ইউজার লগইন

চিরকুট

কত কি ঘটে যায় আশেপাশে, জীবনের হাজারো সেসব টুকিটাকির হিসেব রাখার জো নাই কারুর। তারপরও কিছু কিছু মূহুর্ত, কিছু উপলব্ধি জানাতে ইচ্ছে হয় সবারই, অনুভূতি ভাগাভাগিতে তার মাত্রাটা বাড়েই, আগে যেটা হরহামেশাই করে ফেলতাম আমরা। এই সব লেখার কারনে নানান বিষয়ে জানতে পারছি (ভাল-মন্দ সব রকমেরই), সচেতন হচ্ছি, সর্বোপরি আন্তর্জালের মাধ্যমে পাওয়া বন্ধুগুলোকে কিন্তু কাছে এনে দিয়েছে এই লেখাগুলোই, সেগুলো সবটাতেই যে আমাদের ঐক্যমত থাকে তা নয়। ইদানিংকালের ব্যস্ততা, বিষয়ভিত্তিক লেখাতেই মনোনিবেশ, আলসেমি, লিখে কি হবে, ইচ্ছে না হওয়া – ইত্যাকার কত কি কারন এসে বাধাঁ দেয়া সেই “মন যাহা চায় তাই লিখে ফেলি” ভাবটার সতস্ফুর্ততায়। হরেক কারন থাকুক না হয়, তারপরও দিনভর আমরা কত কি দেখছি, জানছি, ভাবছি, সেসব টুকে রাখার মতোন কিবা একেবারেই গোনায় না ধরা বিষয়গুলো লাগে যে লিপিবদ্ধই না হয় থাকুক। সামান্য সেসব থেকেই না হয় কেউ না কেউ জানবো আমরা সামান্যতমই কিছু। অন্যকে এই জানানোতেও কিন্তু রয়ে যায় ভালবাসা, সে নিজের জন্যে হোক কিবা বন্ধুদের জন্যেই। তাই কবির ভাষায় বলি সকলকে,

অনেক ভালোবাসি তোমায়, একটু ভালোবাসো
ভালোবেসে জানবো তোমার ভূগোল, জানবো ইতিহাসও!!

মন খারাপ, মন ভালো কত হালেই না আছি। আন্দোলনের জোশে আছি তাতো বলাইবাহুল্য! আশেপাশের কতজনকে এমনভাবে চিনতে পারছি যে কিছুটা আশ্চর্যই লাগছে। শাহবাগ আন্দোলনের অনেক অর্জনের পাশাপাশি এও বড় পাওয়া যে, আর যাই হোক মানুষ চিনতে পারছি, নিজেকে চিনেছি।

সবাইকে নাকি আমি খুচাঁই লেখার জন্যে, বেশ করি। কুয়োর ব্যাঙ আমি, জানার আগ্রহ অনেক, না লিখলে জানবো কি করে আশেপাশে কত কি করে চলছে সবাই, হোক না খুটিনাটি। চাই অন্যেরাও জানুক নিজনিজ জায়গা থেকে সবাই কত কি করে চলছেন, দেখছেন।

লালভাই নাওয়াখাওয়া ছাড়া দিনরাত এক করে ফিল্মবন্দী করে চলছেন শাহবাগের দূর্লভ মূহুর্তগুলো। রঞ্জন, সেই বিলাতের প্রতিবাদ সমাবেশে পুথিঁপড়ার মাধ্যমে জানান দেয় নিজের কথা, রাসেল জ্বরের তোয়াক্কা না করে কোরিয়ার জমায়েতের হয়ে কাজ করেছেন, জেনেছেন কত কি, অফিস করেই শাহবাগে গিয়ে শুভ, টুটুল্ভাই ছবি তুলছেন মুহুর্মুহু। জয়িতা, মুরাদ ছুটছে শাহবাগ, সুযোগ পে্লেই রাস্তায় বসে গিয়ে গগনবিদারি স্লোগানে মুখরিত করে ফেলে আশপাশ, একটুও খেই হারায় না স্লোগানের কথাগুলো। শান্ত, বিষন্ন, সামিয়া সব দলেবলে গিয়ে নিজের উপস্থিতি জানাচ্ছে, দেখছে আশেপাশে ঘটে যাওয়া কত কি। রনি, যাকে কাজের মাঝেই ডুবে থাকতে দেখেছি অহরহ, সেই ছেলে এখন প্রতিটা সমাবেশে নিয়মিত যাচ্ছে, স্লোগানে মুখরিত করছে চারপাশ, তা রায়েরবাজার বদ্ধভূমি, মিরপুরের গোলচক্কর কিবা মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরের সমাবেশই হোক না কেন!

