আইপিএল এবং কিছু রাজনৈতিক ভাবনা
সাকিব আল হাসানের জন্যই আইপিএল নিয়ে একটু আগ্রহী হয়ে উঠছি। যেভাবে তারকা হয়ে গেলেন এবারে তাতে সত্যি আনন্দিতই হয়ে উঠছি। আগামীবার হয়তো অনেক বেশি দামে তিনি বিক্রি হবেন। সত্যি সে বাংলাদেশের গর্ব।
কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র জয়ের পর, দুইদিন আগে যে দলগুলো নরেন্দ্র মোদীকে ছিঁইড়া ফেলাইছিলো বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ নেয়ার কথা বলায়, তাগো নেতা-নেত্রীরা যেভাবে মোদী-কে রাঁধার কৃষ্ণ মনে কইরা জপ শুরু করলো, তাতে ভাবলাম ভারতীয় প্রিমিয়ার লীগে "ঢাকা বেঙ্গল টাইগার" নামে আরেকখান দল যোগ হইলে তা নিয়া আমরা বেঙ্গলিরাও একটু নর্দন-কুর্দন করতে পারতাম।
কিন্তু হের আগে যে পশ্চিম বাংলার মত বাংলাদেশকে 'পূর্ব বাংলা' (সিরাজ শিকদারের তো 'পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি' বলে একটা দল ছিল) নামে ভারতের একটা প্রদেশ হইতে হবে। আর আমাদের ভারত উৎসাহী সব রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের যে তাদের খেয়াল-খুশি মতো হয়তো ভারতীয় বিজেপি, নয়তো কংগ্রেসের হইয়া নির্বাচনে অংশ নিয়া পূর্ব বাংলার মূখ্যমন্ত্রী হতে হবে। তারা যদি মারামারি-কাটাকাটি না কইরা প্রচন্ড ভারত উৎসাহী হইয়া রাজি হইয়া যান, তাইলে তো আপত্তি থাকার কথা না। (ভারতের মুসলমান একদলকে দেখলাম নরেন্দ্রমোদীর পদধূলি নিতে এবং করজোড়ে নমস্কার জানাতে।) আর জনগণের কথা কী! 'জনগণ যেমন, নেতা তেমন' এই থিওরীতে আগাইলে বাংলাদেশের জনগণ তো ভারতীয় জনগণের মত তার ভোটাধিকার ফিরা পাইলে বর্তাইয়া যাবে। জনগণের কি তার চাইতে বেশি কিছু আশা আছে?
মাঝখানে যেসব মুক্তিযোদ্ধারা (হিন্দু-মুসলিম-খৃষ্টান-বৌদ্ধ নির্বিশেষে) '৭১ সালে জীবন দিয়া "গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদী" আদর্শকে সমুন্নত করিয়া দেশ স্বাধীন করলো, তারাই বাটে পইড়া গেলো। তাগো বাংলাদেশের জন্য জীবন দানটাই হলো অর্থহীন মিথ্যা ছাড়া আর কী! হায়রে বাঙ্গাল এই ভূ-খন্ডে মানুষের জীবনের কোন মূল্য নাই। মুক্তিযোদ্ধারা জীবনের ওপারে চলিয়া গিয়াছে বলিয়া তাহাদেরও আর বলিবার এবং প্রতিবাদ করিবার কিছু নাই।
হেইজন্যই এখন পত্র-পত্রিকায় আসে '৭১-র মুক্তিযুদ্ধ পাকিস্তান-ভারতের যুদ্ধ। বড়কথা, মাথার উপর তো কোন কোন মূঢ়ের প্রিয় ফরহাদ মজহার আছে, যে '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে বলে, গৃহযুদ্ধ ...
"বাংলাদেশের প্রথম গৃহযুদ্ধের কথা ভাবুন। বাঙালি জাতীয়তাবাদ কি বাংলাদেশের প্রথম গৃহযুদ্ধের উসকানিদাতা হিসেবে হাজির হয়নি? বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে কি রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি? কিন্তু এরাই আবার ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা যাবে না—দাবি তোলে; ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে।"
(বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির পরিণতি, ফরহাদ মজহার, আমার দেশ, মার্চ ৪, ২০১৩)
ঠিক আছে তবে, আসুন আমরা বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত করি। শাহরুখ খান, সালমান খান, আমির খানকে ভারতীয় বলিয়া দূরে সরাইয়া না রাখিয়া একই দেশের মুসলমান বলিয়া কোলে তুলিয়া নিই। একটু আধটু হিন্দি বাতচিৎ করি। ঢাকায় এ আর রহমানের কনসার্টে উপস্থিত হইয়া মারহাবা মারহাবা বলি।
কোথা থেকে পড়তেছেন? আকাশ থেকে, না পাহাড় থেকে?
মন্তব্য করুন