ইউজার লগইন

প্রাবাসী ছাত্র ডায়েরি - ১ম পর্ব

এইটা আমার বৈদেশে আগমন এবং অতঃপর এইখানে অবস্থা পর্যবেক্ষন নিয়া একখানি পুস্ট। জিয়া থেইকা শুরু করবো কারন এর আগে কি হয় মোটামুটি সব জানা আছে সবাইর।
১০ই অক্টোবর, সকাল সাড়ে নয়টা। পিছনে মার অশ্রুসজল চোখ খুব বেশি অনুভব করছি। ইচ্ছে হচ্ছে ইমিগ্রেশনের লাইন থেকে বের হয়ে যাই। একছুটে মার কাছেগিয়ে বলি “ মাগো আমি তো কোথাও যেতে চাই না।“ কিন্তু বাস্তবতার বেড়াজালে ঘেরা মানুষ আমি। আবেগের কোন স্থান নেই এই জীবনে। কাধে ব্যাগটা চেপে ধরে আস্তে আস্তে এগুলাম লাইন ধরে। সামনে বেশ বড় লাইন। ছাত্ররাই যে সংখ্যালঘু দেখে বুঝতে ১ সেকেন্ড লাগে না। বেশ ঝামেলা হচ্ছে সামনে । এক ছেলের কাগজে কি যেনো সমস্যা। উফ, অসহ্য লাগছে এইখানে দাঁড়িয়ে থাকতে। মার চোখের আড়ালে যাওয়া খুব বেশি দরকার। প্রতি মুহুর্তে আরো একটু করে দুর্বল হয়ে পড়ছি। অবশেষে, গিয়ে দাড়ালাম ডেস্কের সামনে। এবং অবাক হলাম এতো ঝামেলা চলছে আমার কোন কিছুই দেখতে চাইছে না। কোন প্রশ্ন নেই। টেনশন করবো নাকি খুশী হব বুঝছিলাম না। এরপরে বলল ক্যামেরার সামনে দাড়াতে। ছবি তুলে কি কি যেনো কাজ সেরে আমাকে পুলিশ ভদ্রলোক বললেন “ বাবা ভালো করে পড়বেন। বাবা মা অনেক আশা নিয়ে পাঠাচ্ছে। আপনারাই দেশের ভবিষ্যৎ, দেশে ফিরে আসবেন।”

অবাক হলাম। আমাদের পুলিশে এমন সেন্সেটিভ লোকও আছে তবে? ভালো লাগলো। বেশ খুশী হয়ে গেলাম। তাকে বললাম “দোয়া করবেন।” এরপরে, মোবাইলে মার ফোন। আবারো কষ্টটা বুকে চেপে বসল। আমিও দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে বিমানবালার ডাকের জন্যে অপেক্ষা করতে বসলাম। কিছুক্ষন পরেই ডাক পড়লো। উফ আরেকদফা সিকিউরিটি চেকাপ। আমার ব্যাগ খুলে ল্যাপটপ বের করে চালিয়ে দেখে এমন অবস্থা। বিরক্ত হলাম। তাও নিজেকে বললাম “ রুলস এন্ড প্রোটকলস।”
সিকিউরিটি চেক শেষ হওয়ার পরে আরেক প্রস্থ বসা। অপেক্ষা করতে করতে আশে পাশে থাকা মানুষগুলোর দিকে তাকালাম। মনে মনে একটু ধাক্কা খেলাম, কারন অনেককেই বুঝা যাচ্ছে Tier – 4 ভিসার সুযোগে স্বপ্নের দেশে ইংল্যান্ডে যাচ্ছে। নিজেকেই প্রশ্ন করলাম আচ্ছা এরা কি জানে না ওইখানে জীবন কত খরচের? এই রেসিশনের সময় গিয়ে কৈ কাজ করবে, কিভাবে কি? এরপরেই চিন্তা করলাম যার যার ভাবনা তার তার কাছে। তাও কষ্ট লাগছিলো। (এই ঘটনার প্রমান দেশে অনেক আগেই হয়েছে এইখানে কি খারাপ অবস্থা)। এরমাঝেই ডাক পড়ল বিমানে উঠার।
বিমান দেখে মেজাজ কিঞ্চিৎ খারাপ হলো। এতো ছোট একটা খেলনা বিমানে করে যাবো? অসহ্য অবস্থা। টেক্সিং করে বিমান দৌড়ুতে দৌড়ুতে লাফ দিলো। বিড়বিড় করলাম “মা দোয়া কর। বিদায় ঢাকা। বিদায় বাংলাদেশ।” পাশে বসে থাকা মেয়েটা বলল “ তুমি কি এই প্রথম একা যাচ্ছো?” হাসলাম। বললাম, “ দেশের বাইরে একা হ্যা এই প্রথম আর ঘরের বাইরে সেই ক্লাস সিক্স থেকে।” এরপরে তার সাথে কথা শুরু হলো। বেশ অমায়িক মেয়েটা। জানলাম ব্যারিস্টার সে। বললাম তোমাকে দেখে তো এতো বড় লাগে না। হাসল। অনেক উপদেশ দিলো যেগুলো আমার কাজে লাগবে। (যেহেতু আমিও ল’ স্টুডেন্ট)। বিমান বালা এলো নাস্তা নিয়ে। নাস্তা গলাধকরন করে ভাবলাম একটা ঘুম দেই ছোট কারন গত বেশ কয়েকদিনে চোখের পাতা এক সাথে করতে পারিনি। ব্যস্ততা আর ব্যস্ততা।
ছোট বিমান বিধায় একটু পরপর এয়ার বাম্প করছিলো। ঘুম বিমানের জানালা দিয়ে পালানো ছাড়া আর কোন উপায় পেল না। আর খেয়াল করলাম কান দপ দপ করছে। অসহ্য ব্যাপার তো। বিমান বালাকে ডাকলাম। জানালো তাদের এই প্লেনে তুলা নেই। মনে মনে অকথ্য গালি দিলাম কিছু। পাশের সেই মেয়েটি তার ব্যাগ থকে তুলা দিলো। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তুলা নিয়ে কানে গুজলাম।কিছুক্ষন পরেই ক্যাপ্টেনের ভাষন শুরু হলো। সামারী হলো “ আমরা আর ১০ মিনিটের মাঝে দিল্লী এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করবো”।

