ডামি লেখক বইয়ের ফ্ল্যাপ লিখলে...
অনেক তরুণ লেখকই চান বইয়ের ফ্যাপটি বিশিষ্ট কোনো লেখককে দিয়ে লিখিয়ে নিতে। এতে মূল্যায়নের পাশাপাশি একটা ‘সনদ’ও জুটে যায়! দুর্ভাগা তরুণরা জানতেই পারেন না, প্রিয় মানুষটি ব্যস্ততা কিংবা উন্নাসিকতার কারণে বই ছুঁয়েও দেখেন না! নবীন লেখক যদি নাছোড়বান্দা হন, প্রতিষ্ঠিত লেখক অবলম্বন করেন ভিন্ন পদ্ধতি! অগুরুত্বপূর্ণ কাউকে দিয়ে ফ্ল্যাপ লিখিয়ে, সেটা নিজের নামে চালিয়ে দিয়ে তরুণ লেখককে ‘বুঝ’ দেন! হাতে ললিপপ ধরিয়ে দেয়া ফ্যাপগুলো কেমন? দেখুন-
লেখকের বউয়ের ফ্ল্যাপ
বই : বাঁশগাছের মাথার উপর চাঁদবাগান (গল্পগ্রন্থ)
রান্না একটি শিল্প, লেখালেখি আরো বড় শিল্প। দুয়ের পার্থক্য হচ্ছে- রান্না কুটির শিল্প, বই বৃহৎ শিল্প। যেহেতু বইয়ে অনেক মানুষের লাভালাভের বিষয় জড়িত। তবে রান্নারও রয়েছে কিঞ্চিৎ প্রকারভেদ—বাণিজ্যিক রান্না, অবাণিজ্যিক রান্না। বাণিজ্যিক রান্না মানে হোটেলের রান্না। বাণিজ্যিক রান্নার গুণগত মান, স্বাদ সবসময় রক্ষিত হয় না। অবাণিজ্যিক মানে ঘরোয়া রান্না অনেক উপাদেয়। রান্নায় সবচেয়ে দরকারি—উপকরণগুলো প্রয়োজন অনুপাতে সময়মতো দেয়া। এ বড় বিচিত্র রসায়ন। যারা রসায়ন রপ্ত করতে পারে—সুগৃহিণী এবং সুরাধুনী হিসেবে আদরণীয় হয়; পরিবারে গ্রহণযোগ্যতা অনেক বাড়ে।
লেখক বেচারার অবস্থাও ভালো একজন পাচকের মতো। সে কী জিনিস দিচ্ছে, কাদের জন্য পরিবেশন করছে এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হয়। সব বিষয় যে-লেখক মাথায় রাখতে পেরেছে তার কুতুব কুতুবুদ্দিন। এবারের বইমেলায় বেরিয়েছে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ। বইটি পড়ে আমি মোহিত হয়েছি। আপনিও মোহিত হবেন—যদি না গাধা শ্রেণির কেউ হন!
লেখকের অধস্তন কর্মীর ফ্ল্যাপ
বই : লোডশেডিংয়ের রাতে জোছনার উৎপাত (উপন্যাস)
শব্দই ঈশ্বর, শব্দই ব্রহ্মাণ্ড। শব্দই জীবন, শব্দই জীবন। তাহলে শব্দহীনতা কী? শব্দহীনতা অবশ্যই ধুধু শূন্যতা, খাখা নীরবতা। একজন লেখক শব্দের পর শব্দ বসিয়ে মালা গাঁথেন, তৈরি করেন ভিন্ন দ্যোতনা। দ্যোতনার ব্যঞ্জনা ক্রিয়াশীল হলে বইয়ের বিক্রি বাড়ে, লেখক রয়্যালটির দেখা পান। অন্যথা হলে সমূহ বিপদ। লেখক কু হতে পারেন আবার সু-ও হতে পারেন; যে প্রশ্নে সবারই একমত হওয়া উচিত—কু, সু সব লেখকেরই রয়্যালটি পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সেই অধিকারটুকু পাঠকই দেবেন। তারা বই কিনলে নিজেরাই শুধু লাভবান হবেন না—প্রকাশক, লেখক—এমনকি লেখকের প্রেমিকাও লাভবান হবেন।
মোকাদ্দেস কুঠিয়াল সাহেবের উপন্যাসটি আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছি আর ভেসেছি ভালোলাগার অচিন সাগরে। ভেবে অবাক হই—এই লেখকের শব্দভাণ্ডার এত স্ট্রং—আমার নিজেরও তো এত শব্দ জানা নাই। খটকার জায়গা আরেকটি আছে—বাংলা একাডেমির অভিধানেও কি ততটা শব্দ আছে, যতটা শব্দ এই ধীমান ঔপন্যাসিকের করায়ত্তে?
