যুদ্ধের শুরুতে অল্পই যোদ্ধা মেলে
আমি যে শহরে থাকছি সেই ক্যানবেরায় অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য বড় শহরগুলোর তুলনায় বাংলাদেশীর সংখ্যা তুলনামুলক অনেক কম। পড়াশোনা করতে আসা ছেলে মেয়ে বাদে বেশির ভাগই পাবলিক সার্ভেন্ট। সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও হয়তো ১৫০০-১৭০০ হবে, বেশীও হতে পারে। প্রশাসনিক রাজধানী হওয়াতে মূলত সরকারী কাজে নিয়োজিত মানুষজনই এখানে বেশি। ৯৯% বাংলাদেশীরই ২ এর অধিক ডিগ্রি আছে, ডিগ্রী হিসেব করলে শিক্ষিতই বলা যায়, মননে শিক্ষিত কিনা সেটা জানি না।
গত ২ ফেব্রুয়ারীতে এখানে চাঁটগাইয়া মানুষরা মেজবান করেছিলো। ফ্রি গরুর মাংস - ফ্রি ছাগু মাংস সাথে পোলাও/ভাত। প্রায় ৭০০ লোক হয়েছিলো, ফ্রি খাবার পেলে লোক একটু বেশীই হয়।আমি যাই নাই। ফান্ড রেইজিং এর ব্যবস্থা ছিলো। শুনেছি সেটায় নাকি মেরে কেটে ৫০০ ডলারও উঠেনি। বলা দরকার , ক্যানবেরায় মেইডেন হাউজহোল্ড ইনকাম ৳২৮১৫/সপ্তাহ যেখানে অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে ৳১২৩৪/সপ্তাহ।বাঙালি কিপটা না হলেও এখানকার স্বচ্ছল বাঙালিরা কিপটা।
বাংলাদেশের যে সব ছেলে মেয়েরা এখানে পড়াশোনা করতে এসেছে তাদের উদ্যোগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারীতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে একটি মানব বন্ধন করা হয়েছিলো। দাবি ছিলো একটাই " যুদ্ধোপরাদীদের ফাঁসি চাই"। প্রায় ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রি প্রচন্ড গরমের মাঝেও হাতে হাত লাগিয়ে দাবি তুলেছিলো " রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাই"।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারী বিকেলে আরো কিছু সাধারন মানুষ বাংলাদেশ হাইকমিশনে মিলিত হয়েছিলো শাহবাগ আন্দোলনের সাথে একাত্ন হতে। ক্যানবেরার সবাইকেই মেইলে জানানো হয়েছিলো, ফেসবুকে গ্রুপ করে ও ওয়েব সাইটগুলোতে 'পিন্ড' পোস্টের মাধ্যমে সবাইকে আহবান করা হয়েছিলো যাতে সবাই আসেন। তবে একটা জিনিস ইচ্ছে করেই করা হয়েছিলো, কাউকে "জোর" করা হয়নি। মনের তাগিদে - বিবেকের ডাকে যারা সারা দিবে তারাই যাতে আসেন সে জন্যই এটা করা হয়েছিলো। এখানেও প্রায় ৫০ জন মানুষ এসেছিলো।
লক্ষ্য করলে খুব সহজেই দেখা যায়, প্রায় ১৫০০ মানুষের মাঝে মাত্র ৫০ জন ! ক্যানবেরায় জামাতী ছাগুদের সংখ্যা অনেক। মানুষ যাতে বেশী না হয় সে জন্য তারা বেশ কিছু কৌশল নিয়েছিলো। প্রথমটি হলো ১৫ ফেব্রুয়ারীতে শাহবাগের আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে মোমবাতি জ্বালাবে। সব কিছু ঠিক করার পর তারা ঠিক আগের দিন ঘোষনা করলো যে উদ্যোগটি বাতিল করা হলো, এতে বেশ কিছু মানুষ বিভ্রান্ত হলো। তারা ভাবলো যে ১৬ তারিখের অনুস্ঠান ও বাতিল।আবার অনেকেই ভেবেছিলো ১৫ ও ১৬ তারিখের দুটো অনুস্ঠানই আদতে এক। এর পরের কৌশলটি হলো, তারা নিজেরা ভাগাভাগি করে মানুষকে বাসায় দাওয়াত দেয়া শুরু করলো। এতে দাওয়াত খাবারের জন্য লোভী কিছু মানুষ অনুস্ঠানে আসলো না। ফোনে করে - টেক্সট করে অনেককেই বলা হয়েছিলো যাতে তারা এই দু উদ্যোগেই না আসে। আরেকদল ছিলো, যারা স্রেফ নিরেপক্ষতার ভান করে বসেছিলো, এদের সংখ্যাই ছিলো বেশী। এরা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করলেও সুবিধাভোগীর মতো বসে ছিলো ঠিক ড। ইউনুস জাতীয় সুশীল মানুষের মতো। সময়ে এরাই বড় গলায় কৃতিত্ব নিবে। যথারীতি জামাতিদের সাথে ছিলো এখান কার বিএনপি করা কিছু লোক।
