পিছুটানের একটি দিন.. (১৬ নভেম্বর ২০১২)
দৃশ্য-১:
সবুজ ঢিলেঢালা পোলো টিশার্ট পড়া একজন "লোক"। সাথে দুই "ভদ্রমহিলা"। তাদের দেখে প্রথম দৃষ্টিতে মনে হবে নির্ঘাৎ ব্যাংক বা কর্পোরেটের সেলস-এ চাকরি করেন। কারণ তাদের চোখ-মুখ পাথরের মতো থমথমে..ব্যতিক্রম শুধু গান শুরু হবার পর। ১৬ নভেম্বর ২০১২-তে আর্মি স্টেডিয়ামের কনসার্টের মঞ্চে যখনই ব্যান্ড তারকারা গাইছেন- তখনই তারা মাথা ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে গান গাচ্ছেন। এবং পুরোটা গাচ্ছেন। সবগুলো গান গাইছেন। মনে হলো তাদের এভাবে ব্যান্ডের গাইতে দেখলে তাদের কলিগদের নিশ্চয়ই হার্টে এ্যাটাক হতো!!
দৃশ্য-২:
কনসার্টের নাম অল্ড ইজ গোল্ড। মাঠে প্রবেশের পর সেই আধা অল্ডদের কিঞ্চিৎ সাক্ষাৎ মিললো.. ছেলেগুলো টপলা-টপলা.. মেয়েগুলার মাঝে ভাড়িক্কি.. কিন্তু কনসার্টে ঠিকই এসেছে...হয়তো ছেলেগুলার গায়ে ডেভিল-সাইনওয়ালা টিশার্ট নেই, মেয়েগুলা লম্বা-লম্বা কামিজ পড়া, চোখে চশমা, তাতে কি! হাত -পা নেড়ে হয়তো নাচের সময়টা কেটে গেছে ১০ বছর আগে.. কেউ হয়তো নড়ছেও না.. কিন্তু পকেটে হাত রেখে দিব্বি দুলে বেড়াচ্ছে... যাদের মাথায় অল্প বিস্তর টাক -তাদের টাক বাজাচ্ছে বন্ধুর দল... ওদিকে স্ট্রাইপ শার্ট পড়া কেতাদুরস্ত এক দল দেখানো শুরু করলো কৈশরের উন্মাদনা...জেমসের ফাটিয়ে দেয়া গান বলে কথা!!
বললে ভুল হবে না- মাঠে যারা দর্শক ছিলেন তাদের বেশিরভাগই "জেনারেশন মিলেনিয়ামের সদস্য"..আর কতো শত পরিচিত মুখ.. কত চেনা সুরের চেইন.. কজন তার দুরন্তপনাকে লুকিয়ে রাখতে পারে..!!!
দৃশ্য-৩:
স্বামী -স্ত্রী আর তাদের ছোট্ট শিশু- এমন দর্শক শ্রোতার আজকে অভাব ছিল না। বাচ্চাদের নিয়ে বাপ নেচে গেয়ে দেখিয়ে দিল- দেখ বাচ্চারা আমরাও নাচতে পারি...
কেউ কেউ প্রমিথিউসের গানের সাথে সাথে ব্যাপক রোমান্টিক হয়ে গেল... সেই সময়ের প্রেমের গান যদি সেই গায়কই আরেকবার গায়, রোমাঞ্চিত না হয়ে উপায় কি!!
বলছি কনসার্টের কথা.. এই কনসার্ট নিয়ে কতদিনের অপেক্ষা আমার! একসাথে ডিফারেন্ট টাচ, আর্ক, নোভা, প্রমিথিউজ, মাকসুদ ও ঢাকা, নগরবাউল, এলআরবি, ফিডব্যাক, সোউলস আর শেষ হয়েও হলো না শেষ- ওয়ারফেজ..! ভাবা যায়!! সেই শেষ কনসার্ট কবে দেখেছি মনে পড়ে না। বাম্বার একটা শো হয়েছিল শেরাটনে- দুই দিন ব্যাপী... সেটাই মনে পড়ে... সেখানে আজ এতো গুলো বছরের বাদে এতো প্রিয়মুখ - আসমানের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো..
প্রথমে কসসার্ট নিয়ে কিছু কথা.. ডিফারেন্ট টাচ প্রথম শুরু করলো.. তখনও এই লেটু বাসায়.. আবিষ্কার করলাম দেশ টিভিতে অনুষ্ঠান সরাসরি দেখাচ্ছে!! কেন বাবা তোমরা চ্যানেল আইয়ের মতো সবকিছুতে বাগড়া দাও.. পরের দিন দেখাও.. পরের হপ্তায় দেখাও! কে নিষেধ করেছে!! এতো ব্যবসা করলে তো ব্যাভিচারি হইতে টাইম লাগবে না!!
