ইউজার লগইন

আমার সব ঝাকানাকা বন্ধুরা, আর সেই সব দিন

আমি ইদানিং দুইটি খেলায় ভিষণ আসক্ত হয়ে পড়েছি একটা হলো ফারম্ভিল আরেকটা লেখালেখি খেলা। ফারম্ভিল খেলার মজাই আলাদা, চকলেট গাছ-চানাচুর গাছ, লাল গরু দেয় চকলেট মিল্ক, গোলাপী গরু স্ট্রবেরী মিল্ক, হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া সে এক এলাহি কারবার। আর লেখালেখি খেলাটা আরও মজা, সারাদিন যা যা দেখি সব মনেমনে খালি লেখি আর পোস্ট দেই, বাসায় এসে লেখার টেবিলে বসলে তাদের আর খুজেঁ পাই না। নতুন বছরে তাই ভাবলাম বিসমিল্লাহ করে একটা ইটা রেখে যাই (এটা লিখতে শুরু করে ছিলাম ১ তারিখে, আমার আলসেমির জন্য দেরিতে পোস্ট দিলাম)।

আজকে আমার ছোটবেলার বনধুদের বাড়িতে খেতে বলেছি, কত কিছু যে মনে পড়ছে! আমাদের অংক ক্লাস, বায়লোজি ক্লাস, ইস্লামিয়াত ক্লাস, বন্ধুদের সাথে ক্লাসে নানারকম দুষ্টুমি, একসাথে লাল টকটকে চালতার আচার খাওয়া, আমড়া মাখা, টিফিন নিয়ে কাড়াঁকাড়ি। প্রতি বছর স্কুল শুরু হতো মিলাদ, নানা রকম অনুষঠান দিয়ে-আর আমাদের সারাদিন যেত রিহা্রসেল আর ক্লাস ফাঁকি দেয়ার ধান্ধাবাজিতে। কলেজে উঠে সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিলাম। ইউনিভারসিটির ফরম ফিলাপের সময় আবার সদলবলে, ইউনিভারসিটির ফরম তোলা-ফিলাপের ফাঁকে ফাঁকে স্কুলের বন্ধুদের সাথে একসাথে সিনেমা দেখা, বইমেলায় যাওয়া, নববরষে খেতাব দেয়া। স্কুল, কলেজ, ইউনিভারসিটি আর এখন কাজে কত্ত কত্ত কিছু ঘটনা, হাসি-কান্না, মাঝে মাঝে কিছু সময়কে ফিরে পেতে ভিষণ ইচেছ করে!

আমার জন্মদিন একবার পড়ল ইলেকশনের দিনে, তাও যে সে ইলেকশান না, ১৯৯১ এর রক্ত গরম করা ভোটের দিনে। আমার বাসার সামনে ভোট কেন্দ্র; কারও বাবা-মা আমার বাসায় আসতে দেবেন না। কিন্তু সকাল ১০ টার মধ্যে সবাই এক সাথে হয়ে শুরু হলো হই হই। হঠাৎ ঠিক করলাম ছাদে যেয়ে ভোট দেখব, সবাই এক সাথে দৌড় ছাদে। ছাদের গাছে টমেটো ছিল অনেক, হঠাৎ মিতুর কি মনে হলো একথোকা টমেটো ছিঁড়ে নীচে ছুঁড়ে ফেলল, ছুঁড়েই দে ছুট নীচে। সাথে সাথে নীচে একটা হইচই শোরগোল শুরু হয়ে গেল, পুলিশরা সবাই গোল হয়ে বসে লাঠি দিয়ে হতভম্ব হয়ে টমেটো নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল!

মিতুর বাবার ছিল রেডিওর কারখানা, তাই মিতু ছিল বাংলা গানে হাফেজ! সবচেয়ে ভাল গাইতো বেদের মেয়ে জোছনার গান। সুযোগ পেলেই আমরা সেই প্রতিভাকে প্রস্ফুটিত করতে চাইতাম। ব্লাকবোরডে একটা গাছ আঁকতাম, মিতু জোছনা হয়ে গাছ ধরে দাঁড়াত আর আমরা কেউ হতাম রাজকুমার; বেঞ্চ এর ফাকেঁ ফাকেঁ জোছনা আর রাজকুমার-এর অমর প্রেম এখনও স্কুলের দেয়ালে দেয়ালে অক্ষয় হয়ে আছে!

