তানবীরা'এর ব্লগ
একখানি ক্রিয়া পদ দিয়ে
আমাদের বাসায় একজন হাফ বিদেশিনী থাকেন। গায়ের রঙ, খাওয়া – দাওয়া সবই দেশি শুধু মুখ খুললে সমস্যা। তার বাবা মায়ের মাতৃভাষা বাংলা হলেও তার জন্য এটি দ্বিতীয় ভাষা। তিনি তার পছন্দের ভাষাতেই কর কর করতে চান কিন্তু মায়ের আবার বাংলা বাংলা বাতিক আছে। তাই বাসায় রফা হয়েছে, বাবার সাথে অন্য ভাষার চর্চা চললেও মায়ের সাথে শুধু বাংলা আর বাংলা। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার চর্চা করতে মা বদ্ধপরিকর। তিনিও কম যান না। একখানা ক্রিয়া পদ ব্যবহার করে তিনি সর্ব ধরনের বাংলা ভাষা ম্যানেজ করে ফেলছেন। তার সাথে থেকে থেকে তার মা, খালা, মামা সবার বাংলা বলার ধরন পালটে যাচ্ছে। নিজে থেকে ডাচকে বাংলায় ভাষান্তর দিয়ে তিনি আজব কিছু বাক্যও গঠন করেন। যেমনঃ স্কুলের বন্ধুর জন্মদিনে গিয়েছেন তিনি। ফিরে এসে বলছেন, মা এভির আম্মু আমাকে অনেক সুন্দর পেলো। কেউ কিছু দিলে, আন্টির জন্য এটা আমি পেতে পারলাম।
অহনার অজানা যাত্রা (আট)
ভিন দেশে অচেনা পরিবেশে স্বল্প পরিচিত একটা ছেলের সাথে জীবন কাটানো অহনার জন্য সব সময় সোজা ছিলো না। একবার এখানের অনেক কিছু চিনেছি বুঝেছি ভেবে মানসিক যে শক্তি সে অর্জন করতো পর মুর্হূতেই অন্য একটা ঘটনায় সেটা উবে যেতো। আশা নিরাশার দোলায় সে দুলতো সারাবেলা। ছোটখাটো অনেক ঘটনা, যেগুলো বিশ্লেষন করলে কোন যুক্তিতেই হয়তো গুরুতর নয় কিন্তু সেগুলোও সে সময় মনে প্রচন্ড প্রভাব ফেলতে লাগলো। যার কারনে অনেক সময় আপাতঃ সামান্য ব্যাপারেও অহনা অনেক অস্বাভাবিক আর তার স্বভাবের চেয়ে অনেক বেশি রুক্ষ আচরন করে বসতো। একবার অহনা বাসে করে স্কুলে যাচ্ছিলো। বাসে খুব আনমনা ছিলো সে। বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে নিজের মনে আকাশ পাতাল সব ভেবে যাচ্ছিলো। যখন লক্ষ্য করলো তখন দেখলো বাস এক অজানা জায়গা দিয়ে যাচ্ছে। ভয় পেয়ে অহনা পরের স্টপেজে নেমে, রাস্তার পাশের ফোন বুথ থেকে প্রায় কাঁদতে কাঁদতে অর্নকে ফোন করে বললো, “আমি হারিয়ে গিয়েছি, আম
জীবন যেখানে যেমন (শেষ পর্ব)
ঘুমের মধ্যেও যেনো আজকাল গানের শব্দ পায় রেনু, ঘুমোলেও আজকাল নাচের মাষ্টারমশায়কে স্বপ্নে দেখে সে। মাস্টারমশায় যেনো এক দুই তিন বলে নাচের প্র্যাকটিস করাচ্ছেন সব বাচ্চাদেরকে একসাথে, আর তারা সবাই ভীত মন নিয়ে প্র্যাকটিস করে যাচ্ছে। একটু ভুল হলেই গালাগালির সাথে আছে মার আর তার চেয়েও বড় ভয় হলো কাজ থেকে বের করে দেয়া। আর কাজ না থাকলে তারা খাবে কি? এমনিতেই তার স্বাস্থ্য খারাপ দেখে কাজ দিতে চায় না তাকে বেশী কেউ। সিনেমায়তো আর তার মতো রোগা পটকা চেহারার বাচ্চার তেমন দরকার হয় না, দরকার থাকে সুন্দর সুন্দর গোলগাল চেহারার বাচ্চাদের। কিন্তু নাদুস নুদুস চেহারা কোথায় পাবে রেনু?