যাই হোক, মেজবাহ ভাইয়ের সেই সানগ্লাস পড়ে ৯০'র লুক বুকে উথাল-পাথাল শুরু করিয়ে দিল!! তড়িঘড়ি করে রওনা দিলাম.. আর্কের পারফরমেন্স রাস্তায় গেল!! আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে স্টেডিয়ামের মাঠে পা দিতেই নোভা এলো মঞ্চে..ফজলের সেই সাদা ব্যান্ড মাথায় পড়া.. সেই একই ইমেজ..সেই একই ভাবে দুর্দান্ত ভঙ্গীতে লাম্ফিং-জাম্পিং-ড্যাশিং পারফর্মেন্স!! বয়স কি তবে আমাদেরই বাড়লো!!! শুরু হলো স্কুল পলাতক মেয়ে দিয়ে.. বাঙালি সেন্টিমেন্ট আমার!! দুচোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করলো... আর সাথে মিসম্যাচ দাঁত কেলাইন্না হাসি!!! পদ্মার পাড়ে শুরু করতেই কেলানি বাড়লো আরেক প্রস্থ .. আর রাজাকারের তালিকা চাই গাওয়ার সাথে সাথে রক্ত গরম হয়ে উঠলো.. কি গান.. কি অসাধারণ..
প্রমিথিউজ মঞ্চে আসার আগে এক পিচ্চি বললো, আপু দেখি প্রমিথিউজের বড় ভক্ত! নামতা ওয়ালা গানের জন্য! বললাম- আরে বেটা, ওদের চাঁদ সাজালো আর প্রিয়া গো তো শুনো নাই..
আমার প্রমিথিউজ নিয়ে উন্মাদনা প্রমাণ করে বিপ্লব কি অসাধারণই না গান গাইলো!! ওকে দেখেই মনে পড়লো স্টেজের সাউন্ড বক্স থেকে লাফিয়ে পড়ে তার সেই আমলের সব পারফর্মেন্সের কথা! ভয়ে ছিলাম, জেমস-বাচ্চু ভালো পারফরমেন্স করার ওস্তাদ, বিপ্লব যে আজ মাৎ করবে আশা করিনি.. টানা ননস্টপ গাইলো গান গুলো... আর গিটারের তারে তার আঙুল যে আগুন ধরাতে পারে- তা তুলে ধরতে ভুল করলেন না বিপ্লব..
মাকসুদ মানেই মৌসূমী, বঙ্গাব্দ, মেলা- নিজে গাইলেন কম- দর্শককে গাওয়ালেন বেশি...মাকসুদ ও ঢাকা স্বকীয় পারফরমেন্সে আধাবুড়াদের কোমর দুলাতে বাধ্য করলো... ফিডব্যাক কি গাইবে এই "কুইজ" দর্শকদের মনে জাগিয়ে তারা নামলেন
আর স্টেডিয়ামের মাঠে অসংখ্য তারা নামালেন জেমস- লিজেন্ডারি নগর বাউল..ভিগি ভিগি গানের সাথে সবার হাতে জ্বলতে থাকা ডিজিটাল আলোয় কান্না না এসে উপায় কি!! পাগলা হাওয়ার তোড়ে দিয়ে নাচালেন, বিজলির সাথে গাওয়ালেন আর সবুজ নামক সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের রাতের ঘুম হারাম করলেন উপমহাদেশীয় এই স্টার। কারণ সবুজ মিয়া গুরুর সাউন্ড ঠিক করতে পারছিলেন না।
কনসার্ট এই পর্যায়ে পুরোদমে জমে গেছে.. মঞ্চে আইয়ুব বাচ্চু..গাইলেন "আমাদের প্রজন্মের সূচনা সঙ্গীত" সেই তুমি.. স্যরি ভুল বললাম.. গাওয়ালেন- একটা লাইনও নিজে গাইলেন না। আর শেষে গিটারে ঝড় তুললেন স্যান্ডির সাথে পাল্লা দিয়ে..
এবার দুশ্চিন্তা.. ফিডব্যাক আসলে কি গাইবে!!.. লুমিন গাইলো কোন রকম.. কিন্তু আধবুড়ারা নিজেরা উপভোগ করলো নিজেদের মতো করে গেয়ে....
