শৃঙ্খলিত কৈশর এবং ঐশীদের পরিনতি
একটি জোড়া খুন। এক ষোড়শী। তার জীবনযাপন। অনিশ্চয়তা এবং সমাজের সাজানো মূল্যবোধের মুখোশে নির্মম চপেটাঘাত।
ঐশী নামের মেয়েটিকে নিয়ে খবরগুলো পড়লে ঠিক এমনটাই মনে হয় কেন যেন। মনে হয়- ঐশী নামের মেয়েটা আমাদের ঘাড়ে ধরে দেখিয়ে দিচ্ছে আগামি প্রজন্মের জন্য কোন ধরনের সমাজ আমরা তৈরি করে যাচ্ছি। কি শিখাচ্ছি- কি বোঝাচ্ছি। যেখানো শিক্ষক আমরা সবাই- দোষ কিভাবে কেবল ঐশীর হয়!
স্বাভাবিক ভাবেই- বাংলাদেশের পিতামাতারা বলবেন- যার যার নিজের সন্তানের ভালো তারা জানেন। আসলেই জানেন কি না জানি না। কিন্তু এমন কোন কথা নেই যে প্রয়োজনে বাইরের- এমনকি প্রতিবেশীর কোন কথাও তারা কানে তুলবেন না। কেবল তারা অপরিচিত বলে। এই অপরিচিতদের হাত থেকে সন্তানদের বাঁচাতে বাঁচাতে কি করে নিজেরাই সন্তানের কাছে অপরিচিত হয়ে যাচ্ছেন- সেটা বাবা মায়েরা নিজেরাও জানেন না।
ঐশীদের নানা ভাবে বিশেষায়িত করার আগে দেখে নেয়া ভালো ওরা কি করে বড় হচ্ছে। বা ওদের জন্য আমরা কি তৈরি করে রাখছি..
আমরাও যখন বড় হচ্ছি- তখন স্কুলের মাঠ ছিল- গার্ল গাইড, রোভার স্কাউট, বিএনসিসি করে বেশ সময় কাটিয়েছি পাড়ার ছেলে মেয়েরা। কালো কি সাদা এমন কোন প্রশ্ন ছিলনা। পড়ালেখা করে গেছি ঠিকঠাক।একটা কোচিং একটা স্কুল। কথা সত্য তখন কম্পিউটার ছিলনা ঘরে ঘরে। ফোন ছিল না। ফেসবুক ছিল না। প্রশ্ন হলো এখন কি তাহলে সব দোষ তথ্য প্রযুক্তির?
আমাকে প্রশ্ন করা হলে আমি বলবো- না। তথ্য প্রযুক্তি মানুষকে উন্মুক্ত হতে শিক্ষা দেয়। মানুষকে গৃহবন্দী করতে নয়।বাবা মায়েরা বরং প্রযুক্তির লোভ দেখিয়ে তাদের সন্তানকে গৃহের শৃঙ্খলায় আবদ্ধ করে রেখেছেন। আজকালকার অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের অনেক মায়েরাই মেয়েদের নানা ধরনের খেলা থেকে দূরে রাখে কারণ তারা "কালো" হবে বা রোদে ত্বকের ক্ষতি হবে। ছেলেদের মিশতে দেয় না বন্ধুদের সাথে- কারণ ছেলেটি খারাপ হবে। বাইরের জগৎটিকে সন্তানের কাছে অন্ধকার জগৎ বানিয়ে নিজেরাও দূরে সরে যায় "পরিবারের ভবিষ্যৎ" বানানোর দোহাই দিয়ে। যে বাচ্চাটা ছোটবেলা থেকে গৃহকর্মীর সংস্পর্শেই কেবল বড় হয় সে বড় হলে দু:খ বা সুখের সময় তাদেরই কাছে টানবে সেটাই স্বাভাবিক। যার প্রমাণ ঐশীর গৃহপরিচারিকা সুমি। এমন অনেক ঘটনা আছে যেখানে বাচ্চার প্রিয় বন্ধু এবং সিক্রেট জানানোর ব্যক্তি হলো গৃহকর্মী- কেউ স্বীকার করে কেউ করেনা।
স্বীকারের আসলে প্রয়োজন নেই। কারণ এখানে কোন বিচার নেই শালিস নেই। বাবা-মায়ের জন্য দণ্ড নেই। কিন্তু চোখ খুলে দেয়ার সুযোগ আছে। যে সুখের জীবনের জন্য সুখের পরিবার ছেড়ে দৌড়ে পালাচ্ছেন- সে ঘরে সুখ আছে তো? যে বাচ্চাটার উপর গোল্ডেন ফাইভ পাবার বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন- সে ঐ বোঝাটা নিতে পারবে তো? তাকে দুনিয়ায় চলতে শিখতে না দিয়ে কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক সেটা জানানোর সঠিক পন্থা জানেন তো?
