কোথায় গেলেন আমাদের মেধাবী নির্মাতারা - বিরল অভিনয় প্রতিভারা ?
প্রায় এক যুগ বা তারও আগে বিটিভিতে এক পর্বের একটি নাটক প্রচারিত হয়েছিল - স্মৃতি যদি প্রতারণা না করে তবে বলতে পারি - নাম ভূমিকায় ছিলেন মমতাজউদ্দিন আহমেদ নামের দুর্ধর্ষ একজন অভিনেতা - সাথে ছিলেন আরেকজন দিকপাল - আফজাল হোসেন - নাটকের নাম কিছুতেই মনে করতে পারি না - কাহিনীচিত্র কিন্তু দিব্যি মনে আছে - আফজাল একজন জননন্দিত শহুরে লেখক - বিপত্নীক - শিশুকন্যাকে নিয়ে ব্যস্ত দিন কাটে তার - এর মাঝেই গ্রাম থেকে অনাহুত এক আগন্তক (মমতাজউদ্দিন) এসে হাজির হন তার দরজায় - তিনিও একজন লেখক - পার্থক্য এটাই যে তিনি অখ্যাত - শহুরে লেখকের কাছে এসেছেন একটি দাবি নিয়ে - তার স্বরচিত পান্ডুলিপিখানা প্রকাশ করে দিতে হবে - আফজাল তাকে নানাভাবে নিরস্ত করতে চান - বোঝাতে চেষ্টা করেন যে একটি বই প্রকাশ করা কত কঠিন - আর গ্রাম্য এক লেখকের অখাদ্য পান্ডুলিপির কোনো গ্রহণযোগ্যতা শহুরে প্রকাশক বা পাঠক কারো কাছেই নেই - কিন্তু অখ্যাত ওই লেখক নিতান্তই সরল - আফজালের যুক্তিগর্ভ ব্যাখ্যা বোঝার মত বুদ্ধির প্রখরতা তার নেই - আফজালের বাসাতেই তিনি ডেরা গাড়েন - আফজাল তনয়ার সাথে গড়ে উঠে তার মমতার সখ্য - সময় যেতে থাকে - তিনি আশায় আশায় দিন গোনেন - তার বইটি প্রকাশ হবে - ওদিকে আফজাল চূড়ান্তরকম বিরক্ত - এর মাঝেই বাড়িতে টাকা চুরির অনাকাংখিত একটি ঘটনা ঘটে যায় - দোষী সাব্যস্ত হন সরল ওই গ্রাম্য লেখক - তার শত কাকুতি মিনতিতেও কেউ ভ্রুক্ষেপ করে না - অপমান আর অপবাদের বোঝা কাঁধে নিয়ে ভগ্নহৃদয়ে ফিরে যান নিজ গ্রামে - তার পান্ডুলিপি পড়ে থাকে আফজালের কাছে - একজন প্রকাশক তা দেখে মন্তব্য করেন - এটি দারুণ সম্ভাবনাময় একটি রচনা - আফজাল চমকে ওঠেন - ওদিকে চুরি রহস্য উদঘাটিত হয় - প্রমাণ হয়ে যায় যে মানুষটি নিরপরাধ - নিদারুণ অপরাধবোধে জর্জরিত হন আফজাল- ঠিক করেন - ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করবেন - নিজ উদ্যোগে পান্ডুলিপিটি প্রকাশ করবেন - সেটা জানাতেই ছুটে যান অখ্যাত ওই লেখকের গ্রামে - কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস - পৌছে জানতে পারেন - গল্প শেষ হয়ে গেছে - লেখক আর বেঁচে নেই.
এত গেল এক যুগ আগের কথা - এখন বলছি একটি প্রাইভেট চ্যানেলে গতবছর প্রচারিত একটি নাটকের কাহিনী.
