ইউজার লগইন

"দেভদাস" - শেষ পর্ব

দেভু আর চন্দ্রার প্রেমের ঝড়ে আকাশ পাতাল উথাল-পাতাল হইতে লাগিলো, মর্ত্যের শুষ্ক বালু উড়িয়া ঘরবাড়ি তলাইয়া গেল। সেই বালুতে মুখ গুঁজিয়া সকলে যেন উটপাখির ন্যায় জীবন যাপন করিতে লাগিলো। তাহা দেখিয়া কোন কোন পত্রিকা উটপাখি নয়, মানুষের জীবন চাই শ্লোগান নিয়া আগাইয়া আসিলো।

তাহাতেও তাহাদের প্রেমের জোয়ার কমিলো না। দেভু আর চন্দ্রা প্রত্যহ সাক্ষাৎ করিতে লাগিলো , চন্দ্রার শপিং জোর কদমে চলিতে লাগিলো , কখনো বা তাঁহার জন্য কখনো বা তাঁহার কাজিনের জন্য কিংবা সাথে আসা কোন বান্ধবীর জন্যে। প্রতিবারই তাহারা শপিং এর পর বাহিরে খাইতে লাগিলো। কখনো বা তাহারা দুই জন কখনো চন্দ্রার কয়েকজন বান্ধবী সহ তাহারা বাহিরে খাইতে লাগিলো। পাশা পাশি তাঁহাদের ডি-জে পার্টিও সমানতালে আগাইতেছিলো । অপরদিকে দেভুর সঞ্চয়কৃত পাউন্ড কমিতে কমিতে তলানিতে আসিয়া ঠেকিলো।

একদিন সকালে দেভু তাঁহার মানিব্যাগ ঘাটিতে ঘাটিতে ভাবিল, এরূপ চলিতে লাগিলে সামনের দিনগুলিতে তাহাকে পাড়ার মোড়ের ভাই ভাই হোটেল এন্ড রস্টুরেন্টে চন্দ্রা কে নিয়া বসিয়া আলু পুরি আর চা খাইতে হইবে।

এমন সময় স্পিকারের শব্দে তাঁহার ভাবনায় ছেদ পড়িলো। বাহির হইতে হিন্দি গানের শব্দ শুনিয়া জানালার পর্দা সরাইয়া দেখিলো পারুদের বাড়ি মরিচ বাতি দিয়া সাজানো হইয়াছে। বাড়ির সম্মুখে বিবাহের গেট সাজানো হইয়াছে। সেদিক হইতেই হিন্দি গানের শব্দ আসিতেছে।

দেভু কৌতূহল নিবৃত্ত করিতে না পারিয়া তাঁহার মাতাকে জিজ্ঞাস করিলো। জানিলো যে পারুর বিবাহ সম্পন্ন হইয়াছে। পারুর পিতা বিস্তর পয়সা খরচ করিয়া , বিশাল অঙ্কের যৌতুক প্রদান করিয়া জামাই তুলিয়া আনিয়াছে ঘরে। পারুর "ঘর জামাই" দেখিতে যাইবার সাধ হইলো দেভুর।

সেই রাতে দেভু গুলশানের সেই প্রাসাদে উপস্থিত হইলো। পারুর বিবাহ হইয়াছে শুনিয়া তাঁহার মন খচ খচ করিতেছিলো সারাদিন। আফসোস করিতে লাগিলো তাহার কপালের। আজ পারু কে বিবাহ করিলে সে বিস্তর টাকা লইতে পারিতো শ্বশুড়ের নিকট হইতে আর এখন তাঁহার পকেট প্রায় ফাঁকা হইতে চলিয়াছে। অপরদিকে চন্দ্রার পিছনে এত খরচ করিয়াও চন্দ্রাকে অদ্যবধি ছুঁইতে পারিলো না। খালি পিছলাইয়া যায় এই সেই বলিয়া। ঠিক করিলো আজ সে চন্দ্রাকে লইয়া গোপন কক্ষে যাইবেই।

