লাভ ইউ এত্তগুলা
প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে খুব আদরের একটা স্পর্শে। প্রথমে কিছুক্ষন হাত দিয়ে ডেকে তোলার চেষ্টা এবং তারপরও ঘুম না ভাঙ্গলে গালের মধ্যে চেটে চেটে ঘুম ভাঙ্গানো। চোখ মেলে দেখি আমার মুখের উপর খুব আগ্রহ নিয়ে একজন তাকিয়ে আছে আমি ঘুম থেকে উঠেছি কিনে দেখার জন্য। আমি এক মিনিটও সময় নষ্ট না করে ওকে জড়িয়ে ধরি। আমি জানি, এই আলিঙ্গনটা পাবার জন্যই তার এতক্ষণের এই ঘুম ভাঙ্গানোর আপ্রাণ চেষ্টা।
আজকের গল্পটা আমার উচ্ছাসকে নিয়ে লেখা। উচ্ছাস, আমার এক বছর বয়সী বিড়াল। আমার বাচ্চা, আমার ছেলে। ওকে যখন রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা হয়েছে তখন ওর বয়স মাত্র দশ কি পনের দিন। এক গভীর রাতে মায়ের কোল থেকে হারিয়ে যাওয়া ইঁদুর সাইজের ছোট্ট একটা বিড়ালের আগমন ঘটলো আমার জীবনে একদম অপ্রত্যাশিতভাবে। কুকুর, বিড়াল আমার কোন কালেই খুব পছন্দ কিছু ছিলনা। তাই স্বাভাবিকভাবেই ওকে আনার পর আমার একটুও ভাল লাগেনি। মনে আছে, ওকে দেখে আমি তক্ষুনি বাইরে ফেলে দেয়ার জন্য বলেছিলাম। মানবিকতার কারনে অতো ছোট বিড়ালকে অতো রাতে বাইরে ফেলে দেয়া সম্ভব হয়নি।
সকালে আমি অন্যান্য দিনের মত অফিসে চলে গিয়েছিলাম, ওর কথা আমার মনেই ছিলনা। কিন্তু সন্ধ্যায় বাসায় এসে দেখলাম একটা অদ্ভুত ঘটনা। আমার ঘরের মধ্যে ছোট্ট একটা বিড়াল গুটিশুটি মেরে লুকিয়ে আছে আর এত্ত বড় বড় চোখে আমাকে দেখছে। আর কারো দিকে তার নজর নাই সে শুধু আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। আমি যদি রুম ছেড়ে অন্য কোথাও যাচ্ছি সে আমার পেছনে আসছে। তারপর কাছে ডাকতেই কোলে চলে এলো এবং কোলে এসেই খেলা। ঘুমানোর সময় একটা জুতার বাক্সে ওর বিছানা করে দিলাম। সেখানে সে শুলো ঠিকই কিন্তু শুয়ে শুয়ে তার ওই একটাই কাজ, আমার দিকে তাকিয়ে থাকা। সেই তাকিয়ে থাকা ওর আজো শেষ হয়নি। আমাকে দেখে কি এতো ভাবে কে জানে! আর আমার মনে হচ্ছিল সে চাহনির শুধু একটাই ভাষা, “মা, আমাকে বাঁচাও। আমাকে ফেলে দিওনা”।
এরপর থেকে শুরু হল আমাদের মা- ছেলের একসঙ্গে যাত্রা। আমার কারণে ওকে সেই ছোট্ট বয়স থেকেই বেঁচে থাকার জন্য স্ট্রাগল করতে হয়েছে। আমি যখন যেখানে থেকেছি ওকে তখন সেখানেই থাকতে হয়েছে। অনেক সময় সারাদিন একটা ঘরের মধ্যে আটকে থেকেছে, না খেয়ে থেকেছে। কারন, আমার উচ্ছাস আমি ছাড়া আর প্রায় সবার কাছেই ছিল অনাকাংখিত। আমার সবচেয়ে বড় বিপদের দিনগুলোতে এই উচ্ছাসটাই ছিল আমার একমাত্র বন্ধু। নির্ঘুম রাতগুলোতে ওই আমার একমাত্র সঙ্গী।
