তানবীরা'এর ব্লগ
অহনার অজানা যাত্রা (পাঁচ)
বিদেশ মানে সুন্দর সুন্দর ছবির মতো বাড়ি, বাড়ির সামনে বড় লন যাতে নানা রঙের ফুল ফুটে আছে। ফুলের ওপর বর্ণিল প্রজাপতি উড়ছে। দামী গাড়িতে করে হাওয়া খেতে খেতে আজ এদিকে কাল সেদিকে বেড়াতে যাওয়া। ভালো রেস্টুরেন্টে ইকরি মিকরি নামের খাবার দিয়ে মোমবাতির আলোয় ডিনার করা, এই প্রাক রোমান্টিক ধারনাকে সর্বাংশে মিথ্যে করে দিয়ে অহনার জীবনে বিদেশ ধরা দিল কঠিন পার্বত্য জীবনের রূপে। অহনার কাছে বিদেশ মানে বাসে করে ডাচ স্কুলে যাওয়া, ভিন্ন ভাষায় লেখা ও অপরিচিত মোড়কে রাখা জিনিসপত্র থেকে তার প্রয়োজনীয় জিনিস বাজার করা এবং সে বাজার টেনে বাসায় আনা। রান্না করা, কাপড় ধোয়া এবং ইস্ত্রি করা, বাড়িঘর ডাষ্টিং করার রূপ নিয়ে। অতি অল্প দিনেই হাঁপিয়ে উঠলো অহনা। ইউনিভার্সিটির অবাধ ঘোরাঘুরি, ফুচকা, ঝালমুড়ি, মামা হালিম, গাওছিয়া, ইষ্টার্ন প্লাজা, মহিলা সমিতি সবকিছুর জন্য সে অধীর হয়ে উঠলো। পুরনো দিনের জন্য ব্যাকুল সে প্রায়ই কান্নাকাটির এক
অহনার অজানা যাত্রা (চার)
চারদিকের নীরবতা এ পর্যায়ের যে একটি পিন পড়লেও তার শব্দ শোনা যাবে। কোথাও কেউ নেই। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বলে পার্কিং লট আরো ঠান্ডা। অবাক চোখে অহনা দেখছিল তার নতুন জীবন কোথায় শুরু হতে যাচ্ছে। অর্ন টেনে টেনে স্যুটকেস আর অন্যান্য জিনিসপত্র গাড়ি থেকে লিফটে ওপরে নিচ্ছিল। অর্নের পাশে পাশে সে হাটছে কিছুটা বিহ্বল হয়ে। বাইশ তলা এ্যাপার্টমেন্টের বারো তলায় অহনাদের ঠিকানা। ঢুকে দেখল ও আসবে উপলক্ষ্যে অর্ন আর তার বন্ধুরা এ্যাপার্টমেন্টের লিভিং রুম বেশ সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। সাথে ফ্রিজে কেকও আছে "Welcome to Holland'। কিন্তু সেটা এখন ধরতে না করলো অর্ন, সবাই শখ করে এনেছে, রাতে কাটা হবে সবার সাথে। বউকে কাছে পেয়ে উচ্ছাসে ঝলমল অর্ন কোম্পানী থেকে পাওয়া মোটামুটি আধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত ফ্ল্যাটটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিল। কিন্তু ফ্ল্যাট ঘুরে দেখে অহনা বেশ দমে গেলো মনে মনে। যতই আধুনিক জিনিসপত্র থাকুক এই মাত্র বারো’শ
অহনার অজানা যাত্রা (তিন)
বিশাল এয়ারপোর্টের এদিক থেকে ওদিক দেখা যায় না। চারধারে আলোর খেলা। বড় বড় গ্লাস দিয়ে আটকানো পুরো বিল্ডিং এর গ্লাসের মধ্যে দিয়ে বিশাল বিশাল পেট মোটা প্লেনগুলোকে দেখা যাচ্ছে যারা অলস পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো ক্লান্ত হয়েছে নেমেছে নতুবা জিরিয়ে আবার ওড়ার অপেক্ষায় রয়েছে। কোনদিক দিয়ে কোথায় যাচ্ছে সে তার কোন ধারনা নেই। ইউনিফর্ম পরা এক অফিসারের পাশে পাশে হেটে চলছে তারা। অফিসারটি অহনার সাথে টুকটাক হাসির আর মজার কথা বলে যাচ্ছে, অহনা তার কথা কিছু শুনছে কিছু না। কিছু বুঝতে পারছে আবার কিছু না। ইউরোপীয়ান ইংরেজী উচ্চারন তার জন্য নতুন। তারপরও কিছু সামান্য ছোটখাটো কথার জবাব সে দিয়েছে চেষ্টা করে।। অনেকক্ষন হেটে একটি মোটামুটি বেশ বড় ঘরে উপস্থিত হলো, যেখানে আরো বেশ কজন ভিনদেশী লোক দাঁড়িয়ে ও বসে আছে। অহনাকেও বসতে বলা হলো সেখানে, সে অফিসারটি এসে ইঙ্গিত করতেই অন্য আর একজন অফিসার এসে অহনাদের পাসপোর্ট নিয়ে ভিতরে আর একটা
