ইউজার লগইন

জার্নাল ৩৩

১. পবিত্র ধর্মগ্রন্থে আছে, “সৃষ্টিকর্তা সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” দেশ চলছে মদিনা সনদ অনুযায়ী। সেই সূত্রানুসারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজি, কমিশনার সবাই ব্লগারদের হুঁশিয়ারি দিয়েছে, সীমা লঙ্ঘন করলে একেবারে খোঁয়াড়ে পুরে দেবে, হুঁহ। ধর্মগ্রন্থে কার্টুন আঁকা নিষেধ, লেখালেখি নিষেধ, কিন্তু কোপাকোপি নিষেধ নয়। তাই তারা লেখার বদলে লেখা নয়, কার্টুনের মোকাবেলায় কার্টুন নয়, চাপাতির পর চাপাতি চালাবে। তাদেরকে পুলিশ ধরবে না, মন্ত্রী বকবে না, ধর্ম গ্রন্থে কোপাকোপি যেহেতু আইনসিদ্ধ তাই তারা আইনত সীমা লঙ্ঘন করছে না। তারা লাইনেই আছে।

২. এবার ব্লগার এক্টিভিস্টদের শ্লোগান হোক, “অনলাইন এক্টিভিস্টরা সামনের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেবে না, কাউকেই না।” (যদি কেউ দেশে থাকে কিংবা বেঁচে থাকে) একদলকে ভোট দিলে হয়তো গুলি খাবে অন্য দলকে ভোট দিলে চাপাতি। দুটোর ফলাফলই মৃত্যু। ছয় মাসে চার খুনের পর, ব্রিটিশ মন্ত্রীর টুইট, বান কি মুনের স্পিচের পর আমাদের প্রধানমন্ত্রী অরিন্দম এতোদিনে কহিলেন বিষাদে এক খানা লাইন, কিন্তু তথাকথিত আপোসহীন নেত্রী মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন। এদেশের রাজনীতি ভোটের রাজনীতি। নাস্তিকেরা কারো সন্তান নয়, কারো ভাই নয়, বন্ধু নয়, বাংলাদেশের নাগরিকও হয়তো নয়, আদৌ মানুষ কিনা, তাই সন্দেহ হয় মাঝেসাঝে।

৩. যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে অনলাইনে ও অফলাইনে গণসচেতনতা বৃদ্ধি, গনজাগরণ মঞ্চ আরো অনেক কিছুই অনলাইন এক্টিভিস্টদের আন্দোলন, সংগ্রাম, ত্যাগতিতিক্ষার ফসল। ফসল পাকার পর তাতে কাঁচি লাগিয়ে আওয়ামী লীগ নিজের ঘরে তুলে নিয়ে খাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে তারা কতটা আন্তরিক ছিলো, তা বড়ই প্রশ্নবোধক। অনেক আগেই তারা রাজাকারের সাথে আত্মীয়তা করে নিয়েছে। বাবার হত্যাকারীর দলের কাছে নিজের পুত্রকন্যাকে বিয়ে দিয়ে আত্মীয়তা শানিয়েছে। মেয়ের দাদাশ্বশুর শান্তি কমিটিতে থাকলেও সে যে রাজাকার নয়, সে-ব্যাপারে খোদ প্রধানমন্ত্রী বয়ান দিয়েছে, তার নামে স্বাধীন বাংলাদেশে রাস্তা হওয়া ডিফেন্ড করেছে। স্বার্থের টানে সবই সম্ভব এই বাংলাদেশে।

কিন্তু যারা নিজের জীবনের মায়া তুচ্ছ করে, অফিসের পর অনলাইনে ফালতু সময় ব্যয় না-করে, নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে লেখালেখি করে যাচ্ছে দেশের টানে তাদের আন্দোলন, দাবি বৃথা যাবে না। দুই দলেরই যেহেতু হুজুরদের ভোট চাই, নাস্তিকদের ভোট তাদের চাই না তাহলে দাবি হোক ব্লগে ব্লগে, মঞ্চে মঞ্চে, মিছিলে মিছিলে, “অনলাইন এক্টিভিস্টরা সামনের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেবে না, কাউকেই না।”

