আমার মন খারাপের সম্ভাব্য কারণগুলি (১)
কয়েকটি অধ্যায়ে যখন কোনকিছু লেখা হয় তখন সাধারণত আগে সূচনা পরে উপসংহার টানা হয়। যেমন গল্প লেখার ক্ষেত্রে প্রথমে কাহিনীর অবতারণ করানো হয়, চরিত্রগুলোর সাথে পরিচয় করানো হয়... পরের অধ্যায়গুলোতে কাহিনীর লতা-পাতা, শাখা-প্রশাখা গঁজায়... কাহিনি বিকশিত হতে থাকে এবং একসময় পরিনতি পায়। পরিনতিটা কখনো অসমাপ্ত হয়, আবার কখনো সমাপ্ত হয় করুনভাবে বা আনন্দের ঘনঘটায়।
আমার এই লেখার উদ্দেশ্য হলো আমার মন খারাপের সম্ভাব্য কারণগুলো ব্যাখ্যা করা। কিন্তু সত্যি বলতে কি- আমার মন খারাপের কারণগুলো এতোটাই জটিল যে আমি নিজেই জানিনা সুনির্দিষ্ট ভাবে... সবকিছু কেমন যেন জটপাকানো। আমি এই ব্যাপারে খুব হতাশ। কিন্তু তারপরও আশার আলো এই ভেবে জ্বালিয়ে রাখা যায় যে, অনেকসময় জটিল বিষয়ের সমাধান হয় বেশ সোজাসাপ্টা উপায়ে, যেই উপায়টা হয়ত আদতেও সেই সমস্যার মূল সমাধান না। আমার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তা কিনা জানি না, তবে কিছু সহজ সমাধান কে সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে ধরে নিয়ে এগুতে পারি।
গতকাল আমি খুব অগোছালো হয়ে আমার রাতের খাবার খাচ্ছিলাম আর আমার রুমমেট, মনোবিজ্ঞানে মাস্টার্স পড়ুয়া অরকেদিয়ার সাথে কথা বলছিলাম। তাকে আমি খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলাম যে তুমি ভার্সিটিতে কিসের উপর কাউন্সেলিং করো। সে তার রাতের খাবার রান্না করতে করতে আমাকে জানালো যে সে টাইম ম্যানেজমেন্ট এবং সেলফ অরগানাইজ হতে ছাত্রছাত্রীদের পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে। আমার চোখ হঠাৎ যেন জ্বলে উঠলো, গলার স্বরটাও খানিকটা যেন চড়ে গেলো এবং আমি তাকে বলে ফেললাম- তাহলে আমিও তো তোমার অফিসে যেতে পারি এবং পরামর্শ করতে পারি। তখন সে আমাকে বললো যে আমাদের অফিসটা তো শুধুমাত্র শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং শিক্ষা প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের জন্য, তবে আমি অফিসের বাইরে তোমাকে সাহায্য করতে পারি। একথা বলেই সে চুলা থেকে সরে এসে আমার পাশের চেয়ারটা টেনে আমার পাশে বসে পড়লো। আমি তাকে বললাম যে আমি একটা সময় খুব ফোকাসড ছিলাম এবং খুব গোছানো ছিলাম... কিন্তু আমি যখন ভার্সিটিতে ভর্তি হই, তখন থেকেই আমি আস্তে আস্তে ডি-ফোকাসড হতে থাকি এবং অগোছালো হয়ে যেতে থাকি। আমার কিছু মনে থাকতে চায়না, সব ভুলে যাই। আমাকে সে জিজ্ঞেস করলো যে আমি কোন ডেইলি অরগানাইজার মেইন্টেইন করি কিনা। আমি বললাম যে আমি আগের দিন লিখে রাখি পরের দিন আমাকে কি কি করতে হবে, এবং অধিকাংশ দিনই আমি দিনের শেষে এসে দেখি আমার সেই অরগানাইজার অনুযায়ী প্রায় কোন কাজই আমার করা হয়নি। যেমন আমি লিখে রাখি যে আমি দুই ক্লাসের মাঝখানের সময়টাতে এই বিষয়টা পড়ব। কিন্তু আমি অধিকাংশ সময়ই তা করতে পারিনা, খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে যাই। আমার কথা শোনার পর সে আমার ডেইলি রুটিনটা দেখতে চাইলো এবং দেখে জানালো যে আমি কিভাবে বিরতি দিয়ে দিয়ে আমার পড়াশোনার সময়গুলোকে ভাগ করতে পারি। সে আমাকে আরো পরামর্শ দিলো আমার অফিসে পড়াশোনা না করে ঐ নির্ধারিত সময়গুলোতে লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়তে এবং আমাকে লাইব্রেরির দিনগুলো একদিন বিরতি দিয়ে দিয়ে ফেলতে বললো। আমার তার পরামর্শগুলো খুব ভালো লাগলো এবং আমি তাকে বললাম যে আমি সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করবো আর তাকে আপডেট জানাবো। এভাবে আমি আমার রাতের খাবারটা শেষ করলাম।
আমি ধারনা করে নিচ্ছি আমার এই খারাপ লাগার পেছনে আমার বিক্ষিপ্ততা এবং অগোছালো হয়ে যাওয়া একটা সম্ভাব্য কারন হতে পারে এবং এটি কাটিয়ে উঠতে অরকেদিয়ার দেওয়া পরামর্শ একটা প্রস্তাবিত সমাধানের নির্দেশনা দিচ্ছে। আমি এই প্রস্তাবিত সমাধান প্রয়োগ করে পরীক্ষা করে দেখতে আগ্রহী যে এটি সত্যি আমার মন খারাপের অজানা সমস্যাগুলোর অজানা সমাধানের একটা কিনা। যদি বুঝতে পারি এই প্রস্তাবিত সমাধান প্রয়োগের বিপরীতে আমার আগের চেয়ে মন খারাপ কম লাগছে, তাহলে সনাক্ত করতে পারবো যে আমার মন খারাপের কারনগুলোর ভেতরে আমার এই বিক্ষিপ্ততা অন্যতম কারন ছিলো।
(২৮ অক্টোবর, ২০১৪)
লেখার ধরন ভাল্লাগছে। লেখা চলুক, মন খারাপের দিন শেষ হয়ে যাক।
অনেক ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য আমার লেখার ধরন ভালো লেগেছে জেনে খুব আনন্দিত।
মন ভালো হয়ে যাক।।
অনেক ধন্যবাদ। শুভ রাত্রি
ব্যাক্তিগত ভাবে অগোছালো কি না জানি না কিন্তু আপনার লেখনী অনেক গোছালো। ভালো লাগা জানবেন।
অনেক কষ্ট হয় গুছিয়ে লিখতে, একটা ছোট লেখা লিখতেও অনেক সময় চলে যায়। অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য। ভালো থাকবেন।
লেখা চলুক, মন খারাপের দিন শেষ হয়ে যাক।
শীতকাল মানেই মন খারাপের দিন আমার কাছে
মন্তব্য করুন