বাংলাদেশের দর্শককুল...
একটা সময় ছিল যখন ঢাকা স্টেডিয়ামে মোহামেডান আবাহনীর জাম্পেস খেলা হইতো... গ্যালারী টিকেট পাওয়া যেত না। খেলার দিন মাঠের কাউন্টারে বিশাল লাইনে টিকেট কেনা... সদলবলে খেলা দেখা... প্রতিটা মহল্লায় দুই দলের সমর্থকদের পতাকা টাঙ্গানোর প্রতিযোগীতা... আসলে সে এক উত্তাল সময় ছিল।
মোহামেডানের বিশাল একটা সমর্থকগোষ্টি ছিল ঠাটারী বাজার টু নয়াবাজারের কসাই সম্প্রদায়। শোনা যেত সেই সময় মোহামেডান বিজয়ীর দিন মাংসের দাম কমাইয়া দেয়া হইতো।
ঢাকা স্টেডিয়ামের শেষের দিনগুলোতে মাঠের দর্শকদের অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালির সাথে তখন থেকেই পরিচিত। মাঝে মাঝে মনে হইতো কানে তুলা দিয়া খেলা দেখতে যাই। খেলা চলাকালীন সময়ে ঢাকা স্টেডিয়ামের নিচ দিয়ে হেটে যাওয়া পথচারীদের বৃষ্টিছাড়াই ভিজে যাওয়ার কথা নাই বা বলি
ফুটবল খেলাটা যখন মিরপুর ট্রান্সফার হলো... দর্শকদের মান সেখানটায় হুট করে আরো এক ধাপ নেমে গেলো। খেলার সময় খিস্তিখেউর ছাড়াও খেলা শেষে তখন ঠিকমতো বাড়ি যাওয়াটা সৌভাগ্যের বিষয় ছিল। মিরপুর মাঠের পেছন দিকটা তখন ছিলো কৃষি জমি। মিরপুরটা ছিল আবাহনী অধ্যুষিত এলাকা। মোহামেডান আবাহনীর কোন এক খেলায় আবাহনী হেরে যাওয়ায় মোহামেডান গ্যালারী থেকে বের হতে পারছিলাম না। গেটের বাইরে আবাহনীর সমর্থকরা ছুরি, চাকু, হকিস্টিক নিয়ে দাড়িয়ে ছিলো... পরে অন্য এক গেট দিয়ে পর্যাপ্ত পুলিশ দেখে বের হয়ে পেছন দিয়ে হাটতে হাটতে প্রায় গাবতলী দিয়ে মূল সড়কে উঠেছিলাম।
সেই সময় মিরপুর থেকে ফেরার পথে এমন অঘটন ছিল খুবি সাধারণ বিষয়। জনসম্মুখে মাস্তানিটা ছিলো চোখে পরার মত। আমার এক সহকর্মী খেলা দেখার জন্য টিকেট কিনে স্টেডিয়ামে ঢুকতে ছিলো... সে সময় একজন "খুড়" দিয়ে এক টানে ভুরি কেটে হাতের টিকেট গুলো নিয়ে যায়... সে পেটে হাত দিয়ে চেপে ধরে একটা "বেবি ট্যাক্সি" নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে চলে আসে... ডাক্তার দেখে যেই না বলে যে, "আরে আপনের অবস্থাতো দেখি খুবি সিরিয়াস"... সাথে সাথে সেই কলিগ সেন্সলেস হয়ে যায়... এর পর বেশ কিছুদিন সে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বিজয়ী হয়।
সেই ফুটবল আর নেই... ক্রিকেটের জোয়ার সারা দেশ প্লাবিত। পরবর্তী সময়ের ক্রিকেট খেলায় বরং খিস্তি খেউর অনেক কম পেয়েছিলাম। ভদ্রলোকের খেলা বলে সুনামটা ধরে রেখে ছিল। কিন্তু বেশ কিছুদিন থেকেই দর্শকদের কাছ থেকে বাজে আচরণ দেখে আসছি... যেই কারণে সাকিবের স্ত্রী শিশিরকে নিয়ে কটূক্তির জন্যে তাই সাকিবকে প্রতিবাদ করতে কাঁটাতার পার করে চলে যেতে হয় গ্যালারিতে। তামিমকে ড্রেসিংরুমে যাওয়ার পথে গালির উত্তর দিতে হয়। তামিমের স্ত্রীকে ফোনে যা বলা হয় তা তামিম মুখ ফুটে বলতে পারে না।
গৌতমের সাথে বাজে আচরণ... ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাসে ঢিল। এসব যারা করছে... তারা দুরের কেউ না... আমাদের আশেপাশের লোকজনই করছে। ফেসবুকে তারাই আবার ভার্চুয়াল জিহাদ ঘোষণা করে ঘটনার যাস্টিফিকেশন দিচ্ছে। ঠিক বুঝতেছি না... অন্যায়কে অন্যায় বলার মত শক্তি কবে আমাদের মধ্যে তৈরী হবে। সে আশায় আসলে আর কত অপেক্ষা করতে হবে?