লেখকের গাড়ি ড্রাইভারের ফ্ল্যাপ
বই : সূর্যের স্নিগ্ধ কিরণে অবগুণ্ঠিত বাতাবরণ (কবিতা)
কবিতা লেখা মানুষের সুকুমার বৃত্তিগুলোর একটি। যে হালার পুত কবিতা লেখে না... না থাক, আজ কোনো স্ল্যাং উচ্চারণ করবো না। কারণ আমার সামনে রয়েছে এমন মহান একজন কবির বই—যে বই পড়লে পবিত্রতম মানুষ হওয়ার ইচ্ছা জাগ্রত হয়। তরুণ কবি এডওয়ার্ড মোতালেব যে অসাধারণ কবিতার বই লিখেছেন—স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও এমনটি পারতেন কিনা সন্দেহ রয়েছে। তার কবিতার ছত্রে ছত্রে আছে সৎ মানুষ হওয়ার আহ্বান। যেমন—‘ওরে ছোকরা তিনটার বেশি প্রেম করিস না/ টাকা-পয়সা খুইয়ে অকালে মরিস না’।
এধরনের অসংখ্য দিকনির্দেশনামূলক কবিতা ছড়িয়ে রয়েছে বইটিতে। সূর্য এবং পৃথিবীর সম্পর্ক, সত্যের সাথে মিথ্যার যে দ্বন্দ্ব তা দুর্বোধ্য ভাষায়, স্পষ্ট উচ্চারণে বিধৃত করেছেন কবি। আমি তার কাব্যপ্রতিভার উত্তরোত্তর উন্মেষ কামনা করি।
লেখকের বন্ধুর ফ্ল্যাপ
বই : কচুফুলের মধু ও অন্যান্য (প্রবন্ধ)
চোখ থাকলেই সবাই সবকিছু চাুষ করতে পারেন না। কেউ কেউ পারেন। পারেন একজন বদরউদ্দিন বদর। বইয়ের নামপ্রবন্ধের কথা বিবেচনায় নিলে আমাদের বিস্ময়ে বিমোহিত হয়ে যেতে হয়। আমরা জানি, কচু একটি উপাদেয় সবজি। সেই কচুরও যে ফুল আছে, তা ক’জন চোখ খুলে দেখেছি! লেখক শুধু ফুলই দেখেননি, ফুলের মধুও আবিষ্কার করেছেন!
বাংলা সাহিত্যের জন্য এটা ইতিবাচক দিক; ফুল ও মধুপ্রেমীদের জন্যও আশাজাগানিয়া। বদরের প্রবন্ধ সবার ভালো লাগতেই হবে। ভালো না লাগলে বুঝতে হবে—তিনি সফল হয়েছেন। বদর বদরউদ্দিন তো বাজারি লেখক নন!
লেখকের অনুগ্রহভাজনের ফ্ল্যাপ
বই : বাগানে নয়, ফুল ফোটে প্রেমিকার ঠোঁটেও (গবেষণা)
আমি বাকরুদ্ধ, আমি মুগ্ধ! বাংলা সাহিত্যেও এত ভালো বই রচিত হতে পারে জানাই ছিলো না! খেয়াল করে দেখুন মেহেদী মাগন-এর বইটির নাম। এটা অবশ্যই চিরন্তন সত্য, কিন্তু আমরা ক’জন প্রেমিকার ঠোঁটের ফুলের পরিচর্যা করতে গিয়েছি—সময়মতো সার-পানি-কাদামাটির জোগান দিয়েছি? অনুসন্ধানী লেখক জনাব মেহেদী প্রেমিকার হাসি-সৃষ্ট টোলের ব্যস, দৈর্ঘ, প্রস্থ, উচ্চতা সবকিছুরই পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার বলেই তিনি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম হিসাবগুলো নির্ভুলভাবে করতে পেরেছেন।
পথিক তিনি অনেক দূর যাবেন, লেখক হিসেবেও।
লেখকের পিয়নের লেখা ফ্ল্যাপ
বই : শাহরাস্তি থেকে হাতিরপুল (ভ্রমণকাহিনী)
ভ্রমণের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সম দুটি পা এবং প্রয়োজনীয় অর্থ। ঝানু লেখক ফরিদ চাঁদপুরীর দুটি উপাদানই রয়েছে। ভ্রমণ করতে গিয়ে তিনি ব্যাংকের কত টাকার ঋণখেলাপী হয়েছেন সেটা হিসাব করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং অর্থমন্ত্রী। আমরা আপাতত তার ভ্রমণকাহিনীতেই বুঁদ হয়ে থাকতে চাই। শাহরাস্তি থেকে হাতিরপুল নামক ভ্রমণকাহিনীতে লেখক যে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন—এককথায় অনবদ্য। এ ভ্রমণকাহিনীতে ট্রেন, বাস, লঞ্চ, ঠেলাগাড়ি এবং রিকশাযাত্রার চিত্র মনোহরভাবে পরিস্ফুটিত হয়েছে।
লেখক অলিগলি থেকে রাজপথ চিনিয়েছেন অসামান্য দতায়। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ইচ্ছা করলে লেখক ফরিদ সাহেবের সাহায্যে সহজেই একটি মানচিত্র বানিয়ে ফেলতে পারে। আর পাঠক পারেন লেখককে ভ্রমণবন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি দিতে!
মজার হইছে!
ভাগ্যিস নিজেরটা নিজে লিখেছিলাম
হাহাহাহাহাহা
আজব আজব মনোভাব !
আরাফাত শান্ত @
তানবীরা @ নিজেরটা নিজে লিখেছিলেন বলেই রক্ষা! নইলে এরকম ছ্যারাব্যারা পরিস্থিতিতে পড়তে হতো!
জাকির হোসেন শুভ্র @ কোনো বিষয় সম্বন্ধে যখন আপনি ভালো ধারণা রাখবেন না, আজব লাগতেই পারে। মানুষের সীমাবদ্ধতা তো থাকবেই।
মন্তব্য করুন