ফ্রেমবন্দী অনুভব: ২
ক. প্রফেসর ব্রায়ানের সাথে যাচ্ছি কিছু ইন্টারভিউ নিতে, সুনামগঞ্জের কোনো এক জেলেপাড়ায়। তিনি একজন নৃতাত্ত্বিক, সম্প্রতি বাংলাদেশের সাক্ষরতার উন্নতি এবং এর সাথে মোবাইল ফোনের বিস্তৃতি তাঁর মনোযোগ কেড়েছে। একজন নিরক্ষর মানুষ কীভাবে প্রচলিত অক্ষর কিংবা সংখ্যার সাথে পরিচিত না হয়েও সাবলীলভাবে মোবাইল ব্যবহার করে যাচ্ছে- এটি তার বিস্ময়ের অন্যতম উৎস! গাড়িতে তিনি একের পর এক প্রশ্ন করে চলেছেন, আমি যথাসম্ভব উত্তর দিচ্ছি নিজের মতো করে এবং যেহেতু ছবি তোলার চেয়ে তাঁর প্রশ্ন করায় উৎসাহ বেশি এবং উল্টোদিকে আমার উত্তর দেয়ার চেয়ে ছবি তোলায় উৎসাহ বেশি- সুতরাং তাঁর ক্যামেরা এবারো আমার হাতে। তবে ব্রায়ানের ক্যামেরায় আমার ছবি তোলার এটাই শেষ পর্ব।
খ. সুনামগঞ্জের শহুরে এলাকা পার হতেই ধানক্ষেত। নিচু এলাকা, হাওর উঁকিঝুঁকি মারছে। হঠাৎ-ই গাড়ি থেমে গেল। তাকিয়ে দেখি সামনে শতশত হাঁস। হাওর এলাকায় অনেকে নিয়মিত হাঁস পালে বাড়িতে, তাছাড়া খামার তো আছেই। সুবিধা হচ্ছে- এসব হাঁস পালতে খরচ হয় খুবই কম, হাঁসের বিষ্ঠা দিয়ে মাছের খাবার হয়ে যায়! এরা খাবারদাবারেও তেমন একটা ঝামেলা করে না। হাঁসওয়ালা প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন কাঁচা রাস্তা থেকে হাঁসগুলোকে সাইডে নিতে- কিন্তু হাঁস কি আর কথা মানে! এমন সময় জানালার কাচ খুলে বললাম- ভাই, হাঁসগুলোর সাথে আপনার একটা ছবি তুলি। তিনি কি মৃদু হাসি দিলেন?
গ. আস্তে আস্তে আমরা সেনবাবুর এলাকায় প্রবেশ করলাম। ব্রায়ান একটা ঘরের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলো।
আমাদের সাথে আছেন স্থানীয় ওয়ার্ল্ডফিশের একজন কর্মকর্তা। এলাকার অনেক ঘটনার সাথে তিনি পরিচিত। তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, এই খালি মাঠে এমন একটা ন্যাংটা কংকালভবন একা দাড়িয়ে কী করছে? তিনি গল্প শুনালেন। সেনবাবু যখন প্রথমবার নির্বাচিত হন, তখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এ এলাকায় একটা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবেন। দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর বিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত জায়গায় মাটি ফেলা হলো। তৃতীয়বার প্রতিষ্ঠা করা হলো সিমেন্টের খুঁটিগুলো এবং শেষবারে এই টিনের চাল!
