তুমি বিভ্রাট!
অবশেষে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ঠিকানা যোগাড় করতে পারলাম । একদিন বিকেলে যেয়ে হানা দিলাম লীমা আপার বাসায় । জুলাই মাস – অসম্ভব গরম পড়ছে ক’দিন থেকে । ঠিকানা মিলিয়ে বাসায় যখন পৌঁছালাম, তখন মনে হচ্ছিল এত কষ্ট করে না-এলেই ভালো হত। ঘেমে নেয়ে উঠেছি, কলিং বেল টিপতেই লীমা আপা দরজা খুলে দিলেন। ভেতরে ঢুকবার আগেই সে-ই আগের মত করে তার হাত ধরে অভিমানী কন্ঠে জানালাম কত অনুযোগ, কত অভিযোগ। তার দিক থেকে আন্তরিকতার কোন ঘাটতি ছিলনা। তবুও তাকে কেমন যেন একটু নিষ্প্রাণ মনে হচ্ছিল। সেই চঞ্চলতা নেই তার মধ্যে, বেশ একটু ভারিক্কী গিন্নী-গিন্নী ভাব। তালপাতার সেপাই লীমা আপা এখন আর আগের মত শুকনা নেই, এখন তাকে মোটাদের দলেই বরং ফেলা যায়। যা’হোক, ড্রয়িং রুমে বসলাম-খুলে গেলো দু’জনের মুখের আগল। পুরাতন দিনের কত কথা, কত স্মৃতি রোমন্থন, তারই ফাঁকে জানতে পারলাম যে দুলাভাই অফিস থেকে ফিরে রেস্ট নিচ্ছেন, ছেলেমেয়েরা কেউ খেলতে আর কেউবা প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়তে গেছে ।
কিছুক্ষণ পরে হীরা দুলাভাই এলেন, গায়ে তার স্যান্ডো গেঞ্জী, পরনে লুংগী । প্রায় একযুগ পরে তার সাথে এটা আমার দ্বিতীয় সাক্ষাৎ । প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল লীমা আপার আকদ-এর কয়েকদিন পরে, অল্প কিছু সময়ের জন্য। সালাম বিনিময়ের পরে তিনি চুপচাপ বসে থাকলেন, আমরা দু’ভাইবোনে কতকালের না-বলা কথা বলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পরে হীরা দুলাভাই মুখ খুললেন, আর প্রথমেই তিনি আমাকে যে কথাটা বললেন তাতে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। তিনি বললেন, “নাজমুল সাহেব, আপনি আর কখনো আমার বাসায় আসবেন না”। আমি তো প্রথমে তার কথার অর্থই বুঝতে পারলাম না। যখন বুঝলাম তখন আমি যে কী বলবো, রাগ দেখিয়ে উঠে চলে আসবো, নাকি এটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করব তা নিয়ে চরম দ্বিধায় পড়ে গেছি।
নিজেকে সামলে নিলাম। কেন তিনি নিজের বাসায় এমন আচরণ করছেন, আমাকে অপমান করছেন, তা না জেনে চলে না-আসবার সিদ্ধান্ত নিলাম। আর তা’ছাড়া লীমা আপা আমার নিজের বোন নয়, লতায়-পাতায় সম্পর্কিত বোনও নয়। ক্লাসের সব মেয়েরা তাকে আপা বলে সম্বোধন করতো। অনেক কম বয়স্ক মনে হওয়ায় লীমা আপা নিজেই তাকে আপা ডাকবার এবং আপন করে নেবার জন্য ‘তুমি’ করে বলবার অনুমতি, প্রকারান্তরে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর থেকে আমি তাকে আপা ডাকতাম এবং পরস্পরকে ‘তুমি’ করে কথা বলতাম।
