আশেপাশের ঘুরাঘুরি (শান্তিনিকেতন)
১।
ভারত ভ্রমণ নিয়ে পোস্ট দিলাম অথচ ববিতার কথাই লিখলাম না। এই কারণে মাসুম ভাইও আমার পোস্টে কমেন্ট করলো না। আবার ব্লগ জনতারও দাবী ববিতা কাহিনি শুনতে চায়। তাই আজকে আগে ববিতার কথা দিয়েই শুরু করি।
যদিও তেমন বিশেষ কিছু ঘটে নাই সেদিন আমাদের সাথে ববিতার মোলাকাতে। তবে আমাদের জায়গায় মাসুম ভাই থাকলে বিশেষ কিছু ঘটতেই পারতো। আর কিছু না হোক অন্তত তারা এক কাপ কফি খাইতে যাইতে পারতেন। কিন্তু ববিতার সাথে দেখা হলো আমাদের। নিউমার্কেটে একটা শপিং মল আছে ট্রেজার আইল্যান্ড নামে। ওরা এসি মার্কেটও বলে। সেখানে আমরা ঘুরছি, জিনিসপত্র দেখছি। আমার পাশ থেকে স্কার্ট পড়া, মোটাসোটা এক মহিলা হেঁটে গেলো। ‘পরিচিত কি?’ মনে হতেই ঘুরে তাকালাম। ততক্ষণে তিনি আর একটা দোকানে ঢুকেছেন। এক পলকের দেখায় সুমি আপুকে বললাম ‘ববিতা না?’ সুমি আপু শিউর হওয়ার জন্য দোকানের সামনে যেতেই উনি সরাসরি তাকালো আমাদের দিকে। আমরা হেসে ফেলতেই ববিতাও খুব আন্তরিক হাসি হেসে জিজ্ঞাসা করল কবে গেছি ইত্যাদি। ববিতাকে ছেড়ে দুই দোকান সামনে আসতেই দেখলাম চম্পা, শাড়ি কিনছেন। সুমি আপু ববিতার সাথে ছবি তোলার ইচ্ছা পোষণ করলেও আমি তাকে নিরুৎসাহিত করলাম। কারণ মেক-আপ ছাড়া ববিতা যতই আন্তরিক ভাবে কথা বলুক না কেন ছবি তুলতে গেলে বিরক্ত হবে বোঝাই যায়।
২।
সবাই শান্তিনিকেতন নিয়েও পোস্ট, ছবি দিতে বলছে। কিন্তু আমি জানি আমি তেমন কিছুই গুছিয়ে লিখতে পারবো না। কারণ আমার গোল্ডফিসের মেমরি, তেমন কিছুই মনে রাখি না। আর ভালো ক্যামেরা নাই, ফোটোগ্রাফির কোনো সেন্স নাই তাই যুতসই কোনো ছবিও নাই। তারচেয়েও বড় কথা অধিকাংশ জায়গায় ছবি তোলা নিষেধ, ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া নিষেধ।
যাই হোক শান্তি নিকেতন গেলাম আমরা একদিনের জন্য। হাওড়া থেকে ভোর ছয়টার গণদেবতা এক্সপ্রেসে বোলপুর স্টেশন। স্টেশন থেকে বের হতেই রিকশা আর ট্যাক্সি ড্রাইভারদের প্রতিযোগিতা কে নিবে কার গাড়িতে। ঠিক হল আমরা রিকশায় ঘুরবো। তার আগে কিছু খাওয়া দরকার। সবাই নাশতা করলাম লুচি-আলুর তরকারি। অসাধারণ লাগে আমার এই লুচি-আলুর তরকারিটা।
খাওয়া পর্ব শেষ করে প্রথমেই গেলাম আমরা প্রফেসর সেলিম মুন্সীর জাদুঘর ‘নীহারিকা আর্ট গ্যালারী’। স্যারের স্ত্রীর নামে নাম জাদুঘরের। তিনি নিজেই আমাদের ঘুরিয়ে দেখালেন অসম্ভব সুন্দর সব ছবি। এখানে ছবি তোলা বারণ ছিল। তাই শুধু দেখেই আসলাম স্যারের চোখে রবীন্দনাথের আমলের সেই সব সময়ের ছবি।
তারপর রিকশায় ঘুরে কিছু জায়গা দেখলাম যেগুলোর কোনোটাতেই ছবি তোলার এমনকি ভেতরে ঢোকার অনুমতি নাই। এই যেমন - ছাতিমতলা, তালধওজা, একটা স্কুল - বাচ্চারা গাছের নিচে বসে ক্লাস করছে, গ্লাস টেম্পল। গ্লাস টেম্পল পূজার জন্য বিশেষ বিশেষ দিনে খুলে দেয়া হয়। বাইরে থেকেই কিছু ছবি তুললাম। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও এখানে ছবি গুলো দিতে পারলাম না। তাই ফেসবুকের লিংকটা দিলাম।
এরপর গেলাম আমরা উত্তরায়ণ কমপ্লেক্স। মোট পাঁচটি বাড়ি নিয়ে এই কমপ্লেক্স। এখানেও ছবি তোলা নিষেধ। পাঁচ রুপীর টিকিট দিয়ে ক্যামেরা জমা দিতে হলো। এত সুন্দর সাজানো, গুছানো, পরিপাটি কমপ্লেক্স, ছবি তুলতে পারবো না তাই মনটা খুবই খারাপ হলো। তাও কিছু করার নাই। কমপ্লেক্সে প্রতিটা বাড়ি, প্রতিটা কোণা কি বিশেষ যত্নে থাকে, নিয়মিত পরিচর্যায় থাকে!!
