ও নদীরে - - - -
এখন মনে হয়, আমার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে যে গ্রামে ও যে নদীর তীরে তা ভারী সুন্দর! বাংলাদেশের আর দশটি গ্রামের মতই বৈচিত্রহীন একটা গ্রাম। আর সে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তারও চেয়ে বৈচিত্রহীন একটা নদী। বাংলাদেশে নদীর কত সুন্দর সুন্দর নাম, মেঘনা, যমুনা, সুরমা, করতোয়া, রূপসা, তিস্তা, চিত্রা, শীতলক্ষ্যা, কুশিয়ারা, আরও কত কি! এমন সুন্দর একটা নামের নদীর পাশের কোন একটা গ্রামে আমার জন্ম হয়নি। যে গ্রামে জন্মেছি, তার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটির নাম শুনলে সবাই নাক কুঁচকায় – সেটার নাম মাথাভাঙ্গা। আমরা ছোট বেলায় লিখতাম মাথাভাঙা, উচ্চারণও করতাম তাই-ই, এখনও। কিন্তু কালে কালে আর সব কিছুর মতই মাথাভাঙা এখন হয়ে গেছে মাথাভাঙ্গা।
সেকালে মাথাভাঙায় কুমীর ছিল, বড় বড় জাহাজ চলতো। আমি দেখিনি, নানীর কাছে, মায়ের কাছে গল্প শুনেছি। তবে আমি দেখেছি অনেক বড় আকারের নৌকায় মালামাল আনা-নেওয়া হতে। কোলকাতা অন্য দেশের অন্তর্ভূক্ত হবার পরে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, নদীর পানি কমে যাওয়ায় কুমীরের আনাগোনা থেমে যায়। বর্ষায় তার প্রমত্ত রূপ দেখে আমরা শিউরে উঠতাম। শুশুকের আনাগোনা দেখা যেত বর্ষার ভরা নদীতে। অন্য সময়ে তার কাকচক্ষু জল আমাদের আকৃষ্ট করতো। ঘন্টার পর ঘন্টা সাঁতার, ডুবসাঁতার, ঝাপুড় খেলা, হৈল খেলা ছিল আমাদের নিত্যদিনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড।
ফারাক্কা বাঁধ তাকে কাবু করে ফেলেছে, মানুষের খামখেয়ালিতে সে আজ মৃত্যুর প্রহর গুনছে। এইতো মাত্র ক’দিন আগে তাকে দেখে এলাম, ফিরে এলাম এক বুক কষ্ট নিয়ে। নদীতো নয়, যেন দেখে এলাম তার কঙ্কাল। সেই কৈশোরের স্মৃতিরাই শুধু আছে, সেই নদী আর নেই।
এখনকার মাথাভাঙ্গা
ঢাকা থেকে আসা-যাওয়ার পথে পদ্মা পাড়ি দিতে হয়। এখন শুধু পাড়ি দিলেই হয়, একটা সময় ছিল যখন পদ্মার বুকের উপর দিয়ে স্টীমারে যাওয়া আসা করতে হতো। গোয়ালন্দ থেকে নারায়ণগঞ্জ বা নারায়ণগঞ্জ থেকে গোয়ালন্দ আসা-যাওয়ার পথে দীর্ঘ সময় কাটাতে হতো পদ্মার বুকে। তখন দেখেছি পদ্মা কী? সেই ভয়ঙ্করী পদ্মার আজকের অবস্থা দেখলে চোখে পানি আসে। ধূধূ বালিচর, ছোট্ট খালের মত ক্ষীণ প্রবাহিনী পদ্মাকে কোন নদীই মনে হয়না। স্রোত আছে বলে মনেই হয়না, ফেরী বা লঞ্চের গতির সাথে তাল মিলিয়ে দেখা দেয় একটু ঢেউ। যেন শান্ত দীঘির বুকের উপর দিয়ে অশান্ত ও বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে যাতায়াত করাই আমাদের নিয়তি।
কী সুন্দর নামের একটা নদী চিত্রা। এখনও দু’বেলা জোয়ার-ভাঁটার খেলা দেখা যায়। কিন্তু তার আগেকার সেই রূপ হারিয়ে বিগত যৌবণা শীর্ণ শরীর নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে কোন রকমে টিকে আছে, এখনও টিকে আছে আর কাল গণনা করছে হারিয়ে যাবার।