ঐশীর কেসটায় বারবার আসছে ইংরেজি মাধ্যমের নামটা। যেন ইংরেজি মাধ্যমটায় পড়েই বাচ্চাটা গোল্লায় গেছে। প্রিয় পাঠক এই ধারণা থেকে দূরে চলে আসুন। ঐশীর মতো যত কেইস আমাদের চারপাশে তার মূল কারণ কোন মাধ্যম হতে পারে না। কারণ হতে পারে জেনারেশন গ্যাপ এবং পারস্পারিক অসমঝোতা। বাবা-মাও কিশোর মনটাকে বুঝতে পারেনি। একই ভাবে বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন এক কিশোর হঠাৎ পাওয়া সামান্য স্বাধীনতাকে হজম করতে পারেনি। আজ যদি সে পাড়ার ভালো-মন্দ উভয়ের সাথে মিশতে পারতো তাহলে ঠিকই বুঝতে পারতো কোনটা তার নিজের ভবিষ্যৎ আগলে রাখবে - কোনটা ধ্বংস করবে।
এ পর্যায়ে বাবা-মায়েদের সহজ উক্তি হতে পারে; সন্তানের ভালোর জন্য ঘরে আটকে রাখা বা আশেপাশের সমাজ ব্যবস্থা ভালো না বা সন্তানের চেয়ে বাবা-মায়েরাই তার ভালো বোঝেন ইত্যাদি ইত্যাদি। কোনটাই ফেলে দিচ্ছি না। কিন্তু যে বাচ্চার জীবনটাই ফেসবুক- সে জানে না ফেসবুকের অনেক আনন্দই ফেইকবুক আর হৈ হুল্লোড়ের ছবি ফটোশপড। সে দেখে আনন্দের ছবি সে আনন্দ করতে চায়।
যে বাচ্চাটার পাড়ায় মাঠ নেই সেই বাচ্চাটা যদি স্কুলেও না খেলতে পারে তার শরীরে ক্লান্তি আসবে না। ঘুম আসবে না আকাশ ভেঙে। তখন সে খাবে ঔষধ।
বলতে পারেন- মাঠ তো নেই! আমাদের বাবা-মায়েদের মাঝেই তো দেশের হর্তা -কর্তা বিদ্যমান। তারা না হয় এবার বড়লোকের বস্তি বানানো বন্ধ করে বাড়ি বনানো শুরু করেন। অন্তত আগামি প্রজন্মের জন্য। যেন তারা হেসে খেলে একটু হলেও প্রাণ ভরে শ্বাস নিয়ে বড় হতে পারে! যে বাচ্চাটা খেলে কালো হবে না, সে জানবে না হঠাৎ করে সাজলে তাকে কত্ত সুন্দর দেখাবে! যে বাচ্চাটা দৌড়ঝাপ করে সে জানবে মাসল বানাতে স্টেরয়েড-এর আদৌ কোন প্রয়োজন নেই।
আর রইল বাকী ইংরেজী মাধ্যমের আলাপ। আগাগোড়া বাংলামিডিয়ামে পড়ে এখন বাংলাদেশ কাপাচ্ছেন এমন ব্যক্তির কিন্তু অভাব নেই। ইংরেজি মাধ্যমে পড়তেই হবে এমন যেমন কথা নেই- আর য্যায়সা ত্যায়সা ইংরেজি মাধ্যম হলে তো বাচ্চাদের লাড়েলাপ্পা হবেই। সেই লাড়েলাপ্পা অবস্থা থেকে সন্তানকে সঠিক পথে আনার জন্য প্রথমেই যা প্রয়োজন তা হলো সে কি শিখছে স্কুলে সেটা জানা। আপনারা কি সত্যি জানেন স্কুলের কারিকুলামটা কি? ছোটবেলা থেকে কি পড়ে আসছে? সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এক কোচিং থেকে অন্য কোচিং-এ দৌড়ে যাবার আদৌ প্রয়োজন আছে কি না?
ইংরেজি মাধ্যমের উপর আমার সবচেয়ে বড় বিরক্তি হলো এরা নিজের সংস্কৃতিকে ভুলিয়ে দেয়। একটা বাচ্চা বাংলা বলতে পারে না- লিখতে পারে না- পড়তেও পারে না। আজ আপনার বিদেশের মাটিতে শ ক্ষাণেক বাড়ি থাকলেও মনে রাখবেন- আপনার দেশটা বাংলাদেশ। যতই হ্যাডম হয়ে যান না কেন মনে রাখবেন- বিদেশের মাটিতে আপনি রিফিউজি ছাড়া কিসসু না। তারা কখনোই আপনাকে নিজের দেশের বলে মেনে নিবে না। তাহলে যে সন্তানকে আপনি ছোটবেলা থেকে বিদেশী হিসেবে গড়তে চাচ্ছেন সে কি আপনার চোখের সামনেই "না ঘরের না ঘাটের " হয়ে যাচ্ছে না। সে টিভিতে দেখে বাইরের টিনএজার বার-ডিস্কো যায়, সেও যাবে। সে দেখে টিনএজার দৈহিক সম্পর্কে জড়ায় সেও জড়াবে।সে জানে না তার বয়সি একটা বাচ্চা মাঠেও খেলতে পারে- কুচকাওয়াজ করতে পারে- তাই সে করে না। টিভিতে যা দেখায় তা যে অনেকখানিই আরোপিত সেটা তারা বুঝে না। বিদেশের প্রেক্ষাপট আর আমাদের প্রেক্ষাপট যে এক না- সেটা বোঝার বয়সও তাদের না। এখন আমাদের ছত্রছায়ায় বাচ্চাগুলো যদি এমন ফেইক কিছুকে সত্যি ভাবে, ভুগবে একা ঐশীরা কেন?
যে পড়ালেখার জন্য ছেলেমেয়েদের আটকে রাখা বাইরের জগৎ থেকে- সে লেখাপড়া তারা কতটুকু উপভোগ করে সেটাও মাঝে মাঝে প্রশ্ন হয়ে ওঠে। যে গান শিখা সেটাও আনন্দের জন্য নয়, "আইডল", "গায়ক/গায়িকা" করার জন্য। কোন বাচ্চা যদি কিছু অর্জন করে তাহলে সেটা আনন্দ আর কোন কিছুর অর্জনের বোঝা তার উপর চাপিয়ে দিলে সেই অর্জন ঐ বাচ্চাটার গলার কাটা হতে বাধ্য।
আজকালকার বাচ্চারা পাঠ্যবই ছাড়া পড়ে কম। যাও পড়ে তাও কোন প্রতিযোগিতার জন্য। যা করে বেশির ভাগই কোন না কোন প্রতিযোগিতার আওয়াতায় পড়ে যায়। বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে নাটকেও কিশোরদের উপস্থাপন করা হয় হাইফাই পদ্ধতিতে। সবকিছুতে ব্যবসার প্রভাব সঙ্কট জনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এমনকি আলোকিত মানুষ গড়াও এখন স্পন্সরের হাতে। তাও ভালো কিছু আলো তো আছেই। সবাই তার সন্তানকে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের মতো হতে বলেন। কিন্তু নিজেরা উনাদের মতো কিশোরদের কথা তাদের মনের কথা বুঝেন না। আমরা না হয় কারো মতে বাচ্চাদের "হতে হবে" না বলে নিজের মতো করে বড় হবার সুযোগ দেই!
