আস্তিক, নাস্তিক এবং ছাগু
্বেশ দীর্ঘ সময় ধরে ব্লগে লেখা হয়ে উঠেনি । লেখার মতো কোনো বিষয় ছিলো না এমন নয়। তবুও লেখা হয়নি। আমি বরাবরই "ব্যাক ব্যাঞ্ছার" ছিলাম। ব্লগ লেখাতে ও তার ব্যতিক্রম নই। যখন ই কোনো লেখা লিখবো বলে স্থির করি তার আগেই তা নিয়ে ব্লগের পাতা ভর্তি হয়ে যায়।। ওই সব লেখা পড়ার পর আর নিজের লেখা হয়ে উঠেনা। আস্তিকতা, নাস্তিকতা কিংবা ছাগু এটাও খুব পুরোনো বিষয় , তবুও আজ লিখতে হচ্ছে এইটা নিয়ে। আশা করি লেখাটা আমি সবাইকে বুঝাতে পারবো । আমার বুঝিয়ে বলার ক্ষমতা কম । তাই যারা পড়বেন তাদের বলছি। পড়ার সময় একটু ধৈর্য্য নিয়ে পড়বেন।
বর্তমানের প্রচলিত তিনটা শব্দ আস্তিক, নাস্তিক এবং ছাগু। সমমনা ব্যতীত অন্য কারো কাছ থেকে এই উপাধি গুলোর কোনোটা না পেয়ে থাকলে বুঝতে হবে আপনি কথা কম বলেন। আর যদি বলে থাকেন , তাহলে এতোদিনে যে কোনো একটা পেয়ে গেছেন । অবশ্য আস্তিক উপাধিতে কেউ গালি দেয়না। তবে আস্তিক শব্দটা নাস্তিক এর বিপরীত হিসেবে মুখে মুখে চলে এসেছে। তাই আস্তিক শব্দটা নিয়ে কিছু বলার নাই।
ব্লগার রাজীব আস্তিক না নাস্তিক তা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা ছিলনা। হবার কথাও না। যেখানে সমগ্র জাতি যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে একত্রিত। সেখানে এই আস্তিক , নাস্তিক বিষয় নিয়ে সত্যিই ভাবার বিষয় ছিলো না। বরং এতে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিপক্ষের লোকদের একটা ভালো জবাব দেয়া যেতো।
দেখ আমাদের প্লাটফর্মে আস্তিক, নাস্তিক, মুঠে , মজুর সব আছে। আছে তোদের তথাকথিত খারাপ মানুষ গুলো। তা দেখেও কি তোদের মনে হয়না, এটা গণমানুষের জাগরণ।
চাইলে এইসব বিষয় নিয়েও বিশাল সমসাময়িক লেখা যেতো। কিন্তু রাজীবের আস্তিকতা কিংবা নাস্তিকতা আমার চায়ের কাপের বিষয় ছিলোনা। তবুও আমি লিখছি এই সব বিষয় নিয়ে , কারণ আমিই মনে হয় একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা নাস্তিক এবং একই সাথে ছাগু উপাধি পাওয়া ব্যক্তি। বিষয়টা সৌভাগ্যের নাকি দুর্ভাগ্যের বুঝতেছিনা। তবে এইটা নিয়ে মেজাজ চরম খারাপ। তবে নাস্তিক উপাধি পাওয়া নিয়ে কোনো আক্ষেপ নাই। কারণ ওরা এখন অস্তিত্বের সংকটে পরেছে। তার চেয়ে বড় কথা ওদের ব্রেইন ওয়াশ করা। কিন্তু ছাগু উপাধিটার কোনো কুল কিনারা করতে পারছিনা। কেনো এই উপাধি? আর তাছাড়া এই কথাটা শুনতে হয়েছে এমন একজন মানুষ থেকে যাকে আমি কিনা একজন মুক্ত মনের মানুষ বলেই জানতাম। তিনি অবশ্য আমাদের এই ব্লগের ও একজন সম্মানিত সদস্য। যাক উপাধি প্রাপ্তির ঘটনায় আসি।
নাস্তিক পর্ব
২৮/০২/২০১৩।
অফিস শেষ করে বাসায় এসেই ফেবুতে বসলাম। তখন স্বাভাবিকভাবেই সারা ফেবু জুড়ে সাঈদীর রায় নিয়ে এতো মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় সরব। যাই হোক আমার এক ফেবু বন্ধুকে বললাম।
আমিঃ কিরে সাঈদীরে তো লটকায়ে দিলাম।
বন্ধুঃ তুই মনে করিস রায়টা ন্যায়?