লীমা আপার সাথে ভাই-বোনের সম্পর্ক এতটাই দৃঢ় হয়ে উঠেছিল যে, অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের সবাই জানতো যে আমাদের চেহারার ব্যাপক অমিল থাকলেও আমরা আপন ভাই-বোন। আমাদের ডিপার্টমেন্টের অন্যান্য ইয়ারের ছেলে-মেয়েরা পর্যন্ত অনেক সময় দ্বিধায় পড়ে যেত । আমাদের অতি ঘনিষ্ট যারা, তাদের মাঝে আমাদের দু’জনের সম্পর্ক নিয়ে রীতিমত গবেষণা হতো, তারা কোনমতেই এ সম্পর্কের মধ্যে কোন কলুষতা খুঁজে না-পেয়ে শেষে এটাকে নির্দ্বিধায় মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। পিঠোপিঠি ভাই-বোনের মত ঝগড়া-ঝাটি, মান-অভিমান, হাতাহাতি, কথাবন্ধ চলতো নিয়মিত । কথা বন্ধ হয়েছিল একবার লীমা আপার কথা মতই । কী নিয়ে যেন মতের মিল না- হওয়ায় আমাকে বলল, “আমার সাথে কথা বলবা না, আর কখনও আমাকে আপা ডাকবা না”। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম তার কথা শুনে – কথা বলা বন্ধ করেছিলাম, আপা ডাকবার তো প্রশ্নই ওঠেনা ।
আমাদের দুজনেরই খুব মন খারাপ, তার চেয়েও মন খারাপ আমাদের ক্লাসমেটদের । সমস্ত ক্লাস সারাটা দিন ঝিম ধরে থাকে, কোন কিছুই যেন ঠিক জমে না। শেষকালে বিষয়টি সুরাহার পথ বের করলো আমাদের ক্লাসমেটরাই। আমি থাকতাম বড়ভাইয়ের বাসায়। সে বাসায় আমার ক্লাসমেটদের ছিল অবাধ যাতায়াত । ক্লাসের শেষে একদিন তারা ছয়-সাতজন মিলে লীমা আপাসহ সে বাসায় এসে হাজির, আমিতো অবাক। প্রায় সারাটা দিন একসাথে ছিলাম, কেউ আমাকে আজ এখানে আসবার কথা জানায় নাই, তার উপরে আবার লীমা আপাও আছে তাদের সাথে! সবাই মিলে আসবার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করলো, বারবার অনুরোধ করলো আমাদের মান-অভিমান ভুলে কথা বলবার জন্য। লীমা আপা আর আমি, দু’জনের কেউই আগে কথা বলবার মানুষ নই। আর কোন গত্যান্তর না-দেখে আমাদের দুজনকে তারা জোর করে একটা ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিল। বদ্ধ ঘরে আমাদের দু’জনের রুদ্ধ আবেগ বাঁধভাঙা স্রোতের মত ভাসিয়ে নিয়ে গেলো আমাদের সব মান-অভিমানকে, দু’ভাই-বোন পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলাম প্রাণ খুলে, শুরু হলো কথা – এ ক’দিনের জমে থাকা সব কথা এক সাথে বলবার জন্য দু’জনেই ব্যাকুল হয়ে উঠলাম। ওরা দরজা খুলে দিল, তারপর সব আবার সেই আগের মত।