ড্যান্স ফ্লোরে পূর্ব হইতেই সকল নেত্য সঙ্গী আসিয়া নেত্য করিতেছিলো, দেভু তাহাদের সহিত মিশিয়া গেল। সেদিন চন্দ্রা আসিয়া পৌছায়নি, তাহাকে ফোন করিয়াও তাঁহার ফোন বন্ধ পাইতেছে বার বার। দেভু বিরক্ত হইয়া উঠিলো। চন্দ্রা কে না পাইয়া তাঁহার মেজাজ যখন চরম, তখন নতুন এক সুন্দরী কন্যা তাঁহার দিকে হাত বাড়াইয়া দিলো। তাহাকে দেখিবা মাত্রই দেভুর মেজাজ শীতল বরফের ন্যায় হইয়া গেল মুহুর্তের মধ্যেই। দেভু সব ভুলিয়া তাঁহার সহিত নাচিতে লাগিলো। নাচিতে নাচিতে তাহারা গোপন প্রকোষ্ঠে যাইবার প্রস্তুতি লইবে এমন সময় হঠাৎ করিয়া সকলেই দৌড়াইতে লাগিলো যে যেদিক পারে। হুলুস্থুল বাঁধিয়া গেল পুরো প্রাসাদ জুড়িয়া।

পুলিশ আসিয়া প্রাসাদের চতুর্পাশ্বে ঘিরিয়া অসামাজিক কার্যকলাপের দায়ে অবস্থানরত সকলকে গ্রেফতার করিয়া ফেলিলো। সকল কক্ষ খুঁজিয়া, সকলকে ধরিয়া পুলিশ ভ্যানে উঠানো হইলো। অতঃপর তাহাদের নিকটবর্তি থানায় লইয়া যাইয়া গারদে ঢুকাইয়া দিলো সেই রাত্রিতে।

পুলিশ আসিয়া রেইড দিবার সময় কিছু দুষ্টু সাংবাদিক লইয়া আসিয়াছিলো। তাহারা আবার সকলকে একত্র করিয়া কয়টা ছবি তুলিলো। সাংবাদিক দেখিয়া কেহ কেহ হাত দিয়া মুখ ঢাকিলো, কেহ বা পিছনে মুখ লুকাইলো । দেভু শুধু হাসিমুখ দিয়া পোজ দিয়া দাঁড়াইয়া কতকগুলি ছবি তুলিলো।

সেই রাত্রে অন্য সকল আসামীদের সহিত দেভুদেরকেও রাখা হইয়াছিলো। ওহ শিট বলিতে বলিতে দেভু থানার জেলের ভিতরে পায়চারি করিতেছিলো, এমন সময় অপর এক আসামী দেভু কে ডাকিয়া কহিলো - তাঁহার পদযুগল টিপিয়া দিবার জন্য। তাঁহার চেহারা দেখিয়া দেভু ভয়ে ভয়ে পা টিপিয়া দিতে উদ্যত হইলো।

পরদিন সকালে সকল জাতীয় পত্রিকায় দেভুদের ধারণকৃত ছবি ছাপাইয়া বিশাল রিপোর্ট করিলো। গুলশানের মতন এলাকায় এরকম অসামাজিক কাজের বর্ননা শুনিয়া সকলেই ছিঃ ছিঃ করিতে লাগিলো, দেশ ধর্ম রসাতলে যাইতেছে দেখিয়া অভিভাবক কূল উদ্বিগ্ন হইয়া পড়িলো।

নারায়ন মুখার্জি অন্যদিনের মত সেদিনও সকালে উঠিয়া চা পান করিতে করিতে করিতে পত্রিকা পাঠ করিতেছিলেন। তিনিও সেই রিপোর্টখানি পড়িলেন অন্যান্য খবর পড়িলেন। পড়িয়া পত্রিকা রাখিতে যাইবেন এমন সময় একটি ছবির দিকে তাঁহার নজর আটকাইয়া যায়। দেখেন যে গতকালের রাত্রের ঘটনায় আটককৃতদের একখানা ছবি, সকলেই মুখ লুকাইতে ব্যস্ত আর একজন হাসি হাসি মুখ করিয়া চাহিয়া আছে।

তিনি দেখিলেন, আর কেহ নহে, ইহা তাহাদের দেভু। দেভুর ছবি দেখিয়া ''কৌশিল্যা" বলিয়া চিৎকার করিয়াই নারায়ন মুখার্জি হার্টফেল করিলেন।

[সমাপ্ত]

পোস্টটি ১৩ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

তানবীরা's picture


শেষ পর্ব

মানি না, না , না, না।

ভালোতো চলছিল, কেন শেষ করতে হবে? Stare Sad Crazy

জোনাকি's picture


তানবীরা আপার সাথে একমত.....তাড়াহুড়া করে শেষ করে দিলেন.... Crazy

সাঈদ's picture


এই জন্যই তো হিন্দি সিরিয়ালের এত জনপ্রিয়তা । Steve

জোনাকি's picture


দেভুর বদলে দেভুর পিতারে মারিয়া দিলেন...ইহা কেমন কাজ হইলো...দেভুরে মেরে দেয়ার জন্য তেব্র আবাদান !