আমাকে নিয়ে সে খুব পজেসিভ আচরণ করে। আমি যদি কারো মাথায় হাত বুলিয়ে দেই তো সে সঙ্গে সঙ্গে দৌঁড়ে এসে আমার হাতের সাথে তার নিজের মাথা ঘষতে থাকবে। অর্থাৎ ওর মাথায় আদর করে দিতে হবে। আমি বাসায় না থাকলে পড়ে পড়ে ঘুমাবে আর যখন আমি বাসায় থাকবো তখন সারাক্ষন আমার সাথে সাথে থাকবে। কেউ কি কখনো এমন শুনেছে যে বিড়াল পা পাড়িয়ে দেয়? আমার উচ্ছাস ঠিক তাই করে। আর্থ্রাইটিসের কারনে আমার পা খুব ব্যথা করে। সেটা সে কিভাবে বুঝে আমি জানিনা। কিন্তু অফিস থেকে ফিরে পায়ের ব্যথায় আমি যখন অস্থির হয়ে শুয়ে থাকি তখন সে আমার পা পাড়িয়ে দেয়। ঘরের যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, একবার যদি আমার গলা শুনতে পায় সঙ্গে সঙ্গে চলে আসবে। আমি ওর সব কথা বুঝতে পারি এবং আমার ধারণা উচ্ছাসও আমার সব কথা বুঝতে পারে। ও হয়ত মিউ মিউই করে কিন্তু আমার কানে প্রতিধ্বনিত হয় “মা মা” বলে।
আম্মু ওকে ডাকে “বায়েজিদ বোস্তামী” নামে। খুব মা ভক্ত ছেলে বলে তার এই নামকরণ। আর ছোট বোনটা বলে, “আপু, উচ্ছাস মনে হয় শয়তানের কালো জাদুতে বিড়ালের শরীরে আটকে থাকা কোন রাজপুত্র। তা না হলে ও সারাদিন তোমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকে কেন? তোমার জন্য এরকম করে কেন”? আমি ওদের কথা হেসে উড়িয়ে দিলেও এর উত্তরগুলো আমার সত্যিই জানা নেই। সারাদিন অপেক্ষা করে থাকবে কখন আমি বাসায় আসবো। বাসায় আসার সাথে সাথে দৌঁড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষন আমার আদর নিবে আর তারপর সে নিজে কিছুক্ষন আদর করে থামবে।
উচ্ছাস শুধু আমারই না পুরো বাসার এলার্ম ক্লকে পরিণত হয়েছে। আম্মু বলে, এখন নাকি আর ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে ঘুমায়না। প্রতিদিন ঠিক সকাল ছয়টায় নাকি সে আম্মুকে ডেকে তোলে। মানুষজন দেখে বলে, “বাহ! তোমার বিড়ালটাতো দেখতে খুউব সুন্দর”! কথাটা শুনে গর্বে আমার বুক ভরে যায়। সবার কাছে যায়না, তাই অনেকে বলে “মুডি”। আমি সেটা শুনেও খুশী। ও আমার মতোই হয়েছে। বোকা, ভীতু আর জেদী। “আমাকে কেউ ভালবাসলে তার জন্য আমি যেকোন কিছু করতে পারি” এই কথাটা এতোটাই সত্যি যে, উচ্ছাসের জন্য আমি সবার সাথে ঝগড়া করি। একলা আমি সবার সাথে।
আরেকদিনের একটা ঘটনা বলি। আমি চাই ওকে একটা সুন্দর মেয়ে বিড়াল দেখে বিয়ে দিতে। এজন্য “ক্যাট সোসাইটি”তে গিয়ে পাত্রী চাই নামক বিজ্ঞাপন দিতেই এক পাত্রীর বাবা তার মেয়ে নিয়ে আমার বাসায় এলো। মেয়ে বিড়ালটা এত সুন্দর যে আমার দেখেই পছন্দ হয়ে গেল। প্রথমে মেয়েটাকে দেখতে পেয়ে সে কিছু বলেনি কিন্তু যেই আমি মেয়েটাকে কোলে নিলাম আর যায় কই। এক লাফে মেয়েটার উপরে পড়ে তাকে মারা আরম্ভ করলো। সেই মেয়েকে নিয়ে তার বাবা চলে না যাওয়া পর্যন্ত তাকে মারার জন্য সে অস্থির হয়ে গেল। মেয়েটার একটাই অপরাধ, কেন সে আমার কোলে উঠলো?
