ইউজার লগইন

ঘুরে দাঁড়ানোর ইচ্ছা

এই মাসের প্রথম থেকেই একটা অদ্ভত অস্থিরতা কাজ করছিল। অস্থিরতাটা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে গত সপ্তাহ থেকে। জীবনে কখনও এমন অবস্থা অনুভব করিনি, সময় অনুযায়ী যত ধরনের ডিজাস্টার পার করেছি, প্রতিটাকেই মনে হয়েছে এই বোধহয় জীবনের শেষ। ছোট বেলা থেকেই আমার মধ্যে একটা প্রবনতা ছিল, কোন কিছু না পারলে আস্তে করে কেটে পড়া। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাই করেছি। খেলাতে না পারলে আস্তে করে সরে এসেছি, কারও সাথে ঝগড়া তে পেরে না উঠলে জাস্ট গিভ আপ বলে কেটে পড়েছি। পরীক্ষায় ফেল করেছি বলে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছি। খুব ভালো করে পড়ব বলে আবার শুরু করেছি, কয়েকদিন পর আবার যেই লাউ সেই কদু টাইপ জীবনে ফিরে গিয়ে, বারবার ষোল টাকা দরের চালের মত নিজের জীবনটা কাটিয়ে দিয়েছি। মোদ্দা কথা সবাই যেটাকে ছোট্ট করে বলে ‘ল্যাক অফ ডিটারমিনেশন’। দেখছেন টার্মটা আমি জানি, এই যে এখন যে হেডলাইনটি লিখেছি, কিন্তু ভেতরে লিখতে বসে শব্দ অন্য দিকে নিয়ে গেছে নিজেকে। সবাই বলবে তোমার আজকের যা অবস্থান তার জন্য তুমিই দায়ী। অবশ্যই এটা সহস্রভাগ সত্য। কোন এক্সকিউজে জীবনের এতগুলো বছর ফিরে আসবে না। প্রথম লাইনটার কারন নিশ্চই জানার অাগ্রহ তৈরী করতে পারে। সেই কারনটা হলো খুব ভালো বন্ধু ছিল যে একসময়, যাকে ভালোবাসতাম একসময় ( হয়তো এখনও বাসি) তার বিবাহ। যতটা না বন্ধুর বা প্রাক্তন প্রেমিকের বিয়ে নিয়ে কষ্ট পেয়েছি, তার চাইতেও বেশি অনুভব করেছি যাকে সে বিয়ে করেছে তার প্রতি ঘৃনা। সে বন্ধু চলে গেছে জীবন থেকে আরও কয়েক বছর আগে। বছরখানেক আগে ভাবলাম মাফ করে দেই। কারন শত হলেও সে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। কিন্তু যেই মেয়েটার কারনে আমার বন্ধু প্রেমিক চলে গেছে, এবং যেই মেয়েটা জেনেশুনেও এই কাজটা করেছে, তার প্রতি যে এতটা ঘৃনা আমি পুষে রেখেছি সেটা আবিষ্কার করেছি কয়েকদিন আগে। নিজের প্রতি এক ধরনের রাগ, অসাড়তা তে গত ৫ দিন একটি ঘরে নিজেকে বন্দি করেছি। পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম, যেটা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি, কম করে হলেও প্রতিদিন ১৪/১৬ ঘন্টা। প্রতিদিন ৩ টা করে রোমান্টিক সিনেমা দেখা। সোস্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা এবং পর্যাপ্ত পরিমানে মদ্যপান করে কান্নাকাটি করা। নিজেকে এতটা অসহায় মনে হয়নি এর আগে কখনও। কিন্তু আমি জানি, আমার পক্ষে এই বিলাসীতা করা আর সম্ভব না। হয়তো এ করতে করতে চাকরিটা চলে যাবে। পেটে ভাত জুটবে না। তাই আমি জানি আমাকে ফিরতেই হবে স্বাভাবিক ‍রুটিন জীবনে। এই লেখাটি লেখার আগে দিয়ে একটি সিনেমা দেখছিলাম “ হোমলেস টু হার্ভার্ড” লিজ মুরারি নামের একটি মেয়ের গল্প। সিনেমাটি দেখে মনে হলো এই তো আমি ভালো আছি, মেয়েটির মায়ের মৃত্যুর দৃশ্যে চিৎকার করে কেঁদে উঠেছি, নিজের মায়ের মৃত্যুর সময়টাকে মনে করে। পরে তার একটা স্পিচ দেখতে দেখতে জানতে পারলাম বেন আন্ডারউড এর কথা। সেই অন্ধ ছেলেটা, যে কিনা কোনদিন নিজেকে অন্ধ ভাবেনি, ভেবেছে সে স্পেশাল। এরা সবাই বেঁচে ছিল যতটুকু সময় থাকার। আর আমি ?? বেঁচে আছি শুধু অন্য কারো জীবনে নিজের প্রায়োরিটি খোজার জন্য ? আমি জানি আমি হয়তো আবার যেই লাউ বা কদুতে পরিনত হব কাল সকালেই। ল্যাক অফ ডিটারমিনেশন এর কল্যানে। তবুও এটা লেখা এই জন্য যে কোন একদিন নিজেকে মনে করিয়ে দেয়া, কয়েক মুহুর্তের জন্য হলেও আমার ঘুরে দাড়ানোর ইচ্ছে হয়েছিল।