সময় গড়িয়ে চলল। লেখাপড়ার পাট চুকে গেলে আমরা ঢুকে পড়লাম যার যার কর্মক্ষেত্রে। এক সময় লীমা আপার আকদ হয়ে গেল, আকদ-এর ক’দিন পরে হীরা দুলাভাইয়ের সাথে আলাপ হলো, এক সাথে বসে চা খেলাম। তারপর, একযুগ পরে আজ আমাকে এ কী কথা শুনতে হলো? “নাজমুল সাহেব, আপনি আর কখনো আমার বাসায় আসবেন না” এ কয়টি শব্দ ফুটন্ত সীসার মত আমার কানের মধ্যে টগবগ করে ফুটতে লাগলো। হীরা দুলাভাই বললেন, “আপনারা বাইরে দেখা-সাক্ষাৎ করলে করবেন, কিন্তু আমার সামনে আপনাদের দুজনকে আমি একত্রে দেখতে চাইনা”। আমি অত্যন্ত বিনীতভাবে কারণ জানতে চাইলে তিনি কী যেন ভাবলেন কিছুক্ষণ, তারপর বললেন,“লীমা আপনাকে ভালোবাসে, আর তাই আপনাকে দেখলে আমার অসহ্য লাগে”। আমি তাকে বুঝাতে চাইলাম যে লীমা আপা আমাকে ছোট ভাইয়ের মত ভালোবাসে, এটাকে এত আপত্তিকর মনে করার কোন কারণ নাই। আমি তাকে সবসময়ই আমার আপন বড় বোনের মত মনে করে এসেছি, এখনও তা-ই মনে করি। আমি যে লীমা আপাকে আমার প্রেমিকা হিসেবে দেখিনি কখনোই, তা বুঝাতে চাইলাম আমার সমস্ত ক্ষমতা দিয়ে। দুলাভাই অবশেষে সেটা মেনেও নিলেন, তবে আটকে থাকলেন তার নিজ ধারনায়, ‘‘আপনার কথা ঠিক বলে মানছি আর বিশ্বাসও করছি, কিন্তু এটাও ঠিক যে ও আপনাকে ভালোবাসে, আপনাকে সে তার প্রেমিক হিসেবে জানে ও কামনা করে, আপনি তাকে ভালো না বাসলেও সে আপনাকে ঠিকই ভালবাসে!”। তাকে তার ধারনা থেকে শত চেষ্টাতেও টলাতে ব্যর্থ হলাম । লীমা আপা আমাদের সামনে বসে থাকলো অনড়, অচল ও নির্বাক, ভাবলেশহীন বদনে।
স্ত্রী অপর একজনকে ভালোবাসে সেটা জানবার পরেও একজন স্বামী তাকে নিয়ে এতদিন সংসার করছে কেমন করে তা আমার কাছে অপার বিস্ময়ের ব্যাপার হয়ে উঠল। আমি জানতে চাইলাম,“দুলাভাই, আপনি কেমন করে বুঝলেন যে লীমা আপা আমাকে ভালোবাসে?” দুলাভাই নির্বিকারভাবে জানালেন যে, প্রথম সাক্ষাতের পর আমি তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসবার পরপরই তিনি জানতে চেয়েছিলেন, “নাজমুল সাহেব কি তোমার সাথে ‘তুমি’ করে কথা বলেন”? “কই, না তো!” লীমা আপা সেদিন পরিস্কার অস্বীকার করেছিলেন। “আমি নিজের কানে শুনেছিলাম আপনাদেরকে ‘তুমি’ করে কথা বলতে, অথচ লীমা সেটা আমার কাছে স্বীকার করলো না”। একটু থেমে আবারও বললেন, “সেদিনই আমার সন্দেহ হয়েছিল, আজ ‘তুমি-তুমি’ করে আপনাদের কথা-বার্তা বলতে শুনে আমি নিশ্চিত হলাম”।
সন্দেহের যে বীজ সেদিন রোপিত হয়েছিল, একযুগ ধরে তিনি তা লালন করেছেন। এতদিন পরে আমার সাথে তার দ্বিতীয় সাক্ষাতের দিনটিতে লীমা আপার সাথে ‘তুমি’ করে কথা বলতে শুনে সে বীজ অঙ্কুরিত হয়ে মুহূর্তে ডাল-পালা-ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে উঠেছে। তিনি মনে মনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন, এবং ভদ্রজনোচিত নয় জেনেও তিনি পুনরায় তার বাসায় যেতে আমাকে নিষেধ করেছেন। লীমা আপা কেন সেদিন মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিল তা আমার কাছে এখনও বিস্ময়!