মন খারাপ আজ সকাল থেকেই। বাসে আসবার সময় কন্ডাক্টর ছেলেটাকে খুব করে মারলো এক কড়া কর্পোরেট লুকিং ভদ্রলোক(!), যার দোষ আসনসংখ্যার অতিরিক্ত দু’জন যাত্রী নেয়া, আইনলঙ্ঘন করা! ছেলেটার দোষের প্রতিবাদে ভাড়া কম দিয়ে নির্বিচারে চড়-চাপড় মেরে ছেলেটার টি-শার্ট ছিড়ঁতে ছিড়ঁতে(যা করতে বেশ খানিক বেগ পেতে হয়েছে) বলছিলেন, আইন মোতাবেক কাজ করেনি বলেই আজ ছেলেটাকে উনি শিক্ষা দিচ্ছেন!! বাস ভর্তি ছেলেরা কেউ ডাক দিলো না, মেয়েগুলো থামতে বলছিলো, কিন্তু কে দেয় কার কথায় কান! ... মন খারাপের অন্ধকার সরাতেই পারছি না চেষ্টা করেও। কেন আমাদের মাঝ থেকে মানবিকতা চলে যাচ্ছে, কেন আমরা খুনোখুনির জাতি হয়ে গেলাম!

মন ভালোর চেষ্টা করি কিছু সুন্দর মূহুর্তের কথা স্মরণ করি। আন্দোলনের মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের দিনের কথা বলি। এম্নিতে দল বেধেঁ যাই অন্যান্যদিনে, কিন্তু সেদিন সবাই এক হয়ে যেতে পারলেও আমি পড়লাম পিছিয়ে। ফার্মগেট থেকেই বিশাল জ্যামে পড়লাম, সচরাচর রুপসী বাংলার সামনে পর্যন্ত বাস যেতে পারলেও জ্যামে বসে না থেকে আরো অনেকটা আগেই নেমে দিলাম হাটাঁ। আশপাশ দেখে অবাক হচ্ছি, তরুনরা নয় কেবল, বয়েস্ক জনরাও, মায়ের বয়েসীরাও কি ভীষন তাড়ায় এগিয়ে চলছেন শাহবাগের পানে সময় মতোন প্রজন্ম চত্ত্বরে গিয়ে দাড়াঁবেন বলে। পৌছে গিয়ে দেখি, এরমধ্যেই কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে আর সে কি রে জনারন্য! এই ভীষন ভিড়ে এখানে কাউকে খুজেঁ পাওয়া দুষ্কর, একাই দাড়িয়ে গেলাম। সবাই মিলে যখন এক সাথে মোমবাতি জ্বালিয়ে তা উচিয়ে ধরলেন, সে কি ভীষন এ এক দৃশ্য, আলোয় ভেসে যাচ্ছে চারপাশ, এরই মাঝে নিস্তব্ধতা। সে আশ্চর্য এক অনুভূতি, ছবি দেখে বুঝবার যো নেই, আসলেই যারা উপস্থিত ছিলেন না তাদের বলে বোঝানোর ভাষা কারুরই আছে কিনা জানি না।

আরেকটা মূহুর্তের কথা বলি, মেসবাহভাইদের পিঠাউৎসবের সন্ধ্যায় ঘরে ফিরছিলাম, যানবাহন পাচ্ছি না কেউই, হাটছিলাম সবাই মিলে, এর মাঝে মুরাদ গলা ছেড়ে গান ধরলো, মাথার উপর বিশাল চাদঁ(সেদিন পূর্নিমা ছিলো), এরপর কিছুই না পেয়ে এক ভ্যানে করে সবাই বাড়ি ফিরলাম। সেদিনের সেই চাদেঁর আলোয় চারপাশ ভেসে যাচ্ছিল, সাথে চলছে সবার খুনসুটি, ভাবতেই ভালো লাগে জীবনটা আসলেই দারুন।

