গল্প: গরুচোর কাশেমের গল্প
কাশেমের গরুর গোশত্ খুব পছন্দ। প্রতিরাতে তার গো গোশত্ চা-ই, চাই। বউরে সবসময় বলে রাখে, প্রতি রাইতে আমারে গরুর গোশত্ দিবা। বউ প্রায়ই বলে, আপনে গরু খাওন বন্ধ দেন। গরু খান আর আমার উপর অত্যাচার করেন।
কাশেম মুচকি হাসে। বউরে জড়িয়ে ধরে। গালে চুমু খায়। তারপর বলে, তুমিই তো আমার পেয়ারে গাই।
বউ আল্লাদের সুরে সুরে বলে, উউউ... আপনে আমারে গাই বলতে পারলেন?
দুজনে এরপর ভালোবাসাবাসি করা শুরু করে। দুজনের পেয়ার বেশ। জীবনের বড় সময় দুজন একসঙ্গেই পার করে দিয়েছেন। সন্তান আছে দুইজন। একজন সৌদি থাকে, আরেকজন পাকিস্তান।
দুইজনই পুত্র। মাশাল্লাহ দিলে দিনের পথেই আছে। সৌদিতে আল্লাহর দরবারে ইবাদত বন্দেগী করে। আর কাজ করে। কিসের কাজ করে তা অবশ্য কাশেম বলতে পারবে না। কিংবা এ সংক্রান্ত তথ্য জানলেও কাশেম কখনও প্রকাশ্যে কিছুই বলেনি। তাই আমরাও জানতে পারি না কাশেমের বড় পুত্র কুদ্দুস মোল্লা সৌদিতে কি করে।
তবে পাকিস্তানে যে পুত্র থাকে তার বিষয়ে কাশেম গর্ব করে বলে, আমার ছেলে পাকিস্তানের বড় এক মাদ্রাসার শিক্ষক। কুরআন শিক্ষাকে আগায়া নিতে ছোট পুত্র কলিম মোল্লা চেষ্টা করতেছেন। তবে কলিমকে নিয়ে কাদের মাঝে মাঝে বড়ই চিন্তায় মগ্ন হন। পাকিস্তানের যে অবস্থা! আজ বোমা তো কাল গুলি।
এসব নিয়ে ফোনে প্রায়ই তিনি কাঁদেন। আর বলেন, এই শালা আমেরিকার গুষ্টি পাকিস্তানটারে ধ্বংস কইরা দিতেছে। বাবা তুমি আল্লাহর রাস্তায় থাকো। তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাইখো। পাঁচওয়াক্ত নামায পইড়ো।
নামাযের বিষয়ে কাশেমের বিশেষ যতœ আছে। শুধু নামায না, ধর্মীয় যে কোনো ইস্যুতে কাদের সবার সামনের সারিতে। এলাকার হেন কোনো মসজিদ নাই যেখানে কাশেম অর্থ সাহায্য দেন নাই। কাশেম প্রায়ই মসজিদে গিয়ে বলেন, আমি গরীব মানুষ। আল্লাহপাক যা দান করেছেন তা নিজের কাছে রেখে কি করবো। তাই মানুষের খেদমত করে যেতে চাই। সম্পদ দিয়া হবে কি? মৃত্যুর পর তো সম্পদ কবরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না।
স্ত্রীর নামায পড়া নিয়ে প্রায় তিনি উত্তেজিত হইয়া পড়েন। প্রায়ই তিনি স্ত্রীর সঙ্গে ঘুমান না। কারণ, স্ত্রী নামায পড়তে চায় না। তার সুন্দরী স্ত্রী রাবেয়া খাতুন টিভিতে স্টারপ্লাসে সিরিয়াল দেখেন। দেখতে দেখতে সময় পার হয়ে যায়। এই ফাঁকে নামাযের ওয়াক্তও পার হয়ে যায়। এসব নিয়ে কাদেরের মাথায় রক্ত জমাট হয়ে যায়। তখন বলেন, ইন্ডিয়ার মালাউনগুলা আমার বউটারেও বেশ্যা বানায়া দিল।
২.
কাশেমের গরু প্রীতি নিয়া শুরুতেই বলছিলাম। গরু কাদেরের প্রিয় প্রাণী। গরু প্রিয় তখন থেকে যখন তার পেশা ছিল গরু চুরি। কাশেম প্রায়ই ফিসফিস করে বলে, ছিলাম গরুচোর। হইলাম কাশেম মোল্লা।
মাঝে মাঝে কাশেমের খাশ চামচা ইফতেখার মাওলা বলে ওঠে, হুজুর বেয়াদবি মাফ। মাঝখানে একটা উপাধী বাদ পড়েছে।
কাশেম মোল্লা গম্ভীর হইয়া বলেন, বলো, কি বাদ পড়লো?
খুক খুক কাশি দিয়ে ইফতেখার মাওলা বলেন, হুজুর মাঝখান থেকে কসাই বাদ পড়ছে।
কাশেমের মাথায় আবারও রক্ত জমাট হয়। শরীরের ঘাম বের হয়। চিৎকার কইরা বলে, খানকির পুত। কিসের কসাই? কসাইয়ের দেখছস কি?
ইফতেখার মাওলা শান্ত মানুষ। তার কাজ চামচামি করা। জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর করা। হুজুরের খেদমত করা। কাশেম ‘কসাই’ নাকি ‘মোল্লা’ এগুলা নিয়ে মাথা ব্যথার দরকার নেই। তাই সে চুপ করে থাকে।
তবে ইফতেখারকে খুবই পছন্দ করেন কাশেম মোল্লা। কারণ যে কোনো প্রয়োজনে ইফতেখার তার পাশে থাকে। সাহায্য করার জন্য ইফতেখার সদা প্রস্তুত। এই যে কিছুদিন আগের ঘটনা। অস্থির হয়ে ইফতেখারকে ডেকে পাঠালো কাশেম। ইফতেখার দৌড়ে হুজুরের সামনে হাজির।
কাশেম বলছে, ইফতেখার। মনটা আজ অশান্ত। কিছু তো করা লাগবো।
ইফতেখার উত্তরে বলে, হুজুর। কি লাগবো বলেন। সিডি নাকি ...
- না না। সিডি দিয়া কাজ হবে না।
এরপর ইফতেখার পাঞ্জাবীর পটেক থেকে মোবাইল বের করে। মোবাইলে আলাপ শেষ করে। ঘণ্টাখানেক পর বোরকা পড়া নারীর আগমন হয়। এরপরের ঘটনা ইফতেখার কখনও কাউকে বলেনি।
৩.
কাশেম একবার গোয়াল ঘরে ঢুকলো। উদ্দেশ্য গরু চুরি। দীর্ঘক্ষণ গরুর গলায় সে হাত বুলাচ্ছে। গরুকে ভাও করছে। আদর করে অবুঝ পশুকে ভাও করা কঠিন। মানুষকে ভাও করা সহজ। গরু বারবার শিং নাড়ে।
প্রায় ফজরের আযান দেবে এমন সময় গরুর মুখটা চাইপা ধরলো কাশেম। গরু যাতে কোনো শব্দ না করতে পারে। কিন্তু গরু শুরু করলো লাফালাফি। খুরের খট খট আওয়াজ কাশেম কোনোভাবেই সামাল দিতে পারলো না। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘরের সব মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে হাজির। বেচারা খেল ধরা। শক্ত পাটের দড়ি দিয়ে বান্দা হইল কাশেমকে। এটা তার জন্য নতুন কিছু না। প্রায়ই গরু চুরি করতে গিয়া ধরা খেতে হয়েছে। মাইর খাইতে খাইতে শরীর চামড়া শুয়োরের চেয়েও শক্ত হয়ে গেছে। তারপরও জনতার মাইর বইলা কথা!! গভীর সংকোচ আর ভয় নিয়ে কাশেম মাথা নিচু করে কাঁদছে। তাকে কিছুই করলো না ঘরের মালিক রহিম মিয়া। সে নিতান্তই ভদ্র। তাই গ্রামবাসীর কাছেই কাদেরের বিচারের ভার ছেড়ে দেওয়া হলো।
সকাল নাগাদ গ্রামের সব মুরুব্বি এসে হাজির। কাশেমকে কে কি প্রশ্ন করবে? সবাই জানে কাশেম গরু চোর। তবে সে এ গ্রামের লোক না। দুই গ্রাম পরেই কাশেমের বসবাস। তারপরও এখানে যখনই গরু চুরি হয় তখনই দুই গ্রাম পর্যন্ত খবর চলে যায়- কাশেম চোর আইছিল রাইতে। গরুডা নিয়া গেছে।