"মিথ্যা"
আমার মতে, যে কোন সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য সে একাই যথেষ্ট!
দুঃখজনক
Software Company in Bangladesh
মানুষের মন বোঝা বড্ড কঠিন
লেখার ধরণ নিয়ে কোন কথা নেই, হুদাভাইয়ের কিবোর্ড যথারীতি সাবলীল।
গল্পের শুধু একটা অংশ নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। কাঠখড় পুড়িয়ে ঠিকানা জোগাড় করতে এক যুগ পেরিয়ে গেলো কেন? লীমা তো চিঠিপত্রেও যোগাযোগ রাখতে পারতেন। স্বামী যেহেতু এতো বছরে নিজের সন্দেহের কথাটা লীমাকে বলেননি, সেক্ষেত্রে তার তো সঙ্কোচ থাকার কথা ছিলো না।
এমন হৈতে পারে হুদা ভাই ১ যুগ ধরে লীমার সাথে যোগাযোগ করতে চান নাই ,
অনেক দিন যোগাযোগ না থাকায় কারো ঠিকানা বের করা বেশ কস্টই হয়,
লীমাও চায় নাই যোগাযোগ না করতে, এজন্য চিঠি পত্রেও যোগাযোগ হয় নাই, এ ক্ষেত্রে ঠিকানা পাওয়া - না পাওয়ার ফ্যাক্টর কাজ করতে পারে,
স্বামী হতে পারে সব কিছু চেপে গিয়েছিলো কিন্তু হুদা ভাইকে দেখে মাথায় আগুন চেপে গিয়েছিলো, এ ক্ষেত্রে অহেতুক হিংসা করতে পারে।
চুপচাপ থাকাই ভাল হবে বলে মনে হচ্ছে।
পোস্ট পড়বার ও মন্তব্য করবার জন্য নাজ, শিবলী, মাহবুব সুমন, নুশেরা, সাহাদাত উদরাজী সকলকে ধন্যবাদ। নুশেরা যথার্থই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। গল্প বলবার সময়েই এর উত্তর দিয়ে গেলে সেটাই হতো উত্তম। অল্প কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, গল্পে যে একযুগের উল্লেখ করা হয়েছে সে যুগটা হচ্ছে ১৯৭১ থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত। শিক্ষা জীবন শেষে ১৯৭১-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধুদের সাথে সাক্ষাৎ ও পত্র যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হবার পরে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। ছেলেদের সংগঠিত করে যুদ্ধে পাঠানো, তাদের পরিবারের নিরাপত্তাবিধান, মায়ের বুক খালি করে যে সন্তানটিকে যুদ্ধের ময়দানে ঠেলে দিয়েছি সে মাকে আগলে রাখা, একবার রণক্ষেত্রে আবার পরবর্তীকালে কর্মক্ষেত্রে হাজিরা দেওয়া, এসব করতে করতে ১৯৭১ চলে গেল। যুদ্ধ শেষে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সৃষ্ট মুক্তিযোদ্ধা-অমুক্তিযোদ্ধা বিভেদ, ৭২, ৭৩, ৭৪ ও ৭৫-এর আর্থিক সংকট, কারো সোনার মুকুট পরে আর কারোর গামছা মাথায় দিয়ে বিয়ে, রক্ষীবাহিনীর দাবড়ানী, রেশনের দোকানে লাইন দেওয়া, কেরোসিন আর বাচ্চার দুধ যোগাড়ে প্রাণান্ত হওয়া, ইত্যাদি বহুবিধ কারণে কেউই তখন আর বন্ধুদের খোঁজ রাখবার অবকাশ পেতনা। মরে পড়ে আছে মা, বাচ্চা তার বুকে মুখ লাগিয়ে চুষেই যাচ্ছে। আমরা হৃদয়বান মানুষের(!) না-দেখার ভান করে দ্রুত সরে চলে যাচ্ছি। গমের আটার ভূষি নেবার জন্য দু'মাসের বাচ্চা কোলে হাড় জিরজিরে তরুণী মা অপেক্ষা করছে দরজায়, এই ভূষি নিয়ে লবন-পানি দিয়ে সিদ্ধ করে ঐ বাচ্চাকে খাওয়াবে সে। আর চিঠি লেখা ? খাম-পোস্টকার্ড কিনতে পয়সা লাগেনা? আমাদের কয়জনের পকেটে এই অহেতুক বিলাসিতার পয়সা থাকতো তখন?