ইস্লামিয়াত স্যারের মটরসাইকেল ছিল আমাদের কাছে অনেক গবেষণার বিষয়ের একটি প্রধান বিষয়। স্যারের বয়স কম, বেতনও কম(সরকারি স্কুলের বেতন কম বলেই ধরে নিয়েছিলাম), ইস্লামিয়াত স্যারের কাছে কেউ প্রাইভেট টিউশন নেয়না (অন্তত আমাদের আমলে নিতনা); তাহলে এমন ঝাঁ চকচকে্ মটরসাইকেলের মালিক কি স্যার যৌতুক পেয়ে হয়েছেন? আমাদের নবীন রক্তে ভিষণ যোশ, এই অন্যায়ের একটা বিহিত করতেই হবে, স্যারের মটরসাইকেলে পোষটার লাগাতে শুরু করলাম, “যৌতুক নেয়া আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ” নিচে লিখা থাকত “এই রাজদূতঃ সত্যি অদ্ভূত” (তখন রাজদূতঃ মটোরসাইকেলের খুব বিজ্ঞাপন দিত)।দুইতিন দিন পর থেকে স্যারের মটোরসাইকেল দপ্তরী পাহারা দেয়, আর স্যার আমাদের দেখলেই মাথা নিচু করে হাসতে শুরু করেন।।

কলেজের মনোবিজ্ঞান আপা ছিলেন কিছুটা পাগলাটে। আমি আর আমার বন্ধুরা প্রতিদিন সিঁড়ির কাছে পালা করে দাঁড়িয়ে থাকতাম; দোতালার সিঁড়িতে একজন, তিনতালার সিঁড়িতে একজন। দোতালার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আপাকে জিজ্ঞেস করতাম “আপা স্লামালিকুম, ক্লাস আছে? কাদের সাথে? Xi-B? ওদের ক্লাস তো তিনতালায়।” আর তিনতালার সিঁড়িতে যে থাকতঃ সে আপাকে পাঠাতঃ নীচতালায়।আপা ক্লাস খুঁজে ফেরেন আর আমরা মেতে উঠি ক্লাস কাপ্টেনকে আটকে রাখার খেলায়।!

একদিন কলেজের তিনতালার কারনিশে উঠলাম, আমার বন্ধু আমার সুয়েটার ফেলে দিসে সেটা উঠাতে, নীচে থেকে প্রিন্সিপাল ম্যাডাম চিলের মত চিৎকার করা শুরু করলেন। তারপর থেকে এখনো কেউ জোরে কথা বললেই আমি ফ্লা্শব্যাকে প্রিন্সিপাল ম্যাডামকে দেখি! আমি আর রুন্নি পাশাপাশি বসতাম, আমার ঝিমানোতে বিরক্ত হয়ে রুন্নি মাঝেমাঝেই ক্লাসে মিস পড়া জিজ্ঞেস করলে আমার পিঠের পিছনে হাত তুলে বলত “মিস আমি বলব, মিস আমি বলব!” অথবা রোল কল যখন করত আমার হাত ধরে রাখত যেন আমি রোল কলটা মিস করি।।

আজকে আর না, একটু চা খেয়ে আসি।।

পোস্টটি ২০ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

রায়েহাত শুভ's picture


পিচ্চি বেলার বন্ধুবান্ধব্দের কাহিনী মজা পাইলাম।

সুমি হোসেন's picture


েলখা পড়ার জন্য THNX আর শুদ্ধ শুচিস্মিতা-র চিঠি পড়তে চাই। Smile

তানবীরা's picture


আপনার কি শুধু এ দু একজনই ফ্রেন্ড ছিল নাকি? অন্য বন্ধুরা দুঃখ পাবে না, তাদের কথা যে লিখলেন না?!

সুমি হোসেন's picture


অন্য বন্ধুরা দুঃখ পাবে না, তাদের কথা ও লিখব, চা বিরতির পর Wink!

নরাধম's picture


নেন চা খান, তারপর বাকি বন্ধুদের কথা বলা শুরু করেন!

সুমি হোসেন's picture


আসিতেছে Smile

লীনা দিলরুবা's picture


আরো গল্প শুনতে চাই।

সুমি হোসেন's picture


একটু অপেক্ষা করুন Smile

আমিন's picture


ফার্মভিলিতে এখন প্রচুর বাংলাদেশী প্লেয়ার দেখা যাচ্ছে ! শুনে আনন্দিত হলাম Smile

১০

শাফায়েত's picture


খুবই মজার লেখা। বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো ছোট ছোট আনন্দদায়ক মূহুর্তগুলো সুন্দরভাবে তুলে এনেছেন। আপনার সেই বন্ধুরা নিশ্চই এই লেখা পড়ে আভিভূত। হওয়ারই কথা। এভাবে আমার কোনো বন্ধু যদি আমাকে নিয়ে লিখতো আমি তো তার সম্মানে সেদিন রাতেই পাট্টি দিতাম Party

১১

সুমি হোসেন's picture


আপনাকে অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য; আমার সব বন্ধুরা দেশের বাইরে, সবাই অনেক ভালো থাকুক, আনন্দে থাকুক। Smile
আপনিই বন্ধুদের জন্য একটা লেখা পোস্ট দিন।

১২

মীর's picture


সুমি আপু কেমন আছেন? পরের পর্ব তো দিবেন ১০ মাস পরে। তাই সেইটা চাইলাম না আপাতত। এই পোস্ট সম্পর্কে

শাফায়েত লিখেছেন,

এভাবে আমার কোনো বন্ধু যদি আমাকে নিয়ে লিখতো আমি তো তার সম্মানে সেদিন রাতেই পাট্টি দিতাম

আমারও একই কথা Smile

১৩

সুমি হোসেন's picture


মীর ভাই শাফায়েত ভাইকে যা বলেছি আপনাকেও তাই বলছি, বন্ধুর জন্য আপনিই লিখে ফেলুন। ওদেরকে শিখিয়ে/দেখিয়ে দিন; আমি ভদ্রলোক, আমার এক কথা!

