সৈয়দ আবুল হোসেনের জন্য পুরো দেশের অপমান হলো
স্বপ্নের পদ্মা সেতু দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। আর এ জন্য মূলত দায়ী মাত্র একজন ব্যক্তি। আর তিনি হলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। তাঁর কারণেই বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন প্রথমে স্থগিত করে রাখে, আর সর্বশেষ বাতিলই করে দিয়েছে দাতা সংস্থাটি।
সৈয়দ আবুল হোসেনের দায়িত্ব ছিল পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন। কিন্তু তিনি করেছেন ঠিক উল্টোটা। ফলে পদ্মা সেতু নির্মাণ যেমন অনিশ্চিত হয়ে গেছে, তার চেয়ে বেশি ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে দেশ। বাংলাদেশ নিয়ে এতোবড় অভিযোগ নিকট ভবিষ্যতে আর কখনো হয়নি। এই ঘটনায় দল হিসাবে আওয়ামী লীগকেও বড় ধরণের ভাবমূর্তির সংকটে পড়তে হল। এর রাজনৈতিক মূল্য আওয়ামী লীগকেই দিতে হবে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্র“তি ছিল। সে অনুযায়ী, দাতাসংস্থাদের আস্থায় নিয়ে আসার কাজটি ভালভাবেই করেছিল সরকার। কিন্তু বিপত্তি দেখা দিল তারপরেই। বড় বড় প্রকল্প নিয়ে সরকারগুলো অতিআগ্রহের পেছনে বড় বড় কমিশন পাওয়ার কথা শোনা যায়। আর বর্তমান সরকারের সময় বেশিরভাগ বড় প্রকল্পই ছিল যোগাযোগমন্ত্রণালয়ের। এই মন্ত্রণালয়েরই মন্ত্রী ছিলেন সৈয়দ আবুল হোসেন।
পদ্মা সেতু নিয়ে কিছু একটা হয়েছে তা প্রথম টের পাওয়া গিয়েছিল ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। অর্থমন্ত্রী গিয়েছিলেন ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় যোগ দিতে। সেখানেই পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে করা একটি তদন্ত প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া হয়। ২১ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রীকে এই প্রতিবেদনটি দেন বিশ্বব্যাংকের ইন্টেগ্রিটি ভাইস প্রেসিডেন্ট লিওনার্ড এফ ম্যাকার্থি। প্রতিবেদনে সব অভিযোগের আঙুল ছিল সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ও তার পারিবারিক প্রতিষ্ঠান সাকোর বিরুদ্ধে। প্রতিবেদনে বলা ছিল, যোগাযোগমন্ত্রী ও সাকোর কর্মকর্তারা মিলে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেন যে, সাকো হচ্ছে পদ্মা সেতু নির্মাণের যেকোনো কাজ পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে এক ধরনের নীরব প্রতিনিধি (সাইলেন্ট এজেন্ট)। কোনো কাজ পেতে হলে বা প্রাক-যোগ্যতায় টিকতে হলে সাকোকে অর্থ দিতে হবে। সাকোর পক্ষ থেকে ঠিকাদারদের ভয়ভীতি দেখানোও হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাকোরই একজন প্রতিনিধি বিশ্বব্যাংককে জানান, পদ্মা সেতুর মূল অংশের জন্য যে চুক্তিমূল্য হবে, তার একটি নির্দিষ্ট অংশ সাকোর জন্য রাখার ব্যাপারে সৈয়দ আবুল হোসেনেরই নির্দেশনা ছিল। বলা হয়, সাকোকে নির্দিষ্ট কমিশন হিসেবে দেওয়া হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করবেন সৈয়দ আবুল হোসেন।
সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিবেদনটি হাতে পেলেও সরকার সৈয়দ আবুল হোসেনকে অন্য মন্ত্রণালয়ে সরিয়ে দেয় আরও অনেক পরে, গত জানুয়ারিতে। এরপর গত এপ্রিলে আবার একটি প্রতিবেদন দেয় বিশ্বব্যাংক। সেই প্রতিবেদনে মন্ত্রীসহ শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে বলা হয় যে, তারা কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ১০ শতাংশ কমিশন চেয়েছিলেন। জানা যায়, কানাডার এসএনসি লাভালিনের এক কর্মকর্তার ডায়েরিতে বাংলাদেশের একজন মন্ত্রী এবং কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার নাম রয়েছে। কাজ পেলে এইসব ব্যক্তিদের ঘুষ দেওয়ার কথা ডায়েরিতে লেখা ছিল। এখানেও রয়েছে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর নাম।