পোস্টটি ১২ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মীর's picture


হ্যালো রত্না,

খুব সত্যি কথা লিখেছেন। লেখার সততার মান লেখাটাকে সত্যি একটা ভিন্ন আঙ্গিক দিয়েছে।

আমারও এমন হয় অনেক সময়। সর্বশেষ হয়েছিল এই বছরের মার্চে। পুরো একটা মাস ছিল দুর্যোগপূর্ণ সময়। শেষের দিকে তো মনে হচ্ছিল সম্ভবত আমি কোনো একটা ঝুঁকি নিয়ে নিজেকে শেষই করে ফেলবো। ভাগ্য ভাল তেমন কিছু করি নি। তবে যখন অবস্থাটার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম, অবশ্যই সেটা ছিল চোখের সামনে চকচক করা একমাত্র অপশন।

যাহোক মার্চ থেকে অক্টোবর, আট মাস। এখন বরং সেই মানুষটার কথা ভাবলে আমার শুধুই আনন্দ হয়, একসময় যার জন্য অমন করে কষ্ট পেয়েছিলাম এবং চেয়েও সেই কষ্ট পাওয়া থামাতে পারি নি। কেননা যা কিছু হয়েছিল ভালোর জন্যই হয়েছিল, আমি শুধু অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম বলে বুঝতে পারছিলাম না।

এটা মানবজীবনের একটা নিয়মিত অনুষঙ্গ। আমাদের অনুভূতিক্ষমতা খুব শক্তিশালী। তাই যখন কোনো একটা যোগাযোগ ঠিকঠাকমতো কাজ করতে ব্যর্থ হয় তখন আমরা অনেক সময়ই অচিন্ত্যনীয় কষ্ট অনুভব করি। একাকীত্ব, হতাশা, দুশ্চিন্তা- সবকিছু মশার মতো ছেঁকে ধরতে আসে চারপাশ থেকে। ভয় ভেঙেচুরে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে যেতে চায় আমাদের অস্তিত্বকে। আমি যেটা বিশ্বাস করি, ওই সময়গুলোই আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। ওই সময়গুলোতেই আমরা মানসিকভাবে আমাদের নিজেদের সবচেয়ে কাছাকাছি যাওয়ার এবং নিজেদের সবচেয়ে ভালভাবে বোঝার ও চেনার সুযোগ পাই। ওই সময়গুলোর মতো সময় আর হয় না যদি আমরা সময়গুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারি। অবশ্যই কাজটা কঠিন। তবে জীবনে টিকে থাকতে হলে কঠিন পথ বেছে না নেয়ারও কোনো বিকল্প নেই। আরেকটা কথা আমি সবসময় মানি যেটা হচ্ছে, যখন আমরা অন্ধকার পথ ধরে হাঁটতে বাধ্য হই তখন আমরা দেখতে পাই না ঠিকই, কিন্তু আমরা কখনই সেই পথে একলা নই। ম্যাকলামোরের গান থেকে পেয়েছি কথাটা,

"Love is just a tool
To remind us who we are
And that we are not alone
When we're walking in the dark."

যখন ওই সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন আমার অনুভূতিগুলো লিখে রাখার চেষ্টাও খুব একটা কাজে আসছিল না। তারপরও দুইটা লেখা দেখলাম আমার ব্লগে আছে। একটার নাম "কেননা আমি বেঁচে থাকি শেখার মাধ্যমে" আর একটা "অসমাপ্ত বাস্তবতা... ১৩"। লেখাগুলোর কথা উল্লেখ করলাম কারণ, আমি দেখেছি কষ্টের সময় আমরা অন্যদের কষ্টের বিষয়গুলো অন্য সময়ের চেয়ে বেশি ভালভাবে অনুভব করতে পারি, যেটা আমাদেরকে একটু হলেও ভাল বোধ করতে সাহায্য করে। হয়তো আমরা গড়ে উঠেছি গোত্রবদ্ধ জীব হিসেবে বলেই কেবল ভাল যোগাযোগ আমাদেরকে ভাল বোধ করতে সাহায্য করে।

যাহোক, ভাল থাকবেন। খারাপ লাগা বোধ কেটে যাক দ্রুত এবং ফিরে আসুন দৈনন্দিন 'বোরিং' জীবনে আর সবার মতো শ্রীঘ্র।

শুভেচ্ছা।
মীর

কাজী রত্না's picture


ধন্যবাদ মীর... অনেক শব্দ মনে ঘুরপাক খাচ্ছে.. কিন্তু যুতসই লাইন পাচ্ছি না জবাবের জন্য। ভালো থাকবেন।

রন's picture


চলেই তো যাচ্ছে! আর আপনি তার জন্য নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন! জীবন কে দ্বিতীয় একটা সুযোগ দিয়ে দেখতে পারেন!

মুভি গুলোর নাম জানায়েন, না দেখা থাকলে দেখবো!

আর হ্যা, আমি কিন্তু আসলেই রোবট না, হিউমান Big smile

কাজী রত্না's picture


রোবট যে না সেটা বুঝতে পেরেছি। ধন্যবাদ রন। একটা মুভির নাম, হোমলেস টু হার্ভার্ড। আর ইউটিউবে বেন আন্ডারউড লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন অনেকগুলো ডকুমেন্ট্রী..

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

কাজী রত্না's picture

নিজের সম্পর্কে

লেখালেখির " ল" জানি না... হুদাই....আসলাম এখানে.. অন্যের লেখা পড়বো বলে...