ইউজার লগইন

হুদাহুদাই (৭)

বন্ধুদের সাথের যেকোন ট্যুর নিদেন পক্ষে আড্ডাও প্রান ভরে উপভোগ করি! যত সামান্যই কিছু হোক না কেন, একসাথে কাটানো সময়টা কাজ করে ক্লান্তি দূরকারী ঔষধের মতোন, প্রানের উচ্ছ্বাস, কাজের আগ্রহ অকারনেই ফিরে পাই। আমার বন্ধুভাগ্য দারুন! খুব খুবই বিরল ক্ষেত্র ছাড়া আমার কাছেধারে যারাই আসেন প্রত্যেকেই এককথায় চমৎকার মানুষ, তা দেশে কিবা বিদেশেই হোক না কেন। সিডনীতে থাকাকালীন স্বল্পসময়েও আমার ভালো সংখ্যকই বন্ধু জুটেছে, এর মাঝে গ্রেসিটা, মাইকেল, তারান, শাহেদ এদের সাথে তো দিনমান চলতে হতো।

স্ট্যাটিস্টিকস ক্লাশে পাগলা এক টিচার ছিলো, প্রবাবিলিটি বুঝাতে গিয়ে রীতিমত গেম্বলিং এর রোলেট নিয়ে আসতো! এই সময়ে নানান কথায় যখন জানতে পারলো যে কখন যাইনি আগে, মাইকেল কথা দিলো যে ও নিয়ে যাবে সিডনীর সবচেয়ে বড় ক্যাসিনোতে!

স্টার ক্যাসিনো, ডার্লিং হারবার ঘেষে অবস্থান নেয়া অনেক অনেক বিনোদন মূলক সেন্টারের কাছেই আছে সুবিশাল এই বিখ্যাত ক্যাসিনো। প্ল্যান করার সময় যতজন আসার কথা, ইউনুভার্সাল থার্ডহ্যান্ড দেখায়ে অনেকেই এলো না শেষমেষ। ৪/৫জনের দল নিয়েই শুরু হলো আমাদের “সিডনী ডে আউট”।

1_2.jpg

কত্তো প্ল্যানের কাটছাট করে খাবার দি্যেই শুরু! আমি সব খাই না জেনেই মাইকেল নিয়ে গেল এক ইন্দোনেশিয়ান রেস্টুরেন্টের সামনে গিয়ে বলে “নেও সার্টিফিকেট দেখেই তবে ইন করো”।
2_1.jpg

