একজন সুবিধাবাদিনীর পক্ষ থেকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা
অফিসে অসম্ভব ব্যস্ত আর বিভিন্ন কারনে মানসিকভাবে পর্যুদস্ত। বেশি ব্যস্ত থাকলে যা হয় কাজ হয় না বেশি কিন্তু ব্যস্ত ব্যস্ত ভাব নিয়ে সারাক্ষন একটা অকারণ টেনশান হতে থাকে। বিভিন্ন কারনে অকারনে বিভিন্ন ওয়েবগুলোতে বেশি ক্লিক করা হয়। মন বসাতে পারি না, কি করলে ভালো লাগতো তাও জানি না। জীবন সব সময় এক রকম থাকে না জানি, কিন্তু যা যা জানি তাও সব সময় মন থেকে মেনে নিতে পারি না। মেনে নেয়ার ক্ষমতা নিয়ে আমি পৃথিবীতে আসিনি যদিও জানি তার সাথে আজ এটাও জানি একদিন সব দুঃখ কষ্ট সয়ে যাবে। মাঝখানে কটা দিন রক্তক্ষরণ হবে শুধু। কালরাত থেকে বিভিন্ন ব্লগে বিজয় দিবসের ওপর লেখা পড়ে যাচ্ছিলাম। সবাই যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার। বর্তমান সরকার এ প্রতিশ্রুতি দিয়েই তরুন সমাজের ভোট বাগিয়েছেন। মনটা সেই নিয়েও ভাবছে। আসলে কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে নাকি এজীবনে বিচার দেখে যেতে পারবো না।
আজকে এক কলিগের জন্মদিন ছিল। সে সকালে অফিসে “কফিব্রেড” নিয়ে এসেছে সবার জন্যে। খেতে বেশ ভালো অনেকটা আমাদের দেশের চালের গুড়ো আর গুড় দিয়ে বানানো পিঠার মতো। আমাদের কুমিল্লার ভাষায় বলে, “তেলের পিঠা”। রস থেকে পিঠা গুলো তুলে রাখলে যেমন পিঠার সারা গায়ে সাদা শুকনো চিনির গুড়ার মাখামাখি থাকে এ পিঠাতেও ঠিক তাই। “কফিব্রেড” হাতে নিয়ে মন উড়ে যায় ............। এখন শীতের সময়। সারা দেশ জুড়ে পিঠা খাওয়ার ধুম। মাইনাস ঠান্ডায় কৃত্রিমভাবে গরম করে রাখা অফিসঘরটিতে বসে ঢাকার ফুটপাতের পাশে বসে কোন এক রিক্সাচালক রঙ চঙে মাফলার সারা মুখে মাথায় জড়িয়ে হয়তো প্লাষ্টিকের ছোট প্লেটে ভাঁপা পিঠা খাচ্ছেন ভেবে দুচোখ ভিজে উঠলো। মন খারাপ থাকলে আমার এমনই হয়। সারাক্ষন যা মনে পড়ে তাতেই চোখ ভিজে যায়। কেউ তাকালে বলি, “সর্দি”। ভাবনা এখন রিক্সাচালক ছাড়িয়ে আমার বাড়ির উঠোনে।
আগে শীতের দিনে পিঠা দেখলে বরং বিরক্তই হতাম। কিন্তু এখন সমানে চোখের সামনে ভেসে যাচ্ছে আমার মেয়ের গালের মতো ফোলা ফোলা দুধ সাদা চিতোই পিঠা, নারকেল আর গুড় জর্জরিত ভাঁপা পিঠা, ছিটা পিঠা, কুৎসিত কদাকার মেরা পিঠা। যেটা দেখা মাত্র পিত্তি জ্বলে যেতো। এগুলো ভাবতে ভাবতেই লক্ষ্য করলাম আগের মতো বুকটা ফেটে চৌচির হচ্ছে না। বরং কলিগ যখন বললো, অনেক “কফিব্রেড” বেঁচে গেছে আরো কেউ নিতে চাইলে নিতে পারো। আমি যেয়ে আবার আর একটা ব্রেড নিলাম আর বেশ আনন্দের সাথেই খেলাম। দেশে কথা হলে যখন শুনি ওরা ভালো মন্দ খাচ্ছে আগের মতো বুকটা চৌচির হয় না, সামান্য একটু ব্যথা হয়েই থেমে যায়। সেদিন একজন ফোন করল বাংলাদেশে যাচ্ছে ছুটিতে তাই বিদায় নিতে। সেদিন সারাদিন আমার বালুশাই খেতে এমন ইচ্ছে করছিল যে, আমি ওকে বল্লাম “রস” নয়তো “সর” থেকে বালুশাই আনবে আমার জন্যে। আর ভাবলাম দেশে যেয়ে এবার এই মিষ্টি বানানোটা হাতে নাতে শিখে আসবো। কিন্তু রাতে শুয়ে মনে হলো, আজকাল এয়ার লাইন্সের যা অবস্থা, ধুত বেচারা লজ্জায় হয়তো কিছু বলতে পারেনি কিন্তু তাকে এ বেকায়দায় না ফেললেও চলতো। এখন দেশীয় জিনিসের আকাঙ্খা সহ্য সীমার মধ্যে এসে পড়েছে, এ কিসের লক্ষন ?