কচুরীপানা চিত্রাকে চিত্রিত করছে, লোভী মানবকূল তার কূলে গড়ে তুলছে তাদের আবাস, কেউবা প্রাসাদ। প্রকৃতি আমাদের অনেক দিয়েছিল, আমরা তা রক্ষা করিনি, করবার আগ্রহ কখনো কারো ছিল বলেও মনে হয়না। এখন চিত্রার বুকে লঞ্চও চলেনা, মাছ নেই – তাই মাছ ধরবার নৌকাও দেখা যায়না খুব একটা।
নড়াইলে যেয়ে সুলতানকে এক নজর দেখে না এলে নিজেকেই অবহেলা করা হয়। আর নড়াইল থেকে ফিরে এসে সুলতানের কথা বলতে না-পারলে, না-বলা পর্যন্ত প্রাণ আকুলি-বিকুলি করতে থাকে।
শিল্পী সুলতানকে জীবদ্দশায় কেউই তেমন মূল্যায়ন করেনি, মৃত্যুর পরে অনেকে চিনেছে, কিন্তু তাঁর প্রাপ্য যোগ্য সম্মান আজও আমরা তাঁকে দিতে পারিনি। আমরা সত্যিই বড় অভাগা।
এতদিন কই ছিলেন? শরীর ঠিকাছেতো? বেশ কয়েক দিন আপনাকে দেখি নাই
আপনাদের সাথেই তো আছি। শরীর ঠিক আছে। এদিক-সেদিক ঘুরলাম ক'দিন, এই আর কি!
সুন্দর একটি লেখা।
নদীর ছবিগুলো মনোরম।
লীনার চোখে বোধহয় সমস্যা!
যা দেখে তা-ই ভালো লাগে ! নেন
খান আর :দোলনা:য় দোল খান!
আমার চোখে সমস্যা নেই।
আমার চোখ সুন্দর।
চোখ সুন্দর মানুষের মনও সুন্দর! আর তাই সুন্দর চোখে সবই সুন্দর লাগে !
এইতো আমাদের হুদা ভাই।
নড়াইলে কবে গেলেন! ছবিগুলো সুন্দর হয়েছে। ৩য় ছবিটার সাইজ ঠিক করে দেন! (বানান ভুল না পেয়ে ভিন্ন চেষ্টা!)
অসুন্দরের মধ্যেও সুন্দর খুঁজে পেয়েছেন এ জন্য ধন্যবাদ ! ছবির সাইজ ঠিক করতে যেয়ে আমারই সাইজ হয়ে যাবার মত অবস্থা ! চিত্রা নদীর একটা ছবিও দিলাম। আরও খুঁটিয়ে দেখলে বানান ভুল ছাড়াও ভাষার ভুল পাবেন। আপনার এই ভিন্ন চেষ্টা বিফলে যায়নি।

মাথাভাঙ্গা নদীর নাম হল কি করে। মাথাভাঙ্গা নদীর ছবিটা এখন আমার কম্পিউটার এর ডেক্সটপ ওয়াল পেপার।
নামকরণ নিয়ে কোন কাহিনী আছে কিনা তা আমার জানা নাই। মাথাভাঙ্গার তীর ঘেঁষে একটা গ্রাম আছে তার নাম হাঁটুভাঙ্গা। এখানে কারোর হাঁটু ভেঙেছিলো হয়তো, তাই নাম হয়েছে হাটুঁভাঙ্গা। এই নদীতে হয়তো কারোর মাথা ভাঙা হয়েছিল, তাই এর নাম হয়েছে মাথাভাঙ্গা। [১৯৭১-এ অনেককে এ নদীর তীরে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মেরেছিলো পাক সেনারা।]
মাথাভাঙ্গা নদী সৌভাগ্যবান, কম্পিউটারের ডেস্কটপ ওয়াল পেপার হতে পেরে।
ক্লাসের বন্ধুদের কাছে মাথাভাঙ্গা নদী নিয়ে অনেক গল্প শুনেছিলাম কিন্তু নিজের চোখে দেখে আমিও আশাহত হয়েছিলাম।
একই সাথে পিক- প্রোপিক বদলে ফেললে চিনতে কষ্ট হয়। দাদাবাড়ি ও নানাবাড়ি যার কুস্টিয়ায়, আর বাবা্র বাড়ি রাজশাহী, এ তো সেই রাসেল আশরাফ ? নাকি অন্য কেউ ? মাথাভাঙ্গা দেখে আশান্বিত হবার মত কিছুই নাই, বরং মাথা ব্যাথা হতে পারে।
লেখাটা চমৎকার লাগলো।
গূণীজনের প্রশংসা পেয়ে ধন্য হলাম। কৃতজ্ঞ রইলাম।
মারাত্বক ছবি হয়েছে নাজমুল ভাই।
আপনাকে আমরা খুব মিস করেছি। আপনি না থাকলে ব্লগটা মুরুব্বীহীন হয়ে যায়। আশাকরি ঘোরাঘুরি এঞ্জয় করেছেন।
মারাত্মক ছবির অর্থ কী ? ভালো না মন্দ ?