ঘটনাটা আগের, ইতোমধ্যে আমাদের এই বিদ্যালয়ের শরীরে কাপড় লেগেছে কিনা জানা নেই।
ঘ. জেলেপাড়ায় যাওয়ার আগেই দেখি মাছের বাজার। ছোট- বিক্রেতা ও ক্রেতা মিলে মাত্র ১৫-২০ জন। হাওরের কমে যাওয়া পানি থেকে তুলে আনা নানা ধরনের ছোটছোট মাছ সব! টপাটপ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, আমরা পৌঁছানোর আগেই সব বিক্রি হয়ে গেছে, তবুও আমাদের অনুরোধে একজন মাছ বিক্রি করছেন এমন একটা পোজ দিলেন।
ঙ. যথারীতি ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরকে পড়ালেখা নিয়ে হাবিজাবি নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছি। শিক্ষকের উপস্থিতিতে প্রথমদিকে একটু জড়তা থাকলেও শিগগিরই তারা সে জড়তা কাটিয়ে উঠে। ওদের পরপরই বড়দের সাথে বসার কথা- পাশের বাড়িতে বড়রা অপেক্ষা করছেন। খাতাপত্র গুটিয়ে যেই ওবাড়ির দিকে হাঁটা দিব, ওমনি এক শিশু বলে বসলো- আমাদের গানবাজনা শুনবেন না? তা কি আর উপেক্ষা করা যায়! অতত্রব শুনলাম স্থানীয় একটি গান, সাথে ঘুরে ঘুরে নাচ। এতোটাই সাবলীল যে, ব্রায়ান জিজ্ঞাসা করলো- ও কি কোথাও গান-নাচ শেখে?
চ. বড়দের সাথে কথা বলার শেষ পর্যায়ে একজন অতিবৃদ্ধকে (যার বাড়িতে এসব কথাবার্তা হচ্ছে) জিজ্ঞাসা করলাম- আপনি যে বললেন এই বয়সেও পড়ালেখা করতে চান, পড়ালেখা শিখে কী করবেন? তিনি বললেন- বই পড়বো! জিজ্ঞাসা করলাম- কী বই? তিনি বই এনে দেখালেন।
ছ. প্রচণ্ড ঝড় আসবে বলে মনে হচ্ছে। চালক গাড়ি চালাচ্ছেন দুদ্দাড়! এমন সময় এক মা-শিশুকে দেখি বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে আমাদের গাড়ির দিকে। এক মিনিটের জন্য গাড়ি থামিয়ে ছবি তুললাম।
আমার মা-ও একসময় আমাকে নিয়ে এভাবে হাঁটতে বেরুতো।
ছবিগুলো সুন্দর। লেখার শেষ লাইনটা দারুণ।
অনেক ধন্যবাদ লীনাপা।
দাদা আপনার লাই খুব পছন্দ হইল।
পছন্দ হইবার একটা বিশেষ কারন হইল আমি ওই অঞ্চলে অনেকদিন কাম কাইজ করছি, ঘুইরা বেরাইছি অনেক। আপনি যে ছবিগুলা আপলোড দিছেন ওইগুলা আমার খুব চেনা ঠেকছে। কত সুন্দর কইরা বর্ণনা দিছেন ! আপনের জন্য শুভ কামনা ।
ধন্যবাদ তুলন! বেরাকে থাকার এই একটা সুবিধা- নানান জায়গায় বেড়ানো যায়!
আপনার লেখার এবং ছবি তোলার হাততো দেখি খারাপ না...
এরপর দেখা হৈলে হাতটা দেখতে দিয়েনতো
আসল ফটু-তুলনেওয়ালারা এইসব ছবি দেখলে পিটাবে!
গৌতমদা' হচ্ছেন একজন সর্বগুণে গুণান্বিত লোক। রাঁধতে জানেন, চুল বাঁধতে জানেন; পাক্কা অলরাউন্ডার। লাভিউ দাদা
কার চুল
কার চুল আবার? ভাবীমনির চুল
তাইলে ঠিকাছে
গৌতমদা'র প্রো-পিক দেখলেই তো বোঝা যায়, কার চুল বাঁধে
এইটা আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে? উনার মাথায় কোনো চুল আছে নাকি?
এই কমেন্টের উত্তর গৌতম ভায়া নিজে দিক
আমি বরং সেফ সাইডে থাকি
পেচ্ছাপেচ্ছিতে নাই আমি!
ব্যাটামাইনসের লাবিউ নেই না!