আমিঃ ন্যায় কি অন্যায় সেটা বিচার করার আমি কে?
বন্ধুঃ তবুও তোর কি মনে হয় এটা ন্যায় হইছে?
আমিঃ ন্যায় , অন্যায়ের কি হইলো? রাজাকার ছিলো , এটাতো মিথ্যা না। আর রায় যেটা দেয়া হয়েছে , সেটাতো সুষ্পস্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে দিয়েছে । তাইনা? আর আমাদের দাবিতো এইটাই ছিলো। ফাঁসি, ফাঁসি চাই। রাজাকারের ফাঁসি চাই ।।
বন্ধুঃ না , এটাই তোর ভুল। এটা আদালতের রায় না। এটা শাহবাগীদের সন্তুষ্ট করার রায়।
আমিঃ তাই নাকি? (ভনিতার ইমো) । তা কিভাবে তুই সেটা বুঝলি?
বন্ধুঃ আচ্ছা, সাঈদীরে তোর এই রকম মনে হয়? এইসব কাজ কি সাঈদী করতে পারে?
আমিঃ কেনো? দাড়িওয়ালা লোকেরা কি।....... কাম করেনা!
বন্ধুঃ আমি কী দাড়িঁর কথা বলছি নাকি?
আমিঃ তাহলে?
বন্ধুঃ এটা আসলে একটা রাজনৈতিক চাল। সাঈদীরে ফাঁসি দিয়া জামায়াতরে শেষ করার জন্য।
আমিঃ কি জানি? হতেও পারে। (আমার আসলে তার সাথে আর কথা বাড়ানোর ইচ্ছা হচ্ছিলোনা। কিন্তু ঘটলো উলটা ঘটনা।)
বন্ধুঃ (দ্বিগুন উৎসাহিত হয়ে।) এমন একজন লোক দ্বারা কী ধর্ষন করা, মানুষ জবাই করা সম্ভব!!!
আমি আর সহ্য করতে পারলাম না।
তাকে জিজ্ঞেস করলাম।
আমিঃ তুই ওমর (রাঃ) এই নাম শুনেছিস তো? আশা করি তোকে আর বেশী কিছু বলতে হবেনা । ওমর (রাঃ) এর জীবনী পড়লে তোর অতি সহজেই বিষয়টা পরিষ্কার হবার কথা । হ্যাঁ, আমি মানছি বর্তমান সাঈদী দ্বারা এটা হয়তো সম্ভব না। কিন্তু বিচার করা হয়েছে ৩০ বছরের একজন সাঈদীর যিনি একজন রাজাকার ছিলেন । পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা ।
বন্ধু ঃ যা, শালা তুই একটা নাস্তিক। (বন্ধু অফলাইন)
আমি রকজ, বন্ধু শকজ।
**
তবে তার কাছে একটা প্রশ্ন জানার ছিলো । "সাঈদীর বিরুদ্ধে বলার কারণেই কি আমি নাস্তিক?"। (যদিও আমি বিরুদ্ধের কোনো কথা বলিনি।)
ছাগু পর্ব
০৪/০৩/২০১৩
আমরা বন্ধু গ্রুপের সেই বন্ধুটি, যিনি ফেবুতে একটা গ্রুপ পরিচালনা করেন। অন্যান্য গ্রুপের মতোই স্বাভাবিক ভাবেই এই গ্রুপের ও আলোচনার বিষয় ছিলো রাজাকারের বিচার। বলা ভালো এই গ্রুপে এটা একটু বেশীই ছিলো। যার যার বিশ্বাসে সেই অটুট। কিন্তু তাই বলে নিজের মত না হলে কাউকে শুয়োর কিংবা শুয়োরের বাচ্চা বলার কি কোনো মানে হয়? আপনি মানুষ হয়ে যদি অন্য কাউকে শুয়োর বলতে পারেন। তাহলে আপনাকে মানুষ বলতে আমার আপত্তি আছে।
যাক, মুল ঘটনা হল। ওই গ্রুপের একটা বিষয় নিয়ে আমার গ্রুপে দেয়া একটা পোস্ট ছিলো মোটামুটি এই রকম।।
"লেজ গুটিয়ে রাখা কঠিন। আমাদের এই গ্রুপের কোন এক ব্যক্তি এই কথা বলেছিলেন। আসলেই লেজ গুটিয়ে রাখা কঠিন।"
দেশের সরকার এখন কোনটা?