সৈয়দ আবুল হোসেনকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রতিবার তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবী করে প্রতিবাদপত্র দিয়েছিলেন। অথচ সরকারি কাগজপত্রেই দেখা যাচ্ছে যে, বিশ্বব্যাংক আবুল হোসেনের নামই একাধিকবার উল্লেখ করে তাকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল। আবার দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) বলেছে যে, বিশ্বব্যাংক সৈয়দ আবুল হোসেনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে বলেছিল।
সরকার প্রথম থেকেই আবুল হোসেনকে রক্ষার চেষ্টা করেছে। তাকে যে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দিতে সরকারের আগ্রহ ছিল না তা বিশ্বব্যাংককে লেখা সরকারি চিঠি পত্রে উল্লেখ রয়েছে। এসব চিঠি অর্থমন্ত্রী গত রোববার প্রকাশ করেছেন। শেষ পর্যন্ত সৈয়দ আবুল হোসেনের মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তন করা হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হলেও ঘটনা থেমে থাকেনি। টেলিযোগাযোগ খাতকে এর সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগ শুরু হয়ে যায়। অর্থাৎ, বেশি অর্থ আছে এমন খাতকে সৈয়দ আবুল হোসেনের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা চালানো হয়।
একটি লোকের জন্য আজ বাংলাদেশের মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। অপমানিত হয়েছে বাংলাদেশ। অথচ এই লোকটির কোনো শাস্তি হচ্ছে না। পদ্মা সেতু নিয়ে সব ধরণের সংকট তৈরি হয় আবুল হোসেনের সময়ে। সুতরাং আবুল হোসেনেরই উচিৎ মন্ত্রীত্ব থেকে সরে যাওয়া। জাতির কাছে তার ক্ষমাও চাওয়া উচিৎ। আর সেটি যেহেতু হচ্ছে না, তাকে অবিলম্বে সরকার থেকে সরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। এই কাজটি প্রধানমন্ত্রীর আগেই করা উচিৎ ছিল। কেননা, শেখ হাসিনার এতো বড় ক্ষতি বিএনপির সবাই মিলেও করতে পারেনি।
পাদটিকা: ফোর্বস-এ প্রকাশিত একটি লেখা নিয়েও এখন আলোচনা হচ্ছে। সেখানে বলা আছে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতিগ্রস্ত। বিশ্বব্যাংক যে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় তাদের দীর্ঘ ব্যর্থতা আছে এটা এখন স্বীকৃত। এ নিয়ে অনেক গবেষণাও আছে। কিন্তু পদ্মা সেতু ইস্যুতে এ বিষয়টিকে টেনে আনার যৌক্তিকতা কতখানি। এটা কে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত তার প্রতিযোগিতা? ওরা চোর বলে আমাদের চুরি করাও জায়েজ? এটা পদ্মা সেতুর দুর্নীতির আলোচনা অন্য খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা? এটা নিয়ে লিখলে বিশ্বব্যাংক লজ্জায় বাংলাদেশের কাছে মাফ চাইবে? পদ্মা সেতু প্রকল্পের জটিলতার অবসান হবে?
বেহায়া দেখতে কেমন? কেও যদি জানতে চায় তাহলে আবুল হোসেনের ছবি দেখালেই হবে।
এরশাদের পদচ্যুতি হয়ে গেল...
এদের কর্মকান্ড দেখে মাঝে মাঝে মনে হয় ''এরশাদ যদি সের ছিলো তাইলে এরা হচ্ছে সোয়া সের''।
পারফেক্ট কথা, সুপার লাইক
ভাল লিখেছেন মাসুম ভাই।
আবুলের মত লোভী হারামি যারা রিক্রুট করেছিলো তাদের স্বার্থটা আসলে কোথায় সেইটাও ভেবে দেখার বিষয়।
স্বার্থ তো অভিন্ন
আবুল হোসেেরে হয়ত খুঁটির জোর এতই শক্ত যে তাঁকে মন্ত্রী করেই রাখতে হবে, তাতে দেশ, দেশের ইমেজ গোল্লায় যাক।
কে বেশী দুর্নীতিগ্রস্ত সেটা প্রমাণের চেষ্টায় লজ্জার কি আছে! দারুণ গর্বের বিষয়। প্রতিযোগিতা করার একটা ্ইস্যু তো পাওয়া গেলো!
সরকারের কর্মকান্ড দেখে রাগে দু:খে মরি আমরা, কিন্তু তাতে তাদের কিছুই আসে যায় না। নতুন চুরির খোঁজে থাকে।
কথা সত্য
এক আবুলের কারনে দেশের নাম খারাপ হইছে আর এখন আরেক আবুল তারে সাপোর্ট দেয়
আবুলদের বড়ই দুর্দশা দেখতাছি
শুধু সৈয়দ আবুল হোসেনের জন্যই কি ব্যাপারটা হলো? সৈআহো আসলে যার লোক আর যিনি তাকে নিয়োগ দিলেন, তারা?
