তিন অধ্যায়
১)
ছাদের আকাশে নক্ষত্রের কনফারেন্স। কিন্তু আজ আমার নক্ষত্রে মন বসছে না। মনটা ভারী হয়ে আছে। চয়নকে ফিরিয়ে দিলাম। চোখেমুখে রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে ফিরে গেল ও। ফেরানো সহজ হত না। তাই ওকে জানালাম অগ্নির কথা। বললাম-‘তুমি ভুল বুঝেছ, আমি নই, বরং অগ্নি তোমাকে পছন্দ করে। তোমাকে বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবি নি আমি কখনো। ’
ঘোরগ্রস্তের মতন চলে গেল ছেলেটা। চয়নকে আমার মত অগ্নিও ভালবাসবে এটাই তো স্বাভাবিক। আমি দুঃখ পেয়েছি কিন্তু রাগ করিনি। সেই কবে থেকে আমি আর অগ্নি একই রকম, অবিকল। সব হাসিকান্না, পছন্দ-অপছন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছি দুজন। কিন্তু কিছু ব্যাপার কখনোই কারো সাথে ভাগ করা যায় না। কিছু অধিকার বুঝে নিতে হয় নয়ত ছেড়ে দিতে হয়। অগ্নি আমার এত কাছের, আমার আরেকটা স্বত্তা, তাই অধিকারটা ছেড়ে দিলাম। অগ্নির চোখের কোলে মেঘ দেখার চেয়ে চয়নকে ভুলে থাকা আমার জন্য অনেকটা সহজ।
২)
কাল ভোরে চলে যাচ্ছি। খুব দোটানায় ছিলাম। বহ্নিকে ছেড়ে যাবার ইচ্ছে ছিল না এতটুকু। কিন্তু বহ্নিই ব্যাপারটা সহজ করে দিয়েছে, আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে। একই শহরে থেকে ওকে না দেখে থাকা অসম্ভব হত। দূরদেশে পাড়ি দেবার সুযোগটা তাই আমাকে নিতেই হল। গত একটা মাস বহ্নিকে না দেখে ছিলাম, কী করে জানি না! কাল খুব ইচ্ছে হচ্ছিল, একবার ওকে দেখে আসি চলে যাবার আগে। কিন্তু সায়ন ছায়ার মত আমার সাথে সাথে ছিল। আমার পাগলামিতে প্রচণ্ড রাগ করেছে ছেলেটা, শেষ পর্যন্ত অনুনয় করে আমাকে আটকে রেখেছে, যেতেই দেয় নি। তাই আর দেখা হল না বহ্নি, আমার বহ্নিশিখাকে।
হয়ত আর হবে না, ফেরার ইচ্ছেটাই মরে গেছে আমার।
৩)
চয়নের মুখে বহ্নির এত গল্প শুনেছি আর ছবি দেখেছি তাই আমার ক্যাম্পাসে ওকে দেখা মাত্রই চিনতে পারলাম। ওকে এখানে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছি আমি। চয়নের চলে যাবার খবরটা বোধ হয় ও পায় নি। আমার দিকেই এগিয়ে আসছে মেয়েটা।
-তোমার ফোন বন্ধ কেন?
আমি চুপ করে রইলাম, ও কী বলতে চায় শুনব বলে।
-আমার সাথে চলো চয়ন, অগ্নি তোমার সাথে কথা বলতে চায়।
-অগ্নি?
-তোমাকে বলি নি আমার বোনের কথা? এমন কোর না, প্লিজ। ওর খুব মন খারাপ।
-দেখো তুমি কিন্তু ভুল করছো...
আমার কথাটা শেষ করতে দিল না বহ্নি।
-চয়ন তুমি আমার কথা শোনো। অগ্নি অবিকল আমার মতন দেখতে, তুমিতো জানোই আমরা একই রকম দুজন মানুষ। কিন্তু আমার চেয়ে ওকেই তোমার বেশি ভাল লাগবে। আমার এই অনুরোধটা রাখো, প্লিজ।
-আমার পুরো ব্যাপারটাই গোলমেলে লাগছে...
-তুমি একবার এসো আমার সাথে, আমাদের বাসায়...
-অগ্নি, তোমাকে একটা কথা জানানো দরকার। চয়ন নেই। ও চলে গেছে, ওর ভার্সিটিতে গতকাল ওরিয়েন্টেশন ছিল, ও সপ্তাখানেক আগেই চলে গেছে।
বড় বড় চোখ করে বহ্নি বলল- তুমি রাগ করে বলছো, তাই না?
