ইউজার লগইন

নিভৃত স্বপ্নচারী'এর ব্লগ

ধূসর গোধূলিঃ (১ম পর্ব) শ্রাবন মেঘের দিনে

ভোরের আলো ফুটতে এখনও ঢের বাকি। চারিদিকে একটা আবছা গুমোট অন্ধকার। অনেকটা শ্যাওলা পড়া স্যাঁতসেঁতে দেয়ালের মত হয়ে আছে মেঘলা আকাশটা। থমথমে সময়টা মন খারাপ করা আরেকটা রোদ্দুরবিহীন দিনের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে। মেঘলা ভোরের এই ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়ায় ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি শ্যামলপুর গ্রামের বেশীর ভাগ মানুষের। ঘুম ভাঙ্গানিয়া পাখীদের দলও যেন বুঝে গেছে বৃষ্টিভেজা এই বর্ষাভোরে তাদের আরামের ঘুমটুকু এখনই ভাঙ্গিয়ে দিতে নেই। তাইতো ওরাও যেন স্বভাবসুলভ কিচিরমিচির থেকে বিরত রেখেছে নিজেদের। কাল সারারাত মুষলধারে বৃষ্টি ঝরেছে, শেষ রাতের দিকে কিছুটা কমে এলেও থেমে যায়নি পুরোপুরি। ভেজা গাছের পাতা থেকে টুপটুপ করে ঝরে পড়ছে বৃষ্টির পানি। শ্রাবনের ভারী বর্ষণে চারিদিক পানিতে থৈ থৈ, যতদূর চোখ যায় কেবল পানি আর পানি। বর্ষার পানিতে টইটুম্বুর আউশের ক্ষেতগুলোর মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাড়িগুলোকে একেকটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতই লাগছে। সারারাতের বর্ষণে রাস্তার পাশের ভেজা গাছগুলো কেমন যেন বিষণ্ণ সময়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আশে পাশের ফসলি জমিগুলোর মাঝখান দিয়ে একেবেঁকে ছুটে চলা কাঁচা রাস্তাটার অনেকটাই তলিয়ে আছে পানির নীচে

খরার পরে বৃষ্টি (শেষ পর্ব)

দুপুরের কাঠফাঁটা রোদে আবার রাস্তায় নামে অমিয়। শান্তিনগর মোড়ের দিকে হাটতে থাকে, রাস্তায় প্রচুর যানজট। বাস, প্রাইভেট কার, সিএনজি, রিকশা, ভ্যানে রাস্তা গিজ গিজ করছে। যানজটে মানুযের জীবনযাত্রা দিনকে দিন কঠিন হয়ে উঠছে। প্রচণ্ড গরমে অস্থির। এর মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে বসে থাকা ! বেঁচে থাকার তাগিদে ছুটে চলে শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। বড় বড় অফিসের ব্যাস্ত কর্মকর্তা থেকে শুরু করে খেটে খাওয়া দিন মজুর পর্যন্ত। সবাই ছুটছে জীবিকার প্রয়োজনে !

শান্তিনগর মোড়ে এসে অমিয় ভাবতে থাকে কোথায় যাওয়া যায় ? ঠিক এই মুহূর্তে ওর কোন কাজ নেই। কাজ না থাকাও একটা সমস্যা। ফাঁকা বাসায় একা একা সময়ও কাটবে না, ভাবতে ভাবতে একটা রিকশায় উঠে পড়ে।
-রিকশাওয়ালা জিজ্ঞেস করে- কই যাইবেন ?
-মতিঝিলের দিকে চলেন।
রিকশা ধীরে ধীরে এগুতে থাকে মতিঝিলের দিকে। রিকশাওয়ালা লোকটা বেশ বয়স্ক। রুগ্ন শরীর, বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে। প্রচন্ড গরমে দরদর করে ঘামছে।
-চাচা, আপনার বাড়িতে কে কে আছে ?
-আমি আর আমার স্ত্রী।
-ছেলেমেয়ে নাই?
-তিনডা পোলা আছে, তারা যার যার সংসার নিয়া আছে।
-আপনারে দেখে না?

খরার পরে বৃষ্টি (পর্ব-১)

উৎসর্গ –অনিমেষ রহমানকে, আমাদের নাগরিক জীবনের চারপাশের জটিল চাল চিত্র সাবলীল ভাবে উঠে আসে যার লেখনিতে।

সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। অমিয় বাসা থেকে বের হয়ে অনেকক্ষণ রিকশার জন্যে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তায় দু-একটা রিকশা দেখা গেলেও একটাও যেতে রাজি হচ্ছে না। আজকাল রিকশাওয়ালাদের যে কি হয়েছ! কোথাও যেতে চায়না। বৃষ্টি না থাকলে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত হেঁটেই যাওয়া যেত, কিন্তু এই বৃষ্টিতে হেঁটে গেলে ভিজতে হবে। রাস্তায় কয়েক জায়গায় পানি জমে আছে। প্রায় ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করার পর অবশেষে একটা রিকশা পাওয়া গেল।

বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখে লোকে লকারণ্য। বাস, ট্যাক্সি বা সিএনজি কিছুই নেই। মেজাজটা আরও খারাপ গেল। এমনিতেই সারাদিনই শহর জুড়ে যানজট লেগে থাকে, তার ওপর আজ বৃষ্টি হওয়াতে অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। দিন দিন আমাদের শহরটা যেন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে !
দুই ঘণ্টা যুদ্ধ করে অমিয় অফিসে পৌছাল।

পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে

বিকেল পাঁচটায় অফিস থেকে বের হয়ে এলাম। ফার্মগেট এসে মনে হল আজ রিকশা করে বাসায় ফিরলে কেমন হয় ! তেজগাঁও কলেজের সামনে এসে কয়েকটা রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করতে অল্প বয়সী একটি ছেলে মিরপুর যেতে রাজি হওয়ায় উঠে পড়লাম।
আকাশে বেশ মেঘ জমেছে। মানিক মিয়া এভিনিউয়ের মাথায় এসে মনে হল যে কোন মুহূর্তে বৃষ্টি নামবে। রিকশাওয়ালা ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলাম- এই পর্দা আছে ?
ছেলেটা হেসে জবাব দিল- পর্দা নিতে ভুইলা গেছি। হুডটা তুলে দিল। ইতিমধ্যে বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে শুরু করল। সংসদ ভবনের মোড়ে আসতেই প্রায় ভিজে গেলাম।
হঠাত মনে হল অর্ধেক ভিজে লাভ নেই আজ পুরা পথটাই বৃষ্টিতে ভিজি ! অনেক দিন তো বৃষ্টিতে ভেজা হয় না ! ছেলেটিকে বললাম- এই, হুডটা নামিয়ে দে, আজ বৃষ্টিতে ভিজবো।
-ছেলেটি হেসে বলল- অসুখ করবে না !
-তুই যে ভিজছিস !
-আমগো তো ভেজার অভ্যাস আছে।

বাবা, আমার প্রিয় বাবা

baba.jpg
ব্লগের প্রথম পাতায় একটি পোস্ট থাকতে আরেকটি পোস্ট দেয়ার ইচ্ছা আসলে ছিল না। বাবা দিবসে আজ বাবার কথা খুব মনে পড়ে গেল, যদিও বাবাকে মনে পড়ার জন্যে কোন বিশেষ দিবসের প্রয়োজন হয় না। লেখাটি শেষ করে তাই মনে হল সবার সাথে সেয়ার করি।

খুব ছেলেবেলায় আমি আমার মাকে হারাই। মা’র চেহারা কেমন ছিল মনে পড়ে না আমার। সবার কাছ থেকে তাঁর সম্পর্কে শুনে শুনে মায়ের একটি ছবি মনে মনে কল্পনা করে নিয়েছিলাম। মা না থাকাতে বাবাই ছিলেন আমার সব, তিনি একাধারে বাবা ও মায়ের দায়িত্ব পালন করতেন। ফুপু, মামা, খালাদের কাছ থেকেও যথেষ্ট আদর যত্ন পেলেও আমি সব সময়ই বাবার আদরের প্রত্যাশী ছিলাম। সৎ মা, সৎ ভাই বোনদের প্রতি তাঁর দায়িত্ব কর্তব্যের কোন কমতি না থাকলেও বাবার ভালবাসা মাপার যদি কোন যন্ত্র থাকতো, তাহলে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি সবার প্রতি তাঁর ভালবাসার চেয়ে আমার প্রতি ভালবাসার পরিমান অবশ্যই বেশী হত। বাবার কাছে মার তো দূরের কথা, কখনও বকা খেয়েছি বলে আমার মনে পড়ে না।

ভোরের শিশির কণা

রঞ্জুর বাসা থেকে বাস স্ট্যান্ডের দূরত্ব খুব বেশী নয়, এটুকু পথ পায়ে হেঁটেই যাওয়া যায়। ঘড়ির কাঁটা ধরে রোজ সকালে একই পথ ধরে ওর যাওয়া আসা। বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তাটি বেশ কয়েকটি বাঁক নিয়ে বড় রাস্তায় পড়েছে, তারপর পাঁচ মিনিট হাটলেই বাসস্ট্যান্ড!

আজ একটু দেরী হয়ে যাওয়ায় খুব তাড়া ছিল রঞ্জুর। বাসা থেকে বেড়িয়ে গলির দ্বিতীয় বাঁকটির শেষ মাথায় নুরুল ডাক্তারের বাড়ি পার হয়ে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছে, হঠাৎ লম্বা বেণী দুলিয়ে উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণা এক উচ্ছলা ষোড়শী ডাক্তার বাড়ির ডান দিকের গলি থেকে দমকা হাওয়ার মত এসে রঞ্জুর সামনে উদয় হল। মেয়েটি ভাঁজ করা একটি কাগজ রঞ্জুর হাতের মুঠোয় ধরিয়ে দিয়ে ঝড়ের বেগে দৌড়ে পালাল যেদিক দিয়ে এসেছিল ঠিক সেভাবে উল্টা দিকে। ঘটনার আকস্বিকতায় রঞ্জু তো অবাক! কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে না পেরে বেশ কিছুক্ষণ হতবিহ্ববল হয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকার পর চারিদিকে তাকিয়ে আশেপাশে কেউ নেই দেখে স্বস্তি বোধ করলো। পরে পড়বে ভেবে কাগজটি প্যান্টের পকেটে ভরে হাঁটতে লাগলো বাসস্ট্যান্ডের দিকে।