নিশি কথন
বিকেলের আলোটা খোলা হাওয়ায় রাখা কর্পুরের মতই উবে গিয়ে ধেয়ে আসে তরল আধাঁর। এই মহেন্দ্র ক্ষনে কিছুটা ব্যাকুলতা নিয়েই শুরু হয় আমার নিত্যনৈমিত্যিক দিন, আজো তার ব্যাতিক্রম কিছু নয়। টাইগারের চায়ের দোকানে কখন যে ল্যাম্পপোষ্টগুলো সূর্য্যকে প্রতিস্থাপন করে একদমই বুঝা যায়না যতক্ষন না সন্ধ্যাবাতির ঝাঁজালো ঘ্রান নাকে না আসে। আলসেতে পাওয়া কুকুরের মত আমিও গা ঝাড়া দিয়ে হাত-পা টেনেটুনে চায়ের বিল মিটিয়ে বেড়িয়ে পড়ি।
ফুটপাতগুলো দ্রুত চেহারা বদলায়, প্রতিদিন দেখে না রাখলে অচেনা হয়ে যায় খুব সহজেই। সন্ধ্যে থেকেই নগরীর জানালাগুলো হলুদ কিংবা নিয়ন আলোয় রকমারি নকশা তৈরীতে বসে যায় রঙিন পর্দার ক্যানভাসে, সেদিকে আমার ধ্যান ছিলোনা কখনোই। আমি ঠিকই রোজকার মত শুঁকতে শুঁকতে হাজির হই অন্ধকার জামতলায়, এ শহরে অন্ধকার নির্জন বিরলই বৈকি, যেখানে স্বল্প ব্যাবধানে জড়ো হবে কয়েকটা ছায়া মুর্তি।
কোলাহোল কমে গিয়ে রাত যখন গাম্ভীর্য্য পেতে শুরু করে তখন ছায়ামুর্তিদের সঙ্গ ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ি খোলা রাস্তায়। সারাদিন কপাল বেঁয়ে টপটপ করে ঝরা ঘাম চুষে নিয়ে ফুটপাতগুলো তখন একেবারেই ফাঁকা, যেনো কোন জনমেই ছিলোনা কিছু এখানে। দক্ষিন রাস্তার ভীড় কমে কিন্তু ঝোপঝাড়ে বেড়ে চলে ফিসফাস। নগ্ন সড়ক বেয়ে হেটে যাই আমি আর একটা কুকুর। রোজকার মত এখানেই কুকুরটা আমার সাথে যোগ দেয়, আমি তার নাম দিয়েছি "ভাবুক"। ছায়ার মতই বাকিটা রাত ভাবুক আমার অনুচরী। একসময় আমরা দুজনই খুধার্ত হই। পেট্রোল পাম্পের পাশের ঝুপড়ি হোটেলে বুড়োমিয়া সারারাত গরম পরোটা ভাঁজে। আমি আর ভাবুক রোজকার মত হামলে পড়ি সেখানে।
দ্বিপ্রহর পেড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। চাঁপা শিৎকার দেয়ালে চেপে ওমাতুর ঘুমে ঢলে গেছে নগরী। ভুতুরে দালানগুলো গিলে খেয়েছে সকল কোলাহল। ফাঁকা রাস্তায় হাটি আমি আর অনুচর ভাবুক। ভাবুক বরাবরই চুপচাপ তবু তার সাথে প্রতিনিয়তই নিরবে হয় আমার চুপ কথা। কোথায় জানি আমরা একই মায়াজালে ধরা পড়েছি, হয়তো সেটা কয়েক জন্ম আগের কোন মায়া।
অভ্যাস মতো আমি আর ভাবুক থমকে দাড়াই ১০৮/৩ নাম্বার বাড়িটার সামনে। জানালাটা আজো বন্ধ যেমন ছিলো কালকে কিংবা পরশু কিংবা তারো আগে। এখন আর এই জানালায় চুল ঝাড়েনা কোন সদ্যস্নাত তরুনী। কোন বৃষ্টি বেলায় জানালার গ্রীলেরা চুমো খায়না কোন উদাসিনীর ললাটে। বারান্দার রেলিংটা এখন পতাকার মত উড়ায়না রঙিন ফ্রক। বিষাদের ছায়া বাড়িটার প্রতিটা দেয়ালে লেপে দিয়েছে কে যেনো। আমি পকেট হাতরে ভাঁজ পড়া সিগারেট বের করি। ভাবুক একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে বন্ধ জানালায়। এক সময় আমরা আবার রওনা হই, ঢুকে যাই নগরীর রন্ধ্রে।