বাসা থেকে আমাকে সবাই বলে বাইরে পড়তে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি কোন চেষ্টাই করিনা বাইরে যাওয়ার। এর পেছনে ওয়ান এ্যান্ড ওনলি কারন হচ্ছে উচ্ছাস। আমি জানি আমার এই লেখাটা পড়ে হয়তো অনেকে হাসবে বা অনেক কিছু ভাববে, কিন্তু এটাই সত্যি। যে জীবনযুদ্ধে আমরা দুজন একসাথে নেমেছি সেখানে শুধুমাত্র নিজে ভাল থাকার জন্য ওকে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে একলা ফেলে যাওয়াটাকে আমার কাছে শঠতা বলে মনে হয়। যেটা আমি কখনোই কারো সাথে করিনা বা করতে পারবোনা। ওর মত করে তো আর আমাকে কেউ ভালোবাসেনা বা বিশ্বাস করেনা। তাহলে আমি সেই বিশ্বাসটা কিভাবে নষ্ট করি! হোক সে একটা বিড়াল, তাতে কী! তাই আমি ঠিক করেছি দেশের বাইরে যাবনা। আমি আর উচ্ছাস একটা বাসা নিয়ে মনের আনন্দে থাকা শুরু করব।
ওর আর আমার অবস্থা হয়ে গেছে কিছুটা এইরকম,
“আমার পথে তাকিয়ে থাকো জানলাটাকে ধরে
তাইতো শুধু ইচ্ছে করে আসতে ফিরে ঘরে
উজাড় হয়ে জড়িয়ে ধরো কাছে আসি যখন
তাইতো আমার ভালোবাসা বাড়ছে সারাক্ষণ”।
উফফ! এত্তগুলা কিউট একটা পোস্ট.. <3
থ্যাঙ্ক ইউ। নতুন পোস্ট দাওনা অনেকদিন।
সকালেই মন ভাল হয়ে যাওয়ার মতো কিউট লেখা
থ্যাঙ্ক ইউ আপু।
a story to remember. How about taking him with you when you go abroad?
হ্যাঁ, আমি এই ব্যপারটা নিয়েও চিন্তা করছি। এত সুন্দর একটা চিন্তা করার জন্য অজস্র ধন্যবাদ আপনাকে।
সুইট এন্ড কিউট পোষ্ট অফ দ্যা ইয়ার!
থ্যাঙ্ক ইউ
এটা সত্যি না একটা গল্প।
এটা ১০০% সত্যি গল্প ভাইয়া।
আপনার সাথে এর পরিচয় করিয়ে দেয়া একান্ত জরুরি মনে হল
এটা আপনার? কি সুইট!
শেষ থক বেড়াল ? আমি ভাবছিলাম 'ও' হবে অ্যা হ্যান্ডসাম বয় ! ভাল লাগলো !
আমার আর কোন “বয়” দিয়ে কাজ নাই। আমি একাই ভাল আছি।
ও মা---------! বলে কি খুকু ? সন্যাস ? এই কলিকালে ? ঠিক থাকবে পণ ? দেখা যাক ! দোয়া রইল । ভালো থাইকেন ।
চমৎকার পোষ্ট। খুব ভালো লাগলো।
থ্যাঙ্কু ম্যাঙ্কু
আম্মু ওকে ডাকে “বায়েজিদ বোস্তামী” নামে। খুব মা ভক্ত ছেলে বলে তার এই নামকরণ। আর ছোট বোনটা বলে, “আপু, উচ্ছাস মনে হয় শয়তানের কালো জাদুতে বিড়ালের শরীরে আটকে থাকা কোন রাজপুত্র।
মন্তব্য করুন