নাস্তিক্যবাদ : কমিউনিষ্ট ধারনা নাকি বূর্জোয়া বিপ্লবের আবশ্যিক কতব্য ?
শুধু মার্কসবাদীরাই ধর্মের বিরুদ্ধে লড়েনি। যদিও আমাদের দেশে ধর্মের বিরুদ্ভে আলোচনা-সমালোচনা করলেই বলা হয় “কমিউনিষ্ট”। যেন নাস্তিক মানেই কমিউনিষ্ট। ধর্মের সঙ্গে সংগ্রামটা হলো বূর্জোয়া বিপ্লবের অবশ্য কতৃব্য এবং পশ্চিমে বূর্জোয়া গণতন্ত্র তার বিপ্লবের যুগে অথবা সামন্ততন্ত্র ও মধ্যযূগীয়তার উপর আক্রমনের যুগে সে কর্তব্য অনেক পরিমান পালন করেছিলো বা পালন করতে নেমেছিলো। ফ্রান্স এবং জার্মানীর উভয় দেশেরই আছে ধর্মের বিরুদ্ধে বূর্জোয়া সংগ্রামের ঐতিহ্য।
ইউরোপ-আমেরিকয়ায় সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতকীয় বূর্জোয়া যখন তার সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক জীবনে ধর্মদ্রোহী নানান ঘটনার অবতারনা করেছে,ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করা,বাইবেল পুড়িয়ে ফেলা,গীর্জার চুড়া গুড়িয়ে দেয়া,পাদ্রীদের দেশান্তরী করে গীর্জার সম্পত্তি রাষ্ট্রের তরফে বাজেয়াপ্ত করা,জীবন ও জগত সংক্রান্ত খৃষ্টীয় ভাবাদর্শকে আক্রমন ও নাকচ করা প্রভৃতি;ইতিহাসে তখন কমিউনিষ্টদের জন্মই হয়নি।
এই সেদিন ১৮৮০ সালে বৃটিশ কমন্স সভার যে নির্বাচিত সদস্যটি Bradlaugh পার্লামেন্টে নিজের নাস্তিক্য দাবী করে ‘ঈশ্বরের’ নামে শফত নিতে অস্বীকার করেছিলেন,তিনি কমিউনিষ্ট ছিলেন না।(Sir William R.Anson: The law and custom of the constitution,Vol:1,Fifth Edition,Oxford 1922,Page-95).
এই Bradlaugh এর আপত্তিকর জের ধরে শেষ পর্যন্ত ১৮৮৮ সালে ঈশ্বরের উল্লেখ বিবর্জিত এক সার্বজনীন শফতনামা অনুমোদন করে একটি আইন বৃটিশ পার্লামেন্টে প্রনীত হয়। যে পার্লামেন্ট এই নিরীশ্বরবাদী শফতনামা অনুমোদন করে,সেই সংস্থাটি ছিলো বুর্জোদের আইনসভা; কমিউনিষ্টদের নয়।
ইউরোপ-আমেরিকায় অতীতে গণতন্ত্র প্রতিষ্টার আবশ্যিক শর্ত হিসেবে চিরায়ত বূর্জোয়া একদা সকল ধর্মীয় ভাবাদর্শকে রাজনীতি থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করেছিলো আর আমাদের তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলোর বূর্জোয়া আজ ধমান্ধ রাজনীতিকে রক্ষা করছে গণতন্ত্রের দোহাই পেড়ে। আমাদের দেশের ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতিকরা রাজনীতিতে ধর্মদ্রোহিতা,সাংস্কৃতিক জীবনে নাস্তিক্য প্রভৃতি ধারনার উদ্ভাবনের জন্য হামেশাই কমিউনিষ্টদের গালি দিয়ে থাকেন।যুদ্ধঅপরাধী জামাত নেতারা বিশেষত সাইদী তো এব্যাপারে গালিগালাজও করতে দ্বিধা বোধ করেন না। অথচ এসব অসৎ গালি গালাজের মধ্যদিয়ে ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতিকরা কেবল আপন আপন মতলববাজির পরিচয় তুলে ধরেন না,সভ্যতার ইতিহাসে চিরায়ত বূর্জোয়ার ঐতিহাসিক ইতিবাচক অবদানগুলোকে অন্যায়ভাবে অস্বীকার করেন।