১৪

মেসবাহ য়াযাদ's picture


পরের পর্ব তো দিবেন ১০ মাস পরে

ইয়ে, মানে বলছিলাম কী- ১০ মাস পরে কেনো ? ১১ মাস বা ৯ মাস পরে নয় কেনো মীর !!

১৫

মীর's picture


১০ সংখ্যায় সমস্যা কি? ম্যারাডোনার জার্সির নাম্বার আছিলো।

১৬

একজন মায়াবতী's picture


ম্যারাডোনারে সুমি আপা ভালা পায় Big smile

১৭

সুমি হোসেন's picture


Tongue

১৮

একজন মায়াবতী's picture


ফারম্ভিল খেলায় আপনি যতটা এ্যক্টিভ লেখালেখি খেলায় ততটাই ইনএ্যক্টিভ। সো আসক্ত হইসেন বইলা এমন একটা চাপা না মারলেও পারতেন Angry

লেখা নিয়ে আর আমার সুচিন্তিত মতামত দিলাম না। তয় চা বিরতি যদি এত লম্বা হয় তাইলে আপনি জীবনে ভাত খাইতে বইসেন না Tongue Tongue

১৯

সুমি হোসেন's picture


মায়াবতী আপনার মন্তব্যে মায়া অনেক কম; একেতো দেরীতে কমেন্ট দিলেন, তারউপ্রে লেখা কেম্ন বলেন নাই, আবার খাওয়া ও মানা, "গড়াগড়ি দিয়ে কানদার ইমো হপে" !

২০

জেবীন's picture


সব সুইঁ চালনি দেখি এক হইছে! একটা অন্যেটারে কয় লেখা দেয় না!! আরে, ২টারেই বলি এত্তো বিরতি দিয়া দেয়া খারাপের উপর খারাপ!! Stare ্মায়াবতী'র না এক্সাম শেষ, তাহলে লেখা নাই যে!!
পোলাপান লেখতে বসো! Tongue

সুমি, ঝাকানাকা লেখার ঝাপি আরো খুলুন, গল্প আরো শুনতে চাই।

২১

তানবীরা's picture


তয় চা বিরতি যদি এত লম্বা হয় তাইলে আপনি জীবনে ভাত খাইতে বইসেন না

Rolling On The Floor Rolling On The Floor Rolling On The Floor

এটাতো জানতাম ভাইয়ারে কেউ একজন জানি বলেছিল কখনো Tongue Tongue Tongue

২২

সুমি হোসেন's picture


হুম; বলতে বলতে অভ্যাস হয়ে গেছে Tongue

২৩

শওকত মাসুম's picture


বাকিদের কথাও বলেন এইবার।

২৪

সুমি হোসেন's picture


মাসুম ভাই, আমি আসছি খুব তাড়াতাড়ি। আপনার ছেলের গলপ লিখেন!

২৫

জ্যোতি's picture


চা খাওয়া শেষ হয় নাই? মাশাল্লাহ! কিরম চা যে আপনি খান, আল্লাহ মালুম! খাইতে চাইয়া বিপদে পড়ুম কিনা কে জানে!

২৬

সুমি হোসেন's picture


আপু আপনাদের মতো চা খাই, আপনি টুকটুক গলপ ১মাস দেড় মাস পর পর পোসট দেন, তার বেলা!? আমিও তখন ছটফট করি Wink
আসেন একসাথে চা খাই নৃত্য

২৭

শফিক's picture


অনেক ভালো লাগল

২৮

সুমি হোসেন's picture


আপনাকে অনেক ধইন্যা পাতা পড়ার জন্য।

২৯

জোনাকি's picture


ঝাকানাকা বন্ধুদের গল্প পড়ে মনটাও ঝাকানাকা হয়ে গেলো
ভালো লেগেছে Big smile

৩০

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


আপ্নের তো হেব্বি স্পিড?! Tongue

লেখাটা খুব খুব ভাল লাগল,
এরকম আরও লেখা চাই।

শেষ লাইনটা দুর্দান্ত!! Big smile

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

সুমি হোসেন's picture

নিজের সম্পর্কে

মানুষ তার চিবুকের কাছেও অচেনা; তাই নিজেকে ভালো চিনিনি এখনো।