আজকাল কেমন যেনো নিজেকে অপাক্তেয় লাগে। বোধ হয় কোথাও আমার বাড়ি নেই ঘর নেই। এ মিছেই পথ চলা। যার কিছুই হয়তো সত্য নয়। বাংলাদেশে গেলে সব কিছুতেই প্রচুর শব্দ লাগে। মনে হয় সবাই অকারনে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথা বলে। অনেক বেশী কথা বলে, মানুষের ভীড় বেশী। নেদারল্যান্ডসের নিজের বাড়ির একলা কোনটাকে তখন আবার খুব চাই। অথচ এক সময় এখানের এই মৃত্যুশীতল নীরবতা বুকে পাথর হয়ে চেপে থাকতো, কতোদিন মনে হয়েছে, এখুনি আমি দম আটকে মরে যাবো। মরার হাত থেকে বাঁচার জন্য জোরে টিভি চালিয়ে রাখতাম সারাদিন। একটা সময়ের পর ঢাকার যানজট অসহ্য লাগতে থাকে, মনে হয় কখন ফিরে যাবো ঐপারে? অসু্খ হয় নির্ঘাত দেশে যাওয়ার পরপরই। ডাক্তার আর ওষুধের বাহার দেখলে মনে হয় ফিরে যাই নেদারল্যান্ডস। পানি খাওয়ার সমস্যা, যেখানে সেখানে কার্ডে পে করার সমস্যা, ব্যাগে টাকা নিলে ছিনতাইয়ের সমস্যা, আবার জিনিসপত্র আকাশছোয়া দাম, মেয়েদের টয়লেটের সমস্যা ক্লান্ত মনটা তখন বলতে থাকে, ভালো লাগে না এবার ফিরে যাই। আবার বিজয় দিবসের ঢাকাকে কল্পনা করে, পহেলা ফাল্গুনের ঢাকাকে কল্পনা করে, একুশের ঢাকাকে কল্পনা করে কিংবা পহেলা বৈশাখের ঢাকাকে কল্পনা করে চোখের পানি ফেলি। তখন ইচ্ছে করে সব ছেড়ে ছুড়ে ফেলে ঢাকা চলে যাই, যা হয় হোক। মায়ের হাতের রান্না, যত্ন সবকিছুর জন্যই মন ব্যাকুল থাকে।
তারমানে আমি সব জায়গার ভালোটা চাই, খারাপের সাথে থাকতে চাই না। আগে ঢাকা গেলে যখন বেশ অসুস্থ হতাম তখন আমার প্রাক্তন বস একবার বলেছিল, তুমি নিজেকে অনেক জোর করো তানবীরা। তুমি চাও বা নাও তুমি এখানে থাকতে থাকতে এখানের জল - হাওয়াতে অভ্যস্ত হয়ে গেছো। এখন দেশে যেয়ে তোমার অনভ্যস্ত সিস্টেমকে যখন হঠাৎ অনেক জোর দাও, তারা নিতে পারে না তুমি অসুস্থ হয়ে পরো। তখন আমার দেশপ্রেম তুঙ্গে থাকাতে বসের সাথে জোর গলায় বলেছি, কখনোই না, যেখানেই থাকি বাংলাদেশি আছি তাই থাকবো চিরকাল। আজকাল একটা অশুভ সত্যি চোরাগুপ্তা উঁকি দেয় আমার মনে, সে কি ঠিক বলেছিল নাকি সেদিন? বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে যখন সবকটি ব্লগে তুমুল লেখালেখি চলছে তখন আমি ভাবছি, “তাহলে কি আমার দেশপ্রেম সত্যিই কমে গেছে”? আমি কি তাহলে এতোদিনে সত্যি সত্যি সভ্য সমাজের সুশীল তৈরি হলাম?