সবার সমান বয়েসী।
দায়িত্ব পালনার্থে ঘুরতে বাধ্য হই।
আমি আছি তো!
আর বয়স বেশী হলেই কেউ মুরুব্বী হয়না, আমিও কারো মুরুব্বী নই। আমি তোমাদের
এখন আর ঘো্রাঘুরি এনজয় করতে পারিনা,
ঠিকাছে বস, তানবীরা খালি মুরুব্বি মুরব্বা নবানাইতে চায়।
রায়হান ভাই, বানান ভুল করছেন। বানাইতে চায় হবে।জীবনে এক্টা বানান ভুল ধরলাম।
এখন আর আমি তা'হলে একা নই !
মোরব্বা কিন্তু খেতে মজা !
ঠিকাছে মেজর মুরুব্বী আমিই
ছবি ও লেখা মিলিয়ে পোস্ট খুব ভালো লাগল হুদা ভাই।
ও নদীরে, দিন দিন তোদের এই কি হাল হচ্ছে রে
আমরা শুধু শুনবো নদীর কান্না আর হা-হুতাশ করবো!
অনেকদিন পর আপনাকে দেখে সত্যি খুব ভালো লাগছে ।
মরা নদীর কষ্টের কান্না যদি মানুষ শুনতে পেতো,
ধলেশ্বরীর হাল দেখেছেন? শুকিয়ে কাহিল হয়ে গেছে । কিন্তু তারপরো দেখতে কি যে সুন্দর!!
বরিশাল যাবার পথে একটা নদী আছে । ব্রীজের উপর থেকে দেখা নদীটা অসাধারণ ছিল । আমার জীবনে এখন পর্যন্ত দেখা সবথেকে সুন্দর নদীদের একটা হল ওই নদী । নাম সম্ভবত গাবখান ।
পদ্মা দেখলে ভালো মন্দ উপলব্ধি করিনা । এর প্রবল রূপ তো আর দেখি নাই । তবে সাদা বালির চরগুলো দেখলে মনে হয়, নদীটা ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে ।
সেই ছোট্টবেলা থেকে শুনে এসেছি আমাদের দেশটা নদীমাতৃক দেশ। নদী হারিয়ে এখন আমরা মাতৃহীন, এতিম। পানির অপর নাম জীবন । নদী নেইতো পানি নেই, পানি নেই তো আমাদের জীবন নেই। আমরা এখন মৃত। আমরা এখন ভূত-প্রেতের দলভুক্ত ।
ছবিগুলো ভালো লাগল।
ধন্যবাদ শর্মি । নতুন পোস্ট কবে দিচ্ছেন?
দারুণ সব ছবি। শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ নাজমুল ভাই।
ছবি ভালো লেগেছে এতেই আমি খুশি! কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ।
দারুণ নাজমুল ভাই। কেমন আছেন?
আমার খালার বাসা স্বরূপকাঠি। সেখানকার নদীর নাম সন্ধ্যা নদী। নামটাই দারুণ।
আপনার মন্তব্যে খুশী হলাম। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আসলেই, দারুন নাম সন্ধ্যা নদী !
দারুন লিখেছেন। নদী নিয়ে বাঙালিরা এত নস্টালজিক কেন অবশ্য বুঝিনা, আমারও অবশ্য নদী খুবই ভাল লাগে।
অধিকাংশ বাঙালীর শৈশব ও কৈশোর কাটে নদীতে, নস্টালজিক না-হয়ে তাই উপায় নেইরে ভাই।
প্রিয় শিল্পী এস এম সুলতান-এর নাম নিয়েছেন দেখে ভালো লাগলো।
প্রিয় শিল্পী এস এম সুলতানের সাথে নড়াইল আর চিত্রার নাড়ির সম্পর্ক। দেখুন আরও ছবিঃ
এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার প্রবেশ পথ
শেষ শয্যা
কাছে থেকে দেখা শেষ শয্যা
স্মৃতি সংগ্রহশালার মূলভবন
মন্তব্য করুন