কখনো হুস করে হাওয়া তুলে ছুটে যায় দ্রুতযান, গুঙিয়ে উঠে সড়ক, চমকে উঠে ভাবুক। আমরা অলিগলি বেয়ে ফিরে আসার পথ ধরি। একসময় আড়মোড়া ভাংতে শুরু করে নগরী। কঁচি আলোর উল্লাসে মেতে উঠে দালানগুলো। খুলে যায় সব বন্ধ জানালা, বাসি বিছানায় বাসি শরীরে পরশ বোলায় তাঁজা রোদ। আমার চোখ কেবলি ক্লান্তিতে ভারী হয়ে আসে। ভাবুকটাও কখন যেন সঙ্গত্যাগ করে। এখন আমার বাড়ি ফেরার সঙ্গী সকালের লু-হাওয়া, গন্তব্য একটা ময়লা বিছানায় অপেক্ষমান তেল চিটচিটে বালিশ। যেখানে আবার আমি জেগে উঠব বিকেলের চন্দন ঝরা রোদের আভায়।
অদ্ভুত সুন্দর লাগলো লেখাটা! খুঁটিনাটি বর্ণনাগুলো দুর্দান্ত পর্যবেক্ষণের প্রমাণ দেয়।
[বানানে আরেকটু সচেতনতার অনুরোধ রইলো]
অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা আপনাকে।
আসলে বানান দোষটা আমার মজ্জাগত। কাঁচাও বলতে পারেন......... হিহিহি
আপনি মোটেই কাঁচা না, শব্দসম্ভার দেখেই বোঝা যায়। টাইপিংয়ে তাড়াহুড়ো করলে অথবা লিখে আর পড়ার অভ্যাস না থাকলে এমন হতেই পারে।
[ আমার আবার এই ব্যাপারে কিঞ্চিত অ্যালার্জি আছে। তবে সত্যকথা বলি, সবার লেখার ক্ষেত্রে এই অনুভূতিটা কাজ করে না, ভালো-লাগা লেখার বেলাতেই শুধু ]
আসলে কিছু লিখার পর আর রিভাইস দিতে ইচ্ছে করেনা।
একধরনের আলসেমিও বলতে পারেন।
পড়লাম আর বরাবরের মতো মুগ্ধ হলাম।
আরে সুবর্ণা আপুযে। খুব ভালো লাগছে আপনাকে এখানে দেখে।
বরাবরের মতই ধনিয়া পত্র দিলাম। হিহিহিহি
সকালে এসেই একটা চমৎকার লেখা পড়লাম..
মুগ্ধ হলাম
ধন্যবাদ লেখককে
মুগ্ধ করিতে পাইরা আমিও ধন্য হলাম আর অয়েল্কু জানাইয়া গেলাম
বরাবরের মত অসাধারন লেখা । বরাবরের মত আমি বাকশূণ্য ।
হাঃহাঃহাঃ কিযে বলেন ভ্রাত
খুলনা থেকে ফিরে একটা ফেন্টাবুলাস লেখা ছাড়েন। অপেক্ষায় রইলাম।
আপনার লেখা আগে পড়িনি। এটা পড়ে ব্যাপক ভালো লাগলো। খুব ভালো। সকালটাকে সুপ্রভাত বানিয়ে দিলেন...
ধন্যবাদ
এই বার আপ্নেরে বাগে পাইছি। আমার ফিস দেন জলদি, হেহেহেহ তুরান্ত
কাকা=কাজী ক্ল্যাসিক
হাঃহাঃহাঃ ধনিয়া ব্রো
ওয়াও সেই রকম লেখা, পড়ে খুব ভাল লাগলো
আপনাকে অশেষ ধনিয়া পত্র
অণু গল্প ভালো লেগেছে। আরো বড় হলে আরো ভালো লাগত।
ধন্যবাদ ভ্রাত। উদাসী লেখা তাই বারতে দেইনাই। হঠাৎই পতন ঘটাইছি।
দেখেন সোহেল ভাই আপনে ভালো লেখেন মানে এই না যে, আপনে মানুষের পেটেন্ট জিনিসে হাত দিবেন। "নিশি" সংক্রান্ত সব কিছুতে আমার কপি রাইট দেয়া আছে ..।...।
পড়তে খুবই আরাম হইছে
হাঃহাঃহাঃ নিশি নিয়ে আরো ডজন দুয়েক লেখা আছে অরেকটা ব্লগে। :P
এখানে আরো দুজন আছেন নিশির পূজারী। অতিথি পাখি আর কাওছার আহমেদ। এদের লেখাগুলো পড়লে টাস্খি লাইগ্যা যাই মাঝে মাঝে।
পড়তে আরাম হইছে জেনে ধন্য হলুম :)
শুইন্যা দুঃখ পাইলাম। ইয়াং পুলাপান দিবা স্বপ্ন দেখপো না বুড়া মাইনষের মতো নিশি নিয়া টানাটানি
আজকালকের পুলাপান বড়ই ফার্স্ট, বুড়া হইতেতও
কি অদ্বুত সুন্দর লেখা!পড়ে উদাস হয়ে গেলাম।জরিমানা দেন জলদি।
হাঃহাঃহাঃ আপাতত লালনীলবেগুনী হলেম
খাইসে। উদাস হইলেই জরিমানা ?????
