সেই যে আমার নানা রং এর দিনগুলি..২য় পর্ব
কয়েকদিন থেকে ভাবছিলাম যাদের সাথে পড়াশুনা করেছি তারা কি আমাকে চিনবে? কিম্বা যারা আমাকে মনে রেখেছে তাদের স্মৃতিতে আমার কোন বৈশিষ্ট্য রেখাপাত করে আছে। এমন কেউ কি আসবে যে কিনা আমাকে মনে করেই আসবে? আমি যাদের খোঁজ নেয়ার জন্য চেষ্টা করেছি, এতো গুলি বছরে কোনদিন হটাৎ দেখা হবে সেই প্রত্যাশা করেছি তারা কি আসবে? এরকম হাজার রকম প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। শাহ্ নাজকে আমার এইসব কথা বলার সাহস পাই নাই। এসব বললেই হয়তো বক বক করতে থাকবে "তোর তো ফ্রেন্ড এর অভাব নাই, আমি যাচ্ছি কলেজের টানে তুই তাইলে বন্ধুদের সাথে পিরিত (এই পিরিত সেই পিরিত না, এই শব্দটা আন্তরিকতা অর্থে ব্যবহৃত ) দেখাতে যাবি"।
এই কয় বছরে ছোট খাট গেট টুগেদার হয়েছে, সেরকম একটা পার্টিতেই গিয়েছিলাম আমি, বাকীগুলিতে ব্যস্ততার কারনে যাওয়া হয় নাই। শাহ্ নাজের কল্যাণে অনেক কিছুই জানা হয়। গেট টুগেদার এর ছবি দেখে কার নাম কি ঠিক মনে করতে পারি নাই। কারো সাথে ফোনেও যোগাযোগ হয় নাই। ফেসবুকের দুই একজন আছে তাদের সাথে দুই একদিন কথা হয়েছে মাত্র।
তারপরও খোঁচাটা আমিই বেশী খাই, আমার নািক বন্ধু প্রীতি বেশী।
রিইউনিয়ন প্রোগ্রামে প্রথমেই দেখা হলো কুসুমের সাথে। শুনেছিলাম সে দেশের বাইরে পড়তে গেছে, এখন সে মেজিষ্ট্রেট। একবারো মনে হয়নি ওর সাথে দেখা হবে। ওর কাছ থেকেই জানলাম লুনা আমাকে খুঁজছে। কুসুমের সাথে দেখা হওয়াটা যেমন আনন্দের ছিল, লুনা আসছে আর আমাকে খুঁজছে এটা শুনে ভালো লাগার মাত্রা বেড়ে দ্বিগুন হলো। জানলাম স্মৃতি লন্ডনে আর পিয়া আমেরিকায় সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। এরা সবাই আমার স্কুলের বন্ধু। এরপরই দেখা হলো কলেজের এক ক্লাসমেইট এর সাথে। কথাবার্তার এক পর্যায়ে ভিজিটিং কার্ড হাতে নিয়ে আমি হতবাক। আমার নিক নামটা জ্বল জ্বল করছে সেখানে। বললাম "ব্যাপার কি। আমার নামে তোমার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান।" বিব্রত পারভেজ বুঝানোর চেস্টা করলো তার কাজের সাথে নামটা নাকি খুব যায়, এই জন্যই এই নাম। আমিও ছাড়ার পাত্রী না, অনেক্ষণ প্যাচাইলাম, বুঝছিলাম আমার কথা ভেবে নাম রাখে নাই, তাতে কি? প্যাচানোর দরকার তাই আমি আর শাহ্ নাজ যৌথ প্রযোজনায় কথার মারপ্যাচে পচালাম। এরকমই একটা ঘটনায় শাহ্ নাজকে আমি চ্যাতাই। ওর ছেলের নামটা আমাদের এক বন্ধুর যার সাথে আমার