জীবন যেখানে যেমন - ১
আফা মালা নিবেন মালা?
মিলিনিয়াম দশকের ঢাকা-------- প্রবাসীনির চোখে (আপডেটেড)
২০০০ সালে নতুন দশকের সাথে সূচনা হয় নতুন সহস্রাবব্দের। সারা পৃথিবী জুড়ে এনিয়ে হৈ চৈ শুরু হয়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। নিরানব্বই – দুই হাজারে বাংলাদেশের অনেক দোকান পাটের নাম হয় এই অনুসারে। ঢাকার নিউমার্কেটে চলে আসে “মিলিনিয়াম বিরানী হাউজ”। নামকরনের এই ব্যাপারটি বাংলাদেশে ইউনিক। চায়নীজ রেষ্টুরেন্টের নাম ‘ম্যাকডোনাল্ডস”, চুল কাটার দোকানের নাম “কাসাব্লাংকা হেয়ার কাটিং”, জিগাতলায় আছে “সুনামী রেষ্টুরেন্ট”। যেকোন জিনিস যেকারনেই আলোচিত তার দ্বারাই কিছু না কিছু দেশে নামাংকিত। বুশ আর সাদ্দামের যুদ্ধের কারনে সে সময়কার জন্মানো প্রচুর ছেলে শিশুর নাম “সাদ্দাম”। আর একটি জিনিস আমার বাংলাদেশের খুব মনে ধরে রাস্তার দুপাশে মনোরম সব বিলবোর্ড। এ জিনিসটি আমি খুব একটা বাইরে দেখিনি দক্ষিন এশিয়া বাদে। পশ্চিমে থাকে খুবই ছোট সাইজের সামান্য বিজ্ঞাপন, কিন্তু প্রকট রঙ ব্যবহার করে, পেল্লায় সাইজের এই বিলবোর্ড একান্তই দক্
৯০ এর ঢাকা ---- মধ্যবিত্তের চোখে (আপডেটেড)
নব্বইয়ের ঢাকায় বাচ্চারা স্কুলে টিফিনে খেতো বোম্বে সুইটসের রিং চিপস, বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া ফুজি নুডুলস, কিংবা কেনা বার্গার। নানাধরনের উন্নত মিল্ক চকোলেট, ক্যাডবেরীও তখন বাচ্চাদের মেনুতে খুব জনপ্রিয়। সেসময় ঢাকায় মধ্যবিত্তদের কাছে আসে পিজা, শর্মা, হেলভেসিয়া মানে ফ্রাইড চিকেন। এর আগে বাইরে খেতে যাওয়া মানে ছিলো চায়নীজ কিংবা কাবাব। সেই সময় চায়নীজ রেষ্টুরেন্টের লোকেরা সিচুয়ান ষ্টাইল, থাই এগুলো নিয়ে আসেন। যদিও এখনো আমি ঢাকার চায়নীজ, সিচুয়ান ষ্টাইল আর থাই রান্নার মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য করতে পারি না। ডলসি ভিটার আইসক্রীম, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ এগুলো জনপ্রিয়তা পায়। ছোট ছোট আইসক্রীম পার্লার, ফাষ্ট ফুডের দোকান গজিয়ে ওঠার সময় সেটা। গুলশানে একটি ফাষ্ট ফুডের দোকান হলো তখন “হট হাট” যাতে সেই সময়ের হট গার্লস আর বয়েসরা যেতেন। আর ধানমন্ডিতে ছিলো “খাই খাই”। ওয়েষ্টার্ন গ্রীলের জনপ্রিয়তাও তখন বেশ তুঙ্গে। উত্তরাতে লেকের ম
শুধুই গল্প নয়
আজকে ভাঙ্গা পেন্সিলের লেখা “দাস” পোষ্টটা পড়তে পড়তে বহুদিন আগে শোনা একটা গল্প মনে পরে গেলো। তখন গল্প হিসেবে শুনলেও এখন মনে হচ্ছে সবকিছু কেনো গল্পই হতে হবে?
