নাসিরুদ্দিন হোজ্জার কৌতুক
ছোটবেলায় যখন স্কুলে পড়ি মামার কাছ থেকে কিছু বই উপহার পাই। একটা ছিল নাসিরুদ্দিন হোজ্জার কৌতুকের সংকলন। নাম ভিন দেশি এক বীরবল। লেখক সম্ভবত মোহাম্মদ নাসির আলী। প্রায় শ খানেক নাসিরউদ্দিন হোজ্জার কৌতুক ছিল বইটাতে। হাস্যরসের আকর এই বইটার কৌতুক খুবই প্রিয় ছিল আমার। বলা যায় একদম গুণমুগ্ধ ছিলাম হোজ্জার। সেই মুগ্ধতা আমার এখনো তেমনই আছে। হোজ্জা আমার অলটাইম ফেভারিট।
তুরস্কের দার্শনিক, জ্ঞানী, বুদ্ধিমান (কখনও কখনও বোকা) ও প্রচন্ড রসবোধে পরিপূর্ণ হোজ্জার কৌতুক সারা দুনিয়ায় জনপ্রিয়। ইউনেস্কো ১৯৯৬-১৯৯৭ সালকে আন্তর্জাতিক নাসিরুদ্দিন দিবস হিসাবে ঘোষণা করে।
আফসোস, সেই ভিন দেশি এক বীরবল বইটা হারিয়ে গেছে। সেই কবে পড়েছি কিন্তু এখনো বেশ কয়েকটা মনে করতে পারি। তার কয়েকটা কৌতুক এখানে দিলাম।
অভিযোগ নাই
বিবির পিড়াপিড়িতে নাসিরুদ্দিন একটা গরু কিনল। কিন্তু গরু ও গাধার জন্য গোয়াল ঘরে পর্যাপ্ত যায়গা না থাকায়, একটা ঘুমালে আরেকটাকে দাড়িয়ে থাকতে হতো।
প্রিয় গাধার এই দুরবস্থা দেখে হোজ্জা একদিন খোদার কাছে প্রার্থনা করছে, "হে আল্লাহ, দয়া করে গরুটাকে মেরে ফেল যাতে আমার গাধাটা একটু আরাম করে ঘুমাইতে পারে" ।
পরদিন সকালে সে গোয়াল ঘরে গিয়ে দেখে যে গাধাটা মরে পরে আছে।
প্রানপ্রিয় গাধার মৃত্যতুতে হতাশ হয়ে হোজ্জা বিরস বদনে আকাশের দিকে তাকায়ে বলল, "কোন অভিযোগ করবনা, খোদা, কিন্তু তুমি এতদিন ধরে সারা দুনিয়ার মালিক হয়েও, কোনটা গরু কোনটা গাধা এইটা চিনলানা!"
বিবি তোমার কথাই ঠিক
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা তখন কাজী। বিচার আচার করেন। একদিন বিচারে বসেছেন। ফরিয়াদি আসামির সম্পর্কে তার অভিযোগের বয়ান দিতেছে। হোজ্জা মনযোগ দিয়া তার কথা শুনছেন। বাদীর বলা শেষ হয়ে মাথা ঝাকিয়ে বললেন, 'তোমার কথাই ঠিক'।
এইবার আসামি বলে উঠল, 'হুজুর, আমার দুইটা কথা ছিল'। হোজ্জা বললেন, 'ঠিকাছে তুমি তোমার বক্তব্য বল'। আসামির বক্তব্যও মনযোগ দিয়া শোনার পর হোজ্জা বললেন, 'তোমার কথাই ঠিক'।
হোজ্জার স্ত্রী পর্দার আড়ালে এতক্ষণ সব কথা শুনছিলেন। বিরক্ত হয়ে স্বামীকে তিনি বললেন, 'দুইজনই ঠিক হয় কিভাবে? হয় আসামির কথা ঠিক অথবা ফরিয়াদির কথা ঠিক'।
হোজ্জা স্ত্রীর দিকে ফিরে সমর্থনসূচক হাসি দিয়ে বললেন, 'বিবি তোমার কথাই ঠিক'।
কোর্তার ভিতর আমিও ছিলাম
একদিন রাতে হোজ্জার প্রতিবেশি শুনল হোজ্জার সাথে তার স্ত্রীর ঝগড়া চলছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ভারী একটা কিছু পড়ার আওয়াজ হলো তারপর সব চুপচাপ।