অনেক কথা হয়ে যাচ্ছে- যা একটা কথাতেই শেষ হবে। বাবা মা বলবেন, আমার বাচ্চারটা আমি ভালো বুঝি। তথাস্তু। দয়া করে বাচ্চাকে বুঝুন। তাকে এই দেশটাকে চিনিয়ে দিন। আশেপাশের মানুষটাকে চিনতে দিন। ওদের গায়ে হাত না তুলে, যেন নিজের স্বাধীনতা বলতে নেশা আর নাচ না বোঝে সেটা ওর সামনে তুলে ধরুন। ইংরেজি মাধ্যমটায় পড়ান নিসন্দেহে- কিন্তু তাকে বাংলাদেশি করে গড়ে তুলুন। তাকে সহানুভূতিশীল হতে দিন। টাকা পয়সা দিয়ে শিশুর বিলাসিতা কেনা যায়- ভবিষ্যত নয়।
আমাদের চারপাশে অনেক ঐশী। এরা আমাদের সামাজিক বদহজমের ফল। কিন্তু ভুক্তভোগী কেবল ঐশীরাই। আজ খবরের শিরোনামের তাজা খবর ওরা আজ থেকে অনেক বছর পর যখন জেল থেকে বের হবে- তখন সে হবে পরিবার থেকে আলাদা। ভাই-এর ঘৃণার পাত্রী। ঐশীদের কোন সংসার হবে না। তখন ঐশীরা হয় করবে আত্মহনন- বা অপকর্ম। এই ভবিষ্যৎ আমরা কিনে দিচ্ছি ঐশীদের।
ঐশীর জন্য সত্যি আমার মন খারাপ। কারণ আমিও কিশোর বয়স থেকেই স্বাধীনচেতা। কিন্তু আমার বাসায় ছিল ভীষণ কড়াকড়ি। তারপরও জানি না কিভাবে দাপিয়ে বেড়িয়েছি খেলার মাঠ- বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। মিশেছি- সাদা মনের আলোকিত মানুষের সাথে। খুব কাছ থেকে দেখেছি- অন্ধকারের হাতছানি। কিন্তু আমার সময় ছিল না। কত কাজ!! বই পড়া- সংগঠক হওয়া- টিউশনি- গান- বন্ধু...নানান মানুষের সাথে মিশে নিজের ভালো টা বুঝতে পারা। ..না হয় আজকের কিশোরদের ব্যস্ত থাকার সুযোগটা করে দেই আমরা সবাই মিলে! যেন তারা অবসরে-বিষাদে নেশার সংস্পর্শে না আসে..যেন তারা পায় চিরচেনা কৈশর!
(বি:দ্র: ঐশীর সাজা শক্ত হওয়া খুব দরকার। আমি চাই আজকের বাবা মায়েরা ঐশীকে দিয়ে তাদের সন্তানদের চিনুক নতুন করে। যেন আর কারো সন্তানের হাতে বাবামায়ের মৃত্যু না হয়- যেন ঐ সন্তান শেষ জীবনে গ্লানীময় দিন যাপন না করে।)
আপা.. খুব ভালো লিখছ...
