অজানা পরি ।
আজ প্রথমেই ভার্সিটিতে মেয়েটির সাথে লিফটে উঠার সময় দেখা । তেমন একটা গুরুত্ত দেইনি । কত মেয়েইতো এরকম প্রতিদিন দেখি । যাইহোক আমার বন্ধু পান্থর ফ্লোরে মানে আঁট তালাতে উঠার পর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল বাজে মাত্র ১১.৪৫ ওদের ক্লাস এখনও চলছে, আমাকে যে কমপক্ষে পৌনে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে । তার উপর বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে এখানে এসেছি ।
কোন উপায় না দেখে তখন গিয়ে বসলাম লাইব্রেরীতে । ওখানে গিয়েই জাহাঙ্গির ভাইয়ের সাথে দেখা যিনি পান্থদের বড় ভাই । উনি এগিয়ে এসে আমার সাথে হাত মিলিয়ে ভাল মন্দ জিজ্ঞাস করলেন এবং পান্থর কথা বললেল যে সে এখনও ক্লাসে । সময় যে কাটছিলনা তাই আবার লাইব্রেরী থেকে বের হয়ে গেলাম । মাথায় তখন দুষ্ট বুদ্ধি চাপল যাই নিচের “ল” ডিপার্টমেন্টে গিয়ে একটু সানীকে দেখে আসি । আমি পান্থদের ক্যাম্পাসে আসি মূলত সানীকে দেখতেই । মেয়েটিকে অনেকদিন ধরেই ভালবাসি । কিন্তু চোখাচুখি ছাড়া আর কিছুই হয়নি এখন পর্যন্ত ।
“ল “ ডিপার্টমেন্টে গেলাম সানীকে দেখতে । কিন্তু বিধিবাম ওরও কোন দেখা পেলামনা । হয়তো ওর কোন ক্লাস আজ ছিলনা ।
হতাশ হয়ে উঠে গেলাম CSE ডিপার্টমেন্টে সেখানে গিয়ে আবার সেই মেয়েটিকে দেখলাম । সেখানে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে আবার পান্থর ডিপার্টমেন্টে চলে এলাম । আমি সেখানে এক্কেবারে পিছনে যে চেয়ারগুলো ছিল ওখানে বসে ফেসবুক চালাচ্ছিলাম আমার সেই সস্থা মোবাইলটি দিয়ে ।
আবার দেখলাম মেয়েটি আমার পাশ দিয়ে হেঁটে এক্কেবারে দেয়ালের কোণে গিয়ে দাড়িয়ে আছে । আমি তখন ভাবলাম হবে হয়ত কেউ , ক্লাস শেষের মত অপেক্ষায় আছে আমার মত । আমি আবার একঘেয়েমি কাটানোর জন্য লাইব্রেরীতে চলে গেলাম । তখন লাইব্রেরীতে বেশ স্টুডেন্ট ছিল । কেউ গল্প গুজবে মশগুল কেউবা আবার গ্রুপ স্টাডি করছে ।
আমি সেকেন্ড লাইনের চেয়ারে বসে ফেসবুক চালাচ্ছিলাম । ঠিক তখন সেই মেয়েটি লাইব্রেরিতে এসে আমার পাশের চেয়ারে বসল ( দুই একটি চেয়ার খালি থাকা সত্তেও ) একদম ক্লোজ হয়ে বলা যেতে পারে । মানে খুব একটা দুরুত্ব ছিলনা । আমি ভদ্রতার খাতিরে চেয়ারটা একটু সরিয়ে বসি । মেয়েটিও বসে আছি আমিও বসে আছি । একটু পরপর মেয়েটি আমার দিকে তাকাচ্ছে আমি মোবাইল চালানো করা সত্ত্বেও সেটা দেখেতে পাচ্ছি আর চোখে ।
একটু পর মেয়েটি আমাকে জিজ্ঞাস করল , তোমার কি এখন এখানে কোন কাজ আছে ?
আমি বললাম না , আমি আমার বন্ধুর সাথে দেখা করতে এসেছি । ওর ক্লাস সাড়ে বারোটায় শেষ ।
মেয়েটি বলল , ও ।
আচ্ছা ভাইয়া তুমি কোন ডিপার্টমেন্টে ।
আমি বললাম বিবিএ তে ।
মেয়েটি আবার জিজ্ঞাস করল কোন ইয়ারে
আমি জবাবে বললাম , থার্ড ইয়ার প্রথম সেমিস্টাররে । এরপর আমি তাকে প্রশ্ন করলাম ।
আপনি কোন ইয়ারে আপু ?
মেয়েটি উত্তর দিল আমি CSE তে আমার অনার্স শেষ । আমি শুধু প্রোজেক্ট রিপোর্ট জমা দিতে এসেছি । কিন্তু টিচাররা সব এখন মিটিঙে ।
আমি এতক্ষনে বুঝলাম । তিনি কেন প্রথম পরিচয়েই আমাকে তুমি করে সম্মন্ধন করছিলেন । কারন তিনি আমার থেকে অনেক সিনিওর । তখনই হালকা পাতলা আলাপ শুরু হল । তিনি বললেন আমাদের বিবিএই নাকি ভাল গ্রাজুয়েশন শেষে ভাল বেতনের ইন্টার্নি করা যায় । কথা বলার সময় এই প্রথম আমি আপুটির দিকে তাকালাম ভাল করে । মাথায় বেগুনি রঙের হিজাব পরা । নরমাল ভদ্র গোছের জামা পরা । গায়ের রঙ শ্যামলা কিন্তু চেহারাতে একটা মায়াবি ভাব আছে যে দেখে যে কোন ছেলেরই ভাল লাগার কথা । হালকা ছিপছিপে গড়ন , আমার মনে হয়েছিল একুশে গল্পের তপুর স্ত্রী রেণুর কথা । তাকে দেখে মনে হল কোন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ।
কথাবার্তা আরও বেশ কিছুক্ষণ হল বিভিন্ন ব্যাপার নিয়ে । যখন উঠে যাচ্ছিলেন তিনি( হয়তো ততক্ষনে টিচারদের মিটিং শেষ ) তখন বলে বসলেন অহ হো ভাইয়া তোমার নামটা তো জানা হলনা ।
আমি হেসে বললাম , রবিন ।
ওকে ভাইয়া রবিন ভাল থেকো আসি তাহলে । এই বলে চলে গেলেন ।
যেভাবে অজানা পরির মত এসেছিলেন সেভাবেই চলে গেলেন ।
আমি তখন আবার একা বসে রইলাম ।
কিন্তু আমি তার নামটা আর জানতে পারলাম না ।
সংকোচের কারণে আর জিজ্ঞাস করতে পারলাম না ।
নামটা অজানাই রয়ে গেল ।
ভাল তো ! এক বস্তা হতাশা ।।
ওহ, স্যাড
মন্তব্য করুন