ধান ভানতে শিবের গীত বেশি গাওয়া হয়ে যাচ্ছে। সব সময়ই দেখা যায় বিপ্লব বা যুদ্ধের শুরুতে বিপ্লবী বা যোদ্ধার সংখ্যা কম থাকে। সময়ের সাথে সংখ্যা বাড়তে থাকে। শুরুতে যারা সামানে থাকে তারা ঝরে যায় বা পেছনে চলে যায়, পেছনের জন সামনে চলে আসে। কৃতিত্ব নেবার জন্য কাড়াকাড়ি লেগে যায়। ক্যানবেরায়ও একই জিনিস দেখলাম। একদল মানুষ যারা নিজেদের প্রগতিশীল বলে দাবি করে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সদা সোচ্চার কিন্তু মাঠে নামতে চায় না বা নামে না। আরো দেখলাম একদল সুবিধাবাদী মানুষ যারা দু কুলই রক্ষা করে ভালোভাবেই বেঁচে বর্তে থাকে। মাঠে না নেমেও কৃতিত্ব নেবার লোক কমও নয়। আশ্চর্য হইনি ক্যানবেরার বয়স্ক মানুষগুলোকে দেখতে পেয়ে। ৫৫ উর্ধ একজন সিনিয়র বাংলাদেশীও আসেনি, হয়তো ফ্রি ছাগু মাংস পেলে আসতো। এই হলো অবস্থা এখানকার। লেখা পড়া শিখে ডিগ্রি নিলেই যে মানুষ "মানুষ" হয়না সেটা আবারো জানলাম তবে আশার কথা হলো, অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। তরুনরা এগিয়ে আসছে। আমি যে শহরে থাকি সে শহরের কথা বল্লাম, অন্য শহরে যারা থাকেন তারা তাদের কথা বলবেন।
লেখা পড়া শিখে ডিগ্রি নিলেই যে মানুষ "মানুষ" হয়না সেটা আবারো জানলাম তবে আশার কথা হলো, অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। তরুনরা এগিয়ে আসছে। আমি যে শহরে থাকি সে শহরের কথা বল্লাম, অন্য শহরে যারা থাকেন তারা তাদের কথা বলবেন।
এটাই হচ্ছে আসল কথা। এরপর থেকে লেখাপড়া শিখে ডিগ্রি নিলে মানুষ মানুষই হবে। এতদিন হয় নাই, কারণ একটা আজন্ম লালিত পাপ এই সমাজকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছিলো। সেই পাপটা ধুয়ে-মুছে জেগে উঠবে এক নতুন জাতি। তাদের কেউ আর মানুষের মতো মানুষ হতে ভুল করবে না। যুদ্ধটা চলছে সুমন ভাই।
লেখাপড়ার সাথে মনুষ্যত্ব লাভের কোন সম্পর্কই নাই।
এটাই হচ্ছে আসল কথা। এরপর থেকে লেখাপড়া শিখে ডিগ্রি নিলে মানুষ মানুষই হবে। এতদিন হয় নাই, কারণ একটা আজন্ম লালিত পাপ এই সমাজকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছিলো। সেই পাপটা ধুয়ে-মুছে জেগে উঠবে এক নতুন জাতি। তাদের কেউ আর মানুষের মতো মানুষ হতে ভুল করবে না। যুদ্ধটা চলছে... চলবেই বস।
মীরের কথাগুলোর সাথে সহমত জানিয়ে গেলাম।
সহমত।
অনেকদিন পর সুমন ভাই-এর লেখা পড়লাম ব্লগে। সেজন্য ধন্যবাদ পাবেন।
শিক্ষিত মানুষের যে সংজ্ঞা সেটা আদতে ভুল। মানুষ হতে গেলে আরো কিছু বস্তুর দরকার হয়। শুনেছি মাহমুদুর রহমান-এর নাকী অনেক ডিগ্রী...তাঁর সম্পাদিত পত্রিকার খবর দেখে তাঁকে অশিক্ষিত-বর্বর ছাড়া কিছুই মনে হয় না।
অনেকদিন পর মাহবুব সুমন।
ডিগ্রী থাকলেই যে শিক্ষিত আর মানুষ হওয়া যায় না সেসব অনেক দেখেছি এই জীবনে। আমার কথা হলো, এই দেশের তরুণরা বোধ হয় সব পালটে দিবে। আবার সবকিছু সুন্দর হবে।
সব জায়গাতেই একি দশা। খোদ ঢাকাতেও
(
সুন্দর লিখসেন...
আলাদাভাবে প্রত্যেকের মন্তব্যবের উত্তর দিতে পারছি না বলে দূঃখিত, ইচ্ছে করছে না।
লেখাটা বেশ হতাশা নিয়ে লিখেছিলাম। আশা করি নাই যে আমাদের উদ্যোগে বিশাল লোক সমাগম হবে। জানাই ছিল যে জামাতি ও বিএনপি করা লোকগুলো আসবে না, আশা ছিলো যারা প্রত্যক্ষভাবে যারা যুক্ত নয় কিন্তু সচেতন তারা আসবে, কিন্তু এই লোকগুলো যখন বিবেক বিক্রি করে বসে থাকে তখন বেশ মন খারাপই লাগে। বয়স্ক লোকগুলো আরেক কাঠি সরেস, এরা নিজেরা বিক্রি হবার সাথে সাথে নতুন প্রজন্মের মানুষগুলোকেও নস্ট করতে সদা তৎপর। তার পরো যুদ্ধ থেমে থাকবে না, এটা এখন অস্তিত্বের প্রশ্ন, বিবেকের তাড়না। নিচে আরেকটা ব্লগের লিংক দিলাম। আশা করি পড়বেন।
http://www.priyoaustralia.com.au/articles/180210-amader-priyo-canberra-ebong-rajakar.html
মন্তব্য করুন