কেনই বা গাইবে না। সব লিরিক্স আমাদের মুখস্ত যে.. ক্যাসেট প্লেয়ারের পুশ বাটনে "পুশ" করে করে কত অধ্যাবসায়ের পর ফের গানের লাইন মনে রাখা!! প্রতি ঈদে পাই পাই করে জমানো টাকা দিয়ে ক্যাসেট কেনা.. আহ কত কষ্ট মাখা আনন্দের দিনগুলি.. আজকে আবার রঙিন..
নাসিম আলির সেই ঝাকড়া চুল নেই.. তবে আছে ৩০ বছরের পুরানো সেই সোউলসের নবিন সউল। চায়ের কাপে, এই মুখরিত জীবনের চলার ফাঁকে, তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে.. আজো আমরা এই গানগুলোর এক একটা লাইন ফেবুতে মেরে মেরে স্টেটাস গেড়ে দেই.. এখনকার কোন ব্যান্ডের গান নিয়ে এমন হয় এসময়!!
শেষে এসে মিযান আমাদের জান ওয়ারফেজ দিয়ে স্টেজ এক্কেবাড়ে ফাটিয়ে দিলেন..বসে আছি একা, মহারাজ দিয়ে আমার ঘাড়ে ব্যাথাওয়ালা বন্ধুকে মাথা ঝাকাইতে বাধ্য করলেন, আমার বিশাল কলেবরের পতিকে লাফাতে উদ্যোগী করলেন!
খোলা বাতাসে এই কনসার্ট এতোটাই মাতাল করে রাখলো যে নাওয়া খাওয়া বাদে ৯ ঘণ্টা পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকার পরও এখন লেখার শক্তি পাচ্ছি.. কোন টাইগার বা পাওয়ার ড্রিংক খাইনি বাপু.. খেয়েছি মুক্ত বাতাসে চিরচেনা মুখের মাঝে ভালবাসার সুর-মূর্ছণা...
এজন্য ফেবুতে স্টেটাস দিয়েছিলাম
"মাথা ঝাকানোর সকল আর্টে
থাকবো মেতে কনসার্টে"
আর আজ আনন্দের এই দিনে ছোট্ট করে শুধু এতোটুকুই বলবো, আমাদের চেয়ে যারা বছর পাঁচেকের গ্যাপে .. তাদের আরো অনেক কিছু শেখার আছে.. নিজের জগৎ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেই হবে না.. জানতে হবে আস্ত দেশ আর মানুষকে..
আজকের কনসার্টের পোস্টার
আর এই নগণ্য মানুষের একটাই আবেদন-
প্লিজ প্রিয় ব্যান্ড- আপনারা চ্যানেলগুলোর বিশ্রী সাউন্ড সিস্টেমে লাইভ করা বন্ধ করুন... আমাদের আরো বেশি বেশি কনসার্ট উপহার দিন..চ্যানেলের মায়াজাল থেকে স্পন্সররা আবার ফিরে আসুক কনসার্টের মাঠে... নিজের মনকে কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে বলুন, আপনাদের মনও কি তা চায় না?
মিস অফ দ্য লাইফটাইম
তয় আপনি কইলাম পুরা কনসার্টের ফ্লেভারটা চমৎকার ভাবে তুইলা আনছেন। থ্যাংক্স...
বলচেন দাদা??
আমি কিন্তু খুশি হলুম...
সেকেন্ড মিড চলে এমবিএর তাই যেতে পারি নাই আর পকেটেও টাকা পয়সা নাই যে দুম করে চলে যাবো।
গ্রেট মিস এই বছরের
আপনার পোষ্টটা পড়ে আরো মন বিষন্ন হলো!
টাকা কমই ছিল.. মোটে ২০০...

হমমমম বছরের সেরা মিস..তাতে সন্দেহ নাই..
দুশো বেশী না আপু। কিন্তু সাথে ১-২ জন বন্ধুকে নিয়ে যাওয়া সিএঞ্জি ভাড়া খানাদানা সব মিলিয়ে ১ দেড় হাজার টাকা পকেটে থাকলে যেতাম। তা ছিলো না বরং ছিলো সেকেন্ড মিড তাই যাওয়া হলো না
আব্বে.. এতো ভাবলে জীবন শ্যাষ হয়ে যাবে...
মনটাই খারাপ হয়ে গেলো পোস্ট পড়ে। গ্রেট মিস। যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু ......
