বৃষ্টি ভেজা দিঘি ।
অনেকক্ষণ ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে আজ । ভার্সিটির ক্লাসের তিনতলার জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে ছেলেটি । তার নাম রানা , যতদুর চোখ যায় বৃষ্টি ভেজা এক বিশাল অরণ্য । সবুজ গাছের সাথে লতাগুল্ম একে অন্যের সাথে জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে আছে । উপর থেকে দেখে মনে হচ্ছে বৃষ্টি ভেজা এক কার্পেট বিছানো । রানা একটু অভাক হয়ে প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে ।
রানা খুব সাদাসিদে একটা ছেলে।সে কলেজ শেষ করে এখন ভার্সিটিতে পরছে । মানুষের সাথে তার মেলা মেশা তেমন একটা বেশি নয় । আর মেয়েদের সাথেতো প্রায় নেই বললেও চলে ।।রানা দেখতে এমনিতে খারাপ নয় ।ওর চেহারাতে কেমন একটা সাম্য ভাব রয়েছে । দেখে যেকোন মেয়েরই ভাল লাগার কথা ।
ভার্সিটিতে তার একাকী লাইফ খুব ভাল ভাবেই যাচ্ছিল। একদিন পড়ন্ত এক বিকালে ক্লাস শেষ করে ভার্সিটির ক্যান্টিনে গিয়ে ঢুকল। কিছু খাবার অর্ডার দেবার পর হঠাৎ ওর নজর গিয়ে পড়ল তার সামনের চেয়ারের উপর। সেখানে মোটামুটি দামি একটি মোবাইল পরা। আসে পাশে তাকিয়ে কাউকেই দেখতে পেলনা । সে ভাবল এটা আবার কার ফোন,কে ফেলে গিয়েছে?আমি কি এটা তুলব? একমূহুর্ত দ্বিধা করে ফোনটি তুলে নিল ।মনে মনে ভাবল যার ফোন আমি তার কাছেই ফিরিয়ে দেব যদি আমাকে ফোনে বলে ।বাসায় আসার পর কিছুক্ষন পরেই কল পেল ফোনটি থেকে ।অপাশে একজন মেয়ে কন্ঠঃ
হ্যালো কে বলছেন?
জ্বী আমি রানা এটা কি আপনার ফোন?
হ্যা ভুল করে আমি ভার্সিটির ক্যান্টিনে ফেলে এসেছিলাম।
তাই নাকি?
হ্যা । আপনি কি আমাকে এটা আগামীকাল ফেরত দিতে পারবেন?
পারব ।কিন্তু আপনার নামটাতো জানা হলোনা?
জ্বী আমি নীলা ।
আমি আপনাদের ভার্সিটিতেই পরি নীলা ।
তাই নাকি ?
হ্যাঁ । আপনি কোন সেমিস্টারে ?
আমি ফাস্ট সেমিস্টারে ।
তাই আমিও আপনার সাথে কিন্তু অন্য বিভাগে ।
ভাল লাগল আপনার সাথে পরিচয় হয়ে কিন্তু আপনাকে কীভাবে মোবাইলটি ফেরত দিব ? কাল থেকে ভার্সিটি বন্ধ আগামি শনিবারের আগে খুলবেনা।
রানা আপনার যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে কাল আপনি যদি একটু কষ্ট করে কাল আল হামরা মার্কেট এর সামনে আসেন তাহলে আমাকে পাবেন ।
অবশ্যই পারব,
আপনি কাল ১১:৩০ মিনিটে থাকবেন ।
আমি আপনার মোবাইলটি নিয়ে আসব ।আপনি আমার জন্য ওয়েট করবেন ।
ঠিক আছে তাহলে এখন রাখি আশা করি আগামীকাল দেখা হবে ।এরপরই ওপাশ থেকে লাইন কেটে গেল ।রানা মনে মনে ভাবল মেয়েটির গলা কি সুন্দর মেয়েটিও কি ঐরকম সুন্দর? মেয়েদের প্রতি ওর দুর্বলতা নেই তবুও ফোনে কথা বলে মনের ভেতর জানি কেমন করছে ।
পরের দিন রানা সময় মত গিয়ে হাজির হল সেখানে ।কিন্তু মার্কেটের এত লোক এর ভিতর থেকে নীলাকে আলাদা করতে পারলনা ।কিছুদূর গিয়ে সে দেখতে পেল একটি মেয়ে নিল স্কার্প পরা। মেয়েটিকে কেমন যেন চেনা চেনা লাগল । তাদের ভার্সিটিরই কিন্তু কোন বিভাগের তা ঠিক জানা নেই ।
কাকে যেন খুজছে সেই মেয়েটি । একটু দ্বিধা করে সে মেয়েটির সামনে গিয়ে জিঞ্জেস করল এক্সসকিউজমি আপনি কি নীলা?