ভালো বন্ধুত্ব ছিল। শাহ্ নাজকে প্রায়ই বলি "তুই আমাকে বললেও পারতি, আমি চেষ্টা করতাম, এভাবে মনের মধ্যে চেপে রাখলি"। জারীফের সাথে দেখা হলে আমি আরো একবার সুযোগ পাবো ঘটনায় রং মাখাতে , যদিও জানি সেরকম কাহিনী নাই তারপও সুযোগ পাইলে হাতছাড়া করবো ক্যান? যোগাযোগ না থাকলেও জারীফ শীপের ক্যাপ্টেন হয়ে, কুয়েত কিম্বা এরকম কোন একটা দেশে নাও ভিড়িয়েছে শুনেছি, ওকে মিস করেছি সেদিন।
হটাৎ ভীড়ের মধ্যে আবিষ্কার করলাম আমার ছোট ভাইকে। আগে একই স্কুলে পড়ার কারনে ২৪ ঘন্টা একজন আরেকজনের উপর চোখ রাখতে পারতাম। এখন অনেকদিন পর পর দেখা হয়, খোঁজ নিতে ফেসবুকের আশ্রয় নিতে হয়। আড্ডার ফাঁকে কয়েকবার ফোন করলাম, বললো "তোমাকে দেখতে পাচ্ছি, আমি আশে পাশেই আছি"। মনে মনে বললাম গোয়েন্দাগিরির অভ্যাস তো দেখি এখনও তোমার যায় নাই।
মাঠের মাঝখানে প্যান্ডেল, সেখানে খুঁজতে থাকলাম আমার ব্যাচমেইটদের। একজন দেখিয়ে দিল, দেয়াল ঘেসে গাছের সারির দিকে, একসময় ক্লাস ফাঁকি দিয়ে যেখানে জম্পেশ আড্ডা দিতাম, সেখানে আসামীরা সব বসে আছে। একে একে গৃহিনী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আর্মি/নেভি/এয়াফোর্স অফিসার, উকিল, ব্যাবসায়ী, লেখিকা, জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলের রিপোর্টার, সমাজসেবক এরকম নানা পেশার ভদ্রলোক এবং ভদ্রমহিলার সাথে ভাব বিনিময় হলো। সাথে অনেক ভিজিটিং কার্ড জমা হতে লাগলো পকেটে। সবাইকে আমি ডাকনামে চিনি। মনে হচ্ছিল কার্ডের কোনে ডাকনাম/কোডনাম (যেমন:মাইনক্যা, চিকন সোহেল , মটকু সোহেল, বলিষ্ঠ, পাকনা হাড্ডি, জাপানী বাবু, কাইর্যা রিপন) লিখে রাখি। কারন পরে কার্ড দেখে কার্ডের মালিক কে সেটা বুঝতে পারবো না হয়তো।
ছাত্রী জীবনে আমিও ডাকনামে পরিচিত ছিলাম। আমার "সুবর্ণা" নামটা অনেকেরই হয়তো জানা নাই।
অফিসে গাম্ভীর্যের মুখোশ, শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলার চর্চ্চা, কানের কাছে সারাক্ষণ ইংরেজি শব্দের মাঝে বাংলা শব্দ ব্যবহারকারীদের ভাষার অত্যাচারে আমি নিজের অজান্তেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম মনে হয়। হটাৎ করে চারিদিক থেকে নিজের ডাকনাম শুনতে পেয়ে, বন্ধুদের সাথে দেখা হয়ে, খাস চলিত বাংলায় কথা বলার সুয়োগ পেয়ে আমাকে বাচালতায় পেয়ে বসলো। এক বন্ধুকে দেখি তার মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত,বললাম" তুইতো পিচ্চি ছিলি, কবে বড় হইলি, তোর