তাও লাভিউ দাদা, প্রচুর লাভিউ
ঘটনা কী! আপনারে লৈয়া তো চিন্তায় পৈড়া গেলাম।
আপনে তো আমারে নিয়ে এমনিতেও চিন্তাতেই আছেন।
যাক্ জরুরি কথা হইলো, আপনারে আমার খুব ভালো লাগে।
মীর না একবার কৈছিলেন, আপনের বাড়ি বগুড়া- যেখানে পাড়া-টাড়া নাই
এখনতো মনে হয় আপনার বাড়ি চিটা..........
জ্বি চিটাগাং আমার ছেলেবেলার স্মৃতিবিজগিত শহর। জন্মের পর থেকে ১৩ বছর ছিলাম ওই শহরে। আমারে দেইখা যখন কারো চিটাগাংয়ের কথা মনে হয়, তখন আমি খুবই আহ্লাদিত হই।
আর শব্দ একটা ভুল লিখে ফেলসি। স্মৃতিবিজড়িত*
ছবিগুলা দারুণ সুন্দর। শেষ ছবিটা যেমন মায়াবী, শেষ লাইনটাও মন ছুঁয়ে যাওয়া।
অনেক ধন্যবাদ জ্যোতি আপা।
খুবই ভালো লাগলো, গৌতম। অনুভবগুলো আন্তরিক। মোবাইল আর নিরক্ষরতার গবেষনা কতদূর?
মোবাইল নিয়ে গবেষণাটা আর হয় নি। প্রপোজাল রাইটিং-এর জন্য যতোদূর কাজ করা দরকার, সেটা করা হয়েছিল- কিন্তু পরবর্তীতে ফান্ড পাওয়া যায় নি!
ছবিগুলো সুন্দর। লেখার শেষ লাইনটা দারুণ।
অনেক ধন্যবাদ।
ছবিগুলান দেখে মনোরঞ্জিত হইলাম!
বিরাট ব্যাফার!
সবগুলি ছবি সুন্দর হয়েছে।
লেখা পুরাটাই ভালো লেগেছে। শেষ লাইনটা অদ্ভুত ভাবে নাড়া দিল।
আপনে সুন্দর ছবি বললে তো কমেন্ট লেমিনেটিং করে রাখতে হয়!
ছবি ও লেখা দুটোই দারুন। :)। শেষে প্রফেসর ব্রায়ান কি তার বিস্ময়ের অন্যতম উৎসের খোঁজ পেলেন?
নাহ। প্রজেক্টের জন্য টাকা যোগাড় হয় নি!
শেষের ছবিটা দেখে মনে হচছে অপু আর তার মা দাড়িয়ে আছেন। পথের পাচালী।
বিশ বছরে এই কংকাল, এ হলো আমাদের হাল
লেখা ছবি দুইই উপাদেয়।
মোবাইল নিয়ে এ কথাটা েকউ বিশ্বাস করতে চায় না এখানে। আমারো মোবাইল নিয়ে এমন অনেক গলপ আছে
মোবাইল নিয়া আপনার গল্পগুলো জানান।
লেখা খুব ভালো লেগেছে...
প্রথম ছবিটা অনেক বেশী ভালো লেগেছে...
আপনি যখন বলেন ছবি ভালো হয়েছে, তখন আহ্লাদিত না হয়ে উপায় থাকে না।
শেষের ছবিটা মারাত্নক হইসে।
অনেক ধন্যবাদ।
লেখা ভাল্লাগছে।
হাসের ছবিটা সুন্দর।
শেষ ছবিটা আসেনাই কেন?
সিরিজটা চলুক,
ছবি আর তার পেছনের গল্প আপনের হাতে ভালই খেলতেছে।
ভাল থাকুন।
শেষের ছবি আসলো না মানে কী? এখানে তো ঠিকঠাকই দেখছি!
তবে সিরিজ চলার মতো মালমশলা নাই পেটে!
মন্তব্য করুন