পোস্টটি ৭ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

টুটুল's picture


আশা করছি ইউকেতে পড়তে যাওয়া স্টুডেন্টদের জন্য উপকারী এবং সেখানে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর সাথে পরিচিত হতে পারবো

ধন্যবাদ

চলতে থাকুক...

পদ্মলোচন's picture


চেষ্টা করবো। কতটুকু কি করা যায় । দোয়া রাইখেন।

সাঈদ's picture


সুপার্ব পর্ব চালু করলি রে কুদ্দুস। চলুক।

পদ্মলোচন's picture


লগে থাইও আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুম

হাসান রায়হান's picture


দারুন একটা সিরিজ চালু করলা। আমি এরকম ভ্রমন কাহিনীর চরম ভক্ত। অন্যের চোখে দুনিয়া দেখা।

পদ্মলোচন's picture


ভাইয়া এইটা শুধু ভ্রমন না। এইখানে আসার পরে কি হচ্ছে, ছাত্রদের অবস্থা সবই দেওয়ার চেষ্টা করবো।

সোহেল কাজী's picture


দারুন সূচনা হয়েছে। পদ্মলোচনীয় ভ্রমন কাহীনী অনেক মিস্করী।

শেষ বার সম্ভবত চট্রগ্রামের ভ্রমন কাহিনী ছিলো।

চলুক ............

কানে তুলা দিয়া একবার বিপদে পড়ছিলাম, সেটা শিমুল তুলা আছিলো। কানে তুলার বীজ ঢুকে কেলেঙ্কারী অবস্থা Undecided

সুমনা's picture


Kiss

পদ্মলোচন's picture


Sealed

১০

পদ্মলোচন's picture


হা হা হা হা। হ সিলেট শুরু করছিলাম কিন্তু এক পর্বের পরে চালাই নাই।
অঃটঃ এইখানে সাইঃ ফাইঃ টা শুরু করুম নাকি?

১১

সুমনা's picture


জাবির চলুক কাহিনী। ঘুরে আসি তোমার সাথে ইউ কে থেকে।

১২

পদ্মলোচন's picture


আপু ঘুইরা তো যাইতে পারবা না। আমি যতদিন আছি থাকা লাগবে

১৩

নজরুল ইসলাম's picture


চলুক

১৪

পদ্মলোচন's picture


ধইন্যা পাতা

১৫

কাওছার আহমেদ's picture


ভাল্লাগছে, লিখে যা, আমিই মনে হয় একমাত্র পাবলিক যে ব্রিটিশ এয়ারের কিচেন থেকে কোক চুরি করে খাইছি।

১৬

পদ্মলোচন's picture


আমি মদ্যপান করছি । কাউরে কৈস না কৈলে। পুরাই প্রেস্টিজের ব্যাপার

১৭

অতিথি পাখি's picture


আশা করছি ভালো খারাপ অনেক কিছু-ই উঠে আসবে এই সিরিজে !!!
ইভেন কমোডে মুখ দিয়ে বমি করাও \!! Tongue out

১৮

নীড় সন্ধানী's picture


লেকা গম অইয়ে........... ;)

১৯

পদ্মলোচন's picture


কমেন্ট গম অইয়ে

২০

পদ্মলোচন's picture


ইতা কিতা কৈলারে পাখি বাওয়া!!!!

২১

তানবীরা's picture


প্লেনেও চুরি !!!!!

ছোট প্লেনে করে ইউকে আসলেন, নাকি দিল্লি অব্ধি? একটু অবাক হচ্ছি এ ব্যাপারটায়।

২২

পদ্মলোচন's picture


কাওছাইর‌্যা চুরি করছে। ও চুট্টা। আমি ভালা পুলা

পরের পর্ব আসিতে দ্যান। এখনি অপাক হৈলে ক্যামনে কি?

২৩

ডানপিটে's picture


ভিসা প্রসেস থেকে শুরু করা দরকার ছিলো। কারন সেখানে কি রকম অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন, কি ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন সবার সাথে শেয়ার করলে ভবিষ্যৎ ছাত্রদের জন্যে ভালো হবে।

২৪

পদ্মলোচন's picture


ভাই গো, ভিসা এখন বাজার করার মত ইজি হৈয়া গ্যাছে। তাও চাইছেন যখন দিমু নে।

২৫

লোকেন বোস's picture


তাই? ভিসা পাওয়া এখন এতো সহজ? আমার ধারণা ছিলো না। আপনি বিস্তারিত লিখুন প্লিজ

২৬

পদ্মলোচন's picture


আচ্ছা ভাই লেখবো।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.