শিরোনাম হীন-১
১.
কিছু দিন আগে আমার এক ছোট বোন হঠাৎ মজার একটি বিষয় জানায়। গুগল চাচাকে আমার নাম দিয়ে সার্চ দিলে নাকী আমার লেখার লিংক-টিংক চলে আসে। স্বাভাবিকভাবেই আনন্দিত এবং চিন্তিত হলাম। কারণ ইন্টারনেট জিনিষটা এদেশের অর্ধ শিক্ষিত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের পাল্লায় পড়ে চরিত্রহীণ অবস্থায় আছে! কে কি ছেড়ে দিবে ইন্টারনেটে পরে আমাকেই বিব্রত হতে হবে। ফলে নিজে সতর্কভাবে সার্চ করা শুরু করলাম আমার অপ্রিয় বন্ধুরা কোন মশকরা করেছে কিনা তা দেখার জন্য। সার্চ দিয়ে দেখছি, কোনই ঝামেলা নেই। কিন্তু একটি খবর পেয়ে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। ২০১০ সালে আমারই জন্মদিনে আমারই নামের একটি মেয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছণার শিকার হয়েছে পাবনা এলাকায়। কি অদ্ভুদ একটা খারাপ লাগা। কি যে বাজে অনুভূতি! সেদিন সারাদিন কারো সাথে কথা বলতে পারিনি। যেদিন আনন্দে আমার দিনটি কেটেছে সেদিনই প্রকাশ্যে আমার নামের অন্য একটি মেয়ে কত কষ্ট পেল... হয়তো সারাজীবন মুখোমুখি থাকা কষ্টটা পেল!
২.
খুন- ধর্ষণ- শারীরিক লাঞ্ছণা আমাকে বরাবরই বিব্রত করে। টাঙ্গাইলের স্কুলের মেয়েটির গণধর্ষণের ঘটনা, ডা: সাজিয়া আরেফিনের মৃত্যু মন ভেঙে দিয়েছে। বিশ্বজিতের মৃত্যু ভীত করেছে। ভিকারুন্নেসার মেয়েটি কোনদিন মানসিক শান্তি পাবে কিনা ভাবতেই মনটা অস্থির লাগে। এখন যেমন লাগছে শহীদ আনোয়ারের মেয়েটার জন্য। এক পরিমল থেকে অন্য তারক মণ্ডল। পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম, তারককে পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আমার লেখার সূচণা এই বরখাস্ত থেকেই।
৩.
পড়েছি পাড়াতো স্কুলে। বিভিন্ন শিক্ষককে পেয়েছি বিভিন্ন ক্লাসে। সেই সময়ের বিখ্যাত শিক্ষক শাহেদ চৌধূরীর কাছে পড়তে যেতাম। বাসার বাইরে একমাত্র পছন্দের জায়গা ছিল এই স্কুল, আর শিক্ষকের সান্নিধ্য। কখনো মনে হয়নি আমরা নিরাপত্তাহীন। কোন বিষয়ে কেউ ডাব্বা মারলে অতিরিক্ত সময় পড়াতেন শিক্ষকরা। হাতে বেত নিয়ে থাকতেন। ঠাস ঠাস করে হাতের তালুতে শাসনের চিহ্ন এঁকে দিতেন। এই হলো আমাদের স্কুল জীবন। বর্নীল। অসাধারণ।
আর এখন? স্কুলের শিক্ষক মানে ত্রাস। গায়ে হাত তোলা নয়- হাত দেয়ার ভয়। প্রধান শিক্ষিকাদের পদ-লোভের তোড়ে বাচ্চাদের জীবন ধুলিস্যাৎ করে দেয়ার চেষ্টা। ফলাফল, কমছে শিক্ষকদের প্রতি সম্মান। আগে যাদের দেখলে আপনমনেই বসা থেকে দাঁড়িয়ে যেত সবাই, এখন সেই শিক্ষক সমাজের কয়েকজন কলঙ্কের জন্য সম্মান মুছে যেতে শুরু করেছে।
৪.
শিক্ষাঙ্গন একটি পবিত্র জায়গা। সেই পবিত্র জায়গার অবস্থা এমন,
- রাজনৈতিক ছাত্রদের কারণে সিলেটের শত বছরের হোস্টেল পুড়ে ছাই
- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিল্ডিং থেকে এক দলের ছাত্রকে অপর দলের ছাত্র ধরে ধরে ফেলে দেয়া
- ভিকারুন্নেসা নূন স্কুলের শিক্ষক কর্র্তৃক ছাত্রী ধর্ষিত
- জগন্নাথের রাজনৈতিক "ছাত্রদের" হাতে বিশ্বজিৎ নামের সাধারণ পথচারী খুন
- জাহাঙ্গীরনগরে র্যাগিং-এর নামে ছাত্রীকে উত্যক্ত
- রাজনৈতিক "ছাত্র"দের হাতে রাব্বী নামের একশিশু নিহত
- বুয়েটে গুম খুনের ভয়ে মাসের পর মাস হতে থাকা আন্দোলনের সমাপ্তি
- শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজে শিক্ষকের পশুত্বের শিকার দশম শ্রেণীর ছাত্রী
ইত্যাদি ইত্যাদি। বলে শেষ করা মুশকিল। এতো ঘটনা কি করে বলে শেষ করা সম্ভব!