সরকার দাবি উপেক্ষা করবে জানি, তাতে লোকসান কিছু নেই। মানুষের জীবন যেখানে উপেক্ষিত, সেখানে ক্রন্দনে কান নাই পাতলো, তবু কেঁদে ফরিয়াদ জানিয়ে যাবো। প্রতিবাদে মুখ ফিরিয়ে নেবো এই নোংরা খেলার মঞ্চ থেকে।

৪. যার পক্ষে যতোটা সম্ভব বিদেশি মিডিয়াতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার এই সংবাদগুলো তুলে ধরতে হবে, আওয়াজ তুলতে হবে। বিদেশি মিডিয়াতে বাংলাদেশের এই কলঙ্কিত নিকৃষ্ট অধ্যায়ের খতিয়ান জানাতে হবে। স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর আবার বুদ্ধিজীবী হত্যা, এবার সরকারী মদদে বা নিষ্ক্রিয়তায়। নিলয় হত্যায় জড়িত সন্দেহে আওয়ামী মন্ত্রীর ভাতিজা গ্রেফতার। লাভ হবে কি কিছু? নাকি, সেই মন্ত্রী ছহিহ লীগার না?

৫. শুক্রবারে যখন নিলয় রক্তাক্ত হয়ে পৃথিবী ছাড়লো, তার কাছাকাছি সময়ে সৌদি আরবে জুম্মার নামাজ আদায় করতে গিয়ে নামাজিরা বোমার আঘাতে মসজিদের ভেতরেই ছিন্নভিন্ন হয়েছে। সৃষ্টিকর্তা তাদের রক্ষা করলেন না? তাদের কী অপরাধ ছিলো? নাকি সৃষ্টিকর্তাও অসহায় বোমাবাজদের কাছে? প্রকৃত ধর্ম ব্যাখ্যাকারীদের এই ব্যাপারে কোন ব্যখা যদি থাকে তাহলে শুনতে চাই, নাস্তিকদের শাস্তি তাহারা বুঝিয়া পাইলো কিন্তু নামাজিরা কিসের শাস্তি তবে পাইলো! আমরা অনলাইন এক্টিভিস্টরা প্রত্যেকটি মৃত্যুর নিন্দা করি, আস্তিক–নাস্তিক ভেদ করে নয়, কাউকে এ ধরনের শাস্তি দেয়ার অধিকার সভ্য পৃথিবীতে কারো নেই।

৬. কোপানোর জন্যে যেভাবে জেলা ভিত্তিক “নাচতেক বোলগার”দের লিস্ট করা হচ্ছে তাতে একাত্তরের রাজাকারদের ইতিহাস মনে পড়ছে বার বার। পাকিস্তানি সৈন্যদের বাঙালি বাড়ি চিনিয়ে তারাই নিয়ে যেতো। যার যার ব্যক্তিগত আক্রোশের প্রতিশোধ নেয়ার সেইতো ছিলো মোক্ষম সুযোগ আর সময়। এবং এই কাজটি করেছিলো তারা ধর্মের নামে। “মুসলিম ব্রাদারহুড” এর নাম দিয়ে বাঙালি চেতনা, আর্দশ, জাতীয়তার খুন। টুপি, দাঁড়ি, পাঞ্জাবী লুংগিতে সজ্জিত আর মুখে সৃষ্টিকর্তার নাম হাতে হাতিয়ার ...... চোখে ভাসে কোন দৃশ্য? রাস্তায় ধরে ধরে কলেমা জিজ্ঞেস করা হতো