জ্বী মেয়েটি একটু বিব্রত হয়ে বলল আপনি মনে হয় রানা?
হ্যা আমি রানা ।
এরপরই ছেলেটি মোবাইলটি বের করে মেয়েটিকে দেয়।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।জ্বী চলুল আমরা দুজন কোন রেস্টুরেন্ট এ বসে কথা বলি ।অফার দিল ছেলেটি।
হ্যা চলুন ।দুজনে এরপর একটি রেস্টুরেন্ট এ ঢুকল ।মেয়েটির সাথে রানার অনেক কথার হল ।
জানতে পারল সে তাদের ভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী । রানার সাথেই
কিন্তু দুজন আলাদা বিভাগে ।
আপনাকেতো মাঝে মাঝে আমি ভার্সিটিতে দেখাতাম । নীলাকে বলল রানা ।
প্লীজ আপনি বলা বাদ দাও । আমরা দুজন একই সাথে তুমি বললেও পার ।
হ্যাঁ ঠিকই বলেছ আসলে সময় বয়সীকে আপনি বলা আহ্লাদ ছাড়া আর কিছুই নয় ।
মুচকি হেসে নীলা বলল, ঠিক কিন্তু তুমি কোন ডিপার্টমেন্টে ।
আমি বিবিএ তে আছি ।
তাই তাহলে আজ উঠি আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায় যেতে হবে ।
বিদায় নিয়ে আসার পর রানার মন কেমন যেন ফুরফুরে লাগছে । হঠাৎ ওর মনে হল মেয়েটির সাথে কথা বলে ওর এরকম লাগছে কেন ? যাকগিয়ে আমার ভার্সিটিতে যখন আছে দেখাতো আবার হবেই।
এভাবেই দুজনের পরিচয় ।কিন্তু ওরা দুজন একজন আরেক জনকে বন্ধু বলেই জানত । তারা দুজন মোবাইল ফোনে অনেক কথা বলত । নীলা মাঝে মাঝে রানার কল রিসিভড করতনা । খুব রেগে যেত রানা এতে কিন্তু নীলাই পরে ওকে আবার কল ব্যাক করত, বলত সরি বন্ধু আমার ফোন সাইলেন্ট ছিল।আর সাথে সাথেই রানার রাগ কমে যেত । এভাবে রানা বুঝতে নীলাকে সে আর বন্ধু হিসাবে ভাবতে পারছেনা।সে আসলে আরও অনেক কিছু ওর।ভেবে মাঝে মাঝে অভাক হয় রানা আমারতো মেয়েদের প্রতি দুর্বলতা ছিলনা কিন্তু এই মেয়েটি কীভাবে আমার লাইফ বদলে দিল।সে অনেক চেষ্টা করেও তার মনের কথা নীলাকে বলতে পারতনা, সে যে নীলাকে ভালবাসে।ওর ভয় হত নীলা যদি ওকে ছেড়ে চলে যায়।কিন্তু অবশেষে ঠিক করল নীলাকে ওর মনের কথা জানাবে। একদিন রানা ফোনে নীলাকে বলল
নীলা কাল একটু ইকোপার্কে আসতে পারবা ?