এই গল্প মুখে মুখে বদলাতে বদলাতে একসময় নতুন গল্প হয়ে যায়। নতুন গল্পে কাশেম ডাকাতে রূপ নেয়। তখন সবাই বলে, কাশেম রাতে দাও নিয়া ঘরে ঢুকছিল। তারপর ঘরের সবাইরে বাইন্দা গরু নিয়া গেছে।
এ বানানো গল্প কাশেমের পছন্দ। সে কখনও এ গল্পের প্রতিবাদ করেনা। বরং এটি তার ভবিষ্যৎ চুরির জন্য ভালো বলেই বিবেচিত হয়। তার সঙ্গে দাও থাকে। এ ধারণা থাকলে মানুষ তাকে ভয় পাবে। কাশেম মানুষকে ভয় দেখাতে পারে না। কিন্তু সে চায় মানুষ তাকে ভয় পাক। ভয় ছাড়া এ দুনিয়াতে কিছুই পাওয়া যায় না। এটা সবাই বোঝে।
যাইহোক, কাশেমকে এবার বলা হলো, সে যা চায় তার সঙ্গে তাই হবে।
কাশেম পড়ে বিপাকে। সে শুধু কান্দে। হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে পারেনা। কারণ, হাত তো দড়ি দিয়া বাঁধা। তাও সে কান্দে আর বলে, আমারে ক্ষমা কইরা দেন। আর জীবনেও গরু চুরি করুম না।
এলাকার সবার বড় মুরুব্বি কাচু দাদা। তিনি কাশেমরে বলেন, হারামজাদা এই নিয়া কয়বার এই কথা কইছস?
কাশেমের উত্তর নাই। কথা ঠিক। শ’খানেকবার সে এই কথা বলছে। তারপরও ক্ষমা মুসলমান চাইতেই পারে। ক্ষমা চাইলে আল্লাহপাক খুশী হয়। ক্ষমা করলেও আল্লাহপাক খুশী হয়। কাশেম আল্লাহপাকরে খুশী করতে চায়। তাই বারবার ক্ষমা চায়। কাচু দাদার বয়স হবে আশি। এমন বয়সের মানুষের মন হয় নরম। কাশেম বলে, কাচু দাদা মাফ করেন। আল্লাহ ওয়াস্তে মাফ কইরা দেন। আল্লাহর বান্দা হইছি। পেটের দায়ে চুরি করি।
কাচু দাদা নরম হয় না। তাও কাশেমের জন্য কোনো এক অজানা কারণে কষ্ট হয়। কাচু দাদা বলে, তোরে আমার ঘরে চাকরি দিমু। করবি?
জমায়েতের মানুষ সন্তুষ্ট না। চোররে ঘরে রাইখা আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত বলেই সবাই ফিসফিস করে। তারপরও কাচু দাদার উপরে কথা বলবে কার সাহস? কাশেম রাজি হয়। নতুন একটা চাকরি অবশেষে তার হয়।
৪.
কাচু দাদার ঘরে মানুষ এখন তিনজন। তার ছেলের একমাত্র মেয়ে, কাচু দাদা এবং কাশেম। কাদেরের কাজ বুঝিয়ে দেয় কাচু দাদার নাতনি সখিনা। সখিনার বাবা নাই। যখন সখিনার তিন বছর তখন কাচু দাদার ছেলে আব্দুল মালেক গেছে বিদেশ। জাহাজে রওনা দিছিল। এরপর খোঁজ নাই। পার হইলো ১৫ বছর। কাচু দাদা বিশ্বাস করেই বলে, আমার পোলা সাগরের জলে ডুবছে।
সখিনার মাও নাই। কালা জ্বরে মরছে। তখন সখিনার বয়স হইবো ৮ কি ৯। সখিনার উঠতি বয়স। কাশেম সখিনার দিকে টেরাইয়া তাকায়। কাজের ফাঁকে সখিনার ওড়না ফাঁকে চোখ দেয়। কাশেমের লুঙগি মাঝে মাঝে ফুলে ওঠে। নিজেরে বড় শক্ত কইরা আটকে রাখে। মাঝে মাঝে মন চায় সখিনার উপর ঝাপ দিতে। চিন্তার শেষ মুহূর্তে কাশেম নিজেরে আটকায়। মনে মনে বলে, যদি পাইতাম। তয় তোর ...
