ইউজার লগইন

অবান্তর ভাবনা

[সতর্কতাঃ ০২ জানুয়ারি (রবিবার), ২০১১ ১১:০২ অপরাহ্ন আমার ব্লগে প্রকাশিত, 'আমরা বন্ধু' ব্লগের প্রথম পাতায় দেওয়া যাবেনা ] ।

এখন আর কেউ ফোন করেনা আমাকে । যখন আমার ব্যাস্ততা ছিল অঢেল, ধীরে-সুস্থে খাওয়া বা গোসল করবার মত সময়ও যখন আমার ছিল না, তখন টেলিফোনের রিংটোন আমাকে সর্বদা তাড়া করে ফিরতো । এখন আমার ব্যাস্ততা নাই, নাই এমন কোন কাজ, যা যথাসময়ে না-করলে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা আছে । দিনের পর দিন চলে যায়, আমার মোবাইল পড়ে থাকে অলস, নিথর, বোবা হয়ে। রিংটোন শুনবার আশায় আমার কর্ণযুগল সদাজাগ্রত থাকলেও তাদের হতাশ হতে হয় অহরহ ।
তখনও মোবাইলের ছড়াছড়ি-হুড়োহুড়ি শুরু হয়নি । হাতে গোনা কিছু সংখ্যক ভদ্রলোক হাতে মোবাইল ফোন হাতে নেবার সৌভাগ্য অর্জন করেছে । বিটিটিবি’র টেলিফোন সংযোগ পাওয়া আর সোনার হরিণ পাওয়ার মধ্যে তখন খুব বেশি ফারাক ছিলনা । মন্ত্রণালয়ের চাকরির সুবাদে বাসায় একটা টেলিফোন পাবার সৌভাগ্য হয়েছিল-অবশ্য তার জন্য সরকারকে (‘বিটিটিবি’কে) দিতে হয়েছিল বিশ হাজার টাকা । এর কিছুদিন পরেই মন্ত্রণালয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ (?) শাখার দায়িত্ব অর্পিত হয় আমার উপরে । আর সে কারণে বাসায় দেওয়া হলো সরকারি টেলিফোন । দুইটা টেলিফোন আমার বাসায় – মন আমার পুলকিত !
পুলকের অবসান হতে সময় বেশি লাগলো না। সকাল-সন্ধ্যা অফিস করে বাসায় ফিরে শ্রান্ত দেহ - ক্লান্ত প্রাণ যখন বিশ্রামের আশায় শয্যামুখী তখনই হয়তো রিং বেজে উঠল । জরুরি তলব, না-হয় অতি জরুরি কোন খবর আদান-প্রদানের তাড়া । যখন-তখন বসেদের তাড়া, তদবিরকারকদের তেল-তেলানী, ঠেকায় পড়া লোকজনের আবদার কয়েকদিনের মধ্যেই আমার দুইটা টেলিফোন থাকার পুলক ঘুচিয়ে দিল । ফোন বাজলেই একরাশ, নাকি একশরাশ বিরক্তি আমাকে বিমুগ্ধ(?) করে তোলে । অতপর নিজে টেলিফোন ধরা বন্ধ করলাম, পরিচিত বা অফিসের কোন জরুরি বিষয় ছাড়া অন্য কোন ফোন আমাকে যেন ধরতে বা করতে না-হয় তা নিশ্চিত করবার প্রয়াস নিলাম । বাসার সবাইকে মিথ্যা বলতে হয় কিভাবে, তার ট্রেনিং দিলাম – সবাইকে মিথ্যুক হতে শেখালাম । আমি বাসায় থাকলেও অপরপ্রান্তের ব্যক্তি জানতে পারেন যে, আমি বাজারে বা গোসলখানায় বা নিদ্রামগ্ন ।
সে সময় আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব ছিল । আমার অনেক আত্মীয়-স্বজনও ছিল তখন । সকলের ভাল সংবাদ, খারাপ খবর, বিয়ে-জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, হাত ভাঙা, পা ভাঙা, চোখ উঠা, পেট খারাপ হওয়া, সন্তানসম্ভবা হওয়া সকল খবরই যথাসময়ে সবার আগে আমার কর্ণকুহরে প্রবিষ্ট হতো । দুই মাস পরে কেউ বাসা বদল করবে সে খবরটাও আমার অজানা থাকতোনা । চোখের ছানি অপারেশন, সিজারিয়ান, আল্ট্রাসনো সবই জানতে পেতাম অবলীলায় । কারো শরীর খারাপ হবে সে খবর তার শরীর খারাপ হওয়ার আগেই আমার কাছে পৌঁছে যেত । কি যে বিরক্তিকর একটা সময় ছিল তখন !
চাকরির শেষ বছরে পেলাম একটা সার্বক্ষণিক গাড়ি আর মোবাইল ফোন । তখন সব মোবাইল থেকে বিটিটিবিতে বা বিটিটিবি থেকে মোবাইলে কথা বলা যেতনা । আর তাইতো আমার কাজ গেল বেড়ে । কোন বাসায় বিটিটিবি’র টেলিফোন আছে, গৃহকর্তা তার মোবাইল নিয়ে আছে বাইরে । বাসা থেকে কোন খবর দিতে হবে তাকে, আমি তখন তা রিলে করবার দায়িত্ব পেতাম আবার কখনোবা উল্টোটা । বাসার দু’টো আর অফিসে একটা ল্যান্ড ফোন, অফিসে ইন্টারকম আর পকেটে মোবাইল – বাজতেই থাকে, বাজতেই থাকে, কখনও একই সময়ে একাধিক বা সবগুলো একসাথে । মহাপুলকে পুলকিত না-হয়ে উপায় আছে ?
আর এখন? ল্যান্ড ফোনের রিং বাজলে অনায়াসেই আমি বলে দিই যে ওটা আমার নয় । আর আমার মোবাইলে ধূলো পড়ে থাকে । মাঝে মাঝে গিন্নির মোবাইল থেকে আমার নম্বরে কল দিই, আমার মোবাইলের রিংটোন বাজে । আহা কি মধুর সে ধ্বনি, প্রাণ জুড়িয়ে যায় । আবার কখনও যদি সত্যিই আমার ফোন আসে, সেটা নিতান্তই কেমন আছেন ধরনের । এখন আর কেউ কাজের কোন কথা আমাকে বলেনা । মনে হয়, আমি এখন একটা উদ্বৃত্ত মানুষ । আমাকে দিয়ে কারো কোন কাজ হবেনা, অথবা বুড়ো মানুষটাকে কষ্ট দেবার দরকার কী ! আমা দ্বারা কোন কাজ হতে পারে তা এখন আর কেউ মনে করেনা ।
মানুষের জীবন বোধহয় এমনই । তবু কেন যেন বারবার মনে হয়, আমার মত বয়সীদেরও কাজ থাকা উচিৎ । তারা মৃত্যুর আগেই কেন এমন করে মরে থাকবে ? এ পৃথিবীকে তাদের যে আরও কিছু দেবার সামর্থ্য আছে তা তারা দেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকবে কেন? যে সব বয়স্কদের কাজের সুযোগ আছে বা সুযোগ করে নিতে পেরেছে যারা, তারা তো দক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে । যারা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে কাজের সন্ধান করে নিতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের কার্যক্ষমতা দিয়ে তারা দেশের জন্য কিছু করবার সুযোগ কেন পাবেনা ?