অহনার অজানা যাত্রা (দুই)
সারারাত বৃষ্টি হয়ে সকালে খুব মিষ্টি রোদ উঠেছে। চারপাশটা তাই অনেক স্নিগ্ধ। দুরু দুরু বুকে দোয়া ইউনুস পড়তে পড়তে অহনা এ্যম্বেসীর ভিতরে গেলো হাতের ফাইল শুদ্ধ, সে টেবিলের একপাশে বসল আর অন্যপাশে বসলেন একজন শ্বেতাঙ্গ আর একজন দেশী ভাই। শ্বেতাঙ্গ ভাই অবশ্য বেশ হেসে তার খোঁজ খবর নিলেন, সে কি করতো, কবে বিয়ে হলো, অর্ন অহনার পূর্ব পরিচিত কিনা, বাবা মাকে ছেড়ে যেতে মন খারাপ লাগবে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি, দেশী ভাই অবশ্য তেমন কোন কথা বললেন না শুধু শ্যেন দৃষ্টি দিয়ে তার ভিতরটা এফোড় ওফোর করে এক্সরে করে দেখার চেষ্টা করলেন। দৃষ্টি দিয়ে উনি বুঝার চেষ্টা করছিলেন সে কি টেররিষ্ট কিংবা কোন ভয়াবহ অপরাধী কী না, যে নেদারল্যান্ডসে চলে যেতে চায় তাকে ফাঁকি দিয়ে। শ্বেতাঙ্গ ভাইয়া অবশ্য খুব আরামদায়ক ভঙ্গীতে ছিলেন, অহনা কফি খাবে কিনা তাও এক ফাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন এমনকি চলে আসার সময় তাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেলেন। এরি মধ্যে ফ
অহনার অজানা যাত্রা
বেশ হুড়মুড় করেই ধরতে গেলে অহনার বিয়েটা হয়ে গেলো অর্নর সাথে। পাত্র অর্ন বিদেশ থাকে, তার ছুটি ফুরিয়ে এসেছিলো প্রায় এই মেয়ে বাছাবাছি করতে করতেই, অবস্থা অনেকটা সে পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে বিয়ে না করেই অর্নকে আবার কর্মস্থলে ফিরে যেতে হবে, যদিও পাত্রপক্ষীয় প্রথানুযায়ী অর্ন ছুটিতে আসার আগে থেকেই অর্নের পরিবার মেয়ে বাছার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ঠিক যেনো মিলাতে পারছিলেন না। এই মেয়ের বাবা পছন্দ হয়তো ভাই না, সে মেয়ের ভাই পছন্দ হয়তো মেয়ে না। সেই অন্তিম মূহুর্তে একজন কমন বন্ধুর মারফত পাত্রপক্ষের পাত্রীপক্ষের যোগাযোগ হলো। তারপর মেয়ে দেখার সেই চিরন্তন পালা। তবে অহনাকে স্বীকার করতেই হবে সে ভাগ্যবতী বর্তমান সময়ে জন্মানোর কারণে। আজকের আধুনিক সমাজে পড়াশোনা জানা সোকলড আধুনিক শিক্ষিত লোকজনের ভিতরে যাইই থাকুক, সবার সামনে আর সেরকমভাবে মেয়ের হাতের আঙ্গুল, পায়ের গোড়ালির পরীক্ষা তারা নিতে পারেন না, সাজানো মুখোশ খু
মেঘ পিওনের ব্যাগের ভিতর