কোলে বাচ্চা দেখে হাসি পাচ্ছ্" আমাকে বলে "তুই তো আগের মতোই আছিস, খালি চশমাটা নাই"। একসময় চশমা পড়া, বয় কাট চুল এর শ্যামলা, চিকনা একটা টিন এজ মেয়ের সাথে বর্তমানে আমার কোন মিল আছে কিনা আমার সন্দেহ। তারপরও কেউ কেউ যখন বলছিল "তোমাকে চিনবো না? সেই চোখের কথা কি ভোলা যায়?" বুঝলাম পোলাপান এখনও আগের মতোই চাপাবাজ আছে।
জুলিয়ানের কথায় চাপাবাজী করার মওকা পেয়ে গেলাম আমিও, যখন বললো "তোমারতো এখনও বিয়ে হয় নাই তাইনা?" বললাম, "তোমরা তো আমার কথা ভাবো নাই একবারো, সবাই বিয়ে করে বউ পোলাপান নিয়ে আসছো। আমাকে তো কেউ পছন্দ করে নাই , বিয়েটাও তাই করা হয় নাই। একটা ছেলে দেখো আমার জন্য"। বেচারার মনে দয়া হলো আমার কথা শুনে, তখনই মারম্নফের সাথে আমার ঘটকালি শুরম্ন করতে চাইল। মারম্নফ আমাদের বন্ধু, দেশের বাইরে থাকে, ডিভোর্সের পরে নতুন করে জীবন শুরু করার চেষ্টায় আছে। আমি ওর কথা আগে থেকে জানি, তাই সাথে সাথে রাজী হয়ে গেলাম বিয়েতে। ম্যাচ মেকিং করতে গিয়ে শাহ্ নাজের কথায় জুলিয়ানের ভুল ভাঙ্গলো এক সময়, বললো "তোমাকে আমি খুব শান্ত আর ভদ্র মেয়ে হিসাবে জানতাম, এমন চাপাবাজ হইলা কবে থেক?" অনেকেই আমাকে সেরকম জানতো, দিন বদলাইছে, আমিও তো বদলাইছি। বেচারা জুলিয়ান!!! আমার সম্পর্কে না জেনে এমর কথা বলতে আসলেই বা কেনো?"
দূর থেকে একজনকে দেখলাম, তাকানোর ভঙ্গিটা এমন যে এক হাজার বছর পর দেখলেও চিনতে পারতাম তাকে। কাছে গিযে অতি ভদ্রতার সাথে বললাম "এক্সিউজ মি, আমি যদি ভুল করে না থাকি, তাহলে আপনি লুনা" লুনা মনে হলো আকাশ থেকে পড়েছে, আমাকে চিনতে পেরে চিৎকার, বললাম ----(পরিমার্জিত) এতোদিন কোথায় ছিলি, তোকে কবে থেকে খুঁজছি? স্কুলে আমি অংকে কাঁচা ছিলাম (এখনও আছি, তবে কাউরে বলেন না, আমি এখন ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্ট এ আছি)। লুনার কাছে আমি অংক বুঝে নিতাম। লুনার খাতা কপি করতাম, না বুঝলে মুখস্ত করতাম। টেস্ট পরীক্ষার মাত্র তিন মাস বাকী, লুনা আমার অবস্থা দেখে ওর সাথে কোচিং সেন্টারে ভর্তির পরামর্শ দিল। আমি, লুনা, পিয়া, স্মৃতি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হলাম, শুধু শাহ্ নাজ বাসা থেকে অনুমতি পেলো না। নিয়তির কোন মারপ্যাচ এ মানুষ কোথায় গিয়ে আটকায় তা ভগবান ছাড়া বুঝি আর কেউ জানে না। আমার কোচিং সেন্টারে যাওয়াটাও সেরকম একটা কিছু ছিল।
উফ্ আর লিখতে পারছি না..দেখি কাল আবার চেষ্টা করবো..