চিরকুট
দীর্ঘ ভূমিকার অবকাশ নাই।
প্রিয়তমেষু,
তোমার দণ্ডবিধি কি বলে খুব জানি।
তথাপি প্রণয় স্থগিত রেখে
আমাকেও চাল, ডাল, তেল, নুন খুঁজে নিতে হয়।
সবার মতো আমারও খিদে পায়।

যাজ্ঞা, কথা না বাড়িয়ে অনুমতি ছাড়াই বন্ধু মানুষের একটা কবিতা শেয়ার করলাম।

পোস্টটি ১১ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


ইয়েয়েয়ে..জেবীনাপু নতুন লেখা দিছে, তাতে আমিও আছি। Laughing out loud

অনেক কিছু নিয়ে এরকম লেখাগুলা আমার খুব ভাল লাগে। অনেক কিছুই নিজের চিন্তাভাবনার সাথে মিলে যায়, পড়তে পড়তে মনে হয় আমি নিজেই মনে মনে এমন কিছু লিখছি।

শাহবাগের একেকটা মুহূর্ত প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র ভাবে তুলনাহীন। এদের মাঝে আমার প্রিয় টুকরো স্মৃতিগুলো হল :
আড়াই লাখ মানুষের সাথে সমস্বরে গাওয়া জাতিয় সংগীত, তিন মিনিটের অসাধারন নিরবতার পর স্বতস্ফুর্ত জয় বাংলা রণহুংকার, গনজাগরন মঞ্চের স্লোগান, মশাল মিছিল আর লাখো হাতের মোমের আলোর মিছিল।

জেবীন's picture


তুমি লেখা কমায়ে দিয়েছো কেন, আগে তো কত্তো কিছু লিখতে মন চাইলেই, এখন না অবসর আছে তাহলে থেমে গেলে কেন?

শাহবাগে এই পুচঁকা বর্ণ'কে বেশ ভালো লেগেছে, মন ছুয়েঁ গেছে ভাইয়ের মমতাটা, একবারো লাগেনি, এর সাথে আজ প্রথম দেখা। Smile

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


:')

লেখা না লেখা নিয়ে একটা কিছু লেখার চেষ্টায় আছি!

তানবীরা's picture


লেখা অসাধারণ আর কবিতা অসাম

জেবীন's picture


এই ছেলেটা যে কি পরিমান দারুন লিখতে পারে সবাই জানি, আমার কাছে অলরাউন্ডার ধাচেঁর লিখতে জানা কেউ এই মানুষ, রম্য, কবিতা, গল্প, সিরিয়াস লেখা সবই কি দূর্দান্ত লিখতে জানে। পোষ্টে বলা লেখা না দেয়ার খোচাঁনিটা একেও দিয়েছি। কতদিন লিখে না, অজুহাত হচ্ছে, "লিখতে ভালো লাগে না যে!" Stare

থ্যাঙ্কু আপু Big smile

শুভ্র সরকার's picture


Nice writing.

জেবীন's picture


পোষ্ট পড়ে কমেন্ট করার জন্যে ধন্যবাদ শুভ্র Smile

বাংলা ব্লগে ইংরেজী অক্ষরে লেখা অনেক দৃষ্টিকটু লাগে, আপনি তো সুন্দর লিখেন, কমেন্টও বাংলায় দিলেই দারুন হয় পড়তে।

শাপলা's picture


মন কেমনিয়া লেখা গো জেবীন

মাইণ্ড ইজ ডুইং হাউ হাউ

জেবীন's picture


Smile লেখা পছন্দ হয়েছে জেনে ভালো লাগলো আপু। অন্নেক তাড়াহুড়ায় লেখা পোষ্ট দিয়েই ঘরের উদ্দেশ্যে বার হয়ে গেছি, পোষ্ট লেখার অজুহাতগুলোর খোচাঁনি কেবল অন্যদের নয় নিজেকেও দিয়েছি, মন টানে কিন্তু লিখতে গেলেই নানান রঙ করা শুরু করি! Stare