শীতের তীব্রতা কেটে গেলে আমরা স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলের লোকেরা গুহা থেকে মাথা বের করি। দেখি আহা নীল আকাশ কতো ব্ল, ফুলের কতো রঙ, প্রজাপতির কতো ঢঙ। মাঝে মাঝে আবার এসব রঙ - ঢঙ দেখার জন্য পকেটের পয়সা খরচ করে ইতি উতিও যাই। আজকে এসব ইতি উতি ঘুরার কিছু নমুনা পেশ করবো। এবারের ইতি উতি হলো, বেলজিয়ামের আরডেন। Dochamps & Durbuy. আমার নতুন কেনা Lumix এর সৌজন্যে।
শুভ নববর্ষ ১৪১৭
বাংলা নতুন বছর উদযাপনের প্রতি আমার আগ্রহ অসীম। কেনো এই টান আমি নিজেও জানি না। এমনিতেই আমি পার্টি এ্যনিম্যাল কিন্তু বাংলা নতুন বছর নিয়ে আমার যেটা হয়, সেটা হলো উন্মাদনা। এ উন্মাদনা নিয়ে অনেক মজার এবং বেমজার ঘটনাও ঘটে।
প্রজাপতি মন আমার
মেয়ের স্কুল থেকে নানান ধরনের চিঠিপত্র আসতেই থাকে। সারাদিন অফিস ঠেঙিয়ে বাড়ি ফিরে এই হলো আমার হোমওয়ার্ক। মেয়ের বিভিন্ন বিষয়ের বিভিন্ন রকম ব্যবস্থা গ্রহন করা। তারা বাইরে খেলতে যাবেন অমুকদিন তাদেরকে যেনো অমুক কাপড় আর তমুক স্যু দিয়ে দেই। অমুক দিন তমুক টীচারের জন্মদিন, টিফিন দিতে হবে না বাসা থেকে, হেনতেন ভেজালের চিঠি আসতেই থাকে। আজকেও মেয়ের স্কুল ব্যাগ খুলে চিঠি পেয়ে বিরস বদনে পড়ছি, হঠাৎ বুকের মাঝে ধাক্
স্মৃতি হয়ে শুধু আছি ছবি হয়ে রয়ে গেছি
অনেকদিন ধরে লেখালেখি বন্ধ, নানা কারণ আর অকারণে। আজ কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে কিন্তু অভ্যাস চলে যাওয়াতে কোথা থেকে শুরু করব ঠিক বুঝতে পারছি না কিংবা ভাবনাগুলোকে ঠিক গোছাতে পারছি না। অথচ অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে। মনটা বিক্ষিপ্ত থাকলে, লেখার খাতায় আঁকিবুকি মনটাকে অনেকটাই শান্ত করে আনে। লেখালেখি আমার জন্য অনেকটা প্রার্থনার কাজ করে অনেক সময়। ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে সারাটাদিন ধরে। প্রচন্ড ব্যস্ততার জন্যই হয়ত
কিছু সেটআপ গেমসের গেটআপ কথাবার্তা
সৃষ্টির আদিকাল থেকে মানুষ জীবিকার সন্ধানে এদিক সেদিক ছুটছেন যার যার সামর্থ্য আর যোগ্যতানুযায়ী। কেউ মুন্সীগঞ্জের লঞ্চে ওঠে সদরঘাট নামে আর কেউ কুর্মিটোলার প্লেনে ওঠে ভিন দেশে নামে। যার যার যোগ্যতানুযায়ী তাকে অনেক ধরনের ট্যারা ব্যাঁকা প্রশ্নের মাধ্যমে ঝাঝড়া হয়ে, তীক্ষন এক্সরে মার্কা দৃষ্টির সামনে ফালা ফালা হয়ে তার গন্তব্যের টেবলে পৌঁছতে হয়। এরমধ্যে অনেক প্রশ্নই থাকে নেহাত গৎবাঁধা আর বেহুদা। প্রশ্নকর্
অস্কার বিজয়ী “আভাতার” ও ঢাকাই ঢিষ্টিং ঢিষ্টিং ফ্লিমের সাদৃশ্যসমূহ
অনেক কষ্টে পকেটের টাকা গুনিয়া দিয়া অত্যাধুনিক থিয়েটারে বসিয়া চোখে কালো চশমা পরিধান করিয়া তিন মাত্রায় বিস্তৃত (3D) অস্কার তথা সারা পৃথিবী বিজয়ী চলচিত্র “আভাতার” দেখিয়া আসিলাম। অনলাইনে ফ্রীতে দেখি নাই মজা নষ্ট হইয়া যাইবে বিধায়। সাধারন সিনেমার টিকিটের থেকে বেশি মূল্যে তিন মাত্রায় বিস্তৃত সিনেমার টিকিট কিনিয়া হলে বসিয়া বসিয়া আমি পাপিষ্ঠা ভাবছিলাম ঢাকাই ফ্লিমের সাথে এটার এতো মিল মিল লাগে ক্যান?