খিক খিক খিক
গতকালই পড়েছি। কোথায় জানি একটা মন খারাপের সুর। বুঝিনা!! স্নো পড়ছে। আজ মনে হয় মন খারাপের আসর বসেছে!!
বাড়ির নাম্বারে মনে হয় সুর ধরা খাইছে।
হুম! স্নো পড়লেতো লেখাঠেইল্যা বাইরানোর কথা, আপ্নেরেও কি আইলসা রোগে পাইছেনি
অদ্ভুত সুন্দর একটা লেখা পড়লাম
আপনাকে উত্তম ধনিয়া পত্র
জবর লেখছেন উস্তাদ
হেঃহেঃহেঃ থেঙ্ক্যু
.
কেমন আছেন ভাইডি ?
এইতো ভাইডী, চলে যায় বসন্তবেলা
আপনি কেমন আছেন?
একটা উদাসী লেখা পড়তে ইচ্ছে করছে।
লিখবেন কিছু?
একটা লেখার মাঝ খানে আটকাইয়া আছি ।। ঐটা দেয়ার ইচ্ছা আছিলো । অনেক ট্রাই কইরা লেখতে পারি নাই ...
শেষ করতে পারলে দিয়া দিমু ...
কাজী প্রোডাকশান হাউসের আরেকটি অনবদ্য প্রকাশনা।
হাঃহাঃহাঃ বোনডী, লজ্জায় ফালাইলেন
পড়তে পড়তে কোথায় যেন মিল পেলাম_ঠিক ধরতে পারিনা_আবার ধরতে পারলে প্রকাশ করতে পারিনা।..................সেইরাম লাগলো ভাইডি.........
সবাইতো একই ডালের কাউয়া (বিহঙ্গ )। চেতনায় মিল থাকবে এইটাই স্বাভাবিক।
অশেষ ধনিয়া ভাইডী
এখানে ফেবারিট অপশন নাই? দেরীতে পড়ে পাংখা হয়ে গেলাম লেখাটার। নিশি কথনের ভক্ত আমি। দুর্দান্ত লেখা হয়েছে।
অনেক ধনিয়া ভাইডী
এইটারে সহ রাতের চিত্রের একটা সিরিজ করার ইচ্ছা আছে। নিশিলিপি কেমন শোনায় তাই নিশি কথন নাম দিছি
ঠিকাছে......তয় নিশিকন্যা কথন নিয়েন না আবার
এইটা কি লিখলেন সোহেল ভাই!!!!!! পইড়াই তো কোন সদ্যস্নাত তরুণীর প্রেমে পড়তে ইচ্ছা করতেছে! :)
হাঃহাঃহাঃ তবেই কাম সারছে। তখন নিশি কথন ভার্সন টুয়ের লেখক হবে মাসরুর ভাই।
সে ক্ষেত্রে নিশিকথন-২ অন্যরকমভাবে লেখা হবে। ;-)
পুরাই ভিন্ন আঙ্গিকে! :)
চিন্তাইয়েন্না, নিশি কথন টু শিঘ্রিই রিলিজ হতে যাচ্ছে। সবাই লেখে দিনলিপি। আমি লিখি নিশিলিপি। সেইটারেই একটু মডিফাইড করলাম শিরোনামে।
তবে আপনের নিশি পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
ধুর! আমার লেখার কোন ইষ্টিশন নাই! সবই আজাইরা!!!!! :(
আপনার টু থুক্কু নিশিকথন টু এর অপেক্ষাই থাকলাম! ;-)
ফেভারিট বাটন আসা পর্যন্ত এ লেখাটা যেন কোন না কোনভাবে প্রথম পাতার কোন এক কোণায় থাকে সেই কামনা করি!
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ঃ)
কাজিদা,
সকালটাকে সত্তি সুপ্রভাত বানিয়ে দিয়েছেন আজকের পউশের দুপুরে। এই ভালোলাগার অনুভূতি খুঁজে পেতেই পুরনো ব্লগ খুঁজছিলাম। ভালো লেগে গেল ব্লগের প্রথম কয়েক লাইন পড়েই। ভালো থাকবেন।
বি। দ্র। - কই আপ্নে ভাই?
লেখাটা অসাধারণ লাগলো। বানানের ঝামেলা না থাকলে আরো দারুণ হতো লেখাটা।
মন্তব্য করুন