পর্দার অন্তরালে!
সাত-সকালে অস্থির ভাবে কেউ দরজায় কড়া নাড়ছে! বয়স হইছে কড়া নাড়লেই হুট করে দরজা খুলতে পারি না, নড়াচড়া করতে টাইম লাগে, কিন্তু কে বুঝে কার কথা! দেশ থেকে একদিকে যেমন আদব কায়দা উঠে যাচ্ছে অন্য দিকে উঠে যাচ্ছে মাইয়া মানুষের পর্দা! এই দেশের ববিষ্যত অন্ধকার! দরজা খুলতেই দেখি জমসু দাঁড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে বে-আদবের মতো হাসছে! জিজ্ঞাস করলাম কি ব্যাপার জমসু? এতো সকালে কি মনে কইরা? জমসু বলল, একটা খবর আছে, হাত মুখ ধুইয়া আসেন বৃত্তান্ত বলতেছি!
প্রাতকর্ম সেরে বাইরে এসে জমসুকে জিজ্ঞাসা করলাম বলো দেখি কি বৃত্তান্ত। জমসু বললো
- কয়দিন ধইরা একটা শিয়াল খুব ত্যাক্ত করতেছিল বলছিলাম না?
- হ! মুরগী খোলা রাখলে শিয়ালতো আনাগোনা করবোই!
- গত তিনিদিন আগেও মুরগীর খোয়াড় থেকে রাতে একটা মুরগী ধইরা নিয়া গেছে। সকালে উইঠ্যা দেখি রক্ত আর কিছু পাখনা ছাড়া মুরগীর আর কোন হদিস নাই!
- হুম! খোয়াড়ের চার দিকে কালাকাপড় পেচায়া দিলে শিয়াল আর কাছে আসব না!
- আরে নাহ! গতকাল রাইতে একটা ফাঁদ পাতছিলাম খোয়াড়ের সামনে! ভোর রাইতে শিয়ালের গোঙ্গানী আর চেচামেচি শুইন্যা ধুরমুর কইরা উইঠা দেখি শিয়াল বেটা কট!
- ছিঃ জমসু! বন্য প্রানীরে এইভাবে ধরতে নাই! অবলা জীব কি আর বুঝে? তা কি করছ শিয়ালের?
- বাড়ির লোকজন মাইরা ফেলতে চাইলেও মারতে দেই নাই। গাঙপারের বাইদ্যাদের দিয়া দিছি। তারা নাকি শিয়ালের মাংস দিয়া বাতের ঔষধ বানায়!
- কামডা ঠিক করো নাই! বন্য প্রানী সংরক্ষণ আইনে ফাইসা যাইতে পারো। তাছাড়া তোমার মুরগিগুলারে ঢাইক্যা রাখলেই পারতা!
অতঃপর জমসুকে নিয়া বাজারের উদ্যেশ্যে রওনা হইলাম। দুই কেজী গরুর গোস্ত কিনতে হবে। ইদানিং একলা একলা বাজারে যাইতে ভাল্লাগেনা। চারদিকে বেয়াদবের গাট্টি! বাজারের রাস্তায় একটু হাটতেই দেখি দেওয়ান বাড়ির গোমস্তা হাতে একটা বস্তা নিয়ে এদিকেই আসছে। বস্তার ভেতর কিছু একটা নড়ছে এবং সে কাছাকাছি আসতেই বস্তা থেকে আসা প্রকট দুর্গন্ধে বমির উপক্রম হচ্ছে। নাক মুক চেপে ধরে বললাম,
- কিরে বস্তার ভিত্রে কি নড়ে চড়ে?
- আজ্ঞে, বিলাই! বিলাইয়ের যন্ত্রনায় বাড়িতে মাছ মাংস রাখা দুষ্কর! সকাল সকাল দুধ দোয়াইয়া বাটিতে লইয়া মিটসেফের ভিত্রে রাইখ্যা হাত ধুইতে গেছি, ফিরা আইসা দেখি মিটসেফের জাল ছিড়া, বিলাই চুকচুক কইরা দুধ খাইতেছে!
- ঠিকইতো আছে, দুধের বাটি খোলা রাখলে বিলাইতো মুখ দিবই? বিলাইর কি দোষ?
- হ! বিলাই দুধে মুখ দিলে ব্যাবস্থাতো নিতেই হয়! দেখেননা বস্তায় ভইরা দিছি ছেচা! হাইগা মুইত্যা বিনাস কইরালাইছে!