বিভাগ: বিভাগবিহীন, ব্লগরব্লগর, স্মৃতিকথা

পোস্টটি ১০ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মীর's picture


ভালু লাগলো।

নাজমুল হুদা's picture


মীর একমাত্র অনলাইনে । মনে হল কিছু বলতে পারে । কান পেতে রইলাম । ভালু লাগা পেলাম । ধন্যবাদ মীর ।

মীর's picture


বেশি কিছু বলার নাই। সারাজীবন যেইসব ডিসি-এসপি'গোরে চড়ায়ে বেড়াইসেন, সেই কাহিনীগুলা সিরিজ আকারে লেখা শুরু করলেও কিন্তু পারেন। জানুয়ারি মাসের মধ্যে ১০-১২টা পর্ব নামায় ফেলতে পারলে, বইমেলায় চাই কি একটা সংকলনও বের হয়ে যেতে পারে। Smile
আর বইএর কথা চিন্তা না করলেও অসুবিধা নাই। বিষয়গুলো লিখে মনমতো ফুটিয়ে তুলতে পারলে মানসিক আরাম মিস্ নাই।

নাজমুল হুদা's picture


দূর, কি যে বলেন ?

মীর's picture


দূর কৈরা দিলেন আমারে? Puzzled
এইজন্যই তো বলে, বাঙালিরে পরামর্শ দিতে নাই। Big smile

নাজমুল হুদা's picture


এর মানে হচ্ছে, আদরের সহিত অক্ষমতা প্রকাশ ! পরামর্শ মূল্যবান এবং আন্তরিক সন্দেহ নাই তাতে ।

রাসেল আশরাফ's picture


আমি ও আছি।আপনার এই কষ্ট পাওয়াকে কি ভালো বলবো কিনা বুঝতেছি না। Sad Sad

নাজমুল হুদা's picture


এ কষ্টকে ভাল বলায় সঠিক । আমার একার তো নয়, অনেকের, -- সবাই অনন্যোপায় । মুখ বুজে সয়ে যাওয়া ছাড়া গত্যান্তর নাই ।
[অঃটঃ ফ্লিকারে আপনার ছবিগুলো বেশ সুন্দর]