-না, সত্যিই বলছি, আমি চয়ন নই, আমি সায়ন।
কথাটা বলেই গটগট করে হেঁটে চলে আসলাম আমি। চয়নকে এসব জানানোর কোনো মানে হয় না। ওর কষ্ট আরো বাড়বে।
৪)
আমার কিছুই ভাল লাগছে না। একগাদা ওষুধ খেতে ইচ্ছে করে না। এখানে অগ্নিও আসে না। আমার কাছে ওকে আসতে বারণ করেছে ডাক্তার। ও চলে গেলেই আমি নাকি সুস্থ হয়ে উঠব! কিন্ত ওকে ছাড়া আমার মন যে ভাল হবে না এই ব্যাপারটা ডাক্তার বুঝতে পারছে না। অগ্নিকে ছেড়ে আমি কখনো ছিলাম? একসাথে একই মুহূর্তে জন্ম আমাদের। একই সাথে বেড়ে উঠেছি, এখন অন্যের নিষেধে আমাদের বিচ্ছেদ হবে? কী অন্যায়! আমার মাথাটা ভার হয়ে আছে, চোখ মেলে রাখতে পারছি না। অগ্নির সাথে লুকিয়ে কথা বলতে গেলেও আমাকে ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়। আমি আর ঘুমোতে চাই না। কতদিন নক্ষত্রের কনফারেন্স দেখি না...অগ্নিকে সাথে নিয়ে।
৫)
নিজের উপর প্রচণ্ড বিরক্ত আমি। কোনো কিছুই গোপন রাখতে পারি নি কখনো চয়নের কাছে। ছোটবেলা থেকেই এমনটা হয়ে আসছে, চয়নও পারে নি লুকোতে কিছু। বহ্নির ক্যাম্পাসে আসার খবরটা ওকে দিয়ে ফেলেছি কথায় কথায়। ও এসেছিল শুনে খুব অস্থির হয়ে পড়েছে চয়ন, ফোনে ওর গলাটা কাঁপছিল। যেন হাজার মেইল দূর থেকে তখনই ছুটে আসবে। আমাকে বারবার বলল –‘সায়ন, প্লিজ বহ্নির খোঁজ নিস’।
একটা ব্যাপার নিজের কাছেই অস্বীকার করে গেছি এতদিন, হয়ত আর পারব না। আর নিজের কাছে যদি না পারি তো শেষমেশ চয়নকেও জানাতে বাধ্য হব। সেটা খুব খারাপ হবে। ওকে কী করে জানাবো যে বহ্নিকে আমি ইচ্ছে করেই এড়িয়ে এসেছি এতদিন। চয়ন খুব চেয়েছিল আমার সাথে বহ্নির দেখা হোক, কথা হোক। কিন্তু আমি কায়দা করে এড়িয়ে গেছি। আমার খুব ভয় ছিল, মেয়েটার কাছাকাছি গেলে আমি নিশ্চিত দুর্বল হয়ে পড়ব ওর প্রতি। কারণ চয়নের ভাল লাগা, মন্দ লাগা আমার সাথে মিলে যায় সবসময়। বহ্নি যেদিন চয়নকে ফিরিয়ে দিল সেদিন থেকে আমিও একই যন্ত্রনায় ভুগছি। হঠাৎ বহ্নির সাথে দেখা হয়ে যাওয়ায় সে যন্ত্রনা বেড়ে গেছে বহুগুণ।
ভাবছি আমিও এ শহর ছাড়ব। দূরে কোথাও চলে যাব, নয়ত চয়নের কাছাকাছি।
-----------------------------
ঠিক বুঝতে পারলামনা থিমটা । অগ্নি,বহ্নি, সায়ন, চয়ন , সব তালগোল পাকিয়ে একাকার । তো ভাষা কিন্তু খুব প্রাঞ্জল হয়েছে । লিখতে থাকুন !
প্রথমেই লেখাটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ জানাই।
একটু ধরিয়ে দেই ব্যাপারটা- অগ্নি আর বহ্নি যমজ বোন আর ওদিকে চয়ন-সায়নও যমজ ভাই। বাকিটা হয়ত এবার বোঝা যাবে। দুঃখিত, গল্প দিয়ে থিমটা বুঝাতে পারি নি।
অনেক দিন পর আপনার লেখা পেলাম ও পড়লাম!
ভালো লাগলো!
সময় হয় তো ইচ্ছে হয় না, আবার ইচ্ছে হলে হয়তো সময় হয় না- এই আর কি!
ভাল থাকুন
মন্তব্য করুন