ঝলমলিয়ায় সনাতন মেলায় - ৩
মাতম করা মানে বিলাপ করা এইটা জানা ছিল। কিন্তু এর জন্য যে একটা দলই থাকে এবং ওরা অনুষ্ঠানে মাতমে অংশ নেয় জানা ছিলনা। সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে প্রথমেই ছিল সনাতনের স্মরণে মাতম। সন্ধ্যা হতেই ঢাক ঢোল শিঙ্গা ইত্যাদি নিয়ে মাতম দল হাজির। সনাতনের পরিবার ও মাতম দল বাদ্য বাজনা বাজিয়ে সনাতনের সমাধির চারপাশ ঘুরে ঘুরে প্রদক্ষিণ করে। কয়েকবার করার পর পরিবারের মহিলারা পারিবারিক গুরুর ছবির সামনে না অর্ঘ্য দিয়ে পূজা করে। আর মাতম দল বাজাতে থাকে ঢাক বাদ্য। যার যেটা সাথে আছে। সে এক অভূতপূর্ব পরিবেশ। আলো আধারি, মোমের আলো তার মধ্যে মাতম বাজনা লিখে প্রকাশ করার মত ভাষা আমার নাই। ছবিতেও আসলে ঠিক রূপটা প্রকাশ সম্ভব না । একমাত্র উপষ্থিত থাকলেই সেই সময়ের পরিবেশ বোঝা সম্ভব। মাতম পর্ব শেষ হয় সনাতনের মার মন্ত্র পড়ার মাধ্যমে।
এরপর কীর্তনের আসর।
কীর্তন শুনে রুমে ফিরে খেয়েদেয়ে দেখি একজন অন্ধ বাউল ঢুলি ও মন্দিরা বাদক নিয়ে এসেছেন। নাম তার এমদাদ বাউল। ওনার আবার এক হাত কাটা। প্রথমে নাগিন ও আরেকটা গানের সুর হারমোনিয়ামে তুললেন। তারপর শুরু করলেন লালন। মিলন হবে কত দিনে...। এভাবে একটার পর একটা গান। যেমন এমদাদ বাউল তেম তার ঢোল বাদক। রাত বারটা পর্যন্ত্য গান শুনে ঘুমিয়ে পড়ি।
গভীর রাতে হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। কানে আসে পাশের ঘর থেকে এমদাদ বাউলের গলা, আমার সেই স্বপন কি মিথ্যা হইতে পারে রে.... আর ঢোলের আওয়াজ। আধা ঘুমে আধা জাগরণে আমার মনে হতে থাকে এই পৃথিবীর বাইরের কোথাও থেকে ভেসে আসছে গান ও ঢোলের শব্দ। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ডুবে যাই।
লিংক ১ : মাতমের ভিডিও
লিংক ২ : এমদাদ বাউলের গান
মেয়ে ও বাবার গল্প
লেখাটা শেষ করছি ছোট্ট একটা মেয়ে ও তার বাবার ছবি দিয়ে। পরদিন সকালে আমি বিমা লালদা দোকানে চা খেতে বসছি। তখন দেখি ওদের। বাবার হাত ধরে ছোট্ট মেয়েটি দোকানে আসে।
আমরা তখন কেক খাচ্ছিলাম।
মেয়েটিও কেক খায়।
কেক খাওয়ার পর আমরা চা খাই। পিচ্চিটাও চা খায়। এবং চা শেষ করার আগে বাবাকে গ্লাস নিতে দেয় না।
তারপর চা খাওয়া শেষ হলে বাবার হাত ধরে চলে যায়।
লাস্টের ছবিটা কঠিন সিম্বলিক হইছে...
সব কয়টা ছবিই অসাধারন।
থ্যান্কু ।
ওয়েল্কু
শেষটা দুর্দান্ত হয়েছে।
অফট পিকঃ ''সনাতন'' কিভাবে মারা গেছে?
৩৭ বছর বয়সে ২০০৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর, ব্রেইন হেমারেজে।
সনাতন মেলার কথা শুনেছি অনেক বন্ধুদের কাছে। বন্ধুরা গেলেও আমার আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। আপনার সচিত্র বর্ণনা অনেককিছু জানার সুযোগ করে দিলো। থ্যাংকস রায়হান ভাই।
আপনাকেও ধন্যবাদ কামাল ভাই।
ছোট গল্পের মতো ! শেষ হয়েও নাহি হল শেষ ! পিতা-পুত্রির গল্প দারুণ ! জীবনে এই সুন্দর পিচ্চিটাকে আর কখনো দেখবো কি ! কোন মিরাকল না ঘঠলে সম্ভাবনা নাই ! দারুণ সব ছবি উপহার দে'য়ার জন্য আবারো ধন্যবাদ !
সত্যি শেষের ছবিগুলো ক্রমাগত মন্ত্রমুগ্ধ করে দিলো । বিশেষ করে পিচ্চিটার সাবলীল চা খাওয়ার এবং চলে যাওয়ার ছবি দুটো ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
একদম মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
সনাতনের মেলা নাম শুনেছি কিন্তু এ যে মাতম তা বুঝিনি জানিনা, ভেবেছিলাম রাস উৎসবের মত কিছু। কত ভুল জানা।
ধন্যবাদ।
আমিও ঐরকম কিছু একটা মনে করেই গেছিলাম।
ফটোস্টোরী অসাধারণ হইসে বস্। শুধু অসাধারণ না, তার চাইতেও বেশি কিছু। কোনো অজানা তথ্য নাই, চমক নাই, গ্ল্যামার নাই, নাথিং স্পেশাল অর এক্সক্লুসিভ; কিন্তু একদম মাথার মধ্যে গিয়ে বাড়ি দেয়। হ্যাটস্ অফ টু য়ু ম্যান।
রায়হান ভাই গুরু মানুষ... ছবি নিয়ে কথা বলার যোগ্যতা অর্জন অনেক দুর ...
মোমবাতির ছবিটা চমৎকার কিন্তু শিখা দুইটা কৈরা ক্যান? সনাতনীয় কারসাজী?
কম আলোতে ফ্লাশ ছাড়া তুললে শিখা এমনই হয়।
অনেক কিছু জানলাম ।
ভালো লাগল ছাবিক গল্প
ধান্যবাদ রায়হান।
মাতম করার যেমন দল আছে ঝগড়া করার জন্যেও দল আছে বলে শুনছি।
যাইতে মন চায়
গুলজারের একটা সিনেমা আছে। রুদালী। এখানে আছে পয়সা দিয়ে মাতম করা দলের কথা।
শেষ ছবি কয়টা আর পিচ্চিটা দারুণ
বস, পূজার ঢোলের সাথে মাতমের ঢোলের কোন পার্থক্য ধরতে পারলাম না। একটু ব্যাখা করেন।
এমদাদ বাউল জীবনের প্রতি সাহসী মানুষ। শ্রদ্ধা ওনার জন্যে
পিচ্চিটা পুরাই বস, কাছে পাইলে নাকে একটা কামড় দিয়ে দিতাম
যেকোনো কিছুকেই উপাসনার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার আমাদের অসাধারণ পারদর্শীতা আছে।
চ্রম!
মন্তব্য করুন