ধর্মের জন্যে মানুষ, মানুষের জন্যে ধর্ম নয় ---- যুগে যুগে এই প্রমান হয়ে আসছে।

বাংলাদেশে চুয়াল্লিশ বছর আগেও ধর্মের নামে “জেনোসাইড” হয়েছে, আজও তাই হচ্ছে। তখন পাকিস্তানি সৈন্যদের মাথা কারা খেয়েছিলো, কারা তালিকা তৈরী করে দিয়েছিলো কাদের কাদের খুন করতে হবে? তবে তখন যুদ্ধ চলছিল বলে একদিন দেশ স্বাধীন হলে এই অমানিশা কেটে যাবে সেই আশা ছিলো।

আজ আশা নেই, ভালবাসাও নেই

৭. যারা যারা জীবন নিয়ে আশঙ্কায় আছেন তারা বাংলাদেশের আশে পাশের দেশ গুলোতে আপাতত চলে যেতে পারেন। সেখান থেকে অন্য দিকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। অনন্ত আর নিলয় জানতো তাদের জীবনে হুমকি আছে। তারা অন্তত ভারতে আশ্রয় প্রার্থণা করে নিজেকে সাময়িকভাবে রক্ষা করতে পারতো তারপর অন্য চেষ্টা। বেঁচে না থাকলে লড়াই চলবে কী করে? লড়াই করার জন্যে নিজেকে রক্ষা করা এখন প্রত্যেকের কর্তব্য।

পরিশেষে:

পণ্ডিত মরে তত্ত্ব নিয়া
মূর্খ মরে তর্ক নিয়া,
জ্ঞানী গুণী চিন্তায় মরে,
তবে বাঁচল কে?

আরে সেইতো বাঁচল
সুযোগ মত যেই পল্টি লয়,
এই দুনিয়া সেই দুনিয়া নয়।

যেদিকে যতটুকু সুবিধা হয় সেদিকে ততটুকু মোচড় দেয়ার নাম হলো ‘মডারেট’। যতটুকু সুবিধা ততটুকু ধর্ম আর যতটুকু সুবিধা ততটুকু দুনিয়াদারির চর্চার নাম হলো ‘মডারেট ধর্মপ্রাণ’ জনগোষ্ঠী, শক্তিবাণীতে “ধর্মেও আছো জিয়াফতেও আছো”। নাস্তিক নিধন শেষ হলো বলে, আগে পরে হিন্দুবৌদ্ধপাহাড়ি তথা মালাউনদেরও হয়তো অস্তগামিতার পালা, তারপর আসবে তাদের পালা...।।

মার্টিন নিয়েমোলার আজও প্রাসঙ্গিক। তাই আবারো উল্লেখ করতে হয়

First they came for the Socialists, and I did not speak out—
Because I was not a Socialist.
Then they came for the Trade Unionists, and I did not speak out—
Because I was not a Trade Unionist.
Then they came for the Jews, and I did not speak out—
Because I was not a Jew.
Then they came for me—and there was no one left to speak for me.

পোস্টটি ২৬ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মীর's picture


আমি ভাবতেসি পাল্টা মার কিভাবে দেয়া যেতে পারে সেই কথা। চাপাতির বদলে কলম- বিষয়টা ঠিক ফেয়ার হচ্ছে না। চোখের বদলে চোখ চাই।

নিভৃত স্বপ্নচারী's picture


ধর্মের জন্যে মানুষ, মানুষের জন্যে ধর্ম নয় ---- যুগে যুগে এই প্রমান হয়ে আসছে।

এই বঙ্গভূমে এই কথাটার কোন মূল্য নেই। এখানে ব্লগার মানেই নাস্তিক, মুক্তচিন্তার মানুষ মানেই ধর্মবিরোধী। এদের গলাকাটা ফরজ।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

তানবীরা's picture

নিজের সম্পর্কে

It is not the cloth I’m wearing …………it is the style I’m carrying

http://ratjagapakhi.blogspot.com/