যেদিন থেকে শিক্ষালয়ে রাজনীতি এবং ব্যবসা প্রবেশ করেছে সেদিন থেকেই পরিবেশ বিগড়েছে বলেই আমার ধারণা। তা না হলে, কি করে শিক্ষকের মতো পদে রাজনৈতিক নিয়োগ কার্যকর হয়! আর রাজনৈতিক নিয়োগ পাওয়া মানেই কিন্তু খুটির জোর বেড়ে যাওয়া এবং অপরাধে পার পেয়ে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করা। যে অপরাধের শাস্তি কেবলই "বরখাস্ত" হতে পারে না! হোসনে আরা বা শাহাদাত হোসেন শিকদার কিসের ভয়ে বা কিসের লোভে ধর্ষকদের আগলে রাখতে মারমুখো হন- সেটা যেমন ভাবার সময় এসেছে, তেমনই ভাবে জানতে হবে এই সব শিক্ষক নামের কলঙ্করা কি করে দেশের নামী স্কুলে নিয়োগ পেয়ে টু পাইস কামিয়ে নিচ্ছে!
৫.
যেকোন ঘটনার সাথে ইসলাম ধর্মকে পেঁচিয়ে তার তুলাধুনা না করলে এদেশর একজাতীয় "অধার্মিক" ধর্মপালনকারীর আবার ঘুম হয় না। ধর্ষণ প্রতিরোধ নিয়ে কোন এক বাজে লেখা একজন নেটে শেয়ার করার সাথে সাথে তাকে "মুছলমান" বলে কে যেন কি বললো। আরেকবার তার কমেন্ট পড়ার রুচি হচ্ছে না। আরো নানা ধরনের কমেন্ট, পোস্ট- যেন বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা আছে বলেই এসব ধর্ষনের ঘটনা ঘটছে। তারা একপর্যায়ে ভুলেই গেল যে ইত্তফাকের বোকামিভরা লেখাটার লেখক এবং ধর্ষক এক নন।
এই সকল জ্ঞানপাপীরা জানেনা- ধর্ষক, উগ্রপন্থি, সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম থাকে না। তাদের পক্ষে যারা কথা বলে তারাও একই রকম। এই সব নরপশু জানে কেবল একটি অদৃশ্য ঢাল তুলে নিজের ব্যবসা চালিয়ে যেতে। আর কিছুই না। তারা বর্বর এবং সমাজের অাগাছা।
সেদিন আমাকে কে যেন ফোন করে জানতে চাইল ইনিয়ে বিনিয়ে- যে আমি নবীজির উম্মত কি না! তার ইঙ্গীত স্পষ্ট। স্বাধীন বাংলাদেশে আমি ইসলাম ধর্ম অনুসারী, নবীজীর উম্মত। তাতে সমস্যা কি? তাই বলে জামাত-শিবির করি এটা ভাবার কারণ কি? এটা কোন ধরনের মূর্খতা!! ঐ ফোনকর্তা মানুষরুপী গাধাটার প্রতি করুণা হলো। কোন ধর্ম পালন করলেই কাউকে ক্যাটাগরীতে যারা ফেলে দিতে পারে তারাও আসলে একধরনের মানসিকতার ব্যবসায়ী, সংক্ষেপে - অমানুষ ছাড়া আর কিছু না।
৬.
সবার উপর মানুষ সত্য- এই বিচারে এখন থেকেই কি একটা সুন্দর সমাজ গড়ার চেষ্টা করা যায় না? কেনো একটি বিচারের দৃষ্টান্ত দিয়ে আটকে দেয়া হচ্ছে না পরিমল, তারক বা ব্রাকের সেই স্টাফের মতন নরপশুর অপরাধের পথ? কেনো একটি মেয়ের কর্মস্থলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে না? কেনো থাকবে না শিক্ষালয়ে! এসবের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো কি খুব কষ্টের কাজ? কি করে এই প্রতিষ্ঠান গুলো বাচ্চাদের জানের নিরাপত্তা না দিয়ে দিনের পর দিন রাজনৈতিক ব্যবসা চালাতে পারে? অন্তত শিক্ষালয়ের মতো পবিত্র স্থানে কি রাজনৈতিক নিয়োগ বন্ধ করা যায় না??!!
৭.