৮০ এর ঢাকা ---- মধ্যবিত্তের চোখে (আপডেটেড)
যা হারিয়ে যায় জীবন থেকে তা চিরতরেই হারিয়ে যায়। এলেবেলে শৈশব, আড়ি দেয়া সেই সব বন্ধুরা, প্রেমময় সেইসব মুহূর্ত, প্রেমিকের ঘামে ভেজা উষ্ণ হাত, বলা না বলা কথার সেই ক্ষন, চিরচেনা শহর, ঝিম ধরা দুপুর, মন কেমন করা গোধূলি বেলা, মন উদাস করা বৃষ্টি, সূর্য তারা সব। পরে থাকে পাহাড়সম স্মৃতি আর এক বুক ব্যাথা। এক সময় জীবন হয়ে ওঠে স্মৃতির রেলগাড়ি।
৭০ এর ঢাকা ---- মধ্যবিত্তের চোখে (আপডেটেড)
আজকাল মনে হয় পুরো দস্তুর প্রবাসী হয়ে গেছি। সারাক্ষন পুরনো স্মৃতি হাতড়ে বেড়াই ঢাকা গেলে। পরিবর্তন কাঁদায়, নতুন জিনিস বিরক্ত লাগে। বাড়ি গেলে এঘর ওঘর ঘুরে ভাইজি’র স্তুপ করা খেলনার মাঝে নিজের শৈশব খুঁজে ফিরি। চিকন পাড়ের সাদা শাড়ি পরা দাদু বসে থাকতেন সারা বেলা জায়নামাজের ওপর, পাবো না জেনেও তার মমতা খুঁজি, আমার নিজের হাতে লাগানো মানিপ্ল্যান্টের চারাটাকে খুঁজে বেড়াই যেটা কখনো আমার পড়ার টেবিলের ওপর কখনোবা শুধুই জানালার ওপর ঝুলতো। কারন আমার দুমাস পর পর ঘরের আসবাবপত্র টানাটানি না করলে কেমন যেনো বন্দী বন্দী লাগতো। কখনো খুঁজে ফিরি মায়ের কাছে বাতিল হয়ে যাওয়া সেই পুরনো দিনের শোকেসটা। পুরো কাঠ আর কাঁচের সম্বনয়ে চার তাকের জিনিসটি যেটি আমার বই রাখার সম্পত্তি ছিল বহুদিন। বই কিনে আমার নাম লিখে তাতে মালিকানার ছাপ লাগিয়ে তারপর পড়ে কাঁচের মধ্যে সাজিয়ে রাখা। দস্যু বনহুর থেকে সাতকাহন, মেমসাহেব থেকে শেষের কবিতা কি
জীবন থেকে নেয়া (টুকটাক)
অনেকদিন আগে এই নামে একটিা সিরিজ লিখতাম। মাঝখানে নানা কারনে লেখা হয়ে ওঠেনি, বহুদিন পর আবার জীবন থেকে নেয়া সিরিজটি লিখছি। শেষ কবে লিখেছিলাম তার সঠিক তারিখটি যদিও মনে নেই তবে একবছরতো হবেই। এ পর্বের নাম দিলাম
টুকটাক
ব্রেকিং নিউজ
পৃথিমী সামনের দিকে আগাইতাছে, আমাদের ঈমান এখন সামনে নেয়া দরকার। দুনিয়ার যতো বুদ্ধিমান প্রানী আছে অক্টোপাস, তোতা - ময়না তাদের ওপর ঈমান আনার সময় হয়েছে। তারা তাদের নির্ভুল ভবিষ্যতবানী প্রদান করে দিনের পর দিন মানব সমাজের উপকার করে চলেছেন। ফুটবল মানবের জীবন ধারনের একটি আবশ্যিক উপকরন। সেখানেতো তোতা ময়নারা বসে থাকতে পারে না। মানব জাতির কল্যানের লক্ষ্যে সেখানেও তারা অবদান রাখছেন।
যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে হল্যান্ডে বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইন্যাল অনুষ্ঠিত
কাল থেকেই সারা হল্যান্ডে সাজ সাজ রব ছিলো আজ একটি “বিশেষ” দিন। আমাদের মাসের শেষ। একাউন্টিং মানেই বড় ব্যস্ততা এ কয়দিন। তাই বস বললেন ছুটি নেয়া তোমাদের পক্ষে সম্ভব না, এক কাজ করো সকালে শুরু করে যার যার ডেড লাইন শেষ করে চলে যাও, ফুটবলের আগে। আমি বলেছি সকাল সাতটায় অফিসে আসা আমার পক্ষে সম্ভব না। এছাড়াও এ নিয়মের আওতায় আমি পরি না। আমি পরের দুমাস যেহেতু মান্থলি ক্লোজিং এ থাকবো না, আমার রিপ্লেসমেন্ট আনা হয়েছ