নাটকের মুখ্য চরিত্র ভার্সিটি পড়ুয়া এক দরিদ্র যুবক -নাম 'হৃদয়' (এই ধরনের নাম না হলে নাটক নাকি জমে না) - পড়াশোনার খরচ যোগাতে তাকে প্রাইভেট টিউশনি করাতে হয় (তার বেশভূষায় কিন্তু দারিদ্রের কোনো লক্ষন নেই ) - আমাদের এই নায়ক অবধারিত ভাবে একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে যায় - মেয়ের নাম 'সাগরিকা' (বুঝুন অবস্থা) - ধনী শিল্পপতির একমাত্র কন্যা - সেই শিল্পপতির অতীত আবার রহস্যময় - একাত্তরে তিনি বিশিষ্ট রাজাকার ছিলেন - মেয়ের বাবা তাদের গোপন প্রণয়ের কথা জেনে ফেলেন - সেই সাথে এটাও জানতে পারেন যে ছেলের বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং ওই মুক্তিযোদ্ধার গুলির ক্ষতচিহ্ন তিনি এখনো শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন (কাহিনীতে এবার স্বাধীনতার ইতিহাস ঢুকে পড়েছে)- প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে ওঠে - প্রাক্তন রাজাকার সাহেব সিদ্ধান্ত নেন, তিনি মেয়ের প্রেমিক এবং প্রেমিকের বাবা দুজনকেই নিকেশ করে দেবেন (এক ঢিলে দুই পাখি আর কি) - সে উদ্দেশ্যে একজন সন্ত্রাসী কে ভাড়া করা হয় - পর্দায় এবার নতুন চরিত্র - নাম - 'কাটা রজব' - তার মূল ডায়লগ হচ্ছে - 'মারমু - এক্কেবারে পানিতে চুবাইয়া মারমু' (এই সংলাপ কি ৭ই মার্চের ভাষণের বিকৃত ভার্সন ?) - এর মাঝেই হৃদয়-সাগরিকার অন্তরঙ্গ একটি ডুয়েট সং পরিবেশিত হয়েছে - যাই হোক - এখন একশনের সময় উপস্থিত - হৃদয় এবং কাটা রজব মুখোমুখি হয় - চূড়ান্ত বিপর্যয়ের পূর্বেই প্রকাশ হয়ে যায় যে হৃদয় আর কাটা রজব আসলে বাল্যবন্ধু - কাজেই কোনো রক্তপাত নয় - পাশার দান এবার নায়কের দিকে ঝুকে পড়ে - কাটা রজব পুরনো বন্ধুর জন্য ত্যাগ শিকার করে এবং তার হাতেই শিল্পপতি নিহত হন - কাহিনীর সফল পরিসমাপ্তি - দেখুন কত সফল (?) কাহিনীচিত্র - এর বহুমাত্রিকতা (?) কি অবাক হবার মত নয় ? একাধারে নিটল (?) প্রেমের কাহিনী - এসেছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস - দেশপ্রেমের চেতনা - প্রতিশোধের প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত - কি নেই এতে বলুন তো - 'ভালবাসা দিবস' হোক বা 'বন্ধু দিবস'- হোক 'বিজয় দিবস' কিংবা 'স্বাধীনতা দিবস' - এই নাটক অনায়াসে চালানো যাবে.
এক যুগের ব্যবধানে আমরা কোথা থেকে কোথায় এলাম - যতদুর জানি - দেশে মেধাবী মানুষের অভাব নেই - তাহলে এসব কি দেখছি - মিডিয়া ভর্তি আবর্জনা - হাস্যকর চিত্রনাট্য - স্থুল সংলাপ - অপরিপক্ক অভিনয় - কিছু ব্যতিক্রম হয়ত আছে - কিন্তু সেতো হাতে গোনা - কোথায় গেলেন আমাদের মেধাবী নির্মাতারা - বিরল অভিনয় প্রতিভারা ? কাদের দেখছি এখন - এরা আদতে শিল্পী নাকি ভাঁড় ? বিশ্বাসই হয়না যে এসব অখাদ্য টিভি পর্দায় আসছে - কি আশ্চর্য - ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এগুলো দেখায় আর প্রিন্ট মিডিয়া তার সমর্থনে গীত গায় - সত্যিই এই দেশ এখন সব সম্ভবের দেশ.
একটু সংশোধন করে দেন গুরু।
উনার নাম আফজাল হোসেন।
পোষ্ট চমতকার হইছে।
ধন্যবাদ অনিমেষ দা.
দিনে দিনে গাধার পালে পরিনত হইতেছি আমরা সবাই!
নিজের কাছেই লজ্জা লাগে - কিন্তু এটাই বোধহয় সত্যি.
কোয়ানটিটি আর কোয়ালিটি বোধহয় এক সাথে যায় না..।
সত্য বচন।
পরেরটা মনে হয় নাটক মনে করে কোনো বাংলা সিনেমা দেখে ফেলছিলেন।
মন্দ বলেন নাই, বস - সম্ভাবনা আছে.
মমতাজউদ্দিন আফজালের নাটকটি দেখেছিলাম। এখনও মনে আছে। এটি সম্ভবত ৯৯ এর নাটক।
ইদানিংকালেও কিছু ভাল স্ক্রীপ্টের নাটক হয়। তবে সেগুলো খুজে পাওয়া খুব কষ্ট। ঈদের সিজনে যেখানে ৩০০ নাটক প্রচার হয় তখন আপনি সেই সংখ্যার ভীরে ভাল খুজে পাবেন কিভাবে? নাটকের গড়পড়তা মানের ব্যারোমিটার একেবারে নিচে এখন। নাটক চ্যানেলে চালাবার দু্ইটাই সুত্র এখন চালু, তা হল নাটকে হাস্যরস থাকবে, আর ইয়াঙ ষ্টার কাষ্ট থাকবে। সারিকা, মিম, বিন্দু এরা থাকল তো হল।
ফারুকী গ্রুপ তো নাটকে স্ক্রীপ্টই রাখেন না, তারা কনসেপ্ট ধরে শ্যুটিং চালিয়ে নেন পড়ে সেটা নাটকে রুপ নেয়।
বড়কথা, নাটককে তেমন কিছু মনে করেন না নির্মাতারা। বেশীরভাগ নির্মাতারা ফরমায়েসী নাটক বানান তাই মানের দিকে তাদের চোখ না রাখলেও চলে। এমন করতে করতে অবশ্য একটা খারাপ দিন আসবে। কিন্তু তখন নিশ্চই আবার ভাল নাটকের আধিক্যের দিন ও চলে আসবে।
আফজালের সেই নাটকটা দেখেছিলাম। মমতাজ উদ্দিনের অভিনয় অনবদ্য ছিলো।
নাটক নাকি বাংলা সিনেমা? যা সেল করা যাবে না তাতেই কেজি খানিক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঢুকিয়ে দিলে শিওর সাকসেস
মন্তব্য করুন