- অবলা প্রানীরে এইভাবে মারলি? এখন কি করতে লইয়া যাস?
- জঙ্গলের ভিত্রে নিয়া ছাইড়া দিতে যাই।
ধুর! সকাল সকাল মনটাই খারাপ হইয়া গেল! জমসুরে কইলাম, বুঝলা জমসু দেশে থেনে রাখঢাক উইঠ্যা গেছে! পর্দাটাই আসল এইটা কেউই বুঝে না!
আমরা হাটতে হাটতে বাজারের গোস্তেরর দোকানের কাছে চলে আসলাম, কসাইকে বললাম হাড্ডি ছাড়া চর্বি ছাড়া দুইকেজী সলিড গোস্ত কেটে দিতে। কসাই যখন গোস্ত কাটছিল তখন কোন ফাঁকে জানি একটা নেড়িকুত্তা দোকানের কাছে ঘেষল! গোস্তের দোকানে ঝোলানো মাংস ধরতে কুকুরটা পেছনের দু পায়ে ভর দিয়ে দাড়িয়েছে কেবল, তখনই কসাইর হেলপার এসে একটা বাঁশ নিয়ে নেড়িকুত্তাটার কোমর বরাবর আঘাত করল! কুত্তাটা ঘেউ ঘেউ করতে করতে মুহুর্তেই ছুটে পালালো।
আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলামনা! বললাম, আহা অবলা জানোয়ার এইভাবে কেউ মারে? মাংসগুলো ঢেকে রাখলেইতো আর কুত্তা আসে না! পর্দা বইল্যাতো একটা ব্যাপার আছে নাকি? কসাই হেলপার দাঁত কেলিয়ে বলল, কুত্তারে সবসময় মুগুরের উপ্রে রাখতে হয়! দেখবেন এই কুত্তা বাপের জন্মেও আর এই দিকে আইবো না!
গোস্ত কিনে ফেরার পথ ধরলাম। মুখটাই তেঁতো হয়ে গেছে। জমসুকে বললাম চলো জমসু মিয়া মিষ্টির দোকানে গিয়া একটা করে মিষ্টি খাই, সাতসকালের তিক্ততা থেকে মুক্তির দরকার আছে।
মিষ্টির দোকানে ঢুকে একটা টেবিলে বসলাম! কাঁচের ফ্রেমের বাক্সে সব মিষ্টি ঢাকা তারপরেও দোকানে মাছির ঝাঁক বনবন করছে! ময়রাকে দুটো মিষ্টি দিতে বলে জমসুকে বললাম, বুঝলা জমসু যেইখানে মিষ্টি সেইখানেই মাছি, তাই মিষ্টি সবসময় ঢেকে রাখতে হয়! জমসু আনমনা হয়ে বলল, হ ঠিকই কইছেন।
ময়রা দুজনের সামনে দুটা মিষ্টি দিয়ে গেল। মিষ্টি খাওয়া শুরুই করিনি তার আগেই দেখি মিষ্টির উপর একটা মাছি উড়ছে! আর এদিকে আচমকা জমসু একটা বিকট তালি দিল যে আমি চমকে উঠলাম! বললাম এইটা কি হইল জমসু? জমসু দাঁত কেলিয়ে দুই হাতের তালু আমার দিকে ঘুরালো, দেখলাম একটা মাছি জমসুর দুই হাতের তালুতে থেতলে আছে! আমি আহা আহা করে উঠলাম! এই ভাবে অবলা মাছিকে মারতে হয়? মিষ্টি ঢেকে রাখলেই হইতো! পর্দা বলে একটা কথা আছে না! দেশটা বেদ্দপে ভইরা গেল!
স্বাধীনতা মানে বেপর্দা নয়
স্বাধীনতা মানে বৈশাখ উদযাপন নয়
স্বাধীনতা মানে রমনা টিএসসি নয়
স্বাধীনতা মানে নাভির নীচে শাড়ি পড়া নয়
স্বাধীনতা প্রেমিকের জন্যে অপেক্ষা নয়
স্বাধীনতা মানে ভাই সন্তানের সাথে ঘুরতে বেরোনো নয়
স্বাধীনতা মানে কপালে টিপ পরা নয়
স্বাধীনতা মানে অসাবধানে ওড়না সরে যাওয়া নয়
লালসার পর্দা নাই বলে লুল ঝরেই চলছে
অনেক সুন্দর লেখা। স্বাধীনতার উপ্রেও একটা পর্দা লাগানো উচিত। এইটা আর কোন বাকী থাকবে?
মন্তব্য করুন