অহনার অজানা যাত্রা (সাত)
অহনা হল্যান্ডে আসার পর এক তরফাভাবে সবাই তার দোষ-গুন, জ্ঞান - বুদ্ধি আবিস্কার করে যাচ্ছিলো। নতুন পরিবেশের ধাক্কা সামলে একটু অভ্যস্ত হয়ে এখন সেও অন্যদের জ্ঞান বিজ্ঞান আবিস্কারে মনোনিবেশ করলো। প্রথম ছমাসের মধ্যে তার আবিস্কারের অর্জন হলো ডাচ লাইফ সমন্ধে অর্নের জ্ঞান। দেখা গেলো অর্নের সব জ্ঞানের ভান্ডার হলো তাদের অফিস সেক্রেটারী। শপিং, বেড়াতে যাওয়া, বাইরে কোথাও ডিনার করতে যাওয়া অথবা অফিসিয়াল কোন ব্যাপার মোটকথা নেদারল্যান্ডসের যেকোন সমস্যার সমাধান আসে সেখান থেকে। অর্ন নিজে এসব ব্যাপারে খুব একটা কিছু জানে না, অবশ্য তার উল্লেখযোগ্য কারণ হলো অর্নের আগ্রহ একেবারেই নেই এসব ব্যাপারে। সে আছে তার অফিস, পড়াশোনা, কম্পিউটার, ছুটির দিনে সকালে দেরী করে ওঠা, ব্রেকফাষ্ট আর হয় না তখন হয় ব্রাঞ্চ, ব্রাঞ্চ খেয়ে আবার ঘুম, সন্ধ্যেয় ঘুম থেকে ওঠে টিভিতে ডিসকোভারী, ন্যাশনাল জিওগ্রাফ্রী চ্যানেল কিংবা সিএনএন দেখে আবার ঘু
অহনার অজানা যাত্রা (ছয়)
এক দেড় সপ্তাহ সাইকেল নিয়ে কোস্তাকুস্তি ধস্তাধ্বস্তি, সাইকেল থেকে পরে হাত পা থ্যাতলানো শেষ করে অহনা সাইকেল মোটামুটি আয়ত্ব করে ফেললো। সাইকেল শিখে ফেলা তাকে এক ধরনের স্বাধীনতা এনে দিলো। বৃষ্টি না থাকলে ঝকঝকে রোদে সে প্রায়ই তার পছন্দমতো ড্রেসআপ করে সানগ্লাস চোখে কখনো কখনো মাথায় ম্যাচিং কিংবা স্পোর্টস টুপি পরে তার সেকেন্ডহ্যান্ড পঙ্খীরাজ নিয়ে এদিকে সেদিকে মনের আনন্দে ঘুরতে লাগলো। সাইকেল হল্যান্ডের প্রধান বাহন। পুরো হল্যান্ডে সাইকেল চালানোর জন্য আলাদা রাস্তা আছে, লাল রঙের কার্পেটিং করা। যেগুলো রিঙ রোড (শহরের প্রধান সড়ক) সেখানে সাইকেল চালকদের জন্য রোডের সাইড থেকে সাইকেল চিহ্ন দিয়ে রাস্তা নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে। অনেক বেপোরোয়া না হলে এক্সিডেন্ট হওয়ার সুযোগ খুব কম। আর এক্সিডেন্ট হলেও একশত বারের মধ্যে নিরানব্বই বার সময় দোষী হন গাড়ি চালক। নেদারল্যান্ডসের গঠনই দুর্বলকে রক্ষা করা তাই যে পরিস্থিতিই হোক ন
অরানিয়া ভেইকা
ফুটবল টুটবল আমার আবার পোষায় না। বয়স হচ্ছে দৈনন্দিন জীবনের বাইরে কোন উটকো ঝামেলাই আজকাল আর পোষায় না। ফুটবল মানে মেয়ের বাবা খেলা দেখবে, ঘরের - বাগানের কাজ পরে থাকবে মাঝখান থেকে সাপ্তাহিক শিডিউলড ঝগড়ার বাইরে আরো দু’চারটা এক্সট্রা ঝগড়া হবে। ফুটবলে কে জিতলো সেটা ফাইনাল খেলার পর জেনে নিলেই হলো, আমার জন্য এটাই কাফি। এরমধ্যেই আমার তিন ক্লাশ পড়ুয়া টুকটুকি এসে বললো,