আসলেই সদর দরজায় সার্টিফিকেট ঝুলানো যে তারা হালাল খাবার অফার করে! তবে এটার একটা বৈশিষ্ট্য আছে, “ডেয়ার টু ইট” ধাচেঁর মেন্যু! একই খাবার ১ থেকে ৫ পর্যন্ত ক্যাটাগরী করা ঝালের! যে যত বেশি ঝাল খাবে ক্রমিক নং টা জানিয়ে দিবে! ভাবলাম এই সেদ্ধ খাবার খানে’ওলা দেশে আর কতই বা ঝালের খাবার হবে, আর আমরা শুটকি ভর্তা যেইহারে ঝালঝাল করে খাই, এরা তার ধারেকাছেও যেতে পারবে না! হুদাই লাগায় ভয় এই নাদান’রা আমায়! আমি কি ডরাই সখি ভিখারি অজি ইন্দোনেশিয়ান খাবার’রে! গ্রেসি ঝাল খেতেই পারে না, আগেই এসব থেকে হার মেনে নিয়ে নিলো। একেকজনে একেকটা দিয়ে, আমি ৪ নং’টা অর্ডার দিয়ে আড্ডায় বসলাম। সাদা ভাত, বিফ, সালাদ আরেকটা কি যেন ছিলো মনে আসছে না, বিফটাই সেই আসল খাবার, গন্ধ-বর্ন দুটাতেই আকর্ষনীয়, ওপরে একটা সস ছড়ানো। মজার খেতে আসলেই নরমালি যেমনটা খাই তা না, একটা মসলার স্বাদ যেটা ভালো লাগছে। সবাই সবাইকে দেখছে, কার কি হাল হয়! আমি তো মহা জোসে ২বার মুখে খাবার তুলে মাইকেল’রে এক তাচ্ছিলের হাসি আর বলি “বেটা এই লেভেলের ঝাল আমরা অকেশনালি না এমনি এমনি খাই”। ৩বারের বার কি থেকে যে কি হলো আমি চক্ষে দেখি পুরা আন্ধার!! আমি মূহুর্তটা বুঝাতে পারি না, কিচ্ছু যেন অনুভবে আসছে না, কার্টুনে যেমন দেখায় কানে দিয়ে ধোয়া বের হয় আমার যেন তা হচ্ছে, চোখ দিয়ে যে কখন পানি পড়ছে বুঝতে পারিনি! শ্বাস নেবার জন্যে মুখ হা করলেই লাগছিল সব ছারখার হয়ে যাচ্ছে! সব্বাই ধুমধাম হাসছে আমার অবস্থায়! এরপর ওরাই ধরে ওয়াশ রুমে নিলো, ধাতস্থ হতে বেশ সময় লে্গেছে। দারুন মজার এই বিফ’টা কি করে এত্তো বিকট হাল বানায়ে দিলো ভেবেই পাই না, আমি পুরা তব্ধা! হাল ছাড়ি নাই, আবার গিয়ে শুরু করছি, আর তখনি আসল ট্রিক্সটা পেলাম, আমি ঝালা হবে ভেবে জলদি শেষ করার জন্যে তাড়াহুড়া করছিলাম, এর চেয়ে ধীরে সময় নিয়ে খেলে ঠিকই ঝালে নাস্তানাবুদ না হয়ে পার পাওয়া যায় সাথে খাবারটার মজাও।

ঘুরে ঘুরে যাবার সময় নানান জায়গার মাঝে অনন্য যা দেখলাম তা হলো এক বারের! না ভাই! সুন্দরী বারটেন্ডার আছে দারুন পরিবেশ আছে, কিন্তু এ যে সে বার নয়!

3_1.jpg

অক্সিজেন বার! ধারনাটাই কি অবাক করে দেয়া! সার বেধেঁ নাকে নল লাগায়ে অক্সিজেন নিচ্ছে লোকে সাথে নেট সারফিং ফ্রি! আগ্রহের চোটে খোজ খবর করা শুরু করলাম ব্যাপারটা কি! এতে নাকি মাসল রিল্যাক্স হয়ে শরীরে স্ফুর্তি এসে যায়!

4_0.jpg

আরেকটু আড্ডা আশপাশ ঘুরেফিরে গেলাম স্টারে! বাইরে থেকেই বিশাল, চারপাশ দেখেই ভালো লাগা আসছে! একটু অবাকও লেগেছে এত্তো বিশাল আয়োজন নিয়ে ক্যাসিনো!
5_0.jpg

ভেতরে গিয়ে দেখি সাথে দারুন সব ব্রান্ডের শপ নিয়ে গোটাই শপিংমল, থিয়েটার আরো নানান কিছু। মূল ক্যাসিনোর দরজার কাছে যাবার আগেই সতর্কবানী জানলাম যে, ক্যামেরা মোটেই এলাউড না, উলটা জব্দ করে ফেলবে দেখতে পেলে! এন্ট্রেন্সে সুদর্শন গেটম্যান, ঠিক যেন ইটালিয়ান মাফিয়া, জানলাম বাউন্সার নাকি এরাই। বলে কয়ে নিলে কেন দিবে না ছবি তুলতে এই আশায় ভাব জমাতে গেলাম সানগ্লাসে চোখ ঢাকা ভাবলেশহীন সবচেয়ে আকর্ষনীয় জনের দিকে। আমার হাসির সাথে তাল মিলিয়ে হেসে সে বলে দিলো “ রুলস ইজ রুলস, বাট এজ ইউ আস্কড সো সুইটলি এন্ড ইগারলি, ইউ আর পারমিটেড টু টেক সাম স্ন্যাপ্স ফ্রম ডিস্টেন্স!” আর পায় কে আমারে! ধুনফু্ন ছবি তুলতে তুলতে ভাবলাম নেই ভেতরের দিকের একটা শট, সাথেই সাথেই দেখি ইটালিয়ান’ভাই’য়ে কাছে থাকুন ভাব নিয়ে কয় এইখানথে চলো বহুদূর!
6.jpg

