এসএসসি নিয়ে কিছু ভাবনা... এবং বাস্তবতা
দু দিন আগেই এসএসসির পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকায় পড়লাম পরীক্ষায় পাশ করা এক ছাত্রীর মা বলছে "সাফল্যের পেছনে কৃতিত্ব স্কুলের নয়, আমাদের"। বিষয়টা অনেকেই কিন্তু গুরুত্ব দিয়ে দেখে নাই। হাজার হাজার এপ্লাসের ভীড়ে এই সংবাদটা অনেকেরই চোখে পরে নাই।
আমার বাচ্চাটা (ঋহান) মাত্র স্কুলে যাওয়া শুরু করছে। এই শুরুতেই কিছু বিষয় আমি দেখেছি। সামনে হয়তো আরো অনেক কিছু দেখতে হবে। সে মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই ঋহানকে নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছি। স্কুল শুরুর এই সময়টাতেই আমরা যা দেখেছি...
১. ভালো স্কুলে ভর্তির জন্য দুই বছরের কোচিং করতে হবে (ওই স্কুলের নির্ধারিত কোচিং সেন্টারে);
২. ভর্তি পরীক্ষায় না টিকলে পরের বছর বয়স কমিয়ে আবার পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে;
৩. পরীক্ষায় যদি চান্সও পায় ভর্তির সময় ডোনেশন নামের এককালীন টাকা দিতে হবে;
৪. অনিচ্ছা সত্ত্বেও আপনার বাচ্চাকে প্লে গ্রুপে দিতে হবে... নয়তো প্রতিযোগীতার এই বাজারে আপনি এবং আপনার বাচ্চা পিছিয়ে পরবে;
৫. ফর্ম আনার সময় আগের দিন সন্ধ্যায় গিয়ে স্কুলের গেটে লাইন ধরতে হবে।
এ তো গেলো শিশু শ্রেণীতে ভর্তি প্রক্রিয়ার কথা। ভর্তীর পর কি হবে? ভালো স্কুলে প্রতি বিষয়ে ওই শিক্ষক মহোদয়ের কাছে প্রাইভেট না পড়লে অথবা ওই ক্লাসের শিক্ষকদের নির্ধারিত কোচিংয়ে না পড়লে খাতায় মার্কস জুটবে না। টিচারের কাছ থেকে বাজে আচরণ সহ্য করতে হবে। হয়তো কোন পরীক্ষায় ফেলও কপালে জুটতে পারে।
প্রতিদিন সকালে বাচ্চাটাকে নিয়ে মা'র ছুটে চলা... সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা। বাবা-মা'র পরিশ্রম এবং অনেক কিছু স্যাক্রিফাইজ করে বাচ্চাটাকে একটা ভালো স্কুলে পড়ানো... এর পরেও কি ভালোভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য স্কুলকে ক্রেডিট দিবো নাকি ওই ছাত্র/ছাত্রী বাবা-মা'কে?
নতুন এক যুদ্ধ ক্ষেত্র... যেখানে আমরা আমাদের শিশু বাচ্চাটাকে আনন্দ উল্লাসে বেড়ে উঠতে না দিয়ে প্রচণ্ড পড়া'র চাপে তার শৈশব কৈশরকে দূর্বিসহ করে তুলতেছি।
এই নিয়মটা আমি চাই না.... আমি চাই আমার বাচ্চাটা লেখাপড়ার মাঝে আনন্দ খুজে পাক... সে খেলার সময় পাক... নয়তে তার বড় হয়ে ওঠার মাঝে অনেক ধরনের শারীরিক অসঙ্গতিতে পরতে পারে।
আমার সবচেয়ে ছোট বোনটা ঠিক একই অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। দেখলে মায়াই লাগে।
এই পানিশমেন্ট থেকে বাচার কোন উপায় দেখতেছি না
অথচ আমাদের সময়ে স্কুলের মজাই ছিল আলাদা।
তখন আমরা স্কুলে যেতে চাইতাম
আমি ভয় পাচ্ছি।
ইস্কুল লাইফ হারাইয়া গেছে পিচ্চিবেলার সাথে সাথে। ভয়ংকর দুঃখজনক হতাশার একটা উপলদ্ধি।
(
বাংলাদেশের বাচ্চারা স্কুলের আনন্দ কী জিনিস সেটা জানতে পারলো না। আমরাই হয়তো লাস্ট বেঞ্চ ছিলাম যারা কিছু আনন্দ পেয়েছিলাম
আমার স্কুললাইফও উপভোগ্য ছিল এবং এখনকার মতো সুপার কম্পিটিটিভ না।
এখনকার বাচ্চাদের দেখে আসলেই দু:খ হয়
আসলেই যুদ্ধ। বাচ্চাগুলার কাঁধে বিশাল এক ব্যাগের বোঝা দেখেই তো মায়া লাগে।
আমাদের মতো উচ্ছল শৈশব, কৈশোর ওদের নেই
সেইটাই
তারপর নতুন এক রোগ শুরু হইছে মহামারী আকারে। সেক্ষেত্রে মেয়ে বাচ্চাদের কথা চিন্তা কর! পদে পদে তাদেরকে এখন আগলে রাখার চিন্তায়ই অস্থির থাকেন অভিভাবকরা।
চারিদিকে যা শুরু হইছে.... অস্থিরতো লাগারই কথা
আমার ছোটবেলায়ও আম্মা কঠিন বিধিনিশেধের মধ্যেই রেখেছে। কত সময় অভিমান হয়েছে, কষ্ট পেয়েছি। এখন বুঝি একটা মেয়ের নিরাপদে বেড়ে উঠার জন্য মায়েদের কত দুশ্চিন্তায় কাটাতে হয়। তবে একটু বড় হয়ে স্কুলে তো একাই গিয়েছি, বাজারের মধ্য দিয়ে স্কুলে যেতে হতো। এত এত মানুষ কিন্তু এমন আতংক ছিলো না কখনো।
আমার মনে হয় সবকিছুর পেছনে একটা শক্ত ভূমিকা আছে কোচিং ব্যাবসার।
সেখানে কেউ হাত দেয় না
যুগান্তরে একবার সিরিয়াস রিপোর্টিং হইছিল এ ব্যাপারে। সে সময় অল্প কয়েকদিনের জন্য আইডিয়াল স্কুলের কোচিং মুঘলরা ব্যাবসা গুটায়ে ভাল মানুষ হয়ে গেছিল।
গণমাধ্যমগুলোর এই এজেন্ডা নিয়ে এবার একযোগে মাঠে নামা উচিত।
সমুদ্দুরের আগামী বছরের ভর্তি আর পড়াশুনা নিয়ে প্রায়ই তার মায়ের অসহায় আবদার বা আকুতি শুনি। চুপ করে থাকি। কী বলবো। বলারতো আসলে কিছুই নেই। বাণিজ্যের শুরুতো শিশুকাল থেকেই...
বলে রাখা ভালো, আমাদের সময়ে প্লে, নার্সারি, কেজি ওয়ান, টু এইসব ছিলো না। হাতের লেখা সুন্দরের জন্য মার হাতের কত মার যে খেয়েছি। প্রাথমিক সব পড়াশুনা মার কাছে ঘরে শেষ করে তারপর এক্কেবারে ক্লাস টুতে ভর্তি হয়েছিলাম... আর এখন ???
মন্তব্য করুন