ছেলেবেলার লাল শালুক
(১)
বাবার সরকারি চাকরির কারণে পুরো পরিবারের পায়ের তলায় সর্ষে দেখছি সেই ছেলেবেলা থেকে। অবশ্য ফি বছর নতুন শহরে নতুন স্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে চোখেও সর্ষেফুল দেখতে পেতাম! একগাদা নতুন মুখ চারপাশে, সারাক্ষণ ড্যাবড্যাব করে দেখছে আমাকে! এটা খুব নিয়মিতই হত! তাদের সাথে গলায় গলায় ভাব হতে না হতেই আবারো লোটাকম্বল নিয়ে নতুন শহরে রওনা হওয়া!
তারপর যাযাবর জীবন শেষে পঙ্গপালের মতন একসময় সপরিবারে আজব শহর ঢাকায় ঠাঁই নিলাম আমিও। একে একে সব পুরোনো বন্ধুদের খুঁজে পেলাম, হরিহর আত্মা দুয়েকজন যারা ছিল তাদেরও পেয়ে গেলাম। তবু আবছা আবছা কিছু মুখ মনের মুকুরে উঁকি দেয় এখনো, নামগুলো পেটে আসে তো মুখে আসে না। কিছু নাম মুখে আসে কিন্তু তাদের মুখের আদলটাও মনে পড়ে না। খুঁজে বেড়াই সেই মানুষগুলোকে, অজান্তেই!
(২)
বাসার স্টোররুমে কার্টন ভর্তি পুরোনো বইখাতা ছিল, অনেকদিন ধরে জমানো হচ্ছিল কেজি দরে বিক্রি হবে বলে। আমি তখন বাসার একমাত্র ফ্রক পরা ছোট্ট খুকি! দুপুরবেলায় মা ঘরকন্না শেষে আমার জন্য ঘুম পাড়ানি গাইতে গিয়ে নিজেই যখন ঘুমে কাদা হয়ে যেত তখন পা টিপেটিপে চলে যেতাম স্টোররুমে! ইঁদুর আর তেলাপোকার ভয়কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে গুপ্তধন খুঁজে বেড়াতাম সারা দুপুর। গুপ্তধন বলতে পুতুলের জন্য এক টুকরো কাপড় কিংবা রাংতা, নয়ত দু’একটা মার্বেল বা খুঁজে না পাওয়া বই! একবার কার্টনের মধ্যে ওসব খুঁজতে গিয়ে পেয়ে গেলাম বাবার দেওয়া প্রথম বই- ‘টুনটুনির বই’! সবুজ মলাটের এই বইটা খুঁজে পেয়ে আমি তো খুশিতে দশ-বারো খানা হয়ে গেলাম। আরেকটা মলাটহীন বইও পেয়েছিলাম সেবার। জীর্ণ দশা ছিল বইটার, প্রথমদিকের বেশ কিছু পাতার হদিশ মেলেনি, বাকিগুলো ছিল হলদেটে। পড়ে শেষ করে নিজের চেষ্টায় সাদা রঙের একটা মলাট লাগিয়ে বইটার উপর কাঁচা হাতে প্রচ্ছদ এঁকেছিলাম।
‘টুনটুনির বই’ এর সাথে একসময় আবার খুইয়ে ফেলি ‘সূয্যি মামার রথে’ নামের মজার ঐ গল্পের বইখানা। মাঝে মাঝে ফিরে পেতে খুব ইচ্ছে হয় ছেলেবেলার মিঠে গন্ধমাখা সেইসব বই, সেইসাথে স্টোররুমে কাটানো দুপুরবেলার ঐ অভিযানগুলোও!
(৩)
মফস্বলে কাটানো আমার শৈশবের বিকেলগুলো ছিল বুনোফুলের গন্ধমাখা। স্যাঙাতদের নিয়ে কখনো কখনো কলোনির বাইরে হেঁটে যেতাম অনেকটা পথ। সাদা রঙের এক রকমের ফুল সেই পথের ধারে হেলায় ফুটে থাকত, থোকায় থোকায়! সেই ফুল আজ অব্দি ভুলি নি। একের সাথে আরেকটা লাগিয়ে নিলে তৈরি হয়ে যেত ফুলেল অঙ্গুরীয়, সেটা পরে মনে হত বুঝি হয়ে গেলাম ফুলেশ্বরী! বাদলা দিনে যখন আকাশটা নিত আড়ি, ছুটোছুটি করা বন্ধ থাকত তখন বেশ প্রিয় খেলা ছিল এটা!
বছরখানেক আগে আরেকবার মফস্বলে যাওয়ার সুযোগ হল। একটা ভেজা সকালে একা একা হাঁটতে গিয়ে আবার খুঁজে পেয়েছিলাম সেই বুনো ঘ্রাণ! ইতিউতি অনেক খুঁজেছিলাম, কিন্তু ফুলের হদিস মেলেনি সেদিন আর! তবে কয়েকটা দিনের জন্য হলেও স্মৃতিগুলো হামলে পড়েছিল পুরোনো স্মৃতিকোষগুলোতে!
----------------------------------------
বাহ! চমৎকার লেখনী আপনার।
আমরা বন্ধু তে সুসাগত।
পড়তে থাকুন, লিখতে থাকুন।
ভালো থাকুন।
এত তাড়াতাড়ি মন্তব্য পাব সত্যিই ভাবি নি!
অনেক ধন্যবাদ বাউন্ডুলে।
এবি তে প্রথম যেদিন লিখি,
আমিও ঠিক এমনটাই ভেবেছিলাম!
দিনে দিনে দেখে শিখেছি,
এখানে নিজের সময়টুকু একটু যত্ন করে দিয়ে গেলে -
বন্ধুর অভাব হয়না কখনই।
স্মৃতিচারণমূলক লেখাগুলো আমাকে খুব টানে। নিজেরও কিছু স্মৃতিকথা আছে ব্লগে।
ভাল লাগলো। নিজের সাথে মিল পেলাম।
আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমারও ভাল লাগল!
শুভকামনা
গুড রাইটিং!
অনেক ধন্যবাদ!
সুন্দর লেখা। নিয়মিত থাকুন। পড়তে ভাল লাগল লেখার সাবলীল ঢং-এর জন্য
মন্তব্য করুন