7.jpg

ক্যামেরা ব্যাগে রেখে ভেতরে যাবার সময় আরেক কান্ড, আইডি দেখায়ে যেতে হবে যা কিনা ১৮প্লাসের ইঙ্গিত দেয়! কি যন্ত্রনা! বেড়াতে বের হয়েছি, এই সব কে নিয়া ঘুরে! আমারে তো সাথের সব বলতে লাগলো, তোমারে ঢুক্তেই দিবে না! এট্টু মন খারাপ হলো, এতো হুজ্জত করে এলাম আর আমার জন্যেই কিনা অন্যরাও মিস করবে! আজিব ব্যাপার অন্যদের আইডি/লাইসেন্স চেক করলেও আমারে ছেড়ে দিলো কিছু চেয়েই!

ক্যাসিনোর অভিজ্ঞতা সিনেমায় দেখে দেখেই, কিন্তু স্টারের ভেতরের পরিবেশ তার চেয়েও সুবিস্তৃত, এক কথায় মনে লাগার মতোন। আমার সবকিছুতে মজা পাবার একটা ছেলেমানুষি প্রবণতা আছে, ভালো পাই সেটাতে। আগে বলে রেখেছিলাম কোন বাজি ধরাতে আমি নাই, তাই ওরাই নানান রুলেট/স্লট/টেবিলে বসে খেললো। ক্যাসিনো আমার কখনো ভালো লাগবে ভাবিনি, কিন্তু লেগেছে, দারুন একটা সময় কেটেছে ওখানে। বন্ধুরা হারছে দল বেধেঁ উহ, আহ করছি, আবার জিতলেই চিৎকার! এসব কিছুর মাঝে গ্রেসি জোর করে স্লটে বসালো নানান উপদেশ দিয়ে দিয়ে। চিন্তাভাবনার কিছুই না কেবল কয়েন ফেলো বাটন পুশ করলেই নানান কিছু মিলে গেলেই ধুমধাম বোনাস পেয়ে পেয়ে ডলার জমে গেলো একাউন্টে, নচেৎ পুরো ডলারই ফুরুৎ, চাইলে আবার খেলো নইলে বের হয়ে যাও। গ্রেসি নিজে ৭৮ ডলার পেয়ে গেলো মাত্র ১৫ডলারের কয়েন কিনে, আর মাইকেল অন্য এক টেবিলে ৫০ডলার খরচ করে ৪৩০ ডলার পেয়েছে! খেলার উত্তেজনাতেই বসে গেলাম সবচেয়ে কম দামের স্লটে ৫ ডলারের কয়েন নিয়ে। আমার বাজি ধরার ভাগ্য কখনোই ভালো নয়, ধরেই নিইয়েছি কিচ্ছু পাবো না, কিন্তু বোনাস পয়েন্ট পাচ্ছি, আবার মূহুর্তেই সব শূন্য হয়ে যাচ্ছে এমনি করে করেই আমি ১৭ ডলার পেয়ে গেলাম! কাউন্টার থেকে কয়েন ভাঙ্গিয়ে টাকা নেবার সেই ভাবই আলাদা সিনেমায় যেমন দেখি আরকি!