১০

মানুষ's picture


লেখা ভাল হয়েছে। শেষের কবিতাটা আরও বেশি ভাল হয়েছে Big smile

১১

জেবীন's picture


রবীনাংকেলের "শেষের কবিতা"টা আসলেই বেশি ভালো হয়েছে! Tongue

১২

জ্যোতি's picture


শেষ থেকেই শুরু করি। কবিতাটা জোশ। মানু যদি আবার ব্লগে ফিরত আগের মতো! আমরা না হয় আড্ডাই দিতাম!
আসলেই সবাই সব লিখুক। এই যে জেবীনের লেখা থেকে কত কি জানলাম! তা না হলে তো জানতামই না মানু কি করছে। রাসেলকে দেখি ফেসবুকে, লালদাকে দেখি শাহবাগে। কিন্তু যাদের দেখি না, কথা হয়না বলে জানাই হয়না। সবাই লিখুক।
দারুণ পোষ্ট।

১৩

জেবীন's picture


সেই তো, সবাই নিজনিজ জায়গায় থেকে কত কি দেখে চলছেন, তুমিওতো ডেইলি অফিস করে বাসা সামাল দিয়ে ঠিকই শাহবাগ যাচ্ছো, দিনে দিনে কত স্মৃতি জমেছে, সবাই নিজনিজ জায়গা থেকে লিখলে দারুন ব্যাপার হয়।

মানু'রে নিয়া আর কিছু না বলি, বেশি ফুলে যাবে ছেলেটা Cool

১৪

নিভৃত স্বপ্নচারী's picture


বাসে আসবার সময় কন্ডাক্টর ছেলেটাকে খুব করে মারলো এক কড়া কর্পোরেট লুকিং ভদ্রলোক(!), যার দোষ আসনসংখ্যার অতিরিক্ত দু’জন যাত্রী নেয়া, আইনলঙ্ঘন করা!

দুর্বলের উপর পেশীশক্তি দেখাতে আমরা সবসময়ই পারদর্শী!
লেখা ভাল লেগেছে।

১৫

আরাফাত শান্ত's picture


Laughing out loud

১৬

ধূসর's picture


Smile

১৭

বিষাক্ত মানুষ's picture


Smile

১৮

শওকত মাসুম's picture


দারুণ হইছে আফা, সিম্পলি দারুণ

১৯

একজন মায়াবতী's picture


বাহ!! আমিও আছি দেখা যায় Laughing out loud

২০

পজিটিভ's picture


মোমবাতি জ্বালানতে আমি ছিলাম না কখনই, আমার ঘরেও এটার বিরোধী ছিল, কিন্তু আমার ধর্ম এতই পলকা না যে কয়টা মোমবাতি জ্বলল এবং তা উড়ে গেল। সুন্দর তা অবশ্যই সুন্দর, পুজা তো আর করছি না!

জ্যোৎস্নারাতে ভয়ানক করে চিতকার করতে ইচ্ছে করে, আমি ঐ সময় আমি ছেলেবেলার বন্ধুর কথা মনে করি, যে মারা গেছে!

আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে
বসন্তের এই মাতাল সমীরণে ॥
আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে,আজ
যাব না যাব না গো যাব না যে,
রইনু পড়ে ঘরের মাঝে–
এই নিরালায়
এই নিরালায় রব আপন কোণে।
যাব না এই মাতাল সমীরণে ॥
আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে,আজ
আমার এ ঘর বহু যতন করে
ধুতে হবে মুছতে হবে মোরে।
আমারে যে জাগতে হবে,
কী জানি সে আসবে কবে
যদি আমায়
যদি আমায় পড়ে তাহার মনে
বসন্তের এই মাতাল সমীরণে ॥
আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে,আজ
বসন্তের এই মাতাল সমীরণে ,
আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে,আজ

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.