সৈআহো তো তৌইচৌ এর মত একজন মাধ্যম মাত্র। পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সৈআহো বা সাকো যা কমিশন পেতো তার একটা বড় অংশের গন্তব্য হতো যায়গা মত, তাকে মন্ত্রী বানানোর খাজনা হিসাবে।
কালকে পর্যন্ত আশা দেখানো হয়েছে বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত বদলে দিবেন, আজকে জিম কিম তাতেও পানি ঢেলে দিলেন।
ঋণদাতা বিশ্বব্যাংকের চরিত্র খারাপ হলে তার সাথে চুক্তি করলাম কেন? উত্তর নাই।
পদ্মা সেতু নিয়ে যা হয়েছে, অন্য অনেক মন্ত্রণালয়েও তাই হচ্ছে, কিন্তু সেই বিড়ালগুলি এখনো বের হয়নি বলে রক্ষে।
সরকার জানে, এখানে যে কোন কিছু ১-২ সপ্তাহ সবার নজরে থাকে, তারপর সবাই ভুলে যায়। একটু বন্যা বাড়লে কিংবা রোজা এসে গেলে মানুষ পদ্মা সেতু নিয়ে ভাবতে ভুলে যাবে।
সেতু, ফ্লাইওভার, রাস্তা - কিচ্ছু দরকার নেই আমাদের। বঙ্গোপসাগর কিংবা ভারত থেকে পানি এনে দেশটাকে ভেনিস বানিয়ে ফেলি, নৌকা করে অফিস যামু..
~
নৌকা করে অফিস যাম..
চারিদিকে কালো বিড়াল
এক আবুলের ভুলে
কোটি আবুল কেদে মরে!
--- সুপার লাইক
সুপার লাইক
একটা বিষয় বুঝতে অপারগ- সৈয়দ আবুল হোসেনের মন্ত্রীত্ব টিকিয়ে রাখতে সরকার এতো তৎপর কেন? সরকারে তার খঁুটির জোর এতো বেশি কেন?
শুন্ছি খুটি নাকি রেহানা
আমি কিন্তু কিছু কই নাই
বিষয়টা আসলে বাংলাদেশের জন্য ভালোই হইসে। সাপও মরলো কিন্তু লাঠিও ভাঙলো না।
শক্ত খুঁটির জোরে আবুল এতদিন বহুত আকাম-কুকাম করসে। তার কাজে-কর্মে এখন পুরা জাতিই একটা লজ্জাজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে গেছে। এইবেলা নিজের পিঠ বাঁচানোর জন্যই প্রধানমন্ত্রীর উচিত রোথোটাকে ঝেটিয়ে বিদায় দেয়া।
আর বিশ্ব ব্যাংকের লোন নিয়ে কখনো কোনো দেশের বড়লোক বা মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হওয়ার নজির নাই। ওদের খপ্পর থেকে বাইর হওয়াটা আমাদের জন্য জরুরি ছিলো। কিন্তু উপায় ছিলো না। এই বেলা একটা উপায় পাওয়া গেলো। যদিও বিষয়টাতে নিজের নাকটা কাটা পড়েছে। তারপরেও আমি আশাবাদী হতে আগ্রহী। দেশের সত্যিকারের উন্নতির জন্য আবুল ও বিশ্বব্যাংক উভয়ের হাত থেকে রেহাই পাওয়া দরকার আছে।
মনে হয় না। সরকার তো এখন পায়ে ধরতেও রাজি।
সমস্যাটা আসলে সেখানেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে এ ঘটনার পর দ্বিতীয়বার ফিরে চাইতেন না ওইসব বেন্নাদের দিকে।
বিদেশি সাহায্য না আসলে কমিশন খাবে কেমনে? সুতরাং উভয়েরই দরকার আছে
গানের কলি- 'এক হৃদয়হীনার কাছে হৃদয়ের দাম কি আছে.....' একজন হৃদয়হীনার কাছে হৃদয়ের দাম না থাকলেও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কাছে দুর্নীতির দাম অনেক, তাই নয় কি?
তাই যদি না হবে, তাহলে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার পরও তার বিচার না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন বললেন তার মন্ত্রীরা কেউ দুর্নীতির সাথে জড়িত নয়।
এই কথা বলার আর পথ রইল না
শেখ হাসিনার জন্য পুরো দেশের অপমান হলো, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদের পুষেন
মন্তব্য করুন