খেলার যে কত রকম ফের! পুরা ঢাকায় নতুন স্টাইলে এখান থেকে সেখান ঘুরছি, দামী টেবিলের চারপাশ সুন্দরীদের ঘেরা প্লেয়াররা, মাঝে গিয়ে ঠেলে ঠুলে কতক্ষন দেখে বুঝার বৃথা চেষ্টা করলাম, আরো দামী কিছু টেবিলে দেখি টেবিল প্রতি স্পেশাল সুবেশী ওয়েইট্রেস, ড্রেসকোড নাই এদের, কেউ না বলে দিলে বুঝতামই না যে এরা কাজে আছে। সেসব টেবিলে পার কয়েনই দেখলাম শুরু হচ্ছে ১হাজার না যেন আরো বেশি এমন এ্যমাউন্ট দিয়ে! এক পলকেই টেবলে বসা লোকটার ৩৫০০ ডলার নাই হয়ে গেলো, আর তার কোন বিকারই দেখলাম না!

ক্যাসিনো ঘুরে যা দেখলাম, বেশ হেটে চলে যাবার মতো ফাকাঁ অবস্থা আর নানান দেশের মানুষের মাঝে চাইনিজ লোকের সংখ্যা লক্ষনীয় হারে বেশি তায় আবার বয়েস্ক! ধারনা ছিলো যে ক্যাসিনোতে কম বয়েসীদের ধুন্ধুমার আড্ডা হবে। আমার কথা শুনে মাইকেল যা জানালো, বিকেল ৫টার পরে তিল ধারনের জায়গা থাকে না, কাজ করে সব হাজির হয়ে যায়। আর চাইনিজরা গেম্বলিং করে লাইক ক্রেজি, কিন্তু অনেক হিসাব নিকেশ করে পরে খেলে, তাই হারের পরিমানও গড়পড়তা কম। চাইনিজ বয়েস্কদের হবি’র পর্যায়ে পড়ে এইখানে দিনের বেলা এসে সময় কাটানো।

নানান ভাগে ভাগে ছড়ানো, তাক লাগানো সাজের এই ক্যাসিনোর ভেতরের ছবি আনতে পারছি না, আফসোসে আমি জেরবার! এই হাল নিয়েই রওনা দিয়েছিলাম ট্যুরের অন্যদিকে!

হুদাহুদাই (৬)

পোস্টটি ৭ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

শওকত মাসুম's picture


ভাল ভাল ছবি নাই কেন?

রায়েহাত শুভ's picture


এই তোমরা ক্যাসিনো ফ্যাসিনো ঘুইরা বেড়াও বইলাইতো হেফাজতে এত্ত চেতছে। সুমায় থাকতি বুরখা লাগাওরে Tongue

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


সপ নাস্তিক বলোগার!

ছিঃ ছিঃ
তাওবা তাওবা!

এতদিন তো ভালোই জানতাম, কি সুন্দর অভিনয় করে গো! কয়দিন পরে দেখা যাইবো কইতাছে স্ট্রিপ ক্লাবেও গেছিলো!!

রায়েহাত শুভ's picture


ছি ছি ছি, এইসপ শুনাও পাপ Wink

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


কাউকে এত্ত আনন্দ করতে দেখলেও আনন্দ লাগে।

অক্সিজেন বার এর আইডিয়াটা তো সিরাম। মাগার এখন ক্যাসিনো যাইতে মন্চায়!

পজিটিভ's picture


ইহা একটা নাস্তিক লেখা, এই বলোগ দিয়া হাল চাষ কারা করানো হওক! আস্তাগফিরুল্লাহ!

তানবীরা's picture


কিছু বলবো না Wink .............. আমাদেরো বয়সকালে অনেক রঙের দিন ছিল Wink Tongue

তবে সব জায়গায় কাসিনো চলে চায়নীজ দিয়ে

আরাফাত শান্ত's picture


দারুন!
বেহুদা এই মরার দেশে আসলেন!

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.