এরমধ্যে যুদ্ধ লাগে। কাশেম একদিন কাচু দাদারে বলে, দাদা দেশে তো গন্ডগোল শুরু হইল। কাচু দাদা দেয় চটাশ কইরা এক থাপ্পড়। বলে, শুয়োরের বাচ্চা। কিসের গন্ডগোল? এইটা স্বাধীনতার যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ।
কাশেম স্বাধীনতা বোঝে না। সে শুধু ব্যাথা পায়। ব্যাথা পাইয়া মনে মনে বলে, কুত্তার বাচ্চা মারলি? এই শোধ তুই দিবি।
মনের কথা বোঝে না কাচু দাদা। সখিনাও বোঝে না।
এক রাতে মিলিটারি গ্রামে ঢুকে। কাশেম মিলিটারির গুলির ভয়ে দেয় দৌড়। কাচু দাদা সাহসী মানুষ। ঘর ছাইড়ে যাইবো না। সখিনা বলে, কই দাদা? যাবা না? গেরাম তো খালি হইল।
কাচু দাদা বলে, এই গেরামে কার সাহস আমার গায়ে হাত দিবো? হাত ভাইঙ্গা পুন্দে হান্দায়া দিমু।
সখিনা লজ্জা পায়। দাদার মুখে নোংরা কথা সখিনার সহ্য হয় না। সে মাথা নিচু কইরা চইলা যায় অন্য ঘরে।
৫.
কাশেম এখন মিলিটারি ক্যাম্পে। পাকিস্তানি সেনাদের কাছে পড়েছে ধরা । তাকে কোনো এক কারণে মেজর সুলতানের পছন্দ হয়। মেজর তাকে বলে, তু আচ্ছে কুত্তা হেয়।
কাশেম বলে, জ্বি হুজুর। হাম আপকে কুত্তা হেয়।
কাশেমের কাছে মেজর সুলতান গ্রামের সব খবর নেন। কাশেমের মনে তখন সাহস হয়। সাহস করে বলে, হুজুর। হাম প্রতিশোধ লমু। অশুদ্ধ উর্দূতে মেজর সাহেব খেপে বলেন, কুত্তেকা অওলাদ। উর্দুমে বাত কর।
কাশেম উর্দু পারে না। তাও বলে, হুজুর আমি কাচু কুত্তার নাতনিরে খামু।
মেজর হাসে। তারপর সখিনাকে ক্যাম্পে নিয়ে আসতে বলে।
কাশেম কাচুর বাড়ির দিকে রওনা দেয়। সে হাঁটে সামনে, পেছনে মিলিটারি। তাদের হাতে বন্দুক। কাশেমের হাতে দাও। যে দাও একসময় মুখে মুখে গল্প ছিল। এখন আর গল্প নাই। কাশেমের হাতে দাও আছে। কাশেম বুক ফুলিয়ে কাচু দাদার ঘরে ঢুকে। পাকিস্তানি সৈন্যরা সখিনারে ধরে। কাশেম ধরে কাচু দাদারে। তারে মাটিতে শোয়ানো হয়। কাশেমের দাও কাচু দাদার গলায়। কাচু বলে, হারামজাদা রাজাকার।
কাশেম বলে, চুপ থাক। আমার কাছে মাফ চা। মাফ চাইলে মাফ। না চাইলে জবাই।
কাচু দাদার বয়স ৮০। সে একদলা থুথু কাশেমের মুখে ছিটায়। কাশেমের মাথায় রক্ত জমে। গরুচোর কাশেমের দা হয় রক্তাক্ত। সখিনা অজ্ঞান হয়। কাশেম বলে, আলহামদুলিল্লাহ...