হাঃহাঃহাঃ অনেক মজা হয়েছে দেখা যায়।
আমার প্রোপিকের লুক্টার সাথে ওর যোগাযোগ আছে মনে হয়। 

ছেলেটা বিস্বাস করল আপনি এখনো জীবিত
যথারীতি বর্ননায় প্রানের ছোঁয়া ও সুপাঠ্য ছিলো
চলুক ...........................
আমাদের ক্লাসের এখনও দুই/চারজন আছে যারা এখনও জীবিত আছে। তাদের সাতে আমাকে মিলাই ফেলছিল মনে হয়।
আহা , আপিনি তাইলে চাপাবাজী , ঘটকালি শুরু করছেন। সব্বনাশ । তাই তো বলি আমার বিয়ের ব্যাপারে এত চিন্তা কেনু।
আমি ঘটকালি করতে পারলে আপনারা এতেদিন জীবিত থাকতেন না ব্রো...
লেখা গুলো পড়ে ছাত্রজীবনে'র স্মৃতিগুলি মনে পড়তে বাধ্য,
কোথায় হারিয়ে গেলো সোনালী বিকেল গুলো সেই, আজ আর নেই......
চলুক.....................
আহারে দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না...
বন্ধু রওনকের ফেসবুকে আপনাদের রিইউনিয়নের কিছু ছবি দেখে এলাম...
লেখা ভালো লাগছে.. চলুক
আমিও দিতে চাই কিন্ত বাসায় নেট ইদানিং খুব স্লো..
লেখা ভালো লাগছে ............... চলুক
ধইন্যা
আমি অপেক্ষা করতে পারছি না, প্লীজ তাড়াতাড়ি পরের পর্ব ছাড়েন।
বাসায় নেট প্রবলেম এর জন্য দিতে পারছি না। ধন্যবাদ পড়ার লাগি।
মজা পেলাম, চলুক............
থ্যাংকু
দারুন আগাইতেছে। সুবর্ণা আবার আগের ফর্মে। এইতো চাই।
পোস্ট পড়ে তাৎক্ষণিক কিছু জিনিষ মাথায় আসলো। যেমন :
- হঠাৎ বানানটা সবসময় আপনি হটাৎ লিখেন
- বয়কাট করা স্লিম মেয়াটার ছবি দেখতে মন্চাইলো
- কথার মারপ্যাচে বিষয়টাকে হালকা করে উপস্থাপন করলেও ভিতরের সত্য টা চেপে গেলেন। ঐযে মকবুলের আপনার নামে প্রতিষ্ঠান করার কথা বলতেছি। ;-)
- আপনার লেখায় পরিমিত আবেগের সাথে সাবলীল একটা গতি আছে। তাই লেখা এক নিশ্বাসে পড়া যায় কোথাও আটকায় না। পাঠ আনন্দময় হয়।
-আমি সবসময় হঠাৎ বানানটা ভুল করি, কিছুটা ইচ্ছাকুত, তারপরও আপনি যখন বলেলন..কিন্ত এখানে বানান এডিট কর কিভাবে বুঝতে পারছি না।
-প্রাগৈতিহাসিক যুগের ছবি তো আমার কাছে নাই. থাকলে দিতাম।
-বেচারা মনে হয় সত্যি বলেছে।
- ধইন্যাপাতা রায়হান ভাই। লিখতে গিয়েও এক নিশ্বাসে লিখি
আবার মাঝে মাঝে লিখতে পারি না।
আহারে! শাহীন কলেজ........
ফটুক কৈ? এইখানে না হৈলেও ফেসবুকে দেন.....। কলেজটা দেখি...... কতদিন দেখিনা.......।
আশা করছি আজ বিকালে ফেসবুকে ফটুক ছাপামু.
খুবই সুখপাঠ্য হয়ছে...........চলুক..............
তিন আটি ধইন্যাপাতা আপনার জন্য।
পরের পর্ব কুই
সবাই আলেদা হয়ে যায় ক্যান?
মন্তব্য করুন