পরদিন সকালে প্রতিবেশি হোজ্জা কে জিজ্ঞাস করে, 'কাল রাতে আপনার বাসায় ভারী কিছু একটা পড়ার শব্দ পেলাম'।
'আমার বিবি রাগ করে আমার কোর্তা জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়', হোজ্জা জানায়।
'একটা কোর্তা পড়ায় এত শব্দ হয়', প্রতিবেশি অবাক।
'আরে কোর্তার ভিতর তো আমিও ছিলাম', হোজ্জা বিরস মুখে জানায়।
মহিলা বিচার চায়
একদিন একজন পুরুষ ও একজন মহিলা বিচারক হোজ্জার দরবারে এল।
মহিলাটি ফরিয়াদ জানায়, 'আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, অপরিচিত এই লোকটা হঠাৎ এসে আমাকে চুমু দিয়েছে। আমি বিচার চাই'।
'আমিও মনে করি তোমার বিচার পাওয়া উচিত', হোজ্জা বলে। 'সুতরাং আমি নির্দেশ দিলাম, তুমি লোকটাকে চুমু দাও এবং তোমার প্রতিশোধ নাও'।
আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?
একদিন নাসিরউদ্দিন চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল।
তার শালা এসে জিজ্ঞাস করে, ' আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?'
'কেন জিজ্ঞাস করছ', নাসিরুদ্দিন বলে।
'আমি ভাবছিলাম আপনি যদি আমাকে কিছু টাকা ধার দিতেন'।
'ওকে, তাইলে তোমার প্রথম প্রশ্নের উত্তর, আমি ঘুমাচ্ছি', নাসিরউদ্দিন বলে। ' এখন আমাকে একা থাকতে দেও'
ভাগ্যিস আমি ছিলামনা
এক রাতে হোজ্জা দেখে বাগানে এক লোক দাড়ায় আছে। চোর ভেবে হোজ্জা ধনুক বের করে চোরের দিকে তীর ছুড়ল। পরদিন সকালে গিয়ে দেখে তারই জামা মেলে দেয়া ছিল। যেটাকে হোজ্জা চোর মনে করে তীর ছুড়েছিল এবং সেই তীর জামাতে বিদ্ধ হয়ে আছে।
সাথে সাথে হোজ্জা মোনাজাত করে আল্লার কাছে শুকরিয়া জানায়।
হোজ্জার বিবি অবাক হয়ে বলে, ' তুমি এখন মোনাজাত করছ কেন?'
'ভাগ্যিস জামার ভিতর আমি ছিলামনা', হোজ্জার উত্তর।
)
বইটা ম্যাগাজিন সাইজের। পলিটেকনিক স্কুলে যথন পড়তাম তখন এক স্যার পড়তে বলেছিলেন। সে সময়েই পড়েছিলাম। আপনার ঈর্ষা আরেকটু বাড়াইয়া দেই-সেই বইটা এখনও আমার কাছে আছে।
এখনো মাঝে মাঝে বীরবল, নাসিরউদ্দিন হোজ্জা, গোপাল ভাঁড়ের গল্প পড়ি। ভালো লাগে। ভালো লাগলো।
শুনেছি তুরস্কে হোজ্জার সমাধিটাই একটা বড় কৌতুক। সমাধির চারপাশে দেড়ফুটের দেয়াল থাকলেও সদর গেটে নাকি ঝুলছে দেড়মনী তালা। হোজ্জার নির্দেশেই নাকি তার সমাধিটা এরকম তৈরী করা হয়েছে। তার দর্শন হলো আমাদের জীবনটা এরকমই, চতুর্দিক অরক্ষিত রেখে কেবল সদর দরজাটি আগলাতে আগলাতেই সারা জীবন ব্যস্ততার চরমে কাটিয়ে দেই।
অনেকদিন পরে রায়হান ভাই হোজ্জার কৌতুক লিখলেন। আগে মাঝে মাঝে লিখতেন। বরাবরের মতই মজা পাইলাম।রায়হান ভাই কে ধইন্যা।
হ ,,, পড়ছি বইটা ছুটুবেলায়
মজা পেলাম।