ঘটনা ছড়ায় দ্রুত। গরুচোর কাশেম হইল কসাই। এরপর কাশেমের জবাইয়ের কদর বাড়ে। সুলতান যায় না কোথাও। যেখানে দরকার দাও হাতে প্রস্তুত কাশেম। মানুষ আনে জবাই করে। হয় বল পাকিস্তান জিন্দবান নাইলে খা কাশেমের কোপ। গলা বরাবর হয় কোপ নাইলে পোস। রক্ত ভাসে। মানুষের রক্তে কাশেম ভাসে আর হাসে।
কাশেম কসাইরে মুক্তিবাহিনী খোঁজে। কিন্তু সে চালাক। সময় বুঝে চলে। দেশ হলো স্বাধীন। কাশেম হলো গায়েব। কসাই কাশেম লাপাত্তা। গ্রামে গ্রামে কাশেম কসাই নিষিদ্ধ। পাওয়া মাত্রই কসাই কাশেম জবাই হবে।
৬.
স্বাধীনতার পর কাশেম যায় পাকিস্তান। দেশে সে আসবে কেমনে? আসলেই তো জবাই!
তবে সে দেশে আসে। জাতির জনক হত্যার পর বুকে তার বল আসে। তখন ছিল পাকিস্তানি মেজরের চামচা। এখন হলো, দেশিয় মেজরের খাশ চামচা। চোখে কালো চশমা নিয়ে মেজর বলে, কাশেম সাহেব। এলাকা যান। গিয়ে সামলান। আপনি ওখানে আমার প্রতিনিধি।
নামের শেষে ‘সাহেব’ শব্দটা কাশেমের পছন্দ হয়। সে বলে, হুজুর আমি আপনার খেদমতে সদা জাগ্রত। এলাকায় কাশেম এখন মহাজন। যদিও সবাই জানে কসাই কাশেম। কিন্তু এখন হইল কাশেম সাহেব। মসজিদ, বাজারে কাশেমের ভয়ে সবাই নিশ্চুপ। কথা নাই বার্তা নাই মুক্তিযোদ্ধাও নাই। কাশেম হইল চেয়ারম্যান। একসময়ের গরুচোর হইল এখন রাষ্ট্রনেতা। টাকায় টাকায় মাতাল কাশেম। এদিক সেদিক বক্তৃতা দেয়। ন্যায় অন্যায়ের কথা কয়। অবাক জনতা চাইয়া রয়। কার এতো ঠেকা কাশেম মোল্লারে নিয়া ভাবা। জীবন যায় চলছে, চলবে। মেশিনের মতো জীবনও চলবে।
৭.
এই হলো কাশেমের জীবন। গরুর প্রতি ভালোবাসা বহু আগে থেকেই। গোশত তার প্রিয়। গরুচুরিও প্রিয়। এখনও মাঝে মাঝে গোপনে বলে, আহ কত্তদিন হইয়া গেল গরু চুরি হয় না। তবুও এখন শুধু গোশত্ খেয়েই চলে কাশেমের জীবন। তবে ইদানিং কাশেমের মন ভালো না। ইস্কুলের পোলাপান তারে দেখলেই ফিসিরফিসির করে। কাশেমের মাথায় আবার রক্ত জমে। তারে নিয়ে ফিসিরফুসুর! কেন হবে?
এই তো কিছুদিন আগে রাস্তা দিয়া যাওয়ার সময় এক পুচকি পোলা তারে দেইখা বলে ওঠে, ‘ক’ তে কাশেম কসাই। বলেই সে দেয় দৌড়। কাশেমের চামচারা তারা পিছুও ছুটে। কিন্তু পুচকি পোলার দৌড়ের যে জোর। তার সঙ্গে ত্রিশ বছর বয়সের চামচারা সামলিয়ে উঠতে পারে না।
এভাবেই ইদানিং কাশেমের মন ভালো না। তার পেয়ারে বউরে সব খুইলা বলে। বউ তার বুদ্ধিমতি। বলে, মানুষ বললে বলবে। তাতে আপনের কি হইল? আর ‘ক’ দিয়াই তো কাশেম হয়। ‘ম’ দিয়া তো কাশেম হয় না।
কাশেম তখন সন্দেহের চোখে তাকায় বউয়ের দিকে। বলে, তুমি কি মশকোরা করো?
