ক্লান্ত ক্লারিনেট
কালকের সন্ধ্যাটা ভালো শোরগোল করেছিলাম আমরা। অবশ্য দিনের শুরু থেকেই বিভিন্ন আয়োজন ছিল। বাচ্চাদের জন্য আনন্দ শোভাযাত্রা, সেই সাথে সামনে পিছনে গাড়ি আর মোটরসাইকেল। কিন্তু রাস্তায় কেউ হর্ন বাজাচ্ছিলো না, যাতে বাচ্চাদের কোলাহল এলাকাবাসী শুনতে পায়। এই ছিল শিশুদের জন্য বড়দের সেদিনকার আয়োজনের শুরুটা।
এদিকে আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। সকাল বেলায় বেরিয়েছিলাম আমার রুম থেকে। কিন্তু পথেই দু’চারজনের সাথে দেখা হয়ে গেল- যারা আমার মত বেরিয়ে পড়েছিলো অযথা। আমরা একসাথে ব্রেকফাস্টে ঢুকলাম। রেস্তোরাঁর পচা পাউরুটি আর ডোবার জলের মত লাল চা ফেলে আমি আর মুন শোভাযাত্রার একটা গাড়ির মাস্তুলে ঝুলে পড়লাম।
এলাকার শেষ পর্যন্ত যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে গেল, মানুষজন ফুল, ফল আর হাল্কা পানীয় ছুঁড়ে মারছিল শোভাযাত্রার দিকে- ওরা শোভাযাত্রাকে ক্লান্ত হতে দিতে চায় না। দিনব্যাপী পথকে মঞ্চ করে উৎসব হয়েছিলো। ফলে পান আর আহার হচ্ছিলো শুরু থেকেই। আমাদের বেশ লাগছিলো।
সন্ধায় বিশাল টাউন হলটায় পুরো শোভাযাত্রাটা ঢুকে গেল। এবং ডিনারের জন্য সবাই বসে গেল। আমরা কয়েকজন বন্ধু সামনের দিকটাতে বসেছিলাম- কারন কড়া পানীয়গুলো ওদিক থেকেই ছাড়া হচ্ছিলো। বলা বাহুল্য- গীতবাদ্য শুরু হবার কিছুক্ষণের মধ্যে কাঠের পিপেতে বয়স হওয়া নিখুঁত স্বাদের পানীয় সবটা শেষ হয়ে গেল। সবাই একটু ব্যতিব্যস্ত হয়ে গেল যখন পানীয় শেষ হবার বিষয়টা জানাজানি হয়ে গেল। কিন্তু আধা ঘণ্টা পরে সবাই আবার চাঙ্গা হয়ে উঠল- যখন আমার মা মঞ্চের সামনে দাড়িয়ে এক বোতল কর্কশ স্বাদের রাম উঁচু করে ধরে বলল- দুশ্চিন্তার কোন কারন নেই বন্ধুগণ, বাকি রাতের জন্য পর্যাপ্ত রামের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মুহূর্তেই হলজুড়ে আবার নৃত্য, গীতবাদ্য আর আবালবৃদ্ধবনিতাদের শোরগোল শুরু হয়ে গেল। একটা পর্যায়ে আমাদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বৃদ্ধ গলার সমবেত চিৎকার শোনা গেল- গাঞ্জা কই? গাঞ্জা কই?
পিছনে ফিরে মুন ওদের দিকে কয়েকটা সবুজ গাঁজার জয়েন্ট ছুঁড়ে দিল। মঞ্চে শিশুরা চিৎকার করে গান গাচ্ছিল, কবিতা করছিলো আর হলজুড়ে ইচ্ছেমত দৌড়ে বেড়াচ্ছিল।
আমার মনে পড়ে গেল যে কাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু এই উৎসবে আমার উপস্থিতি মাকে খুব একটা ভাবাচ্ছে না বলে আমিও খুব একটা ভাবছিলাম না। কিন্তু মনের ভিতরে আবেগের একটা নিম্নমুখী যাত্রার শুরু হতেই হল, পরীক্ষার আগে যেরকম হয়। টাউনহলের বিশুদ্ধ আনন্দের খোশ আমেজকে খেদিয়ে দিয়ে আত্ম-সম্পর্কিত বিষয়বস্তু ভাবনার যায়গাটুকু দখল করে নিল। তাই আমি একটু হাটার জন্য বেরলাম। বাইরে খুব একটা মানুষ নেই, শুধু আমাদের শোভাযাত্রার মোটরযান, রাস্তার কোমল আলো আর দুই আঙুলের নড়াচড়ার ভিতর থেকে ঊর্ধ্বগামী ধোঁয়ার কুণ্ডলী। এ রকম দৃশ্যে ওর সাথে আমার দেখা হয়ে গেল। যা আগে কখনো হয় নি। আমার বিশ্বাস হল না যে সারাদিন একই স্রোতের উচ্ছ্বাসে ভেজার পর ভাটির মৌনতায় এসে আমি ওকে দেখতে পেলাম।
এভাবে দেখা হলে আমার খুব শোভন ভাবে স্বাগত জানানোর কথা ছিল। কিন্তু কাছে গিয়ে কোনমতে মৃদুহেসে আমি ওর হাত ধরে বললাম- আমরা কি কিছুক্ষণ একসাথে হাঁটতে পারি? মেয়েটার কালো চোখ, ঝাঁকড়া চুল আর শাড়িতে জড়ানো তনু কেঁপে উঠলো। কিন্তু, আমার আরও শোভন ভাবে ওকে স্বাগত জানাবার কথা ছিল।
ভাল লেগেছে
Thank You!
চমৎকার।
জানি না কেন,
আপনার লেখায় একটা কিছু আছে
যা আমার খুব প্রিয় একজন লেখক
মীর ভাই কে মনে পড়িয়ে দেয়।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন