ইউজার লগইন

তাই বুঝতে হবে তোকে শুধু সত্যি-মিথ্যে ঝোঁকে

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ যখন প্রথম ক্রিকেট খেলা শুরু করলো তখন প্রায় সব খেলাতেই অবধারিত ভাবে হারতো। আমি প্রায় কখনোই খেলা দেখতাম না, হারবে জানিই আর অনেক সময় খেলা শুরু না হতেই শেষ, সব আউট। দৈবাৎ কখনো জিতে যাচ্ছে ব্যাপার থাকলেই খেলা দেখতে বসতাম। ভাই, কাজিন, চাচা-মামা অন্যদের সাথে আমি-আমরাও গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিতাম, ছক্কা, চার ইত্যাদি ইত্যাদি। উত্তেজনায় নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস আমাদেরও ফুলতো, লাফালাফি করতাম, বাংলাদেশ তো আমাদেরও, এটাই ভাবতাম। কিন্তু কখনো বিজয় মিছিল, রঙ খেলায় আমাদের-আমার অংশ গ্রহণ ছিলো না, আমাদের পরিধি ছিলো, খেলা শেষ হলে পাড়ায় পাড়ায় মিছিল হবে সেটা বাসার বারান্দা কিংবা ছাদ থেকে দেখা, অন্যদিন বাসার বাইরে পা দেয়ার কোন পারমিশান থাকলেও সেসময় বিশেষ করে সব বন্ধ। পরদিন পেপারে দেখা যেতো বিশ্ববিদ্যাল ক্যাম্পাস গুলোতে মিছিল হয়েছে, টিএসসিতে রঙ খেলা হয়েছে এবং এই খবরের পাশে আলাদা বক্সে প্রায়শঃই দু’চারটে মেয়ের অসহায় মুখের ছবি যারা এই উপলক্ষ্যে নিজের ভাই-বন্ধুদের দ্বারা আপন ক্যাম্পাসে লাঞ্চিত হয়েছে।

দু’হাজার দশ সালে নেদারল্যান্ডস বিশ্বকাপে খেলছে, এই উপলক্ষ্যে হুইন্দাই টিভি কিছু শহরের সিটি সেন্টারে বড় বড় স্ক্রীন টানিয়ে দিলো সবাই একসাথে সিটি সেন্টারে দেখা হবে। নেদারল্যান্ডসের খেলা হলেই আমি আমার সাত বছরের মেয়ের হাত ধরে মেয়ের বাবা আরও বন্ধুদের সাথে খেলা দেখতে যাই। একবারও ভাবিনি, আমার বা মেয়ের বা পরিবারের কারো কিছু হতে পারে। পুলিশ ছিলো, মিউনিসিপ্যালটির লোকও ছিলো, এত গরমে আমাদের গায়ে পানি ছিটিয়ে ছিটিয়ে দেয়া হচ্ছিল যাতে কেউ মাথা ঘুরে না পরে যায়। ব্রাজিল-নেদারল্যান্ডসের খেলার দিন প্রথম হাফে যখন ব্রাজিল তিন গোল অলরেডি দিয়ে ফেলেছে, পাঁচ-সাতটা ব্রাজিলিয়ান মেয়ে তাদের পতাকা নিয়ে নির্ভয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করে ভুভুজালা বাজাচ্ছিলো, দুঃখী মুখ করে ডাচেরা তাদের অভিনন্দন জানিয়েছিলো কিন্তু গায়ে হাত দেয় নি, বলে নি, লাফাস ক্যান।

সিগারেট-হুইস্কি শুধু ছেলেদের জন্যে বুঝি? লিভ টুগেদার করা কিংবা একা থাকা শুধুই ছেলেদের ব্যাপার? জিন্স-টি শার্ট ছেলেদেরই পোষাক? বাইরের পৃথিবী, বিশ্ব ভ্রমণ, ফটোগ্রাফি, ভিডিও, ইউটিউব সব পুরুষদের এখতিয়ারে? মেয়ে মানুষকে বুঝি মানায় না, না? প্রশাসন পরিকল্পিত ভাবে শিপ্রার ব্যক্তিগত ভিডিও, ছবি ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়াতে ছেড়েছে। ১.সিনহা খুনের মামলাকে জাস্টিফায়েড করে ২.নিজেদের আসন রক্ষা করতে ৩.পাব্লিক সেন্টিমেন্ট তাদের পক্ষে আনতে এবং ইট ওয়ার্কড। মেজর সিনহা হত্যার দাবী এখন পেছনে চলে গেছে, তৌহিদী জনতা এখন বিভক্ত, তারা ব্যস্ত "শিপ্রার কখন এবং কেন ওড়না পরা উচিত ছিলো“ এই নিয়ে। পরিকল্পনা করে মেয়েটাকে টার্গেট করা হয়েছে, সিফাত আর নূর নিয়ে কোন পোস্ট নেই। প্রশাসন এই দেশের মানুষের নাড়ি-নক্ষত্র রগেরগে জানে, তারা জানে, মুমিনকূল ওড়না নিয়ে যত ব্যস্ত, জাঙ্গিয়া, চাড্ডি কিংব হাফপ্যান্ট নিয়ে ঠিক ততটাই উদাসীন। "সাতান্ন ধারা“ কিংবা "আইসিটি এক্ট“ কি প্রশাসনের রত্নদের জন্যে প্রযোজ্য নয়? তাদের ইচ্ছে হলে প্রথমে কাউকে মেরে ফেলবে তারপর অন্যদের পাব্লিকলি ডিফেম করবে? সবই তাদের ক্ষমতার ওপর দেখছি। মদ খাওয়া, জীন্স পরা কি অপরাধ? খুন করা যায় সেজন্যে?

যৌথ পরিবারে বাবার সাথে তাস খেলতাম মাঝে মাঝে, তাতেই কতবার বৃহৎ পরিবার থেকে টিপ্পনী শুনেছি, কি দিনকাল আইলো, মাইয়ারা নাকি টাসটুস খ্যালে। স্বয়ং বাবা জড়িত ছিলেন বলে এটা আর উচ্চ পর্যায়ে যায় নি কিংবা একশান নেয়া হয় নি। দাবাও খেলতাম কিন্তু সেটা কেন যেনো লোকের সহ্যের মধ্যে পরতো। অথচ দুটো খেলাই বাসায় নিরিবিলি বসে ওয়ান টু ওয়ান কিংবা গ্রুপে নিরীহ খেলা। এই তো আমাদের মনোবৃত্তি, শুরুর শিক্ষাটা তো আসে সেখান থেকেই। সেসব কতদিন আগের কথা, এত বছরে বাংলাদেশ কি একচুল বদলেছে? না, একে বারেই না, বরং দিন দিন আরও রসাতলে গেছে, প্রত্যেকটি সেক্টরে। আসে ঘোড়ার ডিমের জিডিপির ঢসকিলা দিতে। জনগনের এই মনোবৃত্তির সুযোগ প্রশাসন নিচ্ছে এখন।

প্রবাসে যত যন্ত্রণাতেই থাকি, এই "ওড়না“ যন্ত্রণা নেই, তাই এই ওড়নার দেশকে আর আপন মনে হয় না, কখনো ফিরবো না এখানে।

("ওড়না“ শব্দটি প্রতীকি অর্থে ব্যবহৃত

পোস্টটি ৭ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মীর's picture


পরদিন পেপারে দেখা যেতো বিশ্ববিদ্যাল ক্যাম্পাস গুলোতে মিছিল হয়েছে, টিএসসিতে রঙ খেলা হয়েছে এবং এই খবরের পাশে আলাদা বক্সে প্রায়শঃই দু’চারটে মেয়ের অসহায় মুখের ছবি যারা এই উপলক্ষ্যে নিজের ভাই-বন্ধুদের দ্বারা আপন ক্যাম্পাসে লাঞ্চিত হয়েছে।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

তানবীরা's picture

নিজের সম্পর্কে

It is not the cloth I’m wearing …………it is the style I’m carrying

http://ratjagapakhi.blogspot.com/