একটি বাসের টিকেট , গন্তব্য অনিশ্চিত ... অতঃপর ....
বছর দশেক পর দেশে গেলে যা হয় আর কি ... সবচেয়ে প্রথম নিজের বাড়ী যাওয়ার রাস্তা এলোমেলো হয়ে যায় ... সর্বনাস , আগে তো ডান দিক দিয়ে বাসায় যেতাম এখন বাম দিক দিয়ে যাওয়া লাগছে ... মনের ভুলে নিজের বাড়ীর সামনে দিয়ে হেটে চলে গেলে পরে জানালা দিয়ে আম্মু ডেকে বলে -- নিজের বাড়ী ছেড়ে পাশের বাড়ী যাও ক্যান ? ঐ বাড়ী কোনো সুন্দর মেয়ে নাই তো ... এরপর ঘরের লোকজন দের দেখে টাশকী খাওয়া লাগে ... ওরে সর্বনাস যাদের দেখতাম হামাগুড়ি দিচ্ছে তাদের সবকটার দাড়ি গোফ গজিয়েছে , যারা ঐ সময় টি শার্টের কোনা ধরে ঝুলে থাকতো অন্তু ভাইয়া চকলেট না দিলে ছাড়বো না তাদের দেখি জামাই এর শার্টের কলার ধরে হুমকী দিচ্ছে বসুন্ধরায় তুমি ঐ মেয়ের দিকে এমন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলে ক্যান ? বিয়ে করেছ বৌ আছে , সারা দিন আমার কথা শুনো তাও এখনো লজ্জা হয়নি ?আর কবে শুধরাবা ? ... এরপর শুরু হয় খাওয়ার পালা ...... সে কথা না হয় অন্য কোনো দিন বলবো ...
চিঠি লেখার অভ্যাস টা কমতে কমতে এখন এমন অবস্হায় দাড়িয়েছে যে ই-মেইলের দ্বিতীয় লাইন লিখতে গেলে আধ ঘন্টা লেগে যায় ... সেই সাথে কে কোথায় থাকে তা জানার তো প্রয়োজন ই হয় না ... সব ইমেইল আর সেল ফোনের দোষ , ল্যান্ড লাইনের যুগেও অন্তঃত এরিয়া কোডের সাহায্যে বুঝা যেত আমি কোন শহরে ফোন করছি ... তাতেই বেধে গেল এক মহা যন্ত্রনা ... ঘটনার শুরু জনৈক বড় বোনের ফোন থেকে ...
>> কিরে অন্তু খবর কি ?
== এইতো আছি আপু
>> তুই এত দিন পর দেশে এসেছিস , কৈ জানালি না তো
== আরে আসলাম তো মাত্র
>> একটা ফোন তো দিতে পারতি
== আপু , (আমতা আমতা করে) তোমার নম্বরটা আমার ঐ দেশী ফোনে ছিলো , সেইটা তো অফ বুঝো না ... এই জন্যই তো ... তবে আমি তোমার আজ কালের মধ্যেই ফোন দিতাম ...
>> বুঝছি , ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয় ... আমার কথা মনে থাকলে না ফোন দিবি
== ধুর ; কি যে বল ... তোমার কথা কি ভুলতে পারি ?
>> তাইলে বল কবে আসবি আমার বাসায়
== তুমি কি ঢাকায় থাকো নাকি যে বললা আর চলে গেলাম ?
>> তুই এমন কথা বলতে পারলি ? থাক আসা লাগবে না ...
== আরে রাগ করো ক্যান ? আসবো তো
>> না থাক লাগবে না , এখন তো তুই বিদেশী .... কত ভাব দেখাবি
== আইচ্ছা কও কবে আসুম তোমার বাড়ী
>> কালকে আয়
== এক দিনের বেশী থাকতে পারুম না কিন্তু কালকে গেলে
>> আগে আয় তো ...
== আইচ্ছা ; ক্যামনে যামু কও ...
>> এসি বাসে আয় , আরামে আসতে পারবি
== কোইত্তে ছাড়ে ? কখন ছাড়ে ? বাসের কন্ট্যাক্ট নম্বর আছে তোমার কাছে ?
>> হু , নে .... ( বাস কাউন্টারের নম্বর আর নাম , সময় বলে দিয়ে ) কাল সকালের বাসে চলে আসিস গাবতলী থেকে , ঠিকাছে ? আমি রান্না শুরু করে দিলাম কিন্তু , বাসে উঠে আমাকে জানাবি কখন পৌছাবি .... ( এমনতর হাজারো উপদেশ বাণীর পরে) এখন যাই তোর জন্য বাজার করে নিয়ে আসি ...
ফোন টা রাখতেই মনে মনে বললাম -- খাইসে , কাল যদি না যেতে পারি তাইলে তো আপু কাঁচা চিবিয়ে খাবে , সুতরাং বাসায় বলে দিলাম কাল ফরিদপুর যাচ্ছি ... আব্বু জিজ্ঞেস করবো ফরিদপুর ক্যান ? ... বললাম -- ঐ আপুর বাসায় , পরের দিন ই ফেরত চলে আসবো ....
পরদিন সকাল সকাল রেডি হয়ে সোজা গাবতলী গিয়ে আপুর বলে দেয়া জায়গা টা খুজে বের করতে সমস্যা ই হলো না .... সোজা কাউন্টারে গিয়ে পছন্দমত সিট ( জানালার পাশে) পেয়ে খুশীতে আটখানা ... কচকচে পাচঁশ টাকার নোট ভাঙ্গিয়ে টিকেট নিয়ে বাকিটা দিয়ে ঝালমুড়ী খেতে যাব এমন সময় মনে হলো টিকেটের উপর চোখের কোনা দিয়ে কি জানি একটা দেখতে পেলাম ...
অনেকক্ষন ধরে উল্টে পাল্টে টিকেটের গায়ে ফরিদপুরের কোনো নাম না দেখতে পেয়ে মনে হলো ভুল টিকেট কিনলাম না তো ? ... কাউন্টারে গিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলাম -- মামা , বাস টা কৈ যাবে কনতো ? ... এ্যালিয়েন দেখার মত ভ্রু কুচকিয়ে কাউন্টার মামা কইলো ঐ যে উপরে লেখা আছে দেইখ্যা লন ... এই বাস আর কুনুখানে যায় না ...
বুঝলাম তারে আর কিছু না বলাই উত্তম ... ফোন দিলাম আপু কে ...
== আপু বাস গাবতলী থেকেই ছাড়বে তো , তাই না ?
>> হ্যা , ক্যান কোনো সমস্যা ?
== নাহ ; কিন্তু কোন কম্পানী ? ...
>> ঐ যে ( নামটা বলে দিলেন আবার) ঐটা ... ক্যান খুজে পাসনি ?
== পাইসি তো ... টিকেট ও কিনসি ...
>> তো সমস্যা কি ? বাসে উঠে সোজা চলে আয় , আমি তোকে বাস স্ট্যান্ড থেকে নিয়ে আসবো নে
== না মানে , ঘটনা হইলো ... এই বাস তো ফরিদপুর যায় না
>> মানে ?
== মানে টিকেটের গায়ে ফরিদপুর লেখা নাই ...
>> তুই ফরিদপুর যাবি কোন দুঃখে ? ঐখানে কি নয়া গার্লফ্রেন্ড বানাইছিস নাকি ?
== আরে ধুর কি যে কও ... আইচ্ছা , একটা কথা কও তো ... এই বাস তো যাবে শরীয়তপুর ...
সেইটা কি ফরিদপুরের আগে না পরে ?
কথাটা শোনার পরই আপু বুঝতে পারলো যে আসলে আমার প্যাঁচটা কোথায় লেগে গিয়েছে ... অমনি সে চিল্লায়ে উঠে বলে ....
>> ওরে বেল্লিক, বান্দর, মর্কট ... ( আহেম আহেম , আর কওনা যাইবো না )
আগে তুই বল আমি কোথায় থাকি ? ....
.
প্যাচটা আমিও বুঝলাম না। আপনার আপু থাকে কই?পাবনা ফরিদপুর নাকি?
ঘটনা হইলো আসলে আপু থাকে শরিয়তপুর , আর আমি ঠিকমত না জেনে / বুঝেই মনে করসিলাম ফরিদপুর ...
হা হা লু খু গে উ প