ইমরান এইচ সরকার নাকি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার?
ইমরান এইচ সরকার বসতে বললে সংসদে বসে থাকার বিল পাশ হয়, দাড়াতে বললে দাঁড়াবার বিল পাশ হয়।
ভাগ্যিস, ইমরান এইচ সরকার গু খাইতে বলে নাই, তাইলে মনে হয় সংসদে সেটার বিল ও পেশ হতো?
হ্যাঁ, কমেন্ট এর প্রথম অংশ ছিলো , গ্রুপের বিশেষ একজন ব্যক্তির অতি ফালাফালি নিয়ে। ২য় অংশ ছিলো, আমার ক্ষোভের জায়গা। একজন ব্যক্তি কিংবা একজন জনপ্রতিনিধি দেশের উপর এই রকম আদেশ জারি করতে পারেনা। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি প্রস্তাব করতে পারেন, আদেশ নয়। অথচ তিনি বারে বারে আদেশ করে গেছেন। সরকার ও সেটা করে গেছেন। একজন সাধারন নাগরিক হিসেবে সেটা আমার ভালো লাগেনি।
ওই কমেন্ট এর পর আমাকে বলা হলো আমি ছাগু।
কেনো ছাগু?
ওই মুক্ত মনের (!) ব্যক্তিটিকে জিজ্ঞেস করলাম।
তার জবাব হলো, তুমি ইমরান এইচ সরকারকে নিয়া যা বলছো, তাতেই তুমি ছাগু। এবং এই গ্রুপে কোনো ছাগু থাকবেনা। আমাকে গ্রুপ থেকে ব্যান ও করা হলো ।
আমার এখন প্রশ্ন হলো, সাঈদী কিংবা যুদ্বাপরাধের বিরুদ্ধে কথা বললেই কি আমরা নাস্তিক? আবার, ইমরান এইচ সরকারের কোন কিছু ভালো না লাগলে সেটা নিয়ে কথা বললেই কী আমরা ছাগু?
নাকি এই পরিস্থিতিতে কথা বলাটাই অন্যায়।
কিন্তু এতো কিছু ছাপিয়েও একটা প্রশ্নই বড় হয়ে উঠেছে, আমরা নিজেরাই বিভাজন সৃষ্টি করে ফেলছিনাতো নিজেদের মধ্যে?
আমাদের সবার চেয়ে বড় পরিচয় হওয়া উচিৎ আমরা সবাই একই বাঙ্গালী মায়ের সন্তান।
কিন্তু তার উদ্দেশ্যে বেশ কিছু কথা ছিলো। কিন্তু তিনি জবাব দিতে অপারগ ছিলেন। হয়তো তার সেই সামর্থ্য ও ছিলোনা।
তবুও তার উদ্দেশ্যে বলছি। আপনি একা মোম্বাতি প্রজ্জ্বলন করেন নি, আমরাও করেছি।
আপনি একা নীরবতা পালন করেন নি, আমরাও করেছি।
তবে আমি অন্ততঃপক্ষে কাউকে দেখানোর জন্যে করিনি। যা করেছি, তা নিজের হৃদয় থেকে করেছি। দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে করেছি। আত্ম প্রচারের জন্য করিনি।
তবে গ্রুপ থেকে ব্যান খাবার পর ভেবে দেখলাম।, আপনি যাদেরকে শুয়োর বলে গালি দিয়েছেন অবলীলায় তাদের থেকে আপনিও আলাদা নন।
ভালা লিখছ নেয়ামত ভাই
রনি ভাই আপনাকে। ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করুন