এ সত্যটাও মানতে পারছি না।
তানবীরা
১৬.১২.০৯
মনটা ছুয়ে গেলো। দেশে যাইনি প্রায় ৩ বছর। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে সব ছেড়ে চলে যাই, কিন্তু বাস্তবতার শেকল যখন টেনে ধরে নিজের সীমাবদ্ধতার কথা মনে পড়ে যায়। ভুলে যাই আবেগ, হয়ে উঠি একজন বর্ণচোরা সুশীল।
ভুলে যাই আবেগ, হয়ে উঠি একজন বর্ণচোরা সুশীল।
এ জীবনের অনেক কিছুই হলো, শুধু যেগুলো অহরহ করতে চাই সেগুলোই হয় না।
অধ্যাপক আবু সায়ীদ স্যার একদিন বলেছিলেন - যারা বিদেশে থাকে তাদের সাথে স্বদেশের সম্পর্ক অনেকটা প্রেমিক-প্রেমিকার মত আর যারা দেশে থাকেন তাদের সাথে সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের মত।
আপনার লেখা পড়ে সেটাই মনে হল।
এমন উপলব্ধি প্রায়ই হয়।আসলে দেশে থাকলে দেশের টানটা এতোটা ধরা পড়েনা।
প্রবাস মানুষকে হয়তো একটু বেশীই নষ্টালজিক করে।
দারুন লিখেছেন, ভালোলাগা রেখে গেলাম।
আমিও কৃতজ্ঞতা রেখে গেলাম।
এই যে ভাবনাটা আপনাকে পীড়া দিচ্ছে, এতেই বোঝা যাচ্ছে আপনার দেশপ্রেম একটুও কমেনি।
কি জানি ?
দেশে থেকেই কি শুধু দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে হয়! একসময় ভাবতাম যারা দেশ ছাড়ে তারা সবাই মস্ত স্বার্থপর। পরে বয়স আর অভিজ্ঞতা বুঝিয়েছে ধারণাটা কতো বড় ভুল ছিলো।
এতো ভালো লিখেছো তাও মনটা খারাপ হলো তানবীরা। শখ করে পরবাসী হয় আর কয়জন! ভালো থেকো সবসময়, যেখানেই থাকো।
আচ্ছা নুশেরা একটা কথা ভাবছি তখন থেকেই। লেখাটা আবার পড়লাম। মন খারাপ হলে কি শুধুই খাওয়ার কথা মনে পরে? নাকি শুধু আমারই এ অবস্থা ?
ঠাট্টা করছি না কিন্তু তানবীরা, আমি অনেক ডিপ্রেশনের রোগী দেখেছি (শৌখিন ধনী রোগী না, এদের জীবনে ঘটনা আছে)। শুরুর দিকে অবিশ্বাস্য দ্রুত ওজন বেড়ে যায়, খিদে পাক বা না পাক, অবসেশনের মতো হাতের কাছে যা পায় খেতে থাকে, বিস্কুট-চকলেট হাবিজাবি, এমনকি চিনি পর্যন্ত।
মন খারাপ হওয়ার সাথে খাওয়ার ইচ্ছা অথবা এরকম কিছু বোধহয় সম্পর্কিত।
আমিও শুনেছি এটা ডিপ্রেসনে মানুষ বেশি খায়। আনন্দেওতো আমি বেশি খাই, আমারতো সমস্যাই সমস্যা
লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো।
বেশীর ভাগ মানুষ ঢাকায় থাকতে চায় বলেই ঢাকা শহরটা গেন্জামের জায়গা হয়েছে। তবে ঢাকা শহর ছাড়া এই বাংলাদেশটা সত্যি সুন্দর, মমতাময়ী ।ঠীক অামার মায়ের মত।
ভালো থাকেন।প্রতিদিন লিখেন।
ঢাকা শহর ছাড়া এই বাংলাদেশটা সত্যি সুন্দর, মমতাময়ী ।ঠীক অামার মায়ের মত।
জয়িতা এভাবে বলবেন না প্লীজ। যতো যাইই হোক, ঢাকা আমার ঢাকা। আর এই নিয়েইতো আমাদের বেঁচে থাকা
আপু ঢাকায় যখন আগুন লাল হয়ে কৃষ্ণচূড়া ফুটে...যখন রাতের বেলায় নীরব শহরকে দেখি সত্যি ভালো লাগে।কিন্তু করমব্যস্ত দিনে কি যে কষ্ট ...জরুরী কাজে যেতে দুপুরে বের হয়ে সন্ধ্যা হয়.....ঢাকার সৌন্দযর্A ঢাকা পড়ে যায় থেমে থাকা যানবাহনের বহরে।বৃষ্টি হলেই পানি জমে নোংরা হয়ে যায় পথ ঘাট।এখানে যারা বাস করছে সবসময় তারাই বুঝে জীবনের কত ভোগান্তি বেড়েছে।তবে অামরা স্বপ্ন দেখি একদিন সব সমস্যির সমাধান হবে। সুন্দর পরিচ্ছন্ন এক ঢাকা শহরকে পাব অামরা।
আমি জানি জয়িতা এই কষ্ট, কিন্তু ঢাকা এখন মায়ের মতো হয়ে গেছে। এরপরেও ঢাকাকে ভালোবাসি অন্ধ আবেগ।
ভালো থেকো।
ঢাকা থেকা আরো কিছু লোকজন বিদেশে পাঠায়ে দিতে হবে। অনেক লোক হয়ে গেছে। ;)
ঠিক কইছেন নজুদা ;)
হ
লেখা ভালো লেগেছে
ধন্যবাদ আপনাকে কষ্ট করে পড়ার জন্য
জয়ীতারে আগে পাঠাইতে হবে .... ও খালি পার্টি পার্টি করে :(
চমৎকার একটা লেখা পড়লাম। আবেগগুলো ছুয়ে যায় বার বার ...