নাঈম ভাই, এর মানে কি? 'হাসতে হাসতে লুঙ্গি খুলে গেল উপর পর্যন্ত' নাকি 'হাসতে হাসতে লুঙ্গি খুলে গেলে উঠে পড়লাম'? নাকি আর কিছু?
ধুর মিয়া আপ্নে আমার মান ইজ্জত ডুবাইবেন
এইটার মানে হৈল "হাসতে হাসতে লুঙ্গি খুইলা গিয়া উল্টাইয়া পর্লাম"

লুঙ্গি পইরা হাসন্ডা ঠিক্না
শেষ পর্যন্ত লুঙ্গি খুইলা ? .... আহেম আহেম
খিক খিক খিক খিক খিক
ধরা টা খাইছেন ঠিক ঠিক ঠিক!
হ ! কি আর করুম
হাহাহাহাহহাহহাহাহহাহা
হোহোহোহোহোহোহোহো
গুল্লিটা কানের কাছ দিয়া গেছে মুনেলয়
কি কন ? কাইলক্যাও এইটা নিয়ে ব্রাশফায়ার হইসে
বেশ মজারু। তবে আসায় যখন জানালেন ফরিদপুর ওই আপুর বাসায় যাবেন তারা কিছু বললনা কেন ?
আসায় =বাসায়
বাসায় ও মনে হয় ঠিক বুঝতে পারেনি আপু কোথায় আছে এখন ... আব্বু আম্মু ঠিক কি কারণে যে কিছু না বলেই হ্যা বলে দিয়েছিল তা আজও আমার কাছে রহস্য রয়েই গিয়েছে
তারাও মনে হয় আপনারে নিয়া একটু রহস্য করছিল
খাইছে ।
কই যাইতাছেন জলদি ছাড়েন ।
আপনে তো আমারে কামানের গোলা খাওয়াইবার মতলব কর্তাসেন মনে হয় সাঈদ ভাই ...
আপু কইলাম পোষ্ট টা দেখসে কালকে
(
শরিয়তপুর, মাদারিপুর, ফরিদপুর সব কাছাকাছি

ভাগ্যিস, দিনাজপুর বা রংপুরের দিকে রওয়ানা হন নাই
কথা সত্য যায়াদ ভাই , "পুর" টাই মনে ছিলো ... আগের অংশটা নিজে নিজে লাগায়ে নিসিলাম .... ঘটনা ঐ খানেই প্যাঁচ খাইসিলো
না চিনি শরিয়তপুর আর না চিনি ফরিদপুর

তবে লেখা মজার হইছে
তাইলে আপনি দিনাজপুর বা রংপুরের দিকে রওনা দেন ...
কুইষ্টের মেয়ে ফরিদপুর চিনে না, এইটা কিরাম কতা হৈলো ?
এট জোনাক
আউচ !!!

মজারু।
ধন্যবাদ
আহেম আহেম !!!
মন্তব্য করুন