হুদা ভাই, এই কমেন্টে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আশাকরি আপানার জানানোর এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে, সেটা পোষ্ট বা কমেন্ট যেভাবেই হোক না কেন।
জমেছে বরফ-স্তর স্মৃতির পাহাড়ে,
মাঝেমাঝে সূর্্যতাপে গলে গলে পড়ে সে বরফ,
ক্ষ্ণণেকের ত্বরে কেউ উঁকি দিয়ে যায়।
তবুও কিছু স্মৃতি অগোচরেই থাকে,
আসতে চায় বাইরে অন্ধকার ফুড়ে,
ভাষা হয়ে প্রকাশের আকুলতা নিয়ে।
অসীম অক্ষমতা চারপাশে নিয়ে
হতাশায় হা-হুতাশ করে মরি,
স্মৃতিদের মুক্তি দেওয়া সাধ্যসীমাতীত।
অতঃপর মজলিসে রব উঠল " সাধু! সাধু!"
খাসা লেখা।
লেখা যে খুবই ভালো হৈসে, এইটা বলতেই হবে।
প্রশংসা করলেন! কৃতজ্ঞ থাকলাম।
খুব ভালো লাগলো নাজমুল ভাই
অতিথি ভাই,আপনাকে ধন্যবাদ।
লীমা আপার তরফ থেকে মনে হয় প্রেমই ছিল। আপনি তখনো ভীরু এখনো
আরে ভাই, ভীরু ছিলাম না। ছিলাম বোকা - এখনকার মতই!
না হলে, লীমা আপা আমাদেরই আর এক বন্ধুর সাথে চুটিয়ে প্রেম করার পরেও আমার প্রেমে মশগুল ছিল তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারতাম!
লীমা আফায় তো কট্ঠিন। একসাথে ২ জনের সাথে প্রেম করে আরেকজনের গলায় ঝুলে পড়ছে। একটা কথা, লীমা যে আপনার প্রেমে মশগুল এইটা বুঝলেন কীভাবে?
আমি বুঝতে পারিনি তো! একটু আগে তানবীরা বলেছে । তানবীরা আমাকে ভীরু বলেছে, আর আমি নিজেকে বোকা বলে স্বীকার করেছি।
দুনিয়া খুবই আশ্চর্য্যের!
আচ্ছা তখন ক্লাসের মেয়েদের কী বলে ডাকা হত তুমি না আপনি?
আসলেই দুনিয়া বড়ই তাজ্জব জায়গা।
তখনকার দিনে ছেলেরা মেয়েদের আর মেয়েরা ছেলেদের নাম ধরে ডাকতো, কিন্তু কেউ কাউকে তুই বা তুমি বলতো না । যেমনঃ এই রায়হান, আপনার কলমটা দিন তো। বা তানবীরা, আপনি কী গতকাল ক্লাসে এসেছিলেন? এমন কি, ঘনিষ্টতা না-হওয়া পর্যন্ত ছেলেরাও ছেলেদের সাথে 'আপনি' সম্পর্কেই আটকে থাকতো।
আজব!
তা আর বলতে !
আফসুস করেন?
নাহ! আফসোস কিসের!