তাছাড়া গত ম্যাচে যেভাবে পানির বোতল উড়িয়ে উৎসব করতে দেখলাম সেটা নিয়েও কেউ কোন কথা বলছে না। কয়েকজনকে দেখলাম পানির বোতল উড়িয়ে মাঠে মারতে। সেই সময় সেখানে যদি কোন খেলোয়াড় থাকতো... এবং তার গায়ে লাগলে ... রেজাল্ট কি হইতো এই দর্শকদের কি সেই ধারনা আছে? যারা এই অকাজটা করেছে... তারা কতটা দেশের কথা ভেবেছে... আল্লাহয় জানে।
আশা করছি আগামী সময়গুলোতে দর্শকরা তাদের দোষগুলো দেখে শোধরানোর চেষ্টা করবে। আমাদের দর্শকদের আচরণ অস্ট্রেলিয়া/ইংল্যান্ড না হোক... অন্তত শ্রীলংকার মানে নিয়ে যেতে সচেষ্ট থাকবে। চমৎকার ভাবে দুটো ম্যাচ জয় শেষে জয়ের আনন্দে এভাবে কালিমা যেন আর না লেপা হয়। সুধিরের মত বিদেশী দর্শকরা বাংলাদেশ নিয়ে যেন অসুখি না হয় ... সেটাই হোক আজকের অঙ্গীকার।
সহমত, একমত।
হারবো, জিতবো। মনে কষ্ট হবে। আনন্দ হবে।
কিন্তু আনন্দে বা পরাজয়ে কোনোরুপ পশুর মত আচরণ করবো না...
এই হোক আগামী দিনের অঙ্গীকার।
কবে যে আমরা মানুষ হবো
লেখাটা ভাল লাগছে, খুবই সময়োপযোগী লেখা। আমরা একবার উত্তেজিত হয়ে পড়লে নিজেকে কোনভাবেই সামলাইতে পারি না। এই বিষয়ের ভাল ও খারাপ দুই দিকই আছে। ভাল দিকের কথা আগে বলি, কাদের মোল্লার 'ভি' চিহ্ন দেখে সেই যে উত্তেজিত হইলাম; ফলাফল- এ পর্যন্ত দুইটা রাজাকারের সাক্ষাৎ ফাঁসি। ৮-১০ বছর আগে ব্যাপারটা কল্পনা করা যাইতো? আবার খারাপ দিক হিসাবে উল্লেখ করা যায়, ক্রিকেট মাঠের ঘটনাগুলো কিংবা পহেলা বৈশাখের নারী নিপীড়নের কথাগুলো।
উত্তেজনা ভাল কিন্তু সময় বুঝে সেটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখাটা শিখতে হবে সবাইকে। (বিশেষ করে আমাকে
)। তাহলে পৃথিবীর সেরা ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের পাশাপাশি সেরা দর্শক সম্বলিত দেশের খেতাব বিজয় করাটা খুব একটা কঠিন হবে বলে মনে হয় না।
উত্তেজনা ভালু না
অন্তত ব্যাচেলরদের... এতে অ্যানার্জি লস হয়, অপাত্রে
তাহলে উপায় কি?
আনন্দ বিশৃংলতায় পরিণত হলে লজ্জাই লাগে দিন শেষে।
মন্তব্য করুন