হোজ্জার কৌতুক নিয়ে আমিও একটা বই পড়েছিলাম; ওটাই এই বই ছিল কীনা মনে নেই....।
ওখানকার দুইটি আমি এখনো মনে করতে পারি।
১। হোজ্জার বাড়িতে এক বন্ধু এসেছেন বেড়াতে। সন্ধ্যায় প্রতিবেশীদের সাথে পরিচয় করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় হোজ্জা নিজের একটি ভাল পোশাক ধার দিলেন। প্রথম বাড়িতে হোজ্জাকে বন্ধুকে পরিচয় করিয়ে দেবার সময় এও জানালেনঃ "এঁর গায়ে যে পোশাকটি দেখছেন, তা আসলে আমার।"
সেখান থেকে বেরিয়ে বন্ধু মহা ক্ষ্যাপা। "কী দরকার ছিল ওটা বলে আমাকে অপমান করার?" হোজ্জা ক্ষমা চাইলেন।
দ্বিতীয় বাড়িতে গিয়ে বললেন, "এঁর গায়ে যে পোশাকটি দেখছেন, তা আসলে এঁরই।" এবার তো বন্ধু আরো ক্ষ্যাপলেন। "পোশাকটি নিয়ে তুমি কিছু না বলাই ভাল"
তৃতীয় বাড়িতে গিয়ে তাই হোজ্জা বললেন, "ইনি আমার ঘনিষ্ট বন্ধু আর এঁর গায়ে যে পোশাকটি দেখছেন, সে সম্পর্কে কিছু না বলাই ভাল!"
২। হোজ্জা বাজারে বসেছেন আঙুর বিক্রেতা হিসেবে। এক বন্ধুকে দেখে তার কাছেই আঙুর বেচতে চাইলেন। কিন্তু, বন্ধু বললেন যে, তার কাছে টাকা নেই। হোজ্জা উদার মানুষ। বললেন, "আপনি বন্ধু মানুষ। টাকা পরে দিলেও চলবে। দুটো আঙুর মুখে দিয়ে দেখুন, মধুর মত মিষ্টি।" বন্ধু অপারগতা জানিয়ে বললেন যে, তিনি রোজাদার। হোজ্জার জিজ্ঞাস্য, রোজার মাস আসতে এখনো দুই মাস বাকি। এখনই রোজা? বন্ধু বিগত বছরের ভাঙা রোজাগুলো পূরণ করার কথা জানালেন। সাথে সাথে হজ্জা বললেন, " ভাই আনি তোমার কাছে আঙুর বেচব না, যে লোক খোদার বাকি পূরণ করতে দশ মাস লাগায়, সে আমার বাকি টাকা দিতে ক'বছর লাগাবে?"
)
মজ্জাই মজ্জা ) )
অভিযোগ নাই'টা পড়ে হাসতে হাসতে অস্থির হয়ে গেলাম।
চ্রম ) ) রায়হান ভাইয়ের কাছে অনুরোধ থাকলো, মাঝে মধ্যে এরাম হোজ্জার কৌতুক দিবেনদি। প্রথমটায় সবচে' বেশি মজা পাইছি!
বাতিঘরের মাথাত ঠাডা পড়ুক! এরাম কইতেই পারেন, তবুও কই:
(টাইপোডি ঠিক করবেন বস্) 'মৃত্যুতে' 'জায়গা'
মৌখিকভাবে 'শালা' বলা হয়েও লেখিতভাবে এটার এভাবে প্রচলন আছে কী? আমার ঠিক জানা নাই। তাই আমার মনে হইছে,'শ্যালক' শব্দটিই এখানে দিলে ভালো হতো( কইছে তোরে! তাই বললেন নাকি বস? কিছু যেন শুনলাম ) হোজ্জার মুখে ইংরেজি শব্দ কেমন জানি বেমানান লাগলো ভাইটি, 'ওকে'র পরিবর্তে অন্য শব্দ বসানো যায় কী? ক্ষমাশীল দৃষ্টিতে দেখবেন আমার এই পন্ডিতী
আপনার কন্যার জন্য অনেকককককককক আদর
ভালো থাকুন নিরন্তর।
রায়হান ভাই আবার কবে দিপে তার কুনু ঠিক ঠিকানা আছে?ভাবের উপরে থাকে সবসময়।কোথা থেকে ফুন আসে আর ভূমিকম্প হয়ে যায়।
এই ঘটনা আমিও জানি।
মীর ভাই, ঝাতিও জানতে চায়, ঘটনা কিতা.....!?