কমপ্লেক্সের প্রতিটা বাড়িতে ঢোকার মুখেই লেখা আছে কবে, কখন, কি কারণে রবীন্দ্রনাথ সেই বাড়ি গুলো তৈরী করেছিলেন। প্রথমে বলি ‘উদয়ন’ বাড়িটার কথা। এর নকশা তৈরীতে রবীন্দ্রনাথ পুত্র রথীন্দ্রনাথের বিশেষ ভূমিকা আছে বলা হয়। এখন এটাতে জাদুঘরের মত করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের ব্যবহারের জিনিসপত্র, নোবেল পুরস্কারের রেপ্লিকা, বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া উপহার, বাদ্যযন্ত্র, ব্যবহৃত পার্কার কলম সহ অনেক কিছুই আছে সেখানে।
তারপরের বাড়ী ‘শ্যামলী’। ছাদসহ সম্পূর্ণ মাটির তৈরী এই বাড়ীটাতে আমরা ঢুকতে পারি নাই। কারণ মেরামত কাজ চলছে সেটার।
শ্যামলী বাড়ীতে থাকাকালীন সময় রবীন্দ্রনাথের মনে হয় তিনি আকাশ দেখতে দেখতে লিখবেন। তাই ছাদহীন, খোলা বারান্দার বাড়ি বানানো হয় 'সেঁজুতি' নামে। পরবর্তীতে এই সেঁজুতী বাড়ির নাম রাখা হয় 'পুনশ্চ'।
পুনশ্চ বাড়িতে কিছুদিন থাকার পর আবার হাঁপিয়ে উঠেন তিনি মাটির কাছাকাছি যাবার জন্য। বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে বার বার উঠানামা করা কষ্ট। তাই নতুন বাড়ি বানানো হলো 'কোনার্ক'। কোনার্কের সামনে একটা শিমুল ফুলের গাছ আছে। শিমুল গাছটার গায়ে বেয়ে উঠেছে মাধবীলতা। কোনার্ক বাড়ির গার্ড বললেন, ‘এই শিমুল গাছ রবি ঠাকুরের হাতে লাগানো এবং তাঁর নিজ হাতে যত্ন করা। তিনি তাঁর কবিতায়ও উল্লেখ করেছেন এই গাছের কথা। এবং গাছের মৌচাকের কথা। আশ্চর্য হলেও সত্যি প্রতি বছর এই গাছে একটি হলেও মৌচাক থাকে’।
উত্তরায়ণ কমপ্লেক্সে রবি ঠাকুরের সব শেষ বাড়ি ‘উদীচী’। এই বাড়ি সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে পারি নাই।
তারপর দেখলাম রবি ঠাকুরের ব্যবহৃত গাড়ি। ছবিটা নেট থেকে নিলাম। গাড়ির ছবিও তোলা নিষেধ ছিল।
তারপর গেলাম আমরা বিশ্ব ভারতী। সেখানেও নাকি ছবি তুলতে মানা তারপরেও আমরা কিছু তুললাম। যেমন - গাছ তলার ক্লাস রুম, ছেলেদের হোস্টেল, অফিস বিল্ডিং, ক্যাম্পাসের আরো কিছু ছবি। মেয়েদের হোস্টেল ভিতরের দিকে, সেদিকে আমরা যাই নাই।
ফিরতি ট্রেন ছিল আমাদের সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। স্টেশনে অনেক সুন্দর ফুলের বাগান। আরভিনের শখ হলো ফুলের সাথে সে ছবি তুলবে। সেখানেও নাকি ছবি তোলা নিষেধ
ট্রেন আসলো। যথা সময়ে ট্রেন ছাড়লো। ট্রেনে এক চা-কফি বিক্রেতা আমারা বাংলাদেশি শুনেই সাথে সাথে তার মানিব্যাগ থেকে বের করল একটা একশ টাকার নোট। আর আশেপাশের মানুষদের বলল, ‘বাংলাদেশের সুজনসখী সিনেমা দেকেচেন! সুজন সখী সিনেমার নায়িকা এসেছিল এই তারাপীঠে শ্যুটিং করতে। খুশী হয়ে এই টাকাটা দিয়েছে আমাকে। আমি যত্ন করে রেখে দিয়েছি। রেখেই দিবো টাকাটা'।
গতকাল থেকে অনেক চেষ্টা করেও ছবি গুলো এখানে দিতে পারলাম না বলে দুঃখিত। সব শেষে বলি, একটা কষ্ট নিয়ে শেষ হয়েছে এই ভ্রমণ। ফেরার সময় ট্রেনে একজন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, 'কাজী নজরুল ইসলামের বাড়ীও কি আপনাদের ওখানে এমন করে রাখা আছে'??