গল্প ট্যাগ দেখে তো ছোটগল্পই ভেবেছিলাম, সব কমেন্ট আর তার উত্তরের ধরণ দেখে বুঝতে পারছি জীবন থেকে নেয়া। হুঁ, তখন ছেলেরাও ক্লাসমেটদের কাউকে কাউকে আপনি করে বলতো, যেটা সারা জীবনে আর বদলাতে পারে না। ডঃ সাদত হুসাইন আর আমার বাবা ক্লাসমেট; নাম ধরে ডাকলেও এখনো পরস্পরকে আপনি সম্বোধন করেন।
ছোটগল্পের কোন সংজ্ঞা মতেই এটা ছোটগল্পের কাতারভূক্ত হয়না, আর তাই এটাকে নিছক গল্প হিসেবে ট্যাগ দেওয়া হয়েছে । না, এটাকে 'জীবন থেকে নেওয়া' বলা ঠিক হবেনা। সময়কাল আর কথকের নাম বিবেচনায় তেমনটি মনে হলেও এটা গল্প, এবং গল্প - গল্পই, এটাকে বাস্তবতার সাথে মিলাতে না-চাওয়াই ভালো।
লীমা আপার অব্যক্ত ভাব হুদাভাই ধরতে পারেননি। আফসোস!
আর হ্যাঁ, ৭৪-এর দুর্ভিক্ষের কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের জানান। অভাবের অবিশ্বাস্য কাহিনি শুনেছি লোকমুখে। ওসব কি সত্য?
লীমা আপার অব্যক্ত ভাব হুদাভাই ধরতে পারেননি। আফসোস!
আর হ্যাঁ, ৭৪-এর দুর্ভিক্ষের কিছু অভিজ্ঞতা আমাদের জানান। অভাবের অবিশ্বাস্য কাহিনি শুনেছি লোকমুখে। ওসব কি সত্য?
একটা উদাহরণ দিই। স্বামী-স্ত্রী দু'জনের মাসিক আয় ৮০০ টাকা। বাসা ভাড়া দুইশ' টাকা। এক বছর বয়সের কন্যা আর একটা কাজের বুয়া। চাউলের মন ৯৬০-১০২০ টাকা। বাজারে রান্নার জন্য কেরোসিন, মেয়ের জন্য দুধ, নিজেদের জন্য কাপড় সবই সাধ্যের বাইরে। বিশেষ দলের হাতে এসব কিছুর পারমিট। এই স্বচ্ছল পরিবারটি ২৫-৩০ মাসের মধ্যে একবারও গরু বা খাসির গোশ্ত কিনতে পারেনি, একটা নতুন শার্ট-প্যান্ট বা শাড়ি তারা পরেনি। নিক্সন মার্কেট থেকে পুরাতন কাপড় কিনে এনে তা দিয়ে একমাত্র মেয়ের জামা-কাপড়ের প্রয়োজন মিটিয়েছে। গাড়ি ভাড়া মেটাবার মত আর্থিক সামর্থ না-থাকায় ঐ সময়ে তারা বাবা-মায়ের কাছে বেড়াতেও যেতে পারেনি।
যাকে একার আয়ে সংসার চালাতে হয়েছিল তার অবস্থা এবার চিন্তা করুন!
৭৪-এর দুর্ভিক্ষের অভিজ্ঞতা বর্ণনার ভাষা আমি এখনও আয়ত্ব করতে পারিনি। তবে আপনি যা শুনেছেন, আমি নিশ্চিত যে অবস্থা তার চেয়েও ভয়ঙ্কর ছিল। আমি নিজেই এখন তা বিশ্বাস করে উঠতে পারিনা, মনে হয় দুঃস্বপ্ন !