মীর, অপপনি কেমনে জানেন? একটু ঝেড়ে কাশেন ।
বাতিঘর, আরে কি কন? আমি কি রায়হান বাই খারাপ কইছি নাকি? হেতে বিরাট ভালু লুক তাতে কারো কুনু সন্দ নাই।
রায়হান ভাইরে তো নিরীহ ভালো মানুষ হিসেবেই জানি এবং মানিও! কিন্তু বইনটি যেইভাবে কইলেন চিন্তায় পড়লামদি আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সাথে কুনু যোগাযোগ নাই তো রায়হান ভাইয়ের ছোটা বাবুলের ফোন নাকি রেব( য ফলা হয়নাদি ..ভালোলুকের চরিত্রে কাদা দেই তাই আসেনা মনে কয় ) কার ফুন আসে ভাইটির কাছে? জবাব চাই দিতেই হপে
আরে ধুরো! মজা কর্লামদি এট্টু...মজাও বুঝেনাদি আমরার জয়িতা বুকা রে বুকা কিন্তু ফুনাই কেঠায়? কয়ালান বইন..অপার হয়া বসে আছি শুনবার আশায়
রায়হান ভাই মারপে এসব কইলে। বুঝছেন?পুলাপাইন এসব শুনতে হয় না।
সকাল সকাল ভালু কথা না কইয়া বুকা কইলেন?আফসুস।
নাহ বুকা না আমরার জয়িতা মায়াবতী আপুটা। ঝুনঝুনি কিনে দিপো রঙিন ফিতা রাগ কইরেন না গো বুজি। হাসেনদি..দেখেন, হাসলে কিরাম সুন্দর লাগে মনে হয়, সূর্য আসিয়া মাটিতে নেমেছে জয়িতা আপির পায়ের তলে! কী এইবার হইছে না? নো আফসুস ঝামা দেন আফসুসের মুখে সুন্দর কাটুক আজকের দিনটি। শুভ কামনায়, আজকের মতো বিদায়( রাত হইছে বইন..ঘুমাইতে হপে..গুট নাইট )
খাইছে। মন এমনেই ভালো হয়ে গেলো কমেন্ট পড়ে। অনেক ধইন্যা। কি এক দুইন্যাই! আমগো সকাল আর আপনের রাইত। আল্লাহর দুনিয়ায় কত আজব কাহিনী।আপনিও এমন আনন্দে থাকেন সবসময়। শুভকামনা।
কতোদিন আগে পড়েছিলাম সব। বিস্মৃতির অতল থেকে উঠে আসলে যেনো
ধন্যবাদ সবাইকে।
বাতিঘরের সাথে একমত (শ্যালক, ওকে ... বিষয়ে)
@মীর,
বস্ কাউকে কিছু বলছি বলেন? আমি তো ভালোমানুষ।
তাইলে কি ফুন আসার কারনেই ভুমিকম্পটা হৈছিলো !!!
তুমার কি মনে হয় বিমা? ফুন আসলো বলেই কি কাঁপাকাপিতে ভূমিকম্প হইলো না?
হোজ্জা একসের মাংস কিনে এনে গিন্নিকে দিলেন রান্না করতে । গিন্নি রান্নার পর সব মাংস খেয়ে ফেললো । হোজ্জা নদী থেকে গোসল সেরে এসে খেতে বসলে মাংস না দেখে জিজ্ঞাসা করলে গিন্নি জানালো , বিড়ালে সব মাংস খেয়ে ফেলেছে । হোজ্জা তাড়াতাড়ি বিড়ালটাকে ধরে ওজন করে দেখলেন যে সেটার ওজন একসের । গিন্নিকে তখন বললেন, "এটা যদি বিড়াল হয় তবে মাংস কোথা্য়, আর এটা যদি মাংস হয় তবে বিড়ালটা কোথায় ?" আপনার পড়া ঐ বইটাতে এ গল্পটাও নিশ্চয়ই ছিল ।
মজা পেলাম
পড়ে খুব মজা পেলাম, লিখককে ধন্যবাদ
মন্তব্য করুন