বউ তারে জড়ায়া ধরে। তারপর বলে, আপনে আমার স্বামী। মশকোরা তো আপনের লগেই করমু। তবে একটা কথা সত্য ‘ক’ দিয়াই কাশেম হয়। এবং ‘ক’ দিয়াই কসাই হয়।
কাশেমের রক্ত আবার জমাট বাধে। উত্তেজিত কাশেম শোধ নেয়। বউয়ের উপরে সোয়ার হয়। তারপর শোধ নেওয়া শুরু হয়। সারারাত শোধ নেওয়ার ক্ষমতা কাশেমের নাই। বয়স হয়েছে। হাপায়া যায়। কাশেমের বউ হাসে। হাসতে হাসতে বলে, ‘ক’ দিয়া কাশেম কি ‘হ’ দিয়া হাপায়া গেল?
কাশেমের মন আরও ভেঙে পড়ে। বউয়ের এ রহস্যজনক আচরণ তার সহ্য হয় না। সে খাটের এক কোণায় এসে ঘুমায়া পড়তে চায়। ঘুম তার আসে না। পুচকি পোলার কথা তার কানে বাজে। ক- তে কাশেম কসাই। ক- তে কাশেম কসাই।
তার কখনও এসব শুনে খারাপ লাগে নাই। আজকে কেন পুচকি পোলার কথায় খারাপ লাগলো।
পরদিন সকালে ইফতেখার এসে হাজির হয়। দুঃখের কথা তারে বলা হয়। ইফতেখার খুক খুক কাশি দিয়া বলে, হুজুর বেয়াদবি মাফ করলে একখান কথা বলতে চাই।
কাশেম বলে- বলো। বেয়াদবি মাফ।
ইফতেখার বলে, হুজুর ইস্কুলের পোলারা মশকোরা করে। সারাক্ষণ বলে, ‘ক’ তে কাশেম। একজন বলে ক-তে কাশেম। বাকি সবাই চিল্লায়া বলে, তুই রাজাকার তুই রাজাকার।
কাশেম এর উত্তরে কিছু বলে না। তার মনে আশংকা। সে ইস্কুলের পাশ দিয়া দুই তিনবার আসা যাওয়া করে। ইস্কুলের পোলাপান তারে দেইখা মুচকি মুচকি হাসে। কেউ কিছু বলে না। কাশেমরে দেইখা সবাই হয়তো ভয় পায়।
রাত্রে সব ঘটনা বউরে আবার বলে। বউয়ের কাছে সহানুভূতি চায়। বউই তার সব। এ দুনিয়া দুই আপন ছেলে থাকে না দেশে। বউ ছাড়া তার আছেই বা কে!
কাশেম তাকে বলে, আমারে ফিসাফিসি, হাসাহাসি সহ্য তো হয় না।
বউ শুনে আবারও হাসে। মিটিমিটি হাসে। বলে, আড়ালে বলে তো কি? আইজ বলে আড়ালে কাইল বলবে সামনে। সহ্য করার ক্ষমতা রাখেন।
কাশেমের মন আবারও ভাঙে। রক্ত তার মাথায় জমে। সে বউয়ের উপর আবার সোয়ার হয়। আজকে সে ক্লান্ত হইলেও শোধ নিবে। প্রতিশোধ নিবে বউয়ের উপর। বউ তার আজ ক্লান্ত হয়। কাশেম বুঝতে পারে। সে হাসে আর বলে, বল ‘ক’- তে কাশেম। বউ তখন রক্তআগুনে জ্বলে উঠে বলে, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার...
দারুণ করে লিখেছেন । একটানে পড়লাম । মনটা খারাপ হলো হাজারো সখিনার কথা ভেবে । চোখ ভিজে যায় । কাশেম মোল্লারা বেচে থাকুক এটা এখণও কিছু মানুষ চায় । ছি ছি! ছি!
প্রতিবাদ জানাইলাম।
দারুন!
সময়ের সাথে মিলিয়ে দারুণ লিখলেন।
হুম.,, ক্ষুদ্র চেষ্টা করলাম
চমৎকার লেখা
দারুণ!
দারুন লিখেছেন।
‘ক’- তে কাদের মোল্লা<<<--তুই রাজাকার, তুই রাজাকার...
দ্বীনের পথে /
নামাযী মানুষ। দ্বীনের পথে তো বটেই।
মন্তব্য করুন