পারব কেন?
কোন সমস্যা?
না তোমার সাথে একটু কথা আছে
।ঠিক আছে কখন আসব?
বেলা এগারটার দিকে ।ঠিক আছে আসব ।পরদিন নীলা গিয়ে দেখল রানা আগেই হাজির ।আকাশটা ছিল মেঘলা ।
কি ব্যাপার?আজ এই সময়ে কেন ডাকলা?
নীলা আগে চল কোথাও বসি ।
পার্কের একটি দিঘির পারে বসে রানা তার মনের কথা জানাল ।সে তাকে ভালবাসে ।
শুনে নীলা অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল আমাকে আগে কেন বলনি?
নীলা আমি ভেবে ছিলাম তুমি যদি আমাকে ছেড়ে চলে যাও ।
না রানা তোমাকে ছেড়ে গেলে আমি আরও আগেই চলে যেতাম ।আমিতো আরও আগে আশা করেছিলাম বলতে গিয়ে নীলার গলা ধরে এল ।নীলা রানার ঠোঁটে ঠোঁট স্পর্স করে বলল রানা তুমি কি আমাকে সত্যিই ভালবাস?
তোমার কি মনে হয় নীলা?তুমি যদি ভাব হ্যা তাহলে তাই ।
রানা জান আমি আগেই জানতাম তুমি আমাকে ভালবাস।
মানে তুমি কীভাবে জানতে ?
আমি তোমার চোখের দিকে তাকালে মাঝে মাঝে মনে হত তুমি কিছু বলতে চাও । বল আমিকি ভুল বলেছি । কোন কথা না বলে রানা হেসে উঠল ।
নীলা তুমি কি গান গাইতে পার?
একটু হেসে নীলা বলল পারি।
তাহলে গাও ।
নীলা তখন তার গান ধরল:
গান গাওয়ালে আমায় তুমি
কতই ছলে যে
কত সুখের খেলায়
কত নয়নজলে হে
.........ঝিরঝির করে তখন বৃষ্টি শুরু হল ।সেই বৃষ্টি ভেজা দিঘিতে সেটিই ছিল প্রথম ভালবাসার দুপূর ।
খুব ভালই যাচ্ছিল তাদের সময় । মাঝে মাঝে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ওরা ঘুরত, ফাস্ট ফুডের দোকানে ফুচকা খেত ।এভাবে কেটে গেল প্রায় একবছর । একদিন নীলা রানাকে সেই দীঘির পাড়ে ডাকল।
সেদিন ছিল রানার জন্মদিন তাই নীলা তাকে উপহার দেবার জন্য আবার সেই দিঘির পাড়ে ডেকেছিল ।নীলা বলেছিল আমি আসব তুমি অপেক্ষা করবে ।সেদিন সময়মত পৌছে রানা দেখে নীলা তখনো আসেনি ।ভাবল হয়ত একটু দেরি হবে।কিন্তু এভাবে অনেকক্ষণ হয়ে গেল নীলা আসছেনা ।রানার মোবাইল বেজে উঠল সে দেখে নীলার বান্ধবি রিনিয়া ফোন দিয়েছে ।
হ্যালো রিনিয়া কি ব্যাপার ?
রানা তুমি কই? নীলার ব্যাপারে শুনতে চাও?
রিনিয়া কি হয়েছে নীলার?
ও অ্যাক্সিডেন্ট করেছে এখন হাসপাতালে
কি বলছ এসব?