দেখ- পোলাপানের মাঝ থেকে যে ভদ্রতা- বিনয় লোপ পেয়েছে- এটা আমরা খুব কাছ থেকে দেখছি। বুঝতে পেরেছি। বিষয়টি কষ্টের। কারণ বিনয় একটি বিষয় যা একাধিক মানুষের মাঝে সম্পর্ক গড়ে তোলে। সেই সম্পর্কই ওদের সঠিক পথ দেখায়- তু্ই দেখেছিস আমি দেখেছি.. সেক্ষেত্রে বলা যায়- কিছু কিছু জায়গায় ওরা অনেকটাই আমাদের চেয়ে কম ভাগ্যবান। কিন্তু ছেলেমেয়েদের এই ব্যথর্তার দায় একা ওদের না- আমাদের সবার।
একমত
ঐশীদের এই অবস্থার জন্য দায়ী আমাদের নস্ট রাজনীতি। অশুভ ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদদের কারণেই আজ মাদক ব্যবসায়ীরা ধরাছোঁয়ার উর্ধে উঠে সমাজকে ধ্বংসের খেলায় মেতেছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এমন ঐশী আরও তৈরি হবে।
বিষয়গুলো একে অপরের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। এখন বাংলাদেশকে শিশু-কিশোর বান্ধব দেশ গড়ে তুলতে হবে সেটা যে করেই হোক। এই যে খেলার মাঠ নেই- এতে তো বাচ্চাদের হাত নেই - তাই না? রাজনীতি- সমাজ- অর্থনীতি- সব কিছুকে একটি আমব্রেলার নীচে এনে আলোচনা করতে হবে। দোষ দিয়ে সময় নষ্ট নয়- সমাধান বের করতে সময় ব্যয় করা বাঞ্ছণীয়। সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার তা হলো নৈতিকতার চর্চা। তাহলেই অনেকটুকুই সমাধান সম্ভব।
ভেবে পাই না কিভাবে এমন ঘটনা ঘটলো। দু:স্বপ্নও এমন হয় না। এমন আর কোন ঐশী তৈরী না হোক। বাবা-মায়েরা সচেতন হোক। ছেলেমেয়েদের বন্ধু হোক। ঐশী তো একদিনেই এমন হয়ে যায়নি। নিশ্চয়্ই অনেক সময় ধরেই চলেছে এমন বেপোরোয়া জীবনযাপন। তাই শুধু ঐশীকে দোষ দেওয়া অন্যায় হবে।
ভালো লিখেছেন। এমন করে ভাবছে না সবাই।
ঐশী একদিনে এমন বেপরোয়া হয়নি- এটা আমার অন্যতম পয়েন্ট। আমরা আমাদের বাচ্চাদের রাশিয়ান ডল মনে করি। যখন খুশি যেমনে খুশি তেমনে সাজানোর ইচ্ছা রাখি সবসময়। কিন্তু বাচ্চাটাকি রাশিয়ান ডল হতে চায়! কেউ কি ভেবেছেন- এখনকার বাচ্চাদের বিনোদনটা কোথায়!! বাচ্চারা বিনোদন খুঁজতে থাকে আর বেপরোয়া হতে থাকে।খুবই কষ্টের বিষয় আমরা আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে গিয়ে যান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে ফেলছি..
আমি কিন্তু ঐশী কে উদাহরন হিসাবে দেখতে নারাজ। এক্সেপশন ইজ নট এন এক্সাম্পল। এরকম হাজার হাজার ঐশী আছে, কিন্তু তারা কোনোনা কোনো ভাবে মানিয়ে নিচ্ছে।
হু, ব্যাপারটা এলার্মিং নিঃসন্দেহে, তারপরেও এইটাকে একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে দেখতেই আমি আগ্রহী।
বাকী আমাদের শৈশব কৈশোর সম্পর্কে যা বলছেন তাঁর সাথে একমত...
ঐশীর মতো হাজার হাজার কিশোর এখন সমাজে আছে। ঠিক একইভাবে জীবন যাপন করে বড়ভাই। আমার নিজের দেখা আছে। জানা আছে। তাদের বাবা মায়েরাই আধুনিকতার নামে কিছু "আরোপিত স্মার্টনেস" ওদের হাতে সঁপে দিয়েছে।
আর যারা ভালো- তারা অনেকটাই সুযোগের অভাবে ভালো।
বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখতে পারলে ভালো- কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না এটা একটি ওয়েক আপ কলও বটে। এখন দেখতে আপনার আশে পাশে - স্কুল বা কলেজে কতজনের মাঝে ঐশীরা লুকিয়ে আছে।
আমার কথাও এইটাই, যদিও বিচ্ছিন্ন কিন্তু ঘটনাটা এলার্মিং...