সেক্যূলারিজম,নাস্তিক্য ইত্যাদি ধারনা ও প্রত্যয়ের জন্য কমিউনিষ্টরা আসলে চিরায়ত বূর্জোয়ার উদ্ভাবিত জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দর্শনের কাছে বিপুলভাবে ঋনী । বূজোর্য়া সমাজ,রাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে কমিউনিষ্ট ভাবাদর্শের ঘোর বিরোধ থাকা সত্বেও মানব সভ্যতার বিকাশে বূর্জোয়াদের যা কিছু ইতিবাচক অবদান: কমিউনিষ্টরা তা শুধু অকুন্ঠ স্বীকৃতিই দেয় না,আত্মস্থ করার ভিতর দিয়ে সে গুলোকে আরও বিকশিত করার কর্তব্য বোধ করে।
জীবন ও জগত সম্পর্কিত যে সকল ভ্রান্ত ধারনা সামন্ত যুগের মানুষের ভিতর পবিত্র বিশ্বাসের স্থান লাভ করিয়াছিলো,ইতিহাসে বূর্জোয়া অভিষেকের সময়কালে বিজ্ঞানের;বিশেষত প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের নানান আবিস্কার সেইসব ভিত্তিহীন পবিত্রতাকে ভেঙ্গে খান খান করে দেয়। রাজনীতি ও সমাজতত্বে মানুষের মৌলিক অধিকার,সমানাধিকার,মানবাধিকার প্রভৃতি শ্লোগানের প্রনেতা এই বূর্জোয়া শ্রেনী। অবশ্য পরবর্তীতে যখন কমিউনিষ্টরা এক সুষম মানবিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার আকাঙ্খা ব্যক্ত করলো তখন এই বূজোর্যারাই হয়ে দাড়ালো বড় বাধা। কিন্ত এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। আধুনিক সচেতন শ্রমিক ঘৃনাভরে ধর্মীয় কুসংস্কারকে প্রত্যাখান করেছে। মৌলভী পূরোহিত ও বূর্জোয়া ভন্ডদের জন্য স্বর্গ ছেড়ে দিয়ে তারা নিজেরা এই পৃথিবীতে উন্নততর জীবন জয়ে উদ্যোগী।ধর্মের কুহেলিকার বিরুদ্ধে সংগ্রামে শ্রমিকরা বিজ্ঞানকে টেনে আনছে এবং পৃথিবীতে উন্নত জীবনের জন্য সত্যকার সংগ্রামে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রত্যয় থেকে তাদের মুক্ত করছে।
পরলোকে স্বর্গ সৃষ্টি সম্মন্ধে শোষিত শ্রেনীর মতৈক্য অপেক্ষা পৃথিবীতে স্বর্গ সৃষ্টির জন্য নির্যাতিত শ্রেনীর এই সত্যকার বৈপ্লবিক সংগ্রামের ঐক্য অধিকতর গুরুত্বপূর্ন।
আপনার গত পোস্টের ২ য় পর্ব পড়তে মন্চায়
শফত মানে কি শপথ বোঝাচ্ছেন?
শফত মনে হয় শপথের সফট ভার্ষন
বুঝি নাই কিছু। তয় এই লাইনটার কাঠিন্য মনে ধরছে
প্রিয়,
আমার বন্ধু ব্লকের সহ-ব্লগার বন্ধুরা,
আমার শুভেচ্ছা জানবেন। আমার আসলে কম্পিউটার নেই এবং এক বন্ধূর এখানে এসে মাঝে মাঝে ব্যবহারের সুযোগ পাই। যার কারনে আলাদা আলাদা উত্তর দিতে পারছি না,দু:খিত। কিছু বানান ভূল আছে লেখায়,মার্জনা করবেন। আর যে কেহ ইচ্ছা করলে লেখাটা কপিপেষ্ট করে ব্যবহার করতে পারেন আমার কোন আপত্তি নেই। কারন আসলে আমি বিজ্ঞানের বিষয়গুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে এক জায়গায় করেছি মাত্র। আমার নিজস্ব কোন আবিস্কার না। ইতিহাসের চিরায়ত সত্য জানার চেষ্টা করেছি মাত্র।আমার প্রতিটি লেখা যে কেহ উচ্ছা করলে নিজের নামে অন্য ব্লগ/পত্রিকা/পুস্তিকা প্রকাশ করার অনুমতি দেওয়া হলো। আমি শুধু চাই যে,সত্যটা প্রতিষ্ঠিত হোক এবং ধর্মের নামে যাহারা রাজনীতির ব্যবসা করে,তাদের ব্যবসাটা বন্ধ হোক।
সময় নিয়ে লেখাটা পড়ার জন্য আপনাদের সবাই কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
মন্তব্য করুন