ছবি নাই
লেখা ভালো হইছে!
ববিতা চম্পারা টিভিতে পুরানা সিনেমা ভালো।
ছবি দিতে অনেক চেষ্টা করলাম। আমার নেট লাইনের প্রবলেমের জন্য পারলাম না। তাই ফেসবুকের লিঙ্ক দিয়ে দিলাম। পড়ার জন্য ধন্যবাদ
ববিতাপ্রেমী মাসুম ভাইর জন্য একটা মোটা ববিতার ছবি তুলে নিয়ে আসতা। আমরা দেখতাম উনার স্বপ্নের নায়িকা কেমন
আপু মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা নাকি সমান। তাই আর কি ছবি তুললাম না
আপু রাগ করলেন কেন? ভুল করলাম কিছু?
এই হচ্ছে আমার ববিতা
ছবি দেখে ফেসবুকে শতবার দেখা একটা লাইন মনে পড়ল -
মাইরা লা আমারে মাইরা লা
লোকজন কি ব্যাপক ঘুরাঘুরি করে!
লেখা ও শান্তিনিকেতনের ছবিগুলো ভাল লেগেছে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আর কিছু জীবনে ব্যাপক না হলেও ঘুরাঘুরিটা ব্যাপক হয় নিঃসন্দেহে। দোয়া রাখবেন এই ঘুরাঘুরি যেন জারি থাকে
ভারত গিয়েছি ।কিন্তু শান্তিনিকেতনে যাওয়া হয়নি।.।.। ভাল লাগল লিখাটা পরে।।
লেখা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
শান্তিনিকেতন যদি যেতে চান তবে পৌষ মেলা, হোলি বা কোনো উৎসবের সময় দেখে যাবেন। আরো বেশি ভালো লাগবে। অবশ্য ঐ সময়ে অনেক ভীড়ও হয়। ভীড় এড়াতে চাইলে উৎসব/পূজা/পার্বণ বাদ দেয়াই ভালো।
ববিতার সাথে ছবি না তোলাটা খুবই খুবই অন্যায় হয়েছে
শান্তিনিকেতন ভ্রমন বৃত্তান্ত ভাল হয়েছে
ধন্যবাদ
ইয়ে মানে সত্যি সত্যি স্কাট পরা ছিল?
সত্যি সত্যি
লেখা ভালো হয়েছে। অভিনন্দন। তবে প্রাসঙ্গিক ছবি থাকলে আরো ভালো লাগতো।
(এ ব্লগে ছবি আপলোড করার 'আলাদা' নিয়মকানুন আছে নাকি! আমি ছবি আপলোড করতে পারছি না)!
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ছবি এখানে দিতে পারলাম না তাই ফেসবুকের লিঙ্কটা পোস্টে দিয়ে দিয়েছি
ববিতা প্রসঙ্গে কেবল মাসুম ভাইয়ের নাম উল্লেখ করার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে গেলাম। ববিতাকে নিয়ে আমার কালজয়ী ফেসবুক স্ট্যাটাস ও কমেন্টসমূহ কপিপেস্ট করে মাসুম ভাই ববিতাপ্রেমী হিসেবে খ্যাতি পেলেন, আর আমার কথা সবাই ভুলে গেলেন!
ছোট মুখে বড় কথা বলি - যুগে যুগে এই দেশে এইভাবেই সবকিছু অন্যের দখলে চলে গেছে কামাল ভাই দুঃখ কইরেন না। তাই তো রিচার্ড বাক বলে গেছেন -
'If you love someone, set them free. If they come back they're yours; if they don't they never were.”
ববিতাও ফিরে আসবে
বয়সে মাসুম ভাই আর কামাল ভাইয়ের ছোট হলেও ববিতার আমিও অনেক বড় ফ্যান। আহারে ''আলোর মিছিল'' এর ববিতা (আমার কইতে পারলাম না উপরমহলের চাপের কারনে )
আমার কলকাতা, জলপাইগুড়ি আর শিলিগুরিতে যাওয়ার অনেক দিনের ইচ্ছা। জানিনা এই জনমে সেই স্বাধ পুর্ন হবে না। আর ততোদিন আপনারাই ভরসাঁ।
লাইনে দাঁড়ান
অপেক্ষায় থাকেন
আহ ববিতা! সেই রকম একটা ড্রেস পড়া ছিল। লেখা সুন্দর হয়েছে।
মন্তব্য করুন