ভাল থাকবেন
আপনিও ভালো থাকবেন।
ভালো লাগ্লো।
হুমম কলিকাল, মাইনষের দুঃখও অন্যদের ভালো লাগে, হায় রাম - কই যাইতাম ঃ)
আইয়া পড়ছি তনুপা, এখানেও গরমাগরম লেখা দেওয়া শুরু করব :), আসেন পাল্লা দিয়া লিখি :D
আইসা আপনার লেখা পইড়াই ব্যাটারি ডাউন হয়ে গেল, ২ দিন চোখ মুছামুছির পর আবার ফেরৎ চলে আসব :), এমন ভাবে আত্মা ধরে টানাটানি করেন মিয়া :'(
কিছু কিছু অনুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। তোমাকে দেখে কি ভালো লাগছে সেটা ব্যখ্যা দেয়ার ভাষা আমার জানা নেই। তবে লেখালেখি চলুক নিজেদের মধ্যে শান্তি আর স্বস্তিতে।
স্বাগতম তোমাকে অনেক আনন্দ নিয়ে
অসাধারণ রকমের ভাল লিখেছেন আপু।
তবে আপনার সব মতামতের সাথে একমত হতে পারলাম না। বিশেষ করে, "বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে যখন সবকটি ব্লগে তুমুল লেখালেখি চলছে তখন আমি ভাবছি,
“তাহলে কি আমার দেশপ্রেম সত্যিই কমে গেছে”?" এখানে আমার মনে হয় শুধু মাত্র লেখার তুবরী ছুটিয়েই দেশপ্রেম প্রমাণ করা যায় না কিংবা ভালবাসা যায় না। দেশপ্রেম প্রমাণের একমাত্র ক্ষেত্র হল কাজের মাধ্যমে সেটাকে প্রমাণ করা। আপনারা যারা দেশের বাহিরে আছেন, তারাও একাজটি সফলতার সাথেই করতে পারেন।
অনেক শুভেচ্ছা আপনার জন্য!
আপনারা যারা দেশের বাহিরে আছেন, তারাও একাজটি সফলতার সাথেই করতে পারেন।
আরে ভাই সফলতার সাথে কিছু করতে পারার ক্ষ্যামতা থাকলে কি আর দেশের বাইরে পরে থাকি? তবে আমরা বন্ধু শুধু ব্লগ নয় এর বাইরেও অনেক কার্যক্রম আছে, দেখি মনের ভার কমানোর সুযোগ থাকে কি না।
আপনার জন্যও অনেক শুভেচ্ছা মাসরুর ভাই
ভাল্লাগছে
জেনে ভালো লাগলো।
কন্যারত্নকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। ওর নাম তো মেঘলা, তাই না?
আমাদের কেক্কুক কই?
হ্যা, ডাচ ওয়েদারের সাথে মিল রেখে নাম "মেঘলা"। তোমার মেইল আইডি পাওয়ার উপায় কি গো? এখানেতো ব্যাক্তিগত ম্যাসেজ অপশন নেই। কেক কি তাহলে পাঠাই?
মেরা পিঠা দেখলে আমারো পিত্তি জ্বলে। মজা পাইলাম। ঢাকা শহরের অবস্থা রিসেন্টলি অনেক খারাপ হয়ে গেছে। এটা বোধহয় টের পাচ্ছেন। আপনার জন্য শুভকামনা।
পেলাচ
মন্তব্য করুন