হ্যা শুন রানা তুমি তাড়াতাড়ি সিটি হাসপাতালে চলে আস ওর অবস্থা গুরুতর।
আমি আসছি বলেই রানা হাসপাতালের দিকে ছুটল । পথে ওর মাথা ঠিক মত কাজ করছিলনা।হাসপাতালে গিয়ে রিনিয়ার কাছ থেকে জানতে পারল নীলা রাস্তা পার হবার সময় একটি বেপরোয়া গাড়ি ওকে ধাক্কা দেয় ।সাথে সাথেই নীলা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ।এখনও ফিরেনেই এবং ফিরার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
কিন্তু আমি কি ওর রুমে ঢুকে ওকে দেখতে পারবনা?রিনিয়া বলল কিন্তু তোমার রুমে যাওয়া কি ঠিক হবে ? সেটা আমি পরে বুঝব বলেই জবাবের অপেক্ষা না করেই রানা সবাইকে এড়িয়ে নীলার কেবিনে ঢুকে গেল ।
গভীর অন্ধকার থেকে আস্তে আস্তে চেতনা ফিরে আসছে নীলার ।একটি মুখ সে দেখতে পাচ্ছে আবছা আবছা । কে যেন তাকে অনেক কোমল সুরে ডাকছে ।“নীলা তুমি উঠে পর আমি তোমার কাছে এসেছি”
নীলা আবার গভীর ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছিল ।
হঠাৎ তার কিছু একটা মনে পরে গেল।
পরক্ষনেই তার বুকের ভিতরে ভালবাসার একটি স্রোত বাধ ভেঙ্গে ছুটে আসতে থাকে ।ভালবাসার জন্য তার বুভুক্ষ হ্রদয় হাহাকার করে উঠে।সে প্রাণপণে চেষ্টা করে জেগে উঠার । সেই মুখটিকে তার আবার দেখতে হবে যেভাবেই হোক।
জ্ঞান ফিরার পর সে রানাকে দেখতে পায়। সে অনেক কষ্ট করে বলল তুমি কাদছ কেন রানা?
। হাসপাতালের রুমে দুজনের চোখের পানি উচ্ছ্বাসিত হয়ে উঠে ।
রানা, আবার বলল নীলা আমি তোমার হতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারলামনা ।তুমি আমাকে মাফ করে দিও ।
এটাই ছিল নীলার শেষ কথা ।মৃত্যুর আগপর্যন্ত সে রানার হাত শক্ত করে ধরেছিল।
ছয় বছর পরের কথা
কি হলো অমন চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছ?রানাকে বলল তার স্ত্রী ফারহানা ।
তোমাকে ।
তাই ?
তারা দুজন সেই দিঘির পাড়ে বসে আছে ।
আচ্ছা রানা তুমি কি আমাকে সত্যিই ভালবাস?
হঠাৎ রানার বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠল । ঠিক অর্ধযুগ আগে নীলাও তাকে এই কথা জিজ্ঞেস করেছিল ।সে কি বলেছিল তা এখন আর মনে করতে পারছেনা ।
।ফারহানা রানার বুকে মাথা রাখল ।
ঠিক তখনই ঝিরঝির করে বৃষ্টি শুরু হল ।রানার মনে পড়ল সেই গানের কথা ।
গান গাওয়ালে আমায় তুমি
কতই ছলে যে
কত সুখের খেলায়
কত নয়নজলে হে.....................।
ছয় বছর আগে নীলার কথা রানার আবার মনে পরে গেল । ধীরে ধীরে চোখ ঝাপসা হয়ে তার । মনে হল ফারহানার মাঝেই ওর নীলা আবার ফিরে এসেছে ।
========================================================================================
এই গল্পের গানটি কবি গুরু রবীন্দ্র নাথের বই থেকে নেয়া । লেখার ক্ষেত্রে কোন ভুল হয়ে থাকলে মাফ করবেন ।
ভালো লাগলো। লিখে যান!
ভাল গলপ
বানান ভুল অনেক
অবাক, স্কার্প নয় ফ, স্পর্স হবে শ দিয়ে।
রানা বলতে না বলতেই মেয়ে চুমু খেতে গেলো ব্যাপারটা বেশি নাটকীয় লেগেছে
আপনার গল্প টা ভাল কিন্তু লেখাটা অগোছালো । পর্ব করলে আরো ভাল হত।
হুম।
আপনাদের মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । সামনের দিকে আরও ভাল করে লিখার চেষ্টা করব ।
ভাল। লিখতে থাকুন।
মন্তব্য করুন