রাসেল আশরাফ's picture


[অঃটঃ ফ্লিকারে আপনার ছবিগুলো বেশ সুন্দর]

তুমি করে বললে খুশি হতাম নাজমুল ভাইয়া। Smile Smile

আমি আপনারে একটা প্রশ্ন করেছি ফ্লিকারে।একটু যদি উত্তর দিতেন?দয়া করে।

১০

নাজমুল হুদা's picture


খুশী হলাম । এইমাত্র উত্তর দিয়ে এলাম । ভাল থেকো ।

১১

ঈশান মাহমুদ's picture


মনে হয়, আমি এখন একটা উদ্বৃত্ত মানুষ ।

সিনিয়র সিটিজেনরা এদেশে উদ্বৃত্ত মানুষ হয়ে যায়, এটা রূঢ় বাস্তবতা। হায়রে অভাগা দেশ ! আপনার অনুভূতি পড়ে কষ্ট পেলাম হুদা ভাই...।

১২

নাজমুল হুদা's picture


নিজের কষ্ট কমাবার জন্যই কষ্ট ভাগাভাগি করছি, অনিচ্ছা সত্বেও । সবাইকে তো একদিন 'সিনিয়র সিটিজেন' হতে হবে, আমার এ অভিজ্ঞতা সেদিন হয়তো বা কাজে লাগবে । কষ্ট দিলাম, দুঃখিত ।

১৩

সাহাদাত উদরাজী's picture


এ জন্য আমি চাকুরী করতে চাই না!
ব্যবসা করুম! মরার আগের দিনো টাকা গনুম।
হা হা হা .।।

[সতর্কতাঃ ০২ জানুয়ারি (রবিবার), ২০১১ ১১:০২ অপরাহ্ন আমার ব্লগে প্রকাশিত, 'আমরা বন্ধু' ব্লগের প্রথম পাতায় দেওয়া যাবেনা ] আপনার এ সর্তকতা পড়ে হাসতে হাসতে শেষ। আজ কাল অনেক ব্লগে লিখছেন! আবার টেকনিক্যাল দিকো দেখি বেশ জানছেন!

তা মশাই কি করে, পারসেন্যাল পাতায় নিলেন! টিউটোরিয়াল চাই।

১৪

নাজমুল হুদা's picture


*পার্টনার লাগলে আওয়াজ দিতে পারেন ।
*অনেক ব্লগে লিখছিনা । কৌতুহল বশে আমার ব্লগে ঢুকেছিলাম, ভাল লাগেনি । ওখানে আর যাওয়া হয় কি না হয় তাই আমরা বন্ধুর নিজের পাতায় এনে রাখলাম ।
**[টিউটোরিয়ালঃ পোস্ট লিখে 'প্রকাশ করুন' এর আগেই এ বিষয়ে তথ্য দেওয়া আছে, খেয়াল করলে দেখতে পাবেনঃ

পোস্ট কি প্রথম পাতায় দিতে চান?
পোস্টটি প্রথম পাতায় দিন (চেক বক্সএর টিক চিহ্নটি উঠিয়ে দিলে পোস্ট শুধু মাত্র আপনার পাতায় প্রকাশ হবে।)

১৫

সাহাদাত উদরাজী's picture


ধন্যবাদ। ফাল্গুনের বারতে দাওয়াত চাই।

১৬

নাজমুল হুদা's picture


সেদিন ল্যাব এইডে গেলে চলবে ?

১৭

সাহাদাত উদরাজী's picture


আসুন, দাওয়াত থাকলো।

১৮

নাজমুল হুদা's picture


আসবো, যদি মনে থাকে !

১৯

অতিথি ( নিয়াজ)'s picture


আমার আব্বু চাকরীরত থাকা অবস্থায় মারা গেছেন, জীবিত থাকলে হয়তোবা উনারও এই অবস্থা হতো। উনি বোধহয় তখন সহ্য করতে পারতেন না।

আমিও এখন প্রচুর ফোন পাই। আত্মীইয়-স্বজনের, রোগীর-- দিনে দুপুরে, রাত বিরেতে। মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত লাগে। আবার কখনো ভাবি, ফোন না করলে ডাক্তার মনে হয় না। আপনার লেখা পড়ে চিন্তিত-বুড়ো বয়সে কেউ যদি আদ্দিকালের ডাক্তার মনে করে ফোন না দেয়!

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

নাজমুল হুদা's picture

নিজের সম্পর্কে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় এমএস.সি । বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা এবং অবশেষে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান । উপসচিব পদ হতে অবসরে গমন । পড়তে ভাল লাগে, আর ভাল লাগে যারা লেখে তাদের । লিখবার জন্য নয়, লেখকদের সান্নিধ্য পাবার জন্য "আমরা বন্ধু"তে আসা।