প্রত্যেকটা জীবনের মানচিত্রই আলাদা। একজনের মানচিত্র আরেকজনের বোঝার কথা নয়। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে 'তুমি' সম্পর্কগুলোও আলাদা। আজকালকার চিত্র দিয়ে অত আগের বাস্তবতা বোঝার কথা নয়, তবু বলি-
আপনার প্রতি লীমা আপার দুর্বলতা, 'তুমি' গোপন রাখার চেষ্টা থেকেই পরিষ্কার। এই গোপন রাখাটা মধুর হতে পারে যদি সফলতার সাথে রাখতে পারে, কিন্তু গোপনীয়তা ভয়ংকর যদি সন্দেহ একবার চেপে বসে। লীমা আপা বোধকরি খানিকটা বোকাই ছিল। তাই লুকোতে পারেননি স্বামীর কাছ থেকে।
আজকাল অবশ্য অনেক কিছু বদলেছে...... বিয়ের পরপরই বুদ্ধিমানেরা বলে দেয়.... স্বীকার যাও বা না যাও, তোমারও ছিল আমারও ছিল, তয় যা গেছে .....গেছে, আর ঘাটাঘাটি না করে মাঝে মাঝে কেবল হারানো দিনের গানের ভেতরেই রেখে দাও তাকে।
আবুল হোসেনরে চা দে, গরম পানি দিয়া কাপ ওয়াশিং দে
নীড় সন্ধানী, গল্প বলতে যেয়ে আমি নিজেই তো এখন ঘাটাঘাটির মধ্যে পড়ে গেছি। চরিত্রটির নাম নাজমুল দেওয়া ঠিক হয়নি মনে হচ্ছে। গল্পটিকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করতে যেয়ে সব ঝামেলা নিজের কাঁধে চাপিয়ে নিলাম। আপনার অভিমতের জন্য ধন্যবাদ।
লিমা আপা তো জটিল মহিলা !! অযথাই দুইটা মানুষের মনে কষ্ট দিলো ।
জটিল মানে জটিলস্য জটিল। কাহিনী আরও আছে, মাথার মধ্যে অগোছালোভাবে। যখন বের হবে, দেখবেন কী দারুন ব্যাপার!
আমার এখন মনে হচ্ছে, সমস্যার মূলে 'তুমি' সম্বোধনটাই। সেই সময় যেহেতু সহপাঠীদেরও 'আপনি' বলা হতো, তার মানে তুমি'টা ছিল বিশেষ কিছু। লীমা আপা হুদাভাইকে কিন্তু এই বিশেষভাবে তুমি সম্বোধন করতেন না। কিন্তু তাঁর স্বামী সেটা বুঝবেন কেন? স্বামী ভুল বুঝবেন- এই ভয় থেকেই স্বামীর কাছে ব্যাপারটা তিনি গোপন করেছিলেন। কিন্তু শেষে এই গোপন করাটাও সমস্যায় রূপ নিল।
এমন হতে পারে যে, স্বামীটি ছিলেন বানিজ্য বিভাগের ছাত্র, সে আমলে কোন মেয়ে বাণিজ্য বিভাগে পড়তোনা। অর্থাৎ স্বামীটি কোনকালেই মেয়েদের সাথে মিশবার সুযোগ পাননি। তার মানসিক দিক তাই সেভাবে গড়ে ওঠেনি, লীমা এটা জানতো। আর তাই সে এই 'তুমি' গোপন করতে চেয়েছিল, অহেতুক ঝামেলা এড়াবার জন্য। লীমার জন্য ছিল উভয় সংকট অবস্থা। গল্পে আমি বিষয়টাকে সঠিকভাবে বলতে ব্যার্থ হয়েছি, এ দায় আমার।
হুদাভাই লেখাটা পড়ে ভালো লেগেছে
দুলাভাইয়ের নাম কী 'হীরা' না 'হাসিব'? কারণ দুইবার 'হীরা' আর একবার 'হাসিব' নাম আসছে..নাকি আমারই ভুল হইছে..খোদাই মালুম। ভালো থাকা হোক।
ভুলটা ধরিয়ে দেবার জন্য এবং মনোযোগ সহকারে পড়বার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ বাতিঘর। বাতিঘরের উপযুক্ত কাজই করেছেন।
মন্তব্য করুন