প্রশ্ন করে মাথা কুটে লাভ নেই যতক্ষণ পর্যন্ত দেশের মিডিয়া এগিয়ে এসে স্বপ্রণোদিত হয়ে লড়বে ন্যায়ের পক্ষে। যতদিন না পর্যন্ত ডোনেশন আর পজিশনের খেলায় মাতা অধিকাংশ নারী অধিকারে স্বোচ্চারে সেমিনার করা নারীরা রাস্তায় কোমড় বেঁধে নামবে। ততদিন হাজারো পরিমল-তারক আসবে যাবে.. মেয়েরা ঘরে বসে কাঁদবে! কোনদিন হয়তো খুব কাছের চেনা মেয়েটাও কাঁদবে.. আপনার অগোচরে। আপনি জানতেও পারবেন না কোন পরিমলের থাবায় তার কোমল মনে তৈরি হচ্ছে সারা জীবনের ক্ষত।
মিডিয়া স্বপ্রণোদিত হয়ে কিছুই করবে না। মালিক যা বলবে, তাই করবে.. যার যায়, সেই বুঝে আর বাকিরা একটু - আধটু আহা- উহু করে ঘরের কোণায় ঢুকে যাবে।
মুক্ত, একটু সরলীকরণ হয়ে গেল।
ভাইয়া, হতে পারে.. কিন্তু, সাংবাদিকদের উপর আক্রমণের পরও আন্দোলন যেভাবে নিস্তেজ হয়ে গেল, দু:খজনক।
সরলীকরণ হয়তো হচ্ছে.. কিন্তু ফলোআপ ছাড়া যখন একেকটা খবর কবরচাপা পড়ে তখন আর বিরক্তি প্রকাশ ছাড়া কোন উপায় থাকে না। এমনকি ফটো সাংবাদিকদের উপর হামলার খবরটাও কোথাও হারিয়ে গেল! বিষয়গুলো সত্যি হতাশাজনক।
হারিয়ে যায় নাই। মার খাওয়া সাংবাদিকেরা জেলায় জেলায় সাক্ষী দিয়ে বেড়াচ্ছে।
ঢাকায় ক্যামেরা কেড়ে নিল..শাহবাগ/রমনা থানায় বসায় রাখলো!! তাহলে জেলায় জেলায় সাক্ষী দিচ্ছে- এর মানে কি?
আজকাল মানুষজন নিজের 'ধর্ম' কি তা বলতেও লজ্জা পায়, বলে 'মানবতাবাদী'!
এমন কোন 'ধর্ম' আছে নাকি দুনিয়ায়, যা আর কারও কোন ক্ষতি করতে বলে?!
তুমি 'ইসলাম' কি বলে তা জান না, 'ধর্ম' মানে কি জানো না।
তাও - যত দোষ, 'ইসলাম' ঘোষ!
উনাদের একদিন জিজ্ঞেস করতে হবে- যে দেশে কোন মুসলিম নাই সেই দেশটা খুন-ধর্ষণমুক্ত কি না।
অপরাধমুকতো না হলেও হ্য়তো রেসিও অনেক জায়গায় অনেক কম
রোজ যা দেখি , শুনি....সত্যিই এত বেশী হতাশ লাগে, এত বেশী অনিরাপদ লাগে! কিছুই ভালো লাগে না। এ কোন দেশে বাস করছি! দিন দিন নরক হয়ে যাচ্ছে যেন
এই নরক করার পিছনে দায়ী আমরাই...
বাংলাদেশের মানুষ এতো কিছুর পরেও যে বেচে থাকে সমাজে অনেকেই দিন চলে যায় তাই ভাগ্য। যারা কঠিন নাস্তিক তারাও একদিন বলবে ইশ্বর থাকে তাই বাংলাদেশ টিকে আছে সাধারন যুক্তিতে টিকে থাকার কথা না!
দেখা যাক..
এখন প্রয়োজন ঘৃণ্য অপরাধের কিছু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির।
এ কথাটা আমি মনে মনে বিশ্বাস করি নইলে এতো অরাজকতা নিয়ে কোন কিছুই টিকতে পারে না। ঈমান আনলাম আবার
আমিও..
এ অন্যায়গুলোর সাথে কোনভাবেই ধর্ম আনা যাবেনা, যারা আনবে তারা এটা করে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে। সকল ধর্ষকের এক জাত, এক ধর্ম। তাদের আর কোন ধর্ম থাকতে পারেনা।
প্রতিটা ঘটনার সাথে জোরপূর্বক "উদ্দেশ্য" ঘুটা দেয়ার কারণেই কোন সমস্যার সমাধান হয় না..
এ বিষয়ে কথা বলতে কলেজের অধ্যক্ষ কর্নেল শাহাদাত হোসেন শিকদারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরের ব্যাপার। মুঠোফোনে কিছু বলা যাবে না। আপনি সরাসরি আসেন। এ ছাড়া কথা বলা যাবে না।
এটা কিভাবে শুধুই ক্যান্টনমেন্টের ভেতরের ব্যাপার হলো, সেটা মাথায় ঢুকে নাই।
~
তাহলে এই স্কুলে ক্যান্টনমেন্টের বাসিন্দাদেরই শুধু পড়ানো হোক..
A few days ago, when millions of Indians were protesting against the brutal rape and murder of a girl in Delhi, a protester carried a placard which said: I was born as a girl and it is a crime. For this crime, hang me, But please, for God's sake. Don't Rape Me!
আমার বড় ভাই মোস্তাক শরীফ-এর ফেসবুক স্ট্যাটাস।
হমমম..
মন্তব্য করুন