সাঈদ's picture


দেভুকে মেরে ফেলতে চান ? Crazy

রায়েহাত শুভ's picture


এইরকম হুট কইরা শেষ করাটা কি ঠিক হইল?

সাঈদ's picture


এইটা তো মৌলিক রচনা না তাই মাঝেই শেষ করলাম।

বেশী টানলে চুইংগামের মত লম্বা হইবো ।

টুটুল's picture


পরের পর্ব ছারেন তারাতারি Smile

সাঈদ's picture


শেষের পর্বের পরের পর্ব আবার কি ? Shock

১০

নিভৃত স্বপ্নচারী's picture


কাজটা আসলেই ভাল হইল না !
দেভুরে রাইখা তার বাপরে মাইরা ফেললেন!
তীব্র নিন্দা।

১১

সাঈদ's picture


কি আর করা কন , সবই কপাল Sad

১২

একজন মায়াবতী's picture


শেষ!!! Shock

১৩

সাঈদ's picture


Laughing out loud

১৪

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


মানি না!! Stare গুল্লি

১৫

সাঈদ's picture


সান্তনা রাগে না বাবু

১৬

শ্রাবনের মেঘ's picture


"তাঁহার চেহারা দেখিয়া দেভু ভয়ে ভয়ে পা টিপিয়া দিতে উদ্যত হইলো।"
কলপনায় ভেসে আসলো শারুখখান পা টিপে দিচ্ছে ঐ লোকটার Big smile
ভাইয়া নট ফেয়ার আরো পর্ব চাই । Sad
আমাদের দাবি মানতে হবে মানতে হবে পার্টি

১৭

সাঈদ's picture


এইডা কি মিছিলের ছবি নাকি ? নাকি সবতে মিলে আমারে দৌড়ানি দিবো ।

১৮

স্বপ্নের ফেরীওয়ালা's picture


শেষ পর্বের ভার্ষান টু ছাড়েন... Wink

~

১৯

সাঈদ's picture


এইটা ১ পর্বের Wink

২০

জ্যোতি's picture


মাইনাস। এভাবে শেষ হইতে পারে না। মাইর গুল্লি

২১

সাঈদ's picture


আপনি শুরু কইরা দেন , আমরা আছি লগে Tongue

২২

মনজুর আনাম's picture


হার্টফেলের পরের ঘটনা জানতে চাই তাড়াতাড়ি Wink

২৩

সাঈদ's picture


তারপর আর কি , হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হইলো, ডাক্তার নাড়ী পরীক্ষা করিলো ইত্যাদি ইত্যাদি

২৪

জেবীন's picture


এইভাবে ইতি টানিবারে বিন্দুমাত্রই অধিকার নাই লেখকের! ডেভু'র কপালে নাই চন্দ্রা কি পারু, এইভাবে উহাকে দিয়া আজীবন দেওয়াইতে পারেন না আপনি জেলের ঘর ঝাড়ু!!

জলদি পরের পর্ব আনেন!!

২৫

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


সেটাই! Stare

২৬

সাঈদ's picture


হারিয়ে গেছে চন্দ্রা, বিবাহিত পারু
দেভু আর কি করবে না দিয়া ঝারু ?

২৭

অনিমেষ রহমান's picture


Big smile Big smile Big smile Big smile
আরো দুই এক পর্ব লিখেন উস্তাদ।

২৮

সাঈদ's picture


তখন পড়তে বোরিং লাগতো , চর্বিত চর্বন মনে হইতো আবার। Sad

২৯

শাতিল's picture


এইভাবে শেষ হওয়াটা মানি না। কমপক্ষে আরও ৫ পর্ব আসা উচিত। এর পর পাঠক কূল যদি চায় তাইলে শেষ পর্ব দিবেন Big smile

৩০

সাঈদ's picture


ইয়ে আপনে হিন্দি সিরিয়াল দেখেন না কি ?

৩১

মীর's picture


Cool

৩২

আরাফাত শান্ত's picture


পড়েছি আগেই। এত জলদি শেষ করলেন দেইখা চুনিলালরে কইয়া আপ্নারে সাইজ করা হোক!

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

সাঈদ's picture

নিজের সম্পর্কে

আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম,
হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়,
মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায়।

আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি,
গাছের মত দাঁড়িয়ে থাকি।
সাপে কাটলে টের পাই না, সিনেমা দেখে গান গাই না,
অনেকদিন বরফমাখা জল খাই না।
কী করে তাও বেঁচে আছি আমার মতো। অবাক লাগে।