দারুণ এক পোস্ট ।
ফাটাফাটিইইইইইইইইই
ব্যাটেবলে মিলাইতে পারি নাই
আপনার লেখাটার একটা অডিও ভার্সন থাকলে কনসার্টে না গেলেও চলতো। লেখাটা আফসুস বাড়ালো, মনও ভরলো
না বস.. কনসার্টের মজা কনসার্টেই... ঘরে বসে এই মজা পাওয়া যাবে না...
অসম্ভব মিস করছি,যাইতে পারি নাই। প্রমথিউজ এর চাঁদ সাজালো, নোভার স্কুল পলাতক মেয়ে,তুমি নাই বাশরী এই গানগুলা শুনছি যখন ক্লাস টূ/থ্রিতে পড়ি। সেই যে শুরু এখনও প্লেলিস্টে উপরের দিকেই থাকে এই গানগুলো। লেখায় পুরাই কনসার্টের ঝাঝ। মনে হইলো এখনো হেড-ব্যাং দিতেছেন

আবার জিগায় ...মাত্র ২০০ টাকায় আমার পুরো বছর সার্থক ভাবা যায়!...
আমি বলি কি, পাতা ঝরে যাওয়া গাছে পানি দিয়ে লাভ নাই। নতুন গাছ লাগাতে হবে।
দেশীয় ব্যান্ড তার পথ হারিয়েছে গত দশকের শেষের দিকেই।
তবে বেশি বেশি কনসার্ট হলে বিপদও আছে। এমন অনেক কনসার্টই আমি দেখেছি, যেখানে মাছিও উড়ে না।
এটা ঠিক, টিভিতে পারফর্ম করা ব্যান্ডদলগুলোর আসলেই উচত না।
্আপনার হাতে কলম আছে.. দেশের নামকরা দৈনিকের সাথে আছেন, মিউজিক ভালোবাসেন এদেশের মিডিয়া ভালোবাসেন- আপনা গঠনমূলক আলোচনা করতে থাকুন.. নতুন গাছ অক্সিজেন পাবেই.. এখন তো ঘরের বারান্দায় গাছগুলো বনসাই হয়ে যাচ্ছে..
১। প্রথম থেকেই আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা, পোস্টারটা প্রথম আপনি শেয়ার করার পরেই দেখলাম।
২। রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে লুমিন কিন্তু খারাপ না। "কুইজ" টা আসলেই ইন্টারেস্টিং ছিল, এবং ২ জনই সমানে সমান।
৩। বিপ্লব তাক লাগিয়ে দিল। লাল মিয়া, নয়না, প্রেয়শী তো ধরেই নায়....
৪। মিজান এর ব্যপারে "নাক ছিককানো"রা শো তে ছিল আশা করি।
৫। সবুজ
১. কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য দুপুরের খানা খাওয়াতেই পারেন.,,


২. লুমিন খারাপ না... মাগার ম্যাক ইজ দ্যা বস..
৩. বিপ্লব পুরাই বিপ্লব ঘটায় দিল!!
৪. মিজান যে টান দিতে পারে এখনও কিছু গায়কের জন্য তা স্বপ্ন...
৫. হোদল..
ঢাকা থাকলে কেউ আমাকে মিস করাতে পারতো না, আগেও পারে নাই। আই মিস ঢাকা
এখনো দুশো টাকা টিকেট?
গুড
যাইনাই,
কিন্তু আপনার পোস্ট পড়ে মনে হল গেছি!
কেউ একজন ঢাকায় নাই। আমাদের পালের গোদা। সে থাকলে নিশ্চিত আমারো যাওয়া হতো। আই মিস আওয়ার পালের গোদা
লেখাটা খুব ভালো লাগছে।
onek emotional ekta din paar koresilaam,
mone ase keu jete raaji hoyni dekhe ekai
giyesilaam, okhane giye jokhon different
touch er shesh duto gaan shunlaam onek tai
abeg probon hoye chokh diye nijer ojantei
chokhe osru er dekha pai. shuru hoy ekla
upovog. kintu shomoy jete na jetei pasher
manushgulor shathe kokhon je ekatto hoye
jai terms I pai na!!!!!! re por I peye gelaam
school friend childhood friend r ki laage,
gaan shuni r sriticharon kori, tader shokoler
performance dekhe etotai mugdho hoye jai j
ekhono era shei tarunno kivabe dhore
rakhen!!!!! hats off!!!!! channel theke show
off kore bosore koyekti niyomito concert
kora hok!!!! ei eid e ashse arekti rock
concert. no miss..... all are welcome & enjoy
ourselves as much we can!!!!!!!!!!!
মন্তব্য করুন