ভুলে থাকা
হঠাৎ একদিন বিকেলে শুভংকরের ফোন পেয়ে
খুব অবাক হলো অহনা, বলল, আবার ফোন কেনো
বেশতো চলছিল আমাদের এই ভুলে থাকার পালা।
সবাইকে বোঝাতে চায় অহনা ভুলে গেছে সে শুভংকরকে
নিজেকে একান্তে জিজ্ঞেস করে অহনা একি সত্যি?
একি ভুলে থাকা নাকি ভুলে থাকার অভিনয়?
'কখন' ভুলে থাকে অহনা শুভংকরকে?
সকালে মেল চেক করার সময় কি বুক ধুক ধুক করে না অহনার
মোবাইলে অজানা নম্বর থেকে মিসড কল এলে কি
কেনো ছেলেদের সাথে পরামর্শ করা যায় না ????
পুরুষ মানুষের সাথে জটিল কোন ব্যাপারে আপনি চাইলেও পরামর্শ করতে পারবেন না। আল্লাহ তাদের মস্তিস্কের এক পাশে আইসক্রীম দিয়া রাখছেন। এটা আমার কথা না, মহান মহান নারীদের এই উপলব্ধি। কিন্তু কেনো কেনো কেনো মহান আল্লাহ তা'লা তার সৃষ্টির পেয়ারা জীবকে এভাবে ঠকালেন??? জানতে হলে নীচের অংশটুকু আপনাকে পড়তেই হবে।
কাছের মানুষ দূরের মানুষ
দিনকে দিন যেনো সময় কমে আসছে। কথাটা কি ঠিক? না ঠিক নয়। সময় প্রত্যেকের জন্য সমান চব্বিশ ঘন্টা। আমরা আমাদের পছন্দের কাজ করতে করতে গুরূত্বপূর্ন জিনিসের জন্য সময় বের করতে পারি না। কিন্তু দোষ দেই সময় ব্যাটার ঘাড়ে। বই পড়া একসময় নেশার মতো ছিল। অফিসেও বকা খেয়েছি বই পড়ার জন্য। বাংলা বই পড়তেই বেশি ভালো লাগে। খুব ভালো বিখ্যাত কিংবা আলোচনাকারী বই না হলে ইংরেজী কিংবা ডাচ বই পড়ি না। মাতৃভাষাটাই কাছের মনে হয়।
একজন সুবিধাবাদিনীর পক্ষ থেকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা
অফিসে অসম্ভব ব্যস্ত আর বিভিন্ন কারনে মানসিকভাবে পর্যুদস্ত। বেশি ব্যস্ত থাকলে যা হয় কাজ হয় না বেশি কিন্তু ব্যস্ত ব্যস্ত ভাব নিয়ে সারাক্ষন একটা অকারণ টেনশান হতে থাকে। বিভিন্ন কারনে অকারনে বিভিন্ন ওয়েবগুলোতে বেশি ক্লিক করা হয়। মন বসাতে পারি না, কি করলে ভালো লাগতো তাও জানি না। জীবন সব সময় এক রকম থাকে না জানি, কিন্তু যা যা জানি তাও সব সময় মন থেকে মেনে নিতে পারি না। মেনে নেয়ার ক্ষমতা নিয়ে আমি পৃথিবীতে আ