছু বাচ্চা অন্তত উপকার পাবে।
এদের প্রাপ্য সব দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থাকুক।
মুকুলকে ধন্যবাদ।
এত খুশীর খবর অনেক কাল শুনি নাই। শিশুরাই দেশের ভবিষ্যত। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি দেশের প্রতিটা শিশুকে অন্তত একবেলা খাওয়ানোর টাকা আমাদের দেশের সরকারের আছে। প্রয়োজন সদিচ্ছা এবং হৃদয়বান মানুষদের হাতে এ জাতীয় কাজের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া। মুকুল ভাইকে ধন্যবাদ।
মুকুলরে ধইন্যা
অনেক দুঃখিত, কারণ আমরা বন্ধুতে বারবার শুধু নিজের পুরনো লেখার লিংক দিতে হচ্ছে। এই বিষয়ে আমি বেশ আগে একটা লেখা তৈরি করেছিলাম - http://www.sachalayatan.com/goutam/33007
কিন্তু বর্তমানে আমার সেই অবস্থান বদলেছে। স্কুল ফিডিং কর্মসূচির কারণে আদতে স্কুল কিংবা বাচ্চাদের উপকার হয়েছে, সেরকম কোনো গবেষণা বা কাজ সম্পর্কে কি আপনার জানা আছে? অনেক খোঁজার পরেও আমি সেরকম কিছু পাই নি। এ কাজে সংশ্লিষ্ট অনেকেই কিন্তু মনে করেন- এই কর্মসূচি থেকে বাচ্চারা দু-চার মাস উপকৃত হলেও কর্মসূচির ব্যর্থতার কারণে স্থায়ী কোনো উপকার পাওয়া যায় না।
এ ব্যাপারে আপনার কাছ থেকে বিস্তারিত লেখার আশা রাখছি। সে অনুযায়ী নিজের ধারণা আরো পরিষ্কার করার জন্য আপনার সাথে আলোচনা করতেও ইচ্ছুক। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ গৌতম দা। আপনার লেখাটা পড়লাম। আপনার লেখাটায় স্কুলে খাবার দেয়ার ফলে যে ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে, আমি তার সাথে একমত। দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে যে তা ঝরে পড়া রোধে ভূমিকা রাখবে, সে বিষয়ে আমি নি:সন্দেহ। অন্তত আমার অভিজ্ঞতা এবং জনমানুষের সাথে মতবিনিময় থেকে তথ্য থেকে এটা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়।
এই সম্পর্কে আমার সরাসরি অভিজ্ঞতা নেই। যেহেতু আমাদের অঞ্চলে কোথাও এ কার্যক্রম চালু হয়নি কখনো। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় যে, বাচ্চাদের উপকার না হওয়ার কোন কারণই নেই। অবশ্য দূর্ণীতির কারণে আমাদের দেশে যে কোন প্রকল্প সম্পর্কেই শংকায় থাকতে হয় সব সময়। এমনকি ভালো উদ্যোগও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার উদাহরণ আছে অনেক।
কিন্তু শুরু তো করতেই হবে, নাকি?
আরেকটা কথা। আমাদের অবস্থান কিন্তু ছিলো "মিড ডে স্কুল মিল" অথবা বাংলা বললে "দুপুরের পূর্ণাঙ্গ খাবার" এর। এলাকায় সাধারণ মানুষের দাবিও ছিলো তাই। সবার দাবি ছিলো স্থানীয় ব্যবস্থাপনাতেই খাবার তৈরি করার পক্ষে। কোন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর বিস্কুটের পক্ষে নয়।
কিন্তু পুরো পৃথিবীতেই যেভাবে কর্পোরেটাইজেশন হচ্ছে, স্থানীয় মানুষের স্বার্থ রক্ষার চেয়ে কর্পোরেট স্বার্থ চিন্তা প্রাধান্য পাচ্ছে, তাতে করে বিস্কুটের বাইরে সরকারের চিন্তাধারা কখনো যাবে বলে মনে হয় না! এই নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিৎ আমাদের।
অ, ট- কী খবর? কেমন আছেন? অনেক দিন কথা হয় না.।
শামীম ভাই, আছি ভালৈ। আমরাবন্ধুতেই পাবেন নিয়মিত।
আপনার খবর কী? আশা করি ভালো ছিলেন। ফ্রি হলে ধুমায়া লিখতে থাকেন।
মন্তব্য করুন