আমাদের সময়েও কিন্তু এত এত সময় কাটাবার উপকরণ থাকা সত্ত্বেও স্কুলের অনেক বন্ধুই মাদকাসক্ত ছিলো। কিন্তু ঐশীদের মতো এতটা বেপরোয়া হয়ে ওঠেনাই। তারপরেও মনে পরে পেপার টেপারে দেখতাম মাদকাসক্ত পুত্রের হাতে পিতা/মাতা প্রহৃত টাইপের খবর।
তবে সব কথার শেষ কথা হলো আমাদের সচেতন হতে হবে, সবার ভিতর সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে ...
খুব চিন্তার ব্যাপার।
এই বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে অনেক আগেই। এখন সময় যাবার আগেই ভেবে সমাধান বের করে ফেলতে হবে।
আমি এটা চাই না। মেয়েটার বয়স কত? এই বয়সে তার চিন্তা ভাবনা কিভাবেই বা এতটা ব্যাপ্তি পাবে? আর সেজন্যই তো সমাজে ১৮ বছরের নীচে সবাইকে নাবালক ঘোষনা করেছে। ভাবতে কষ্ট হয় যদি ৩৫ বছর পর্যন্ত ওর জুভিতে কাটাতে হয় তখন ওর জীবনের আর কীইবা মানে থাকবে?
ওর ভুলের জন্য তো পুরো সমাজটাই দায়ী, তাহলে এখন কেনো সমাজ দায় নেবে না?
ধরে নিলাম কাজটা ঐশী করেছে। ঐশী নাকি নিজেই বলেছে। ডিবির হেফাযতে থাকা ঐশী কি বলেছে বলে জানানো হচ্ছে সেটা ঐশী নিজে জানতে পারছে কিনা সেই ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে যদিও।
ঐশীর সাজা শক্ত কেন হওয়া দরকার? খেলার মাঠ খুবই গুরুত্বপুর্ণ এইরকম কোন বাক্য সারা জীবনে যারা ভেবেও দেখেনি তাদের হুশ ফেরানোর জন্য? দৃষ্টান্ত তৈরির জন্য হাতের কাছে পাওয়া গেছে বলে ওকে ঝুলিয়ে দিতে হবে? প্রতিটি জীবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওটা এভাবে "ব্যাবহার" করব না বলেই না সবাই মিলে সিন্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলাম। আর ওই বয়সের কোন মেয়েকে তো কখনই না।
চমতকার লেখাটার শেষে এসে ব্যাক্কেল হয়ে গেলাম।
ঐশী না, দায় তার বাবা মা'র
বাচ্চা কিভাবে নষ্ট হয় এর কোন সংগা নেই। যে নষ্ট হবার শুজোগ পাচ্ছে না সে আত্মহত্যা করছে। যারা বিপথে গেছে তাদের মাঝে কোন প্রতিক্রিয়াই পরেনি ঐশীর কাজ।
তারা বোধ বুদ্ধির ঊর্ধে।মজা করতে যেয়ে আসক্ত হয়। বন্ধু দেয় বন্ধু কে , চকলেট দেয় প্রথমদিন বা ঐরকম কিছু পরে দেয় মাদক। এভাবেই ক্লাশে শুরু। ভাল ছাত্র কে দেয় হিংসা থেকে। বাবা মা জানে না। যখন জানে তখন অসহায়। ক্লাশ থ্রি ফোরে শুরু। আর ফেরা যায় না। নিরাময় কেন্দ্রে কিছুদিন হয়ত ভাল থাকে কিন্তু আবারও যে কে সেই। প্রতি মাসে নিরাময় কেন্দ্রে প্রায় লাখটাকা লাগে যা সবার পক্ষে দীর